১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর। এ বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় কেন?

ভূমিকা : পৃথিবীতে চিরস্থায়ী বলতে কিছুই নেই। আজ যে জাতি উন্নতির শীর্ষ শিখরে সমীচীন, কাল হয়ত তার অস্তিত্ব লোপ পাবে। ইতিহাসের চিরন্তন এ নিয়মেই যে বেনিয়ারা একদিন বাণিজ্য করার জন্য এদেশে আগমন করেন তারাই পরবর্তীতে উপমহাদেশে নৃপতির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়। এর ফলে দেখা যায়- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে, একদিকে জনসাধারণের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ না করা এবং অন্যদিকে কোম্পানির অত্যাচারের জন্য বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। যা ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ নামে খ্যাত।
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ এর প্রকৃতি ও পরিধি ঃ ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতি নির্ণয় করতে গিয়ে দুধরনের মতামত পাওয়া যায়। একদল মনে করেন যে, এটা ছিল ভারতবাসীর প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম। অন্যদিকে একদল ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এটা ছিল কেবলমাত্র সিপাহিদের বিদ্রোহ। তবে শেষে দুমতের সমন্বয় সাধন করা হয়। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ কি প্রথম জাতীয় সংগ্রাম ছিল না সিপাহি বিদ্রোহ ছিল এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল ঃ
>. 2. ক. স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে মতামত ঃ ইংরেজ লেখক জে. বি নটন তাঁর 'Topics for Indian Statesman' গ্রন্থে প্রথম লিখেছেন, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ একটি সামান্য সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না। এ অভ্যুত্থান একটি গণবিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল। জে. বি. নর্টনের বক্তব্যের সাথে ডাফ, কায়ে, বল, ম্যালেসন প্রভৃতি ইংরেজ লেখকও একমত পোষণ করেছেন এবং তাঁরা এ বিদ্রোহে ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার একটি সংঘটিত প্রয়াস দেখতে পেয়েছেন।
৩. রজনীকান্ত গুপ্ত তাঁর 'সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, সিপাহিরা জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইংরেজ শাসনের অবসান চেয়েছিল।
৪. কার্ল মার্কস New York Daily Tribune' পত্রিকায় ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রবন্ধে এটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, এর আগেও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিদ্রোহ কতকগুলো বৈশিষ্ট্যসূচক ও মারাত্মক লক্ষণে চিহ্নিত। এটাই প্রথম, সিপাহি বাহিনী হত্যা করল তাদের ইউরোপীয় অফিসারদের; মুসলমান ও হিন্দু পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মিলিত হয়েছে সাধারণ মনিবের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহ শুধু কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে নি, বরং এটি বিস্তৃত অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।
৫. বীর সাভারকারও ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি জাতীয় যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৬. ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী তাঁর 'Civil Rebellion in the Indian Mutinies' গ্রন্থে ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলে ক্ষান্ত হন নি। তিনি এ বিদ্রোহকে একটি গণবিদ্রোহ বলে বর্ণনা করেছেন। খ. সিপাহি বিদ্রোহের স্বপক্ষে মতামত : কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিক ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে সিপাহি বিদ্রোহ বলে মন্ত ব্য করেছেন। তাঁরা মন্তব্য করেছেন যে- Charles Raikes নামক একজন ইংরেজ বিচারপতি তাঁর 'Notes or the Revolting Northern Western Province of India' তে লিখেছেন, "১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি সিপাহি বিদ্রোহ। ব্রিটিশ কর্তৃত্ব শিথিল হওয়ার ফলে কোন কোন অঞ্চলে ভারতে অশান্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।”
১৮৫৭ সালের ভারতীয় লেখক কিশোরী চাঁদ মিত্র লেখেন, “এ বিদ্রোহ ছিল অবশ্যই সিপাহি অভ্যুত্থান। এক লক্ষ সিপাহি এ বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। এ অভ্যুত্থানে গণবিদ্রোহের কোন ছিটেফোটাও ছিল না।"
ইংরেজ ঐতিহাসিক স্যার জন লরেন্স ও সিলি এ বিদ্রোহকে "দেশদ্রোহী ও স্বার্থপর সিপাহিদের বিদ্রোহ” বলে আখ্যায়িত করেছেন । তাঁদের মতে, “এ বিদ্রোহের পিছনে কোন সংগঠিত নেতৃত্ব বা জনসমর্থন ছিল না।”
L.E.R Reese এ বিদ্রোহকে ধর্মান্ধ হিন্দু-মুসলমানদের খ্রিস্টধর্ম বিরোধী জেহাদ হিসেবে দেখেছেন। সমসাময়িক ভারতীয় যেমন ঃ স্যার সৈয়দ আহমদ খান, জনৈক সামরিক কর্মচারী দুর্গাদাস বন্দ্যোপ্যাধায় প্রভৃতির মতেও এটা . ছিল সিপাহি বিদ্রোহ । ড. আর. সি. মজুমদার The Sepoy Mutiny and The Revolt of 1857 এবং ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনের 'Eighteen 'Fifty Seven' এ দুইটি গ্রন্থে নতুন গবেষণালব্ধ তথ্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
ড. মজুমদার ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের উপর ইংরেজ লেখক চার্লস বাইকসের মন্তব্য সমর্থন করে বলেন, “এ বিদ্রোহ প্রথম সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবেই শুরু হয়। কিন্তু পরে কোন কোন অঞ্চলে এটা ব্যাপক প্রসার লাভ করে জাতীয় আন্দোলনে রূপ লাভ করে । বর্তমান উত্তর প্রদেশের অধিকাংশ, মধ্য প্রদেশের কিছু ও বিহারের পশ্চিমাংশে এটা প্রায় জাতীয় বিদ্রোহের আকার ধারণ করেছিল। অন্যত্র এটা সিপাহি বিদ্রোহ ভিন্ন অন্য কিছু ছিল না। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংগ্রামের পিছনে সব সময় দেশপ্রেম দেখা যায় নি। ড. সেনও অনুরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বলেছেন যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রথম সিপাহিদের মধ্যে আরম্ভ হলেও সকল স্থানে এটা কেবল সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। আবার অযোধ্যা ও সাহাবাদ ভিন্ন অন্যত্র বিদ্রোহীদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন এমন কিছু ছিল না, যা দ্বারা একে জাতীয় সংগ্রামের পর্যায়ে উন্নীত করা যেতে পারে । সুতরাং, তাদের উভয়ের মতামত এ বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলে অস্বীকার করা হয়েছে।
গ. উভয় মতের সমন্বয় সাধন : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ সমগ্র ভারতব্যাপী বিস্তৃত ছিল না। ভারতের বহু শাসক ও জমিদার শ্রেণী এ বিদ্রোহে ইংরেজদের দৃঢ় সমর্থন জানায়। সিপাহিদের মধ্যে বেঙ্গল আর্মি ছাড়া বাইরের অন্যান্য রেজিমেন্ট ও কোম্পানির মধ্যে কোন বিদ্রোহ দেখা যায় নি। শিখ ও খাঁ সেনারা কোম্পানির প্রতি আনুগত্য জানায় এবং দিল্লি ও লক্ষ্ণৌ এর বিদ্রোহ দমনে তারা মুখ্য ভূমিকা নেয়। ইংরেজি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও এ বিদ্রোহকে সমর্থন করেন নি। তবে ১৮৫৭ সালের সংঘটিত বিপ্লবকে স্থানীয় সিপাহি বিপ্লব বলে তুচ্ছ জ্ঞান করা সমীচীন নয়। ১৮৫৭ সালের বিপ্লব প্রথমে সিপাহিদের দ্বারা শুরু হলেও পরবর্তী পর্যায়ে এটা যে একটি জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ লাভ করে তা অনেক ভারতীয় ও ইউরোপীয় ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন
। ঐতিহাসিক V.A Smith এ প্রসঙ্গে বলেছেন, Discontent and unrest were widely prevelent among the civil population and in Several places the population rose before the Sepoys at those stations mutined. বড়লাট লর্ড ক্যার্নিং এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন যে, অযোধ্যা প্রদেশে বিদ্রোহ এক জাতীয় অভ্যূত্থানের আকার নিয়েছে। আগ্রার গুপ্তচর বিভাগের প্রধান উইলিয়াম মূর ১৮৫৭ সালের ২৫ আগস্ট এক চিঠিতে ব্রিগেডিয়ার "জেনারেল উইলসনকে জানান, “শুধু বিদ্রোহী সিপাহিরা নয়; জনসাধারণও আমাদের বিরোধী হয়ে উঠেছে। এ বিক্ষুব্ধ মানুষেরা দিনের পর দিন আমাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হচ্ছে এবং এটি অভ্যুত্থানের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।” বুলন্দশাহের জেলার তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট বরার্টসন তাঁর এক প্রতিবেদনে আক্ষেপ করে বলেন, সিপাহিরা বিদ্রোহ করতে পারে, কিন্তু শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীদের মানসিকতার এত দ্রুত পরিবর্তন কি করে এল তা আমি বুঝতে পারছি না। সুতরাং, সিপাহিদের বিদ্রোহের পাশাপাশি ভারতের বিপুলসংখ্যক মানুষের মনে যে ইংরেজ শাসন ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ধূমায়িত হয়েছিল তা বলা যায়।
এছাড়া ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ যে সিপাহি বিদ্রোহ তার স্বপক্ষে আরো কিছু যুক্তি দেখানো হল : প্রথমত, পৃথিবীতে যে সমস্ত স্বাধীনতা আন্দোলন সংঘটিত হয় তা প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত জনগণ ও পরিবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। স্বাধীনতা আন্দোলনে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে যে সমর্থন করতে হবে এমন আশা করা যায় না । আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু আমেরিকান যোগ দেয় নি। ইতালির স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু ইতালিও অস্ট্রিয়ার সমর্থক ছিল। স্পেন ও রাশিয়ায় ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু লোক নেপোলিয়নের প্রতি আনুগত্য জানায়। জার্মানির ঐক্য আন্দোলনেও দক্ষিণ জার্মানির অনেকেই ফ্রান্সের অনুগত ছিল। আসলে একটি সক্রিয় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গোষ্ঠী সর্বদাই যে কোন জাতির মুক্তি সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা নেয়। অন্যরা নিষ্ক্রিয় ও নৈতিক সমর্থন জানায়। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে এটাই ঘটেছিল।
দ্বিতীয়ত, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে কোন নেতা ছিল না। মুঘল সাম্রাজ্যের গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য ভারতের হিন্দু-মুসলমান সম্মিলিতভাবে বাহাদুর শাহকে নেতা নির্বাচিত করেছিলেন। তিনিই ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয়তার প্রতীক ।
এছাড়া আমরা যদি আধুনিককালের সাথে বিচার করি তাহলে এ বিদ্রোহের প্রকৃতি/স্বরূপ বিচার করা ঠিক নয়। কারণ, উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধ মাত্র অঙ্কুরে ছিল। যেসব লোক এ সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল তাদের নানা উদ্দেশ্য ও মতলব থাকা সত্ত্বেও তারা সকলে যে এদেশ থেকে ইংরেজ বিতাড়নের ব্যাপারে একমত ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে এ সংগ্রামকে অবশ্যই জাতীয় সংগ্রাম বলা যায় । ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার জন্য অনেক কারণ দায়ী ছিল । যথা :
১. সংহতির অভাব : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের বিফলতার বিভিন্ন কারণের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বিদ্রোহীদের কর্মপন্থা, সময় প্রভৃতি সম্পর্কে উপযুক্ত যোগাযোগ বা সংহতি ছিল না। ফলে একই সময়ে সকল স্থানে বিদ্রোহ যেমন শুরু হয় নি তেমনি সর্বত্র নীতি বা কর্মপন্থা অনুসৃত হয় নি
I ২. আঞ্চলিক সীমার সীমাবদ্ধতা : নানা সাহেব ও বাহাদুর শাহের মধ্যে স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। নানা সাহেব পেশওয়া এবং মারাঠা প্রাধান্য পুনঃস্থাপনের জন্য সচেষ্ট ছিলেন। অপরপক্ষে, বাহাদুর শাহ স্বভাবতই চান মুঘল প্রাধান্য পুনরুজ্জীবিত করতে ।
৩. সুযোগ্য নেতার অভাব : বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহ দেখা দেওয়ার ফলে তা আঞ্চলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। দক্ষিণ ভারতে এ বিদ্রোহের বিস্তৃতি ঘটে নি। যে অঞ্চলে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেখানে সুযোগ্য নেতার অভাব ছিল। ঝাঁসির রাণী, নানা সাহেব, তাতিয়া, তোপী, কুনওয়ার সিং প্রভৃতি নেতৃবর্গ স্ব-স্ব এলাকায় সুযোগ্য নেতৃত্বের পরিচয় দিলেও ব্যাপক বিদ্রোহের সামগ্রিক পরিচালনা ক্ষমতা কারো ছিল না।
৪. ব্রিটিশ উন্নত কলাকৌশল : বিদ্রোহে পরাজয়ের কারণগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ কূটকৌশলেরও উল্লেখ করা যায়। ভীতি প্রদর্শন করে এবং প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত পুরস্কারের প্রলোভনে তারা অনেককেই স্বপক্ষে টানতে সক্ষম হন। শিখদের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কৌশল সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হয়েছিল। দশ বছর পূর্বে ব্রিটিশ সরকার পাঞ্জাব অধিকার করে শিখ শক্তির অবসান ঘটিয়েছিল। কিন্তু সেই শিখদের ব্রিটিশ শক্তি এ বিদ্রোহ দমনের কার্যে নিয়োগ করতে সক্ষম হন।
৫. বিদ্রোহীদের সংগঠনের অভাব : বিদ্রোহকে সমগ্রভাবে পরিচালনার কোন সামগ্রিক পরিকল্পনা বা কেন্দ্রীয় সংগঠন ছিল না। ফলে বিদ্রোহীদের শক্তি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অযথা বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছিল। কোন কোন স্থানে বিদ্রোহীদের কোন সংগঠনের পরিচয় পাওয়া গেলেও বিদ্রোহকে জয়যুক্ত করতে হলে যে কেন্দ্রীয় পরিচালনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন তা ছিল না ।
৬. ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা : ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সামরিক দক্ষতা, গোলাবারুদের প্রাচুর্য এবং সর্বোপরি একই সেনাবাহিনীর নির্দেশানুযায়ী যুদ্ধ পরিচালনা প্রভৃতি স্থলে সিপাহিদের ন্যূনতম সামরিক ক্ষমতা, গোলাবারুদের অপ্রাচুর্য এবং সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত সামরিক নেতৃত্ব তাদের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা, সামরিক দূরদর্শিতা, উন্নত ধরনের সেনাপতিত্ব ও বিদ্রোহীদের পরাজয়ের কারণ ছিল।
৭. বিদ্রোহীদের সামরিক ভুল : ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যাতে দিল্লি অবরোধ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করে বিদ্রোহীগণ অত্যন্ত ভুল করেছিল। এছাড়া দিল্লি যখন ব্রিটিশ সৈন্য কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়েছিল তখন দিল্লির অভ্যন্তর হতে বাধা দানের সাথে সাথে বাইরে থেকে অবরোধকারী ব্রিটিশ বাহিনীকে আক্রমণ করার চেষ্টা না করাও তাদের বিরাট ভুল ছিল।
উপসংহার ঃ অতএব বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সিপাহিদের দ্বারা প্রথমে শুরু হলেও পরে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ বিদ্রোহে বাংলার সকল স্তরের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেছিল। তবে তাদের মধ্যে ঐক্যবোধ ও শৃঙ্খলাবোধের প্রচণ্ড অভাব ছিল। আর বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে সংঘটিত হওয়া বিদ্রোহ যে ব্যর্থ হবে তা স্বাভাবিক ব্যাপার। সুতরাং, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ যদিও ব্যর্থ হয় তথাপিও ভারতবাসীর মধ্যে চেতনাবোধ জাগ্রত করতে অনেকটা সহায়ক ছিল।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]