১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পটভূমি ব্যাখ্যা কর। এটাকে কি আতীয় অভ্যুত্থান - জাতীয় আন্দোলন বলা হয়?

ভুমিকা ও পরিবর্তনই হল ইতিহাসের মূল ধর্ম। ইতিহাসের এ নিয়মের ধারাবাহিকতায় যেমন অনেক দোলন বিবরণ পাওয়া যায়, তেমনি ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনব্যবস্থার অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের জন্য সংগঠিত হয় বিদ্রোহ। তবে হঠাৎ করে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয় নি। এর জন্য দায়ী ছিল ব্রিটিশ সরকারের সুদীর্ঘ একশ বছরের শোষণ ও নির্যাতন। নির্যাতনের মাত্রা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে তখন ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের একদিকে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, অন্যদিকে দেশীয় সিপাহিদের অসন্তোষ ছিল এ বিদ্রোহের জন্য দায়ী।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পটভূমি/কারণ : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার জন্য অনেক কারণ ও ঘটনা দামী ছিল, যা বিপ্লব/বিদ্রোহ সংঘটনের পথ সুগম করে দেয়। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হল ঃ
১. রাজনৈতিক কারণ : ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পিছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হ
ক. স্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ : রাজনৈতিক কারণের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি ছিল অনেকটা দায়ী। কারণ, এ নীতি প্রয়োগ করে তিনি সাতারা, সম্বলপুর, নাগপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অধিকার এবং নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করে দেন। এছাড়া তিনি তাজোর ও কর্ণাটের রাজপরিবারের ভাতা বন্ধ করে দেন। অযোধ্যা রাজ্যটি কুশাসনের অজুহাতে অধিকার করে নেন। যা জনসাধারণের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
খ. নাগপুর ও অযোধ্যা লুন্ঠন : ডালহৌসির অন্যতম একটি ন্যক্কারজনক কাজ ছিল, নাগপুরের রাজপ্রাসাদ ও অযোধ্যার নবাবের প্রাসাদ লুন্ঠন করা। এ কাজ তদানীঙন ভারতের দেশীয় রাজাগণের মনে এক দারুণ বিক্ষোভ ও সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। বলপূর্বক নাগপুর প্রাসাদের গরু, ঘোড়া, হাতি, মণিমুক্তা ও আসবাবপত্র নিয়ে গিয়ে নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় করার পশ্চাতে ব্রিটিশ স্বার্থপরতার হীন প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। অযোধ্যার নবাবের প্রাসাদ হতে নবাব পরিবারের কন্যাদের পর্যন্ত বের করে দিয়ে বলপূর্বক নবাবের কোষাগার লুণ্ঠন করা হয়। এ অত্যাচারী নীতি সমগ্র ভারতে এক ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি করেছিল।
গ. অযোধ্যার দুর্দশা : অযোধ্যার নবাবের সাহায্যের উপর নবাব পরিবারের সাথে সম্পর্কিত বহু সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা নির্ভরশীল ছিলেন। দেশীয় শাসনব্যবস্থার এ চিরাচরিত নীতি কেবল অযোধ্যায় নয় দেশের অন্যান্য অংশেও প্রচলিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ অধিকারের পর অযোধ্যার এরূপ বহুপরিবার অর্থ সাহায্যের অভাবে অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। অলংকারপত্র এবং অপরাপর সামগ্রি বিক্রয় করে তাদের দিন যাপন করতে হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার অবশ্য শেষ পর্যন্ত এ সকল পরিবারের ভাতার বন্দোবস্ত করেছিলেন বটে, কিন্তু এটা কার্যকরী হওয়ার পূর্বেই বহু সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাদেরও রাত্রিতে অপরের কাছে খাদ্যদ্রব্য ভিক্ষা করতে হয়েছিল।
ঘ. নতুন রাজস্ব ব্যবহার ত্রুটি : সমকালীন সময়ে অযোধ্যায় নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। নতুন রাজস্ব নীতির ফলে অসংখ্য তালুকদার তাদের জমিদারিচ্যুত হয়েছিলেন। তাদের অনুচর বাহিনী ও দুর্গাদি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। অ বাধ্যার চিরাচরিত বিচারব্যবস্থার স্থলে নতুন বিচারব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছিল; যা ছিল ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। ফলে জনসাধারণের মনে অসন্তোষের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
২. সামাজিক কারণ : ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল : ক. ভারতবাসীর প্রতি ঘৃণা : বিদ্রোহের প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্ব হতে ব্রিটিশ শাসকবর্গের ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা এবং ভারতীয়দের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার মনোবৃত্তি ভারতবাসীর কাছে প্রকট হয়ে উঠেছিল। 'সিয়ার উল মুতখেরিন' গ্রন্থে ব্রিটিশ কর্মচারীবর্গের ভারতীয়দের এরূপ মনোভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়ারেন হেস্টিংসও একথা তাঁর এক পত্রে উল্লেখ করেছিলেন।
খ. শাসক ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধান : শাসক ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধানও ছিল এ বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার জন্য দায়ী। ব্রিটিশ শক্তির গোড়াপত্তন হয়েছিল ভারতে। কারণ, তারা একসময় ছিলেন এদেশীয় নৃপতিদের কাছে করুণাপ্রার্থী। কিন্তু এর শত বছর পর জনৈক শিক্ষিত হিন্দু বাঙালি অভিযোগ করেন যে, দীর্ঘকাল শাসনের পরও ইংরেজ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন প্রকার সৌহার্দ্য বা পরস্পর শ্রদ্ধার ভাব গড়ে উঠে নি। ভারতবাসীর প্রতি সাত সমুদ্র তের নদীর অপর পারের ইংরেজদের এরূপ ব্যবহার, উদার মনোবৃত্তিসম্পন্ন কোন কোন ব্রিটিশ কর্মচারীর মনঃপুত ছিল না।
লেফটেন্যান্ট ভার্নে এর রচনায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, “ব্রিটিশ কর্মচারীবর্গের সাথে ভারতীয়দের কোন প্রকার মেলামেশা ছিল না। যদি কোন কারণে কোন ভারতবাসীকে ব্রিটিশ কর্মচারীর কাছে আসতে হতো, তাহলে সে সাক্ষাতের পর ব্রিটিশ কর্মচারীর প্রতি তার ঘৃণা বৃদ্ধি পেত। ” গ. ব্রিটিশ কর্মচারীবর্গের ব্যাভিচার : ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন, রেলপথ, টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা, সতীদাহ দমন প্রভৃতি সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যাদি যুক্তির দিক দিয়ে সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য হলেও অপরাপর কারণ এবং ব্রিটিশ শাসকবর্গের শাসিতদের হতে বিচ্ছিন্ন থাকার মনোবৃত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ঐগুলো ভারতবাসীর কাছে দুরভিসন্ধি বলে প্রতিভাত হয়েছিল। ব্রিটিশ সামরিক কর্মচারীবর্গের ব্যভিচার, স্ত্রীলোক নিয়ে হারেম গঠন প্রভৃতি অনৈতিকতা সমসাময়িক ভারতবাসীর চোখে ব্রিটিশদের হেয় প্রতিপন্ন করেছিল।
৩. অর্থনৈতিক কারণ : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণসমূহ নিম্নরূপ : ক. দেশীয় শিল্পের অপমৃত্যু : বাংলার ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তনের সময় হতে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পূর্ববর্তী একশ বছর ধরে ইংরেজগণ যে পরিমাণ সোনা, রূপা প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু ভারতবর্ষ থেকে নিয়ে গিয়েছিল। তার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ব্রিটিশ অধিকৃত রাজ্যের প্রজাবর্গের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। ফলে অসন্তোষ বেড়ে যায় ।
খ. জনসাধারণের আর্থিক দুরবস্থা : ইংরেজদের আমলে নতুন নতুন রাজস্ব নীতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। এছাড়া বিলেতি শিল্পজাত দ্রব্যাদির আমদানির ফলে দেশীয় ক্ষুদ্র শিল্পগুলো ক্রমে বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছিল। ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনে পূর্বের বিদ্বান সমাজের সমাদর হ্রাস পেয়েছিল। দেশীয় সংস্কৃত বা ফারসি ভাষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের জীবিকার্জনের পন্থা ক্রমেই লোপ পেয়েছিল। বিদ্রোহের সময় হিন্দু ও মুসলিমদের যুগ্ম ঘোষণায় জনসাধারণের আর্থিক অবনতি স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। চৌকিদারি কর বৃদ্ধি, পথকর স্থাপন, যানবাহনের উপর কর স্থাপন প্রভৃতি জনসাধারণের দুর্দশা বৃদ্ধি করেছিল।
গ. সৈনিকদের আর্থিক দুরবস্থা : অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভারতীয় সৈনিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজিত ছিল। কারণ, সাধারণ একজন সিপাহির বেতন ছিল মাসিক ৯০০ টাকা। সোয়ার অর্থাৎ অশ্বারোহী সৈনিকদের অবস্থা কোন অংশে উন্নত ছিল না। তাদের বেতন অধিক ছিল বটে, কিন্তু তাদের বেতন হতে নানা খাতে কিছু কিছু কেটে রাখা হতো । মোট ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৫২০ জন সিপাহি এবং দেশীয় অফিসারের জন্য ৯৮ লক্ষ পাউণ্ড ব্যয় করা হতো অথচ, মাত্র ৫১ হাজার ৩১৬ জন ইউরোপীয় অফিসার ও সৈনিকদের পশ্চাতে মোট ৫৬ লক্ষ ৬৮ হাজার পাউণ্ড ব্যয়িত হতো। দেশীয় রাজগণের হাত হতে শাসনভার ব্রিটিশদের হাতে চলে যাওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে বহু সম্ভ্রান্ত এবং সচ্ছল পরিবার চরম দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
৪. সামরিক কারণ ঃ ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পশ্চাতে বিদ্যমান সামরিক কারণসমূহ নিম্নরূপ : ক. বৈষম্যমূলক ব্যবহার : বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সেনাবাহিনীর অসন্তোষ। মানা কারণে এ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। ইউরোপীয়দের তুলনায় ভারতীয় সৈনিকদের বেতনের স্বল্পতা সৈনিকদের মধ্যে স্বভাবতই বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলেছিল। প্রধানত সিপাহিদের সাহায্যেই ইংরেজগণ ভারতবর্ষে এক বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য জয় করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এ সাম্রাজ্য জয়ে সাহায্যের বিনিময়ে তারা কোন প্রকার আর্থিক সুযোগ সুবিধা পায় নি। কিন্তু ব্রিটিশ সৈনিকদের তুলনায় তাদের বেতন এত অল্প ছিল যে, তারা এ বৈষম্যমূলক ব্যবহারে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছিল। এ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা তাদের অন্তরকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে দিয়েছিল।
খ. ব্রিটিশ সামরিক কর্মচারীদের কটূক্তি : ইংরেজ সামরিক কর্মচারীদের ব্যবহার যেমন ছিল উদ্ধৃত তেমনি অপমানজনক। দেশীয় সৈন্যদেরকে তারা নিগার, শুয়ার প্রভৃতি গালিগালাজ না দিয়ে কথা বলত না। দেশীয় ভাষা তারা জানত না বটে, কিন্তু গালিগালাজে প্রয়োজীয় কথাগুলো শিখে নিতে বিলম্ব করে নি। ঊর্ধ্বতন কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সিপাহিরা প্রতিকার পেত না। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে ব্রিটিশ কর্মচারী ও সিপাহিদের সম্পর্ক এরূপ ছিল না। তখন ব্রিটিশ সামরিক কর্মচারীবর্গ যথেষ্ট উদারতা প্রদর্শন করত। কিন্তু ক্রমে তাদের ব্যবহার আপত্তিকর হয়ে উঠেছিল।
গ. পদোন্নতির সুযোগের অভাব : পদোন্নতির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ও দেশীয়দের মধ্যে বৈষম্য করা হতো। ভারতীয় অফিসার ও সিপাহিদের মধ্যে পদোন্নতির আশা ছিল না। অভিজ্ঞ ভারতীয় অফিসারদের দাবি অগ্রাহ্য করে অনভিজ্ঞ ইউরোপীয় অফিসারগণকে দায়িত্বপূর্ণ কার্যে নিযুক্ত করা হতো। এর ফলে ইউরোপীয় অফিসার ও সৈনিকদের বিরুদ্ধে দেশীয় অফিসার ও সিপাহিদের বিদ্বেষ ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এভাবে দেখা যায় প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় ।
৫. ধর্মীয় কারণ ঃ ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পশ্চাতে ধর্মীয় কারণও বিদ্যমান ছিল। নিম্নে তা আলোচনা
ক. ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা : ইউরোপীয় ও ভারতীয়দের মধ্যে যখন এ ধরনের অসযোগ বৃদ্ধি পেয়েছিল, ইউরোপীয় খ্রিস্ট ধর্মযাজকেরা হিন্দু ও মুসলমানগণকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা অগ্নিতে ঘৃতাহুতির কাজ। রেভারেন্ড গোপীনাথ নন্দী নামে জনৈক ভারতীয় ধর্মান্তরিত খ্রিস্টযাজকের বিবরণ হতে যে সমর খ্রিস্ট পদ্ধতির কথা অবগত হওয়া যায়। সিপাহিদের কাছে পাদ্রিরা খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিত। জেলখানা
কাছে পাদ্রিদের অবাধ যাওয়া আসার সুযোগ ছিল। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যেই দর্শ করার চেষ্টা চলছিল। খ. সতীদাহ দমন ও বিধবা বিবাহ প্রচলন। ভারতে সতীদাহ প্রথা দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ সরকার এটা রহিত করেন। এছাড়া বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন। যা ছিল ভারতীয়দের মধ্যে জনে অন্যতম কারণ। ভোলার সিপাহি বিদ্রোহের কারণ ছিল সিপাহিদের চামড়ার টুপি পরিধানের এবং আদেশ। ব্যারাকপুরে সিপাহিদের অসন্তোষের অন্যতম কারণ হল সমুদ্র অতিক্রম করে ব্রহ্মদেশে যাওয়ার আদেশ।
৬. প্রত্যক্ষ কারণ ঃ মহাবিদ্রোহের পিছনে একটি প্রত্যক্ষ কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে সে কারণটি আলোচনা করা হল : ক. এনফিল্ড রাইফেলের প্রচলন : রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে যখন বিদ্রোহের প্র হয়েছে, তখন চর্বি মাখানো কার্তুজ, বারুদ স্তূপে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের কাজ করেছিল। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার 'ি রাইফেল' নামে এক প্রকার নতুন ধরনের বন্দুকের প্রচলন করলেন। এ বন্দুকের কার্তুজ দাঁতে কেটে বন্দুরে পুরতে হতো। গরু ও শূকরের চর্বি মাখানো কার্তুজ স্বভাবতই হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে ধর্ম নাশের সূক্ষ্ম পন্থা বলে মনে হল। স্বভাবতই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এক দারুণ বিক্ষোভের সূচনা হলে ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাে নামক জনৈক সিপাহি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এভাবে বিদ্রোহ সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
৭. সিপাহি বিদ্রোহ : সিপাহি বিদ্রোহ প্রথম ব্যারাকপুর থেকে মীরাট এবং সেখান থেকে সিপাহিগণ দিল্লিতে পৌছিে বাহাদুর শাহকে সমর্থন করেন। মীরাট ও দিল্লি উভয় স্থানে সিপাহিরা ব্রিটিশ সামরিক অফিসারদের হত্যা করতে দ্বিধা করেন নি। দিল্লি বিদ্রোহী সিপাহিগণ কর্তৃক অধিকৃত হয়ে সংবাদ পেয়ে পিরোজপুরে ও মুজ্জাফর নগরে সিপাহীগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। পাঞ্জাব, নৌসেরা প্রভৃতি স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। পরে অযোধ্যা ও বর্তমান উত্তর প্রদেশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এটোয়া মইনপুরী, রুরকী এটা, হোদাল, মথুরা, লক্ষ্ণৌ, বেরিলি, শাহজাহান পুর, মোরাদাবাদ, বোদা ও, আজন গড়, কানপুর, এলাহবাদ, ফৈজাবাদ, দরিয়াবাদ, ফতেপুর, ফতেগড়, হাতরস ও অপরাপর বহু স্থানে বিদ্রোহের আগুন জ্বল উঠে। বিদ্রোহীগণ জেলখানা ভেঙে বিদ্রোহীদের ছেড়ে দেয়। সরকারি খাজাঞ্চিখানা লুট করে। সিপাহিদের বিদ্রোহী ঘোষণার সাথে সাথে প্রায় প্রতিটি স্থানেই বেসামরিক জনসাধারণও বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
এ সুযোগে অযোধ্যায় সম্পত্তিচ্যুত তালুকদাররা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কৃষকগণও তালুকদারগণের পক্ষ গ্রহণ করে। ফলে বিদ্রোহ এক ব্যাপক জাতীয় বিদ্রোহে রূপান্তরিত হয়। মীরাট, দিল্লি, অযোধ্যা ভিন্ন কানপুরে নানা সাহেব, ঝাঁসিতে ঝাঁসির রাণী এবং জগদীশপুরে কুনওয়ার শিং এ বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে। দেওগড় এর সেনাবাহিনীও বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। কিন্তু বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করলেও তা ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে দমন করেন। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সিপাহি বিদ্রোহ না জাতীয় বিদ্রোহ : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না জাতীয় বিদ্রোহ ছিল এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভিন্ন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হল ঃ
ক. স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে মতামত :
১. ইংরেজ লেখক জে. বি নটন তাঁর "Topics for Indian Statesman' গ্রন্থে প্রথম লিখেছেন, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ একটি সামান্য সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না। এ অভ্যুত্থান একটি গণবিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল।
৩. জে. বি. নর্টনের বক্তব্যের সাথে ডাফ, কায়ে, বল, ম্যালেসন প্রভৃতি ইংরেজ লেখকও একমত পোষণ করেছেন এবং তাঁরা এ বিদ্রোহে ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার একটি সংঘটিত প্রয়াস দেখতে পেয়েছেন। রজনীকান্ত গুপ্ত তাঁর 'সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, সিপাহিরা জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইংরেজ শাসনের অবসান চেয়েছিল।
৪. বীর সাভারকারও ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি জাতীয় যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৫. ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী তাঁর 'Civil Rebellion in the Indian Mutinies' গছে ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলে ক্ষান্ত হন নি। তিনি এ বিদ্রোহকে একটি গণবিদ্রোহ বলে বর্ণনা করেছেন।
৬. কার্ল মার্কস 'New York Daily Tribune' পত্রিকায় ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রবন্ধে এটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, এর আগেও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিদ্রোহ কতকগুলো বৈশিষ্ট্যসূচক ও মারাত্মক লক্ষণে চিহ্নিত । এটাই প্রথম, সিপাহি বাহিনী হত্যা করল তাদের ইউরোপীয় অফিসারদের; মুসলমান ও হিন্দু পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মিলিত হয়েছে সাধারণ মনিবের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহ শুধু কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে নি, বরং এটি বিস্তৃত অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।
খ. সিপাহি বিদ্রোহের স্বপক্ষে মতামত : কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিক ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে সিপাহি বিদ্রোহ বলে মন্ত ব্য করেছেন । তাঁরা মন্তব্য করেছেন যে- Charles Raikes নামক একজন ইংরেজ বিচারপতি তাঁর 'Notes or the Revolting Northern Western Province of India' তে লিখেছেন, “১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিপাহি বিদ্রোহ। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব শিথিল হওয়ার ফলে কোন কোন অঞ্চলে ভারতে অশান্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।”
১৮৫৭ সালের ভারতীয় লেখক কিশোরী চাঁদ মিত্র লেখেন, “এ বিদ্রোহ ছিল অবশ্যই সিপাহি অভ্যুত্থান। এক লক্ষ সিপাহি এ বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। এ অভ্যুত্থানে গণবিদ্রোহের কোন ছিটেফোটাও ছিল না।” ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার জন লরেন্স ও সিলি এ বিদ্রোহকে “দেশদ্রোহী ও স্বার্থপর সিপাহিদের বিদ্রোহ” বলে আখ্যায়িত করেছেন । তাঁদের মতে, “এ বিদ্রোহের পিছনে কোন সংগঠিত নেতৃত্ব বা জনসমর্থন ছিল না ।”
L.E.R Reese এ বিদ্রোহকে ধর্মান্ধ হিন্দু-মুসলমানদের খ্রিস্টধর্ম বিরোধী জেহাদ হিসেবে দেখেছেন। সমসাময়িক ভারতীয় যেমন ঃ স্যার সৈয়দ আহমদ খান, জনৈক সামরিক কর্মচারী দুর্গাদাস বন্দ্যোপ্যাধায় প্রভৃতির মতেও এটা ছিল সিপাহি বিদ্রোহ ।
ড. আর. সি. মজুমদার The Sepoy Mutiny and The Revolt of 1857 এবং ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনের 'Eighteen Fifty Seven' এ দুইটি গ্রন্থে নতুন গবেষণালব্ধ তথ্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ড. মজুমদার ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের উপর ইংরেজ লেখক চার্লস বাইকসের মন্তব্য সমর্থন করে বলেন, “এ বিদ্রোহ প্রথম সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবেই শুরু হয়। কিন্তু পরে কোন কোন অঞ্চলে এটা ব্যাপক প্রসার লাভ করে জাতীয় আন্দোলনে রূপ লাভ করে । বর্তমান উত্তর প্রদেশের অধিকাংশ, মধ্য প্রদেশের কিছু ও বিহারের পশ্চিমাংশে এটা প্রায় জাতীয় বিদ্রোহের আকার ধারণ করেছিল। অন্যত্র এটা সিপাহি বিদ্রোহ ভিন্ন অন্য কিছু ছিল না। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংগ্রামের পিছনে সব সময় দেশপ্রেম দেখা যায় নি। ড. সেনও অনুরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বলেছেন যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রথম সিপাহিদের মধ্যে আরম্ভ হলেও সকল স্থানে এটা কেবল সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আবার অযোধ্যা ও সাহাবাদ ভিন্ন অন্যত্র বিদ্রোহীদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন এমন কিছু ছিল না, যা দ্বারা একে জাতীয় সংগ্রামের পর্যায়ে উন্নীত করা যেতে পারে। সুতরাং, তাদের উভয়ের মতামত এ বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলে অস্বীকার করা হয়েছে।
গ. উভয় মতের সমন্বয় সাধন : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ সমগ্র ভারতব্যাপী বিস্তৃত ছিল না। ভারতের বহু শাসক ও জমিদার শ্রেণী এ বিদ্রোহে ইংরেজদের দৃঢ় সমর্থন জানায়। সিপাহিদের মধ্যে বেঙ্গল আর্মি ছাড়া বাইরের অন্যান্য রেজিমেন্ট ও কোম্পানির মধ্যে কোন বিদ্রোহ দেখা যায় নি। শিখ ও খাঁ সেনারা কোম্পানির প্রতি আনুগত্য জানায় এবং দিল্লি ও লক্ষ্ণৌ এর বিদ্রোহ দমনে তারা মুখ্য ভূমিকা নেয়। ইংরেজি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও এ বিদ্রোহকে সমর্থন করেন নি। তবে ১৮৫৭ সালের সংঘটিত বিপ্লবকে স্থানীয় সিপাহি বিপ্লব বলে তুচ্ছ জ্ঞান করা সমীচীন নয়। ১৮৫৭ সালের বিপ্লব প্রথমে সিপাহিদের দ্বারা শুরু হলেও পরবর্তী পর্যায়ে এটা যে একটি জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করে তা অনেক ভারতীয় ও ইউরোপীয় ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন। ঐতিহাসিক V.A Smith এ প্রসঙ্গে বলেছেন, Discontent and unrest were widely prevelent among the civil population and in Several places the population rose before the Sepoys at those stations mutined. বড়লাট লর্ড ক্যার্নিং এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন যে, অযোধ্যা প্রদেশে বিদ্রোহ এক জাতীয় অভ্যূত্থানের আকার নিয়েছে। আগ্রার গুপ্তচর বিভাগের প্রধান উইলিয়াম মূর ১৮৫৭ সালের ২৫ আগস্ট এক চিঠিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইলসনকে জানান, “শুধু বিদ্রোহী সিপাহিরা নয়; জনসাধারণও আমাদের বিরোধী হয়ে উঠেছে। এ বিক্ষুব্ধ মানুষেরা দিনের পর দিন আমাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হচ্ছে এবং এটি অভ্যুত্থানের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।” বুলন্দশাহের জেলার তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট বরার্টসন তাঁর এক প্রতিবেদনে আক্ষেপ করে বলেন, সিপাহিরা বিদ্রোহ করতে পারে, কিন্তু শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীদের মানসিকতার এত দ্রুত পরিবর্তন কি করে এল তা আমি বুঝতে পারছি না। সুতরাং, সিপাহিদের বিদ্রোহের পাশাপাশি ভারতের বিপুলসংখ্যক মানুষের মনে যে ইংরেজ শাসন ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ধুমায়িত হয়েছিল তা বলা যায় ।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ যে স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল তার স্বপক্ষে প্রথমত, পৃথিবীতে যে সমস্ত স্বাধীনতা আন্দোলন
मক পর্যায়ে সীমিত অণ পরিবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। স্বাধীনতা আন্দোলনে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে যে সমর্থন করে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু আমেরিকান যোগ দেয় নি। ইতালির স্বাধীনতা যুদ্ধে তার স্পেন ও রাশিয়ায় ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু লোক নেপোলিয়নে জানায়। জার্মানির ঐক্য আন্দোলনেও দক্ষিণ জার্মানির অনেকেই ফ্রান্সের অনুগত ছি গোষ্ঠী সর্বদাই যে কোন জাতির মুক্তি সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা নেয়। অন্যরা নিষ্ক্রিয় নৈতিক সমর্থ । ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে তাই ঘটেছিল।
দ্বিতীয়ত, এটা সত্যই ভ্রান্তিকর যে, স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন নেতা ছিল না। মুঘল সাম্রাজ্যের গৌরব পুনরু জন্য ভারতের হিন্দু-মুসলমান সম্মিলিতভাবে বাহাদুর শাহকে নেতা নির্বাচিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয়তার প্রতীক। পেরি পরিশেষে বলা যায়, 'জাতীয় স্বাধীনতা' কথাটি বলতে আমরা বর্তমানে যা বুঝি ১৮৫৭ সালের লোকেরা । উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধ মাত্র অদুরে ছিল। যেসব লোক এ তাদের নানা উদ্দেশ্য ও মতলব থাকা সত্ত্বেও তারা যে সকলে এদেশ থেকে ইংরেজ বিতানের ব্যাপারে অবনত ছিে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে এ সংগ্রামকে অবশ্যই জাতীয় সान বলা যায়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল একটি অ কেননা, এ বিদ্রোহ ছিল সিপাহিদের দ্বারা প্রথমে সংঘটিত আন্দোলন যা পরে ভারতের আপামর জনসাধারণের সমর্থন দাত করেছিল বলে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। তবে এ বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেকে বিভিন্ন মতামত ব্যক করেছেন। কারণ, একদল বলেছেন যে, এটা সিপাহিদের বিদ্রোহ। অন্যদল বলেছেন যে, এটা প্রথমে সিপাহিদের দ্বারা শুরু হয় এবং পরে তা সারা ভারতবাসীর সক্রিয় আন্দোলনে রূপ নেয়। তবে এটা সফল না হলেও ভারতীয়দের মধ্যে চেতনাবোধ জাগাতে অনেকটা সহায়ক ছিল বলা যায়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]