বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। (Discuss About the Ancient Janapadh.) .)

. বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান
The Geographical Situation of Bangladesh
বর্তমান বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত। এর বিস্তৃতি ২০° ৩৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬° ৩৮ উত্তর অক্ষরেখা এবং ৮৮°০১ ́ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা থেকে ৯২° ৪১' পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এই ব- দ্বীপের মাঝামাঝি দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে ফলে দেশটি ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম, পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মায়ানমার, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা ৫, ১৩৮ কি. মি. ।
বাংলার প্রাচীন জনপদ বা রাজ্য
Ancient Janapad or Kingdom of Bangla
প্রাগৈতিহাসিক বা প্রাচীনকালে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের নির্দিষ্ট কোনো নাম ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনপদ বা রাজ্য স্থাপিত হলে সেই জনপদকে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হতো। কালের চলমানতায় আবার কোনো কোনো জনপদের নাম বদলেও যেতে পারে, তবে সেই বদলে যাওয়াটাও ঐতিহাসিকতার বিচারে যাচাই করে দেখা যেতে পারে। অদ্যাবধি বিভিন্নভাবে বাংলার এসব প্রাচীন জনপদ বা রাজ্য বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে বিদ্যমান রয়েছে। জনপদ শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করতে হলে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার খণ্ড খণ্ড ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী বা জনসমষ্টিই হলো জনপদ ।
১। বঙ্গ (Banga )
অতিপ্রাচীনকাল থেকেই বর্তমান বাংলাদেশের একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। প্রায় ৭,৫০০ বছর আগে হযরত নুহ (আ.)-এর যুগে কীভাবে মহাপ্লাবনের পর বঙ্গ জনপদ গড়ে ওঠে তা বর্ণিত হয়েছে। এ উপমহাদেশে আর্যদের আগমনের বহু পূর্ব থেকেই বঙ্গ জনপদ বা রাজ্য প্রতিষ্ঠিত এবং বঙ্গ নাম থেকেই পরবর্তীতে বাংলা এবং বাংলা থেকে বাংলাদেশ নামকরণ করা হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের জনপদ বাংলাদেশ-এর দক্ষিণ ও পূর্ব বঙ্গ নিয়ে গঠিত ছিল যার সীমারেখা ছিল পশ্চিমে ভাগীরথী, উত্তরে গঙ্গা বা পদ্মা, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
পাল ও সেন বংশের শাসনামলে এবং মুসলিম শাসনের সময়কালে বাংলাদেশের পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল 'বঙ্গ' নামে পরিচিতি পায়। মিনহাজউদ্দিন সিরাজ ভাগীরথীর পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলকেই 'বঙ্গ' নামে উল্লেখ করেন যা গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনামলে (১২৬৬-৮৭) মুসলমানদের কাছে 'বাঙ্গালাহ' নামে পরিচিত হয়।
২। পুণ্ড্র (Pundra)
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
প্রাচীন বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপদের নাম পুণ্ড্র। ধারণা করা হয়, পুণ্ড্র নামক এক জাতি এ জনপদে বাস করতো। এরা উত্তরবঙ্গে বাস করতো বলে এ অঞ্চলে পুণ্ড্রদেশ বা পুণ্ড্রবর্ধন নামে খ্যাত ছিল। বর্তমান বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে এ জনপদ গঠিত। পুণ্ড্রের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। প্রাচীনকালে এটি একটি সুপ্রসিদ্ধ নগরী ছিল। পাথরের চাকতিতে খোদাই করা লেখা এ জনপদে পাওয়া যায়।
৩। বরেন্দ্র (Borendra )
কবি সন্ধাকর নন্দী তাঁর রামচরিত কাব্যে উল্লেখ করেছেন যে, গঙ্গা আর করতোয়ার মাঝে যে ভূ-খণ্ড, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রী ছিল তারই নামে। মূলত বরেন্দ্র নামের প্রাচীন জনপদটি ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের একটি অংশ। তবকাত-ই-নাসিরী শীর্ষক গ্রন্থে এই রাজ্যকে গঙ্গানদীর পূর্বভাগে অবহিত লক্ষণাবতী রাজ্যের অংশ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাংলার প্রাচীন জনপদ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রী ছিল বর্তমান বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা এবং সম্ভবত পাবনা জেলার বুক জুড়ে।
প্রভাতাংশু মাইতির মতে, পাল আমলে দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে দিব্যোকের নেতৃত্বে কৈবর্তরা বরেন্দ্রে বিদ্রোহ করে । মহীপালকে পরাজিত ও নিহত করে তারা স্বাধীন রাজত্ব কায়েম করে।
ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, দিব্যোকের পর রুদোক এবং তারপর ভীম বরেন্দ্র রাজ্যের রাজা হন ।
‘ত্রিকাণ্ডশেষ’ অভিধানে বরেন্দ্রী ও পুণ্ড্রকে অভিন্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি লিপি প্রমাণে একথা বলা যায় যে, বরেন্দ্র পুণ্ড্রবর্ধনেরই অংশবিশেষ। গঙ্গার উত্তরে ও করতোয়ার দক্ষিণের এ বরেন্দ্রভূমি প্রাচীনকালে পাল রাজাদের ‘জনকভু' নামে পরিচিত ছিল।
৪। সমতট (Samatat)
সমতট বর্তমান বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জনপদ। এটি প্রাচীন বাংলার একটি সুপরিচিত অঞ্চল। তবে এ সমতটের অবস্থান ও সীমা একাধিকবার কিছু পরিবর্তিত হলেও বঙ্গের পূর্বাঞ্চল ও কামরূপের দক্ষিণ অঞ্চলই সমতট নামে পরিচিত।
পর্যটক হিউয়েন সাঙের মতানুসারে এ সমতট কামরূপ থেকে প্রায় ২৫০-২৬০ মাইল দক্ষিণের জনপদ যার ভূমি নিম্ন, আবাদযোগ্য, উর্বর ও জলবায়ু স্বাস্থ্যকর। বাংলাদেশের উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত মেঘনা নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত বর্তমান কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলকেই সমতট বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকালের পুঁথিপুস্তকেও কামরূপের দক্ষিণের এ সমতটের উল্লেখ পাওয়া যায়। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে থাকা ভূখণ্ডই সমতট। প্রভাতাংশু মাইতি বলেছেন যে, মেঘনা নদীর পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগের অঞ্চলই প্রাচীন সমতট রাজ্য ।
বর্তমান সময়েও সেই প্রাচীনকালের সমতট অঞ্চলের অবস্থান প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ ঐতিহাসিকগণের কাছে কমবেশি পরিচিত এবং কালের আবর্তে কিছুটা পরিবর্তিত হলেও একেবারেই তা মুছে যেতে পারে না। তাই সেই প্রাচীন সমতট নামের জনপদ আজো ইতিহাসের পাতায় নিজের স্বকীয় সত্তা নিয়ে বিদ্যমান রয়েছে।
৫। হরিকেল (Horikel)
বাংলার প্রাচীন জনপদ বা বর্তমান বাংলাদেশের আরেকটি অঞ্চলের নাম হরিকেল যার প্রাচীনকালীন অবস্থান ছিল বঙ্গ ও সমতটের নিকটবর্তী এলাকায়। রাজ্য শাসকদের রাজ্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তির সাথে সাথে বঙ্গেও এ বিশেষ এলাকাটি হরিকেল নামে পরিচিতি পায় । সেই সপ্তম শতকে বর্তমান কুমিল্লা ও নোয়াখালীর দক্ষিণ-পূর্বের এলাকাই হরিকেল নামে পরিচিত। আবার কারও কারও মতে বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকাও-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর দুটি পুঁথিতে হরিকেল সিলেটের প্রাচীন জনপদ বলে উল্লেখ করার তথ্য পাওয়া যায়।
শেলোহার পরিচয়
৬। গৌড় (Gourd)
ধারণা করা হয়, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলার দক্ষিণাংশ প্রাচীনকালে গৌড় নামে পরিচিত ছিল। 'ভবিষ্য পুরাণে' গৌড়ের স্থলে দেখানো হয়েছে আধুনিক বর্ধমানের উত্তরে, পদ্মার দক্ষিণে। পাল রাজাদের আমলে গৌড়ের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
৭। রাঢ় (Rardh)
জৈন গ্রন্থে আচারঙ্গ সূত্রে সর্বপ্রথম রাঢ় জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়, এখানকার লোকজন ছিল কিছুটা নিষ্ঠুর ও বর্বর প্রকৃতির। কোটিবর্ষ ছিল রাঢ়ের রাজধানী। জনপদটি দু'টি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা- (ক) সূক্ষভূমি, (খ) বজ্রভূমি।
৮। চন্দ্রদ্বীপ (Chandradip)
এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ মতে, বাকলা পরগণার বাকলা (বর্তমান বৃহত্তর বরিশাল) আর চন্দ্রদ্বীপ একই জায়গার নাম ।
৯। বিক্রমপুর (Bikrampur)
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার একটি বিখ্যাত নগরীর নাম বিক্রমপুর। এ নামে একটি সুপ্রসিদ্ধ পরগনা এখনও মুন্সিগঞ্জে বিদ্যমান । এটি ছিল সেন রাজাদের ২য় রাজধানী।
১০। পাহাড়পুর (Paharpur)
খ্রিষ্টীয় ৮ম শতকে পাল রাজাদের রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়পুর বর্তমান নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। এখানকার সোমপুর বিহার সমগ্র উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার, যা রাজা ধর্মপাল নির্মাণ করেন।
এক নজরে প্রাচীন জনপদসমূহের বর্তমান অবস্থান
ক্রমিক নং
প্রাচীন জনপদের নাম
পুণ্ড্র (Pundra) রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার অংশ বিশেষ ।
2।
বরেন্দ্র (Barendra ) বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ
৩।
বঙ্গ (Banga) ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, নদীয়া ও শান্তিপুর ।
4
সমতট (Samatat) বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালি অঞ্চল ।
৫ ।
হরিকেল (Horikel ) সিলেট, ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম । বরিশাল ।
৬।
গৌড় (Gourd) চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া ।
7
রাঢ় (Rardh) পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চল (বর্ধমান জেলা) ।
৮। পাহাড়পুর (Paharpur)
৯। চন্দ্রদ্বীপ (Chandradip)
১০ । বিক্রমপুর (Bikrampur) মুন্সীগঞ্জ জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। নওগাঁ জেলা ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]