ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর । (Discuss the Characteristics of India Freedom Act.)

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইন Liberation Act of India in 1947
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের পর থেকেই হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ইতোমধ্যে মুসলিম লীগ ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের লাহোর প্রস্তাব গ্রহণ করলে ব্রিটিশ সরকার অশান্ত ভারতবর্ষকে শান্ত করার লক্ষ্যে পর পর
২টি প্রস্তাব নিয়ে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রতিনিধি প্রেরণ করে। এর একটি হলো ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ক্রিস প্রস্তাব এবং অপরটি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা। কিন্তু এর কোনোটিই কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। উপরন্তু, সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ উপনিবেশ থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া শ্রেয় বলে মনে করে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মি. এটলি ঘোষণা করেন যে, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসের পূর্বে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। সে উদ্দেশ্যে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো হয় ।
চিত্র-০৩ : লর্ড মাউন্টব্যাটেন
মাউন্টব্যাটেন ভারতবর্ষের এরূপ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাথে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, ভারতবর্ষকে বিভক্ত করাই হলো এর শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। সে উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুন একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। এটিই '৩ জুন পরিকল্পনা' বা 'মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা' নামে খ্যাত। ৩ জুন পরিকল্পনা তথা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হলো—
১ ভারতবর্ষকে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ২টি অংশে বিভক্ত করে ২টি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বাংলা ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদকে ২টি অংশে বিভক্ত করা হবে। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং অপরটি অবশিষ্টাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। দু'অংশের সদস্যগণ পৃথকভাবে মিলিত হয়ে প্রদেশদ্বয়ের বিভক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন ।
৩. সিন্ধু ও বেলুচিস্থান ভারতের সাথে থাকবে, নাকি পাকিস্তানের সাথে থাকবে তা নির্ধারণ করবে যথাক্রমে সিন্ধু প্রাদেশিক পরিষদ এবং বেলুচিস্থানের জিরগা ও পৌরসভাসমূহ। সীমান্ত প্রদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে গণভোটের মাধ্যমে তদ্রুপ আসামের সিলেট জেলার ক্ষেত্রেও গণভোট প্রযোজ্য হবে।
৪. বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত হলে সংশ্লিষ্ট গণপরিষদে কিভাবে সদস্য নির্ধারিত হবে সে সম্পর্কেও প্রস্তাব রাখা হয়। ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্য
মাউন্টব্যাটেনের ৩ জুনের পরিকল্পনা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই গ্রহণ করে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনার ভিত্তিতে ভারত স্বাধীনতা আইন ব্রিটিশ কমন্সসভায় এবং ১৫ জুলাই লর্ডসভায় আলোচনা করা হয়। অতঃপর, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই এ পরিকল্পনার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 'ভারত স্বাধীনতা' আইন পাস করে । ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ যথাক্রমে নিম্নরূপ:
S. ভারতে ব্রিটিশ প্রভুত্বের অবসান (Conclusion of British Lordship in India) : এ আইনের ফলে ১৯৪৭
খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট হতে ভারতের ওপর থেকে দীর্ঘদিনের ব্রিটিশ সরকারের প্রভুত্বের অবসান ঘটে।
২. দুটি ডোমিনিয়ন প্রতিষ্ঠা (Establishment of Two Dominion) : এ আইন ব্রিটিশ ভারতকে বিভক্ত করে
‘পাকিস্তান' ও 'ভারত ইউনিয়ন' নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। উভয় রাষ্ট্রই ডোমিনিয়নের মর্যাদা লাভ করে।
বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্তি (Dividation of Panjab and Bengal) : এ আইনে বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশ
হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত করার ব্যবস্থা করা ।
এ ব্যাপারে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি কমিশন গঠনের কথাও বলা হয়।
সার্বভৌম গণপরিষদ (Sovereign Assembly) : এ আইন দুটি ডোমিনিয়নের জন্য দুটি সার্বভৌম গণপরিम গঠন করে। গণপরিষদ য য় সংবিধান রচনা করবে। যতদিন পর্যন্ত নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ গঠিত ততদিন পর্যন্ত গণপরিষদ কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
৫. ডোমিনিয়ন ও কমনওয়েলথ সম্পর্ক ( Relation between Dominion and Commonwealth) : এ আইসে ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত থাকবে কিনা সে সম্পর্কে স্ব-স্ব গণপরিষদকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা
প্রদান করা হয়।
৬. ভারতসচিব পদের বিলুপ্তি (Extinction of India Secretary Post ) : এ আইন ব্রিটিশ শাসনামলের ভারতসরি পদের বিলুপ্তি ঘোষণা করে। কিন্তু কমনওয়েলথ বিষয়ক সেক্রেটারির পদ সৃষ্টি করে এবং তার ওপর এ ডোমিনিয়নের সাথে গণসংযোগ রক্ষার ভার অর্পণ করে।
রাজার আইন নাকচ করার ক্ষমতার অবসান (Conclusion of Denying King's Law) : এ আইন ভারত শাসনে ইংল্যান্ডের রাজার আইন নাকচ করার ক্ষমতার অবসান ঘটায় এবং এখন থেকে গণপরিষদে গৃহীত বিলে পর জেনারেলের সম্মতি প্রদান করে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হয়।
ভারত সম্রাট উপাধির বিলুপ্তি (Extinction of India Emperor Title) : এ আইনের দ্বারা রাজকীয় মর্যাদা এবং ইংল্যান্ডের রাজার উপাধি হতে ভারত সম্রাট উপাধি বিলুপ্ত করা হয়।
দেশীয় রাজ্যগুলোর ওপর হতে রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা প্রত্যাহার (Abstraction of King's Sovereign Power on Native Kingdom) : এ আইনের দ্বারা দেশীয় রাজ্যগুলোর ওপর থেকে ব্রিটিশ রাজার 'সার্বভৌম ক্ষ প্রত্যাহার করা হয় এবং এদেরকে ভারত কিংবা পাকিস্তানে যোগদান করা অথবা স্বাধীন থাকার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের পূর্বে ব্রিটিশ সরকার ও দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে যেসব চুক্তি সম্পাদিত হয় তা বাতিল বলে ধরা হয়।
১০. সিভিল সার্ভিস প্রসঙ্গ (Civil Service contexts) : এ আইনের ১০ ধারায় বলা হয় যে, ভারতের সিভিল সার্ভিসে নিযুক্ত কর্মচারিগণ নতুন ডোমিনিয়নদ্বয়ের অধীনে চাকরি করতে ইচ্ছা করলে তারা ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের পূর্বের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১১. ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইনের শাসনতান্ত্রিক মর্যাদা (Administrative Status of Indian Rule in 1935 ) : এ আইনে বলা হয় যে, ডোমিনিয়নদ্বয়ের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও প্রবর্তন না করা পর্যন্ত নিম্নলিখিত রদবদল সাপেক্ষে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে ।
ক. উভয় ডোমিনিয়নের মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শক্রমে মহামান্য ব্রিটিশ সম্রাট কর্তৃক গভর্নর জেনারেলকে নিযুক্ত করা হবে। খ. গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরের 'স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা' 'বিচার-বুদ্ধিজনিত ক্ষমতা' ও 'বিশেষ দায়িত্বজনিত
ক্ষমতার' অবসান ঘটবে। তারা সকল সময় মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য থাকবে।
গ. ডোমিনিয়ন মন্ত্রীদের পরামর্শানুসারে গভর্নর জেনারেল গভর্নরদের নিয়োগ করবেন।
ঘ. ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এ অজুহাতে আইন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত কোনো আইন
বাতিল করা যাবে না ।
১২. গভর্নর জেনারেল নিয়োগ : ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইন অনুসারে প্রত্যেক ডোমিনিয়নের জন্য একজন গভর্নর জেনারেল থাকবেন। তিনি ডোমিনিয়ন মন্ত্রিসভার পরামর্শমতো ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে শাসন ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইনের দ্বারা ভারতে দীর্ঘদিনের বিদেশি শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট হতে বিশ্ব মানচিত্রে 'পাকিস্তান' ও 'ভারত ইউনিয়ন' নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। অনেক সংগ্রাম আর অনেক ত্যাগের ফলে অর্জিত হয় এ স্বাধীনতা। এর ফলে সূচনা হয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অধ্যায়ের। এটি ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলকস্বরূপ। যদিও মহাত্মা গান্দী প্রথমে ভারত বিভক্তিতে বাধা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুসারী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও সরদার প্যাটেলের অনমনীয় মনোভাবের কারণে তিনি সে অবস্থা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এজন্যই সেদিন কংগ্রেস সমর্থক The Hindustan Times The noblest and greatest law ever enacted by the British Parliament' আখ্যায়িত করেছিল। অপরদিকে, মুসলিম লীগ সমর্থক The Dawn-এ লেখা হয়েছিল, 'By this momentous and unique legislation, British was entitled to the highest praise from all freedom loving peoples of the world.' এ উল্লাস পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। মাত্র ২৫ বছরে পাকিস্তানের পুনরায় বিভক্তি ঘটে এবং সৃষ্টি হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর বিচিত্র ভৌগোলিক আকৃতি। ভারতের দুদিকে ছিল এর সীমানা। অর্থাৎ একদিকে ছিল পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান, মাঝখানে ১২০০ মাইলের ব্যবধান। এ ধরনের রাষ্ট্রগঠন ছিল বিরল এবং অকার্যকর প্রকৃতির। পাকিস্তানের এ দুই অংশের নাগরিক তথা জনগণের মধ্যে ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক কিংবা নৃতাত্ত্বিক কোনো প্রকার মিল ছিল না। তাই তৎকালীন সময়ে কংগ্রেস নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, এ রাষ্ট্র ২৫ বছরের মধ্যে ভেঙে যাবে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয়েছিল। আর সফল হয়েছিল বলেই ২৩ বছরের মাথায় ভেঙে যায় রাষ্ট্রটি ।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনানুযায়ী বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের সংসদ সদস্যগণ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন পৃথক বৈঠকে বসেন । মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ ১০৬ : ৩৫ ভোটে অখণ্ড বাংলার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। অপরপক্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ বর্ধমানের মহারাজার সভাপতিত্বে মিলিত হয়ে ৫৮ : ২১ ভোটে বাংলার বিভক্তির পক্ষে মত ব্যক্ত করেন । ফলে বাংলা অঞ্চল পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলা এ দুই অংশে বিভক্ত হয়। পূর্ববাংলার প্রতিনিধিবর্গ ৫৮ ঃ ২১ ভোটে ভারতবর্ষে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পূর্ববাংলার যে ৩৪ জন বাংলা বিভক্তির পক্ষে এবং পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে থেকে ভারতে যোগদানের পক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য। এদের মধ্যে কিরণ শঙ্কর রায় অন্যতম। অপরপক্ষে পশ্চিম বাংলার যে ২১ জন বাংলা বিভক্তির বিপক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন মুসলিম লীগ দলীয় সদস্য। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ দলভুক্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এ. কে. ফজলুল হক ভোটাভুটিতে অংশ নেন নি ।
একটা দেশের রাজধানী স্থাপনের সকল সুযোগ-সুবিধা তৎকালীন ঢাকায় থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসককুল সেদিন করাচিতে পাকিস্তানের রাজধানী স্থাপন করে ভৌগোলিক ও ভাষাগত দ্বন্দ্বকে আরও শাণিয়ে তোলে। আর সেই ভুলটাই করেছিল ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী কলকাতায় রাজধানী স্থাপন করার মাধ্যমে।
ভারতবর্ষে বঙ্গভঙ্গের ভোটাভুটি সম্পন্ন হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা কলকাতা ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । মন্ত্রিসভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এক বিবৃতিতে দাবি করেন যে, কলকাতা পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কলকাতা থেকেই পূর্ববঙ্গ শাসন করা হবে বলে তিনি দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে কলকাতা ত্যাগ করতে হলে তার বিনিময়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। বাংলার মুসলিম লীগে তখন ক্ষমতা দখলের লড়াই চরমে উঠেছে। কলকাতা পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা কলকাতার বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সংগ্রাম যখন গতিশীল হচ্ছিল ঠিক সে সময় ২৭ জুন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি সভায় মাত্র ৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ঢাকায় পূর্ববঙ্গের রাজধানী স্থাপিত হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন, বাঙালিরা রাজনীতির জ্ঞান রাখে এবং রাজনৈতিক চেতনাশীল। এবারও তারা তার প্রমাণ দিল। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান ইস্যুর উপর সাধারণ
নির্বাচনেও তারা তা প্রমাণ করেছিল।'
এভাবে বাংলা বিভক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৮ জুলাই (১৯৪৭)-এর ভারত স্বাধীনতা আইনে' বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত এবং পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অংশ বলে ঘোষণা করে। এভাবেঃ স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়।
আমাদের হাতে যতগুলো যুক্তি-প্রমাণ আছে তাতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি যে বেশিদিন টিকে থাকবে না তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যেত। তথ্য-প্রমাণ যাই বলুক প্রকৃতপক্ষে মুসলিম লীগের পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ মুসলিম-অধ্যুষিত পূর্ববাংলাকে উপনিবেশ হিসেবে শোষণ করার উদ্দেশ্যে ঐ এলাকা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চেয়েছিলেন। তাদের এ অসৎ উদ্দেশ্যকে সহযোগিতা করেন পূর্ববাংলার খাজা নাজিমুদ্দিন, নূরুল আমিন, মওলানা আকরম খাঁ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এসব চাটুকার ভালো করেই জানতেন যে অবিভক্ত বাংলা হলে তাদের পক্ষে সোহরাওয়ার্দী গ্রুপকে ডিঙিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হবে না। তাই তারা কেবল ক্ষমতার লোভেই খণ্ডিত বাংলাকে স্বাগত জানান ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]