ভূমিকা : পৃথিবীতে চিরস্থায়ী বলতে কিছু নেই। সবকিছুই পরিবর্তনশীল। তবে একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেখা যায় যে বেনিয়ারা ভারতের নিয়ন্ত্রণকর্তা হন। আর কোম্পানি, তাদের আধিপত্য কায়েম করে ভারতে প্রতিনিধিত্ব শাসন কায়েম করেন। এভাবে কোম্পানি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে লর্ড আমহাস্টের পর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ভারতবর্ষে আসেন গভর্নর জেনারেল হিসেবে। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকই একমাত্র গভর্নর জেনারেল যিনি বলেছিলেন যে, ভারতীয়দের নৈতিক উন্নতি সাধনই ব্রিটিশ সংস্কারের একমাত্র লক্ষ্য। তাই বেন্টিংক ভারতীয়দের উন্নয়নের জন্য সংস্কারমূলক কার্য সম্পাদন করেন ।
লর্ড বেন্টিংকের সংস্কার কার্যের পটভূনি/প্রেক্ষাপট : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক প্রথম জীবনে মাদ্রাজের গভর্নর নিযুক্ত হয়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। কিন্তু তার শাসনামলে (১৮০৩-০৭) ভোলারে সিপাহী বিদ্রোহ দেখা দিলে তাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া নেপোলিয়ন যৌবনে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ওয়াটারলুর যুদ্ধে বিজেতা ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীনে সৈনিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোন সামরিক কূটচাল বা কোন সামরিক প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন নি ।
তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শক্তির স্বার্থ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। এ অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে কাজে লাগান। মাদ্রাজের গভর্নর থাকাকালীন তার শাসনকার্যে যে কোন ত্রুটি ঘটে নি একথা স্বদেশী কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে তিনি বাংলার গভর্নর জেনারেল হিসেবে লর্ড আমহাস্টের পর আসেন। তিনি পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা উপলব্ধি করেন যে, যুদ্ধবিগ্রহ বা আক্রমণাত্মক নীতি কোন অবস্থায় শাসনব্যবস্থার জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই তিনি সংস্কার মনোভাবাপন্ন হয়ে ভারতীয়দের নৈতিক উন্নয়নের জন্য সংস্কার কার্যে মনোনিবেশ করেন।
লর্ড বেন্টিংকের সংস্কারসমূহ : ভারতের ইতিহাসে সংস্কার কার্যের জন্য তিনি বিখ্যাত। নিম্নে তার সংস্কার কার্যাদির বিবরণ দেওয়া হল ঃ
১. অর্থনৈতিক সংস্কার ঃ বেন্টিংকের সংস্কারসমূহের মধ্যে অন্যতম হল অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনর্গঠন করা। অবশ্য ডাইরেক্টর সভা থেকেও তার উপর ব্যয় সংকোচন ও যুদ্ধ নীতি ত্যাগের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। বেন্টিংক শাসনকার্য পরিচালনার অসুবিধা ছাড়া বিভিন্ন সরকারি অফিসের অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করেন। শান্তির সময় অর্থাৎ যুদ্ধ যখন চলছে না তখন সামরিক কর্মচারীদের যে অর্ধেক ভাতা দেওয়ার প্রচলন ছিল একে বলে বাট্টাকরণ ব্যবস্থা। বেন্টিংক এ বাট্টাকরণ ব্যবস্থা রহিত করেন। এছাড়া উচ্চস্তরের বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন তিনি হ্রাস করেন। এ কাজের জ অনেকের কাছে তিনি অপ্রিয় হন কিন্তু ডাইরেক্টর সভার অনুমোদন থাকায় কোন অসুবিধা হয় নি। বেন্টিংক কর্নওয়ালিসের রাজত্বকালের প্রাদেশিক আপিল কোর্ট বাতিল করে উত্তর প্রদেশে জমি জরিপ ও রাজস্ব ব্যবস্থা দ্বারা আর্থিক সচ্ছলতা আনেন। পূর্বে অনেক জমি অবৈধভাবে নিষ্কর বলে দেখানো হতো। বেন্টিংক এটা বাতিল করে সেগুলোর উপর কর বসান। তিনি মাদ্রাজ ও যুক্ত প্রদেশ এ জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কোম্পানির আয় বৃদ্ধি করেন। তিনি মালবে অন্যায়ভাবে উৎপন্ন আফিমের উপর শুল্ক আরোপ করেন। বাণিজ্য সংক্রান্ত উন্নতির জন্য সিন্ধুর আমির ও পাঞ্জাবের রনজিৎ সিংহের সাথে পরি করে ইংরেজ বণিকদের ব্যবসায় বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত করেন। তিনি চা, কয়লা, লোহা ও দুর্লভ খনিজ দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসকল ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে তার গভর্নর জেনারেল থাকাকালীন পূর্বের যে ঘাটতি ছিল তা পূরণ হয়েও ১৫ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত দেখাতে সক্ষম হন।
২. শাসনতান্ত্রিক ও বিচার সংস্কার : প্রশাসনিক সংস্কার বা শাসন ও বিচার সংক্রান্ত সংস্কার বেন্টিকের রাজত্বকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বেন্টিংক ত্রুটিপূর্ণ বিচার ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার সাধনের জন্য কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত প্রাদেশিক বিচারালয় ও আপিল আদালতগুলো তুলে দিয়ে বিচারকার্যে অযথা বিলম্বরোধের চেষ্টা করেন। এছাড়া ফৌজদারি বিচারের ভার জেলা কালেক্টেরের উপর অর্পণ করেন। কেন্টিংক বিচারালয়গুলোতে ফারসি ভাষার পরিবর্তে স্থানীয় ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি ১৮৩৩ সালের চার্টার এ্যাক্ট পরিবর্তন করে সর্বপ্রথম ভারতীয়দেরকে গুণানুযায়ী বিচার ও শাসন বিভাগের উচ্চপদে নিয়োগ করেন। তার সময় ভারতীয়দের জন্য ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও সাবজর্জের পদ সৃষ্টি করা হয়। বেন্টিংক ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় জুরি ব্যবহার প্রবর্তন করে ভারতীয়দের জুরি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমগ্র দেশকে ২০টি বিভাগে ভাগ করে প্রতিটি বিভাগে একজন করে বিভাগীয় কমিশনার নিযুক্ত করেন। তার সময় তার পৃষ্ঠপোষকতায় ৬ জন নবনিযুক্ত আইন সদস্যের প্রচেষ্টায় বিখ্যাত ভারতীয় পেনাল কোড রচিত হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরগণের দায়িত্ব একই ব্যক্তির উপর অর্পণ করা হয়। এছাড়া কোম্পানির কর্মচারীদের কাজকর্ম সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য একটি ব্যবস্থা তিনি করেন। তিনি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য এলাহাবাদে একটি বোর্ড অব রিভিনিউ স্থাপন করেন। বেন্টিংকের শাসনামলে বিচার ও শাসন ক্ষেত্রে এ সমস্ত ব্যবস্থা ও সংস্কার সাধনের ফলে কোম্পানির শাসনব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক উন্নত হয় ।
৩. সামাজিক সংস্কার ঃ বেন্টিংকের সংস্কার কার্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা। সামাজিক সংস্কারের জন্যই বেন্টিংক ভারত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৮২৯ সালে তিনি সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। সে সময় স্বামী মারা গেলে একই চিতায় স্ত্রীকেও ইচ্ছা বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুড়ে মারা হতো। সতীদাহ প্রথা ছিল দু' ধরনের একটা ছিল। সহমরণ অর্থাৎ স্বামী মারা গেলে একই চিতায় স্ত্রীকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুড়ে মারা। অন্যটি ছিল দূর দেশে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে একাকী ইচ্ছা বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুড়িয়ে মার হতো। এ প্রথা ছিল একবারে অমানবিক। প্রগতিশীল ব্যক্তি মাত্রই এ বীভৎস ও অমানুষিক অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করতে লাগলেন। লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনকাল থেকে কোম্পানি সতীদাহ প্রথা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। এজন্য ইংরেজ কর্মচারীগণকে এ বিষয়ে মনোযোগী হতে বলা হয়েছিল।
ইতঃপূর্বে লর্ড ওয়েলেসলি সতীদাহ প্রথা নিবারণার্থে সদর নিয়ামত আদালতের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। তারা এ প্রথা একবারে উঠিয়ে না দিয়ে কতকগুলো কঠোর নিয়মকানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছিলেন। লর্ড মিন্টোর শাসনকালে এ সুপারিশ কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মচারীর বিনা অনুমতিতে সতীদাহ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। লর্ড হেস্টিংসের শাসনামলে ডাইরেক্টর সভা এ অমানুষিক প্রথা বিলোপের নির্দেশ প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয়দের ধর্মে আঘাত দেওয়া সমীচীন হবে না মনে করে লর্ড আমহাস্ট সতীদাহ নিবারণের চেষ্টা করতে সাহসী হন নি । লর্ড বেন্টিংক অবশ্য সতীদাহ প্রথা নিবারণের জন্য কৃৎসংকল্প ছিলেন। তিনি শিক্ষিত উদারপন্থি হিন্দু নেতৃবর্গ এবং সদর নিয়ামত আদালতের জজদের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছিলেন। পিন্স দারকানাথ ঠাকুর ও রামমোহন রায়ের নাম এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ১৮২৯ সালে বেন্টিংক এক আদেশের মাধ্যমে নৃশংস সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন করার চেষ্টা করেন। এতে তিনি শুধু আইন পাস করে ক্ষান্ত হন নি, আইন অমান্যকারীদের শাস্তিরও বিধান করেন।
বেন্টিংকের সামাজিক সংস্কারের একটি অন্যতম দিক হল ঠগি দমন। ঠগিদের অত্যাচার বহু পূর্ব হতেই নিরাপদ প চলার অসুবিধা সৃষ্টি করেছিল। মুঘল সম্রাট আকবর এটোয়া জেলায় পাঁচ শত ঠগিকে হত্যা করেছিলেন। ফরাসি পর্যটক খেতেনা-এর বর্ণনা থেকে আওরঙ্গজেবের আমলে ঠগিদের অত্যাচারের কথা পাওয়া যায়। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিনের ঠগিদের অত্যাচারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। তারা অতর্কিত আক্রমণ করে गा লাগিয়ে হত্যা করে তাদের অর্থ ও জিনিস পত্রাদি আত্মসাৎ করত। বেন্টিংক কর্নেল শ্রীম্যানকে ঠগিদের দমনের ভার অর্পন করেন। শ্ৰীম্যান ফেরিস্মিয়া নামে জনৈক ঠগির কাছ থেকে ঠগিদের গোপন ঘাঁটির সংবাদ পেয়ে কঠোর হস্তে তাদের দমন করেন। ফলে অনেকের মতে প্রায় দেড় হাজার ঠগি দস্যুদল মারা যায়। ফলে জনসাধারণ ঠগি নামে দস্যুদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পান এবং শান্তিতে বেড়াতে পারতেন।
বেন্টিংকের সময় সামাজিক ক্ষেত্রে আরো কিছু কুসংস্কার ছিল যা তিনি দূর করেন। তৎকালীন হিন্দু রীতি অনুসারে প্রথম সন্তানকে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া। বিবাহ দিতে অসুবিধা বিধায় কন্যা সন্তানকে হত্যা এবং কোন কোন অঞ্চলে নরবলি প্রচলিত ছিল। বেন্টিংক এসকল অমানবিক প্রথার বিলোপ সাধন করেন তথা এ প্রথাগুলোর বিলোপ সাধন করার জন্য তিনি কেবল আইন পাস করে ক্ষান্ত হন নি। আইন অমান্যকারীদের শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিলেন।
৪. শিক্ষা সংস্কার : লর্ড বেন্টিংক শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অবদান রাখেন তা ছিল ভারত ইতিহাসে বিখ্যাত। বেন্টিংকের শিক্ষা সংস্কারের অন্যতম হল পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন করা। ১৮১৩ সালের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বাৎসরিক অন্তত এক লক্ষ টাকা ব্যয় করতে বাধ্য ছিলেন। এ অর্থ কেবলমাত্র সংস্কৃত ফারসি প্রথা (প্রাচ্য) ভাষা শিক্ষার জন্য বায় হতো। ১৮৩৩ সালে বেন্টিংক ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য অর্থ ব্যয়িত হবে স্থির করলে একসূত্রে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তদানীন্তন ব্রিটিশ সেক্রেটারি গ্রিপ ও বিখ্যাত ঐতিহাসিক উইলিসন প্রাচ্য ভাষা শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয় করার পক্ষপাতী ছিলেন। গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য লর্ড মেকলে ছিলেন ইংরেজি শিক্ষাদানের পক্ষপাতী। রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ কলকাতার শিক্ষিত হিন্দু সমাজ পাশ্চাত্য শিক্ষায় পক্ষপাতী ছিলেন। ১৮৩৫ সালের ৭ মার্চ বেন্টিংক ও তার কাউন্সিল ইংরেজি শিক্ষার জন্য সরকারি অর্থ ব্যয়িত হবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। ফলে সেই বছরেই অর্থাৎ ১৮৩৫ সালে লর্ড বেন্টিংকের প্রচেষ্টায় কলিকাতায় মেডিক্যাল কলেজ ও বোম্বাই এর এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউশন স্থাপিত হয়। ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার অবাধ প্রসারের পথ উন্মুক্ত হয়।
মূল্যায়ন : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ভারতবাসীর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ দিলেও সমালোচনার উর্ধ্বে ছিলেন না । ঐতিহাসিক ঘনটন-এর মতে, বেন্টিংক নিজের যশ ও খ্যাতির প্রতি অধিকতর মনোযোগী ছিলেন। তিনি তার শাসনামলকে ফলাফল শূন্য বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, উনিশ শতকের গোড়ায় যেসব গভর্নর জেনারেল ভারতে আসেন তাদের কেউ বেন্টিংকের মত নিজের খ্যাতি লাভের জন্য ভারতবাসীর স্বার্থকে গৌণ স্থান দেন নি। তিনি যে সকল কার্য করেন-
ক. তিনি শাসনব্যবস্থায় ভারতবাসীর অংশীদারিত্বের কথা বললেও হাতে কলমে তা কিছু ছিল না।
খ. ভারতীয়দের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের নিয়ম তিনি করলেও তা পুরোপুরি কার্যকরী হয় নি ।
গ. ভারতবাসীর মঙ্গল সাধনের জন্য যদিও বেন্টিংক অনেক হিতবাদী মতামত দেন তবুও একমাত্র সতীদাহ প্রথা বন্ধ ও
ঠগি দমন ছাড়া কিছু করতে পারেন নি।
ঘ.
বেন্টিংক রাজা রামমোহন রায়-এর ন্যায় পণ্ডিতের পথিকৃতের পথ প্রদর্শক হিসেবে এ হাওয়ায় পাল খাটিয়ে দু'একটি সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্কার সাবধানতার সাথে সম্পাদন করেন মাত্র। কোন আমূল পরিবর্তন সাধনের চেষ্টা তিনি করেন নি।
রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, বেন্টিংকের তথাকথিত সংস্কারবাদের আড়ালে ইংল্যান্ডের শিল্পপতি, বণিক ও ধনতন্ত্রীদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা লক্ষ করা উচিত। তবে এত কিছু সত্ত্বেও তার সংস্কার কার্য প্রশংসনীয় ছিল বলা যায়। ভারতীয় সমাজে কুসংস্কার দূরীকরণ, ভারতীয় ও ইংরেজ কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ, ভারতীয়দের শিক্ষাদীক্ষার উন্নতি সাধন প্রভৃতির জন্য লর্ড মেকলে উইলিয়াম বেন্টিংকের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনিই সর্বপ্রথম প্রাচ্যদেশীয় অত্যাচারী শাসনের স্থলে ব্রিটিশ স্বাধীনতার আস্বাদ ভারতবাসীকে দিয়েছিলেন। তাই নিরপেক্ষ বিচারে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, তিনি কোম্পানির আর্থিক অনটন দূর করে কোম্পানির বাৎসরিক আয় ব্যয়ের ঘাটতি পূরণ করে প্রতি বছর যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব উদ্বৃত্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়া প্রশাসনিক, সামাজিক, শিক্ষা সংক্রান্ত সংস্কার সাধনের পশ্চাতে জনকল্যাণের ইচ্ছাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। এ সকল কারণে বেন্টিংক ভারতবাসীর কৃতজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং তার নাম ভারত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
উপসংহার : অতএব শেষান্তে বলা যায়, লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ভারতবর্ষের ইতিহাসে যোদ্ধা হিসেবে নয়; সংস্কারক হিসেবে সবিশেষ পরিচিত ছিলেন। তার সমাজ ও শিক্ষা সংক্রান্ত সংস্কার ছিল ভারতবাসীর জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা। তার সংস্কার কার্যের ফলে ভারতের ইতিহাসে গতির পরিবর্তন হয়েছিল। তার কৃতিত্ব সম্পর্কে মেকলে বলেন, বেন্টিংক এক মুহূর্তের জন্য তার এ কর্তব্য বিস্মৃত হন নি যে শাসিত প্রজাদের মঙ্গল সাধন করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই বলা যায়, বেন্টিংকের সংস্কারের ত্রুটি থাকলেও তা ভারতের কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে যত গভর্নর জেনারেল আসেন তাদের মধ্যে তিনি প্রশংসনীয় ছিলেন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত