পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব আলোচনা কর। (Discuss the Impact of the Military and Civil Bureaucracy in the Politics of Pakistan at the Time of Establishment of Pakistan in 1947.)

সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব Influence of Military and Civil Bureaucracy
. ভূমিকা Introduction
ব্রিটিশ পরবর্তী ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতার ২৩ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নজিরবিহীন অপব্যবহার হয়েছে। আর এভাবেই দেখা যায় যে, বাঙালিদেরকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়া হয়নি, কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিনির্ধারণে বাঙালিদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত-তা রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক যেকোনো বিষয়েই হোক না কেন সর্বশেষ বিচারে এলিটদের দ্বারাই হতো এবং এরা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। এক কথায় নীতিনির্ধারনের ক্ষেত্রে সামরিক- বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক প্রাধান্য প্রকট রূপ ধারণ করে।
অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিই পাকিস্তানকে (১৯৪৭-৭১) এমন একটি প্রশাসনিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন, যার রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াটিতে বরাবরই সিভিল-মিলিটারি অভিজাতদের প্রভাব ও প্রাধান্য বজায় ছিল। এসব অভিজাত শ্রেণি একদিকে, যেমন নীতি বাস্তবায়ন সম্পর্কিত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, অন্যদিকে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন সম্পর্কিত রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে। এমনকি তারা তাদের স্ব-আরোপিত এ রাজনৈতিক ভূমিকাকে বৈধতা দেয়ার একটি কৌশল হিসেবে দেশটির রাজনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতেও প্রয়াসী হয়েছিল। ফেডারেল পদ্ধতির রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে প্রশাসনিক সদর দপ্তরগুলো ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছিল অতিমাত্রায় কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা যেখানে অভিজাত শ্রেণির আমলারাই (সামরিক- বেসামরিক) গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালনে সচেষ্ট ছিল।
সামরিক-প্রশাসনিক এমন পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ থেকেই পূর্ববাংলায় রাজনীতি ছিল মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে এবং গ্রামীণ জনসাধারণ ছিলেন তাদের সমর্থন ও সাফল্যের মূলভিত্তি। অপরদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানে সামন্ততান্ত্রিক ভূমি ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় সেখানে মধ্যবিত্তশ্রেণি ছিল প্রায় অনুপস্থিত। সেখানে নেতৃত্ব প্রায় পুরোপুরি সামন্তবাদী বড় জমিদারশ্রেণি দ্বারা গঠিত ছিল। ধর্মীয় অকার্যকর দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীনতা লাভের সময় পাকিস্তান উত্তরাধিকার সূত্রে যে সেনাবাহিনী লাভ করে তাতে উচ্চ পর্যায়ের বাঙালি অফিসার একজনও ছিলেন না। পাক সেনাবাহিনীর প্রায় পুরোটাই গঠিত ছিল পাঞ্জাবি, পাঠান ও বেলুচদের নিয়ে।
বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব
Influence of Civil Bureaucracy
দেশ বিভাগের পর পূর্ববাংলা থেকে বেশিরভাগ হিন্দু ডাক্তার, উকিল-মোক্তার, শিক্ষক, বিভিন্ন অফিস-আদালতের কর্মকর্তা- কর্মচারী ভারতে গমন করলে এ প্রদেশে দক্ষ প্রশাসন ও পেশাজীবী শ্রেণির অভাব দেখা যায়। পূর্ববাংলার প্রশাসনের শূন্যস্থান দখল করে ভারত থেকে আগত বাঙালি-অবাঙালি উদ্বাস্ত মুসলিম এবং পাঞ্জাবি আমলাবৃন্দ ।
এ প্রসঙ্গে খালিদ বিন সাইদ মন্তব্য করেছেন : 'All the key positions in the West Bengal administration were held by either Punjabi civil servants or Urdu speaking Muslim civil servants who had migrated from India.'
পাকিস্তান সরকার ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর এক আদেশ জারির মাধ্যমে সুপিরিয়র সার্ভিসসমূহসহ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কোটা পদ্ধতি প্রবর্তনের আদেশ জারি করেন। এ আদেশে নতুন চাকরির ক্ষেত্রে মেধা যাচাইয়ের পাশাপাশি
আঞ্চলিক কোটা সংক্ষরণকেও গুরুত্ব দেয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক পদে বৈষম্য বাড়তেই থাকে। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২,০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২,৯০০ এবং তারা অধিকাংশই ছিলেন নিম্নপদস্থ। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় অবাঙালিদের কতখানি আধিপত্য ছিল তা সারণি-১ থেকে প্রতীয়মান হবে।
সারণি-১ : ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনামূলক অবস্থান (Comparative Status of Different Important Position in East and West Pakistan Since 1960s)

পদের নাম পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান
১. সচিব (১৯৬৮ পর্যন্ত) কেউ না সকল পদ সবসময়
২. অর্থ এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সকল সচিব ( ১৯৬৮ পর্যন্ত) কেউ না সকল পদ সবসময়
৩. চেয়ারম্যান, ডেপুটি চেয়ারম্যানবৃন্দ, পরিকল্পনা কর্মকমিশন কেউ না সকল পদ সবসময়
৪. চেয়ারম্যান, ডেপুটি চেয়ারম্যানবৃন্দ, পরিকল্পনা কর্মকমিশন কেউ না সকল পদ সবসময়
৫. চেয়ারম্যান ও প্রশাসকবৃন্দ, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল কেউ না সকল পদ সবসময়
৬. ১৯৬৭ পর্যন্ত পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নরবৃন্দ কেউ না সকল পদ সবসময়
৭. পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীবৃন্দ কেউ না সকল পদ সবসময়

উৎস : Safar A. Akanda, East Pakistan and politics of Regionalism unpublished Ph. D. Thesis. University of
Denver. 1970,P.116 footnote-23
উল্লিখিত সারণি-১-এর তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সচিব, অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান ও প্রশাসক, স্টেটব্যাংকের গভর্নর এবং পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রিগণের কেউ পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন না, যা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যের জ্বলন্ত প্রমাণ। দুখণ্ডের সমন্বয়ে সেই পাকিস্তানের প্রশাসনিক কাঠামো কখনো গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীলতার মাপকাঠিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল না বলেই দুই অংশের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে ।
পরবর্তীতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের কেন্দ্রীয় সরকারে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১,৩৩৮ জন এবং ৩,৭০৮ জন। একইভাবে কেন্দ্রীয় সরকারে নন-গেজেটেড কর্মচারীর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ২৬,৩১০ জন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ৮২,৯৪৪ জন। পাকিস্তানের প্রশাসনিক কাঠামোতে ১৯৫৫ এবং ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্ৰীয় সচিবালয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব পর্যালোচনা করলে (সারণি-২ দ্রষ্টব্য) প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপদসমূহে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য লক্ষ করা যায়। ইসলাম সাম্য-সমতার বিশ্বাসে অনড় থাকলেও ইসলাম ধর্মের মুখোশের আড়ালে যে পাকিস্তানিরা দেশের শাসনকার্যে নিয়োজিত তাঁরা কেউ সেই সাম্য-সমতার আদর্শে কার্যত বিশ্বাসী ছিল না।
পাকিস্তানের প্রশাসনিক কাঠামোর কেবলমাত্র আধাষায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তত্ত্বের বিশ্বাসে পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও সেই শাসনব্যবস্থায়, ছিল অসাম্য-বৈষম্যের প্রশাসনি
উল্লিখিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ফরেন সার্ভিসে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা যেখানে শতকরা ৩১ ভাগ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকের হার ছিল শতকরা ৬ ভাগ। পাকিস্তানের শতকরা হার ১০.২ ভাগ কমে দাঁড়ায় শতকরা ২০.৮ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের হার দাঁড়ায় শতকরা ৭৯.২ ভাগে।
একইভাবে স্টেটব্যাংক অব পাকিস্তানে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের লোকের শতকরা হার বাগানে শতকরা ৯.b ভাগ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকের হার ছিল শতকরা ৮০.১ ভাগ। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা হার ১১.৫ ভাগ বেড়ে দাঁড়ায় শতকরা ৩১.৪ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের হার কমে দাঁড়ায় শতকরা ৬৮.৬ ভাগে। সুতরা স্টেটব্যাংকে পূর্ব পাকিস্তানের কর্মজীবী বাড়লেও ফরেন সার্ভিসে কমে যায়।
বাঙালির ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র কাঠামোতে। অসংখ্য বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে প্রাপ্ত পাকিস্তানের প্রশাসনিক ব্যবস্থায়, সামরিক ক্ষেত্রে, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দে বৈদেশিক সাহায্য বণ্টনে ইত্যাদি সর্ববিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঔপনিবেশিক শাসন পুরোমাত্রায় চালু ছিল। বাঙালিদেরকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকেও বঞ্চিত করা হয়।
মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহর মৃত্যুর পর পূর্ববঙ্গের খাজা নাজিম উদ্দিনকে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের পদে অধিষ্ঠিত করা হয়, কিন্তু তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদীদের আজ্ঞাবহ। তিনি গর্ভনর জেনারেল পদে থাকাকালীন সময়ে সকল ক্ষমতা পরিচালনা করতেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পিয়াকত আলী খান আততায়ীর হাতে নিহত হলে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের পদ অলংকৃত করেন গোলাম মোহাম্মদ আর প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিম উদ্দিন। এ সময় খাজা নাজিম উদ্দিন কোন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। সকল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন পাঞ্জাবের অধিবাসী গোলাম মোহাম্মদ। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে ১১ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন ছিলেন বাঙালি। এরা হলেন খাজা নাজিম উদ্দিন, হোসেন সোহরাওয়ার্দী ও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী। এদের মধ্যে প্রথমোক্ত দু'জন রাজনীতিবিদ হলেও মোহাম্মদ আলী ছিলেন একজন আমলা। আবার রাজনীতিবিদ হলেও খাজা নাজিম উদ্দিন অযোগ্য ও অদক্ষ । পাকিস্তানের রাজনীতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসাবে খ্যাত হলেও তাকে রাজনীতিতে যথাযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাকস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে অসীন হলেও পাকস্তানী শাসকগোষ্ঠীর তার প্রতি বিরূপ মনোভাব থাকার ফলে তাকে চরম অবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়েছে। তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা কর্তৃক বরখাস্ত হন। তিনি মাত্র ১০ মাস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে অসীন ছিলেন। সামরিক শাসনামলে আইয়ূব তাকে বন্দী করেন এবং দীর্ঘদিন তিনি কারাগারে আটক থাকেন।
নিম্নে একটি ছকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা উপস্থাপন করা হলো :
ক্রমিক নং নাম মেয়াদকাল
১. লিয়াকত আলী খান ১৫.০৮.১৯৪৭ – 16.10. ১৯৫১
২. খাজা নাজিম উদ্দিন ১৯.১০.১৯৫১ – ১৭.০৪.১৯৫৩
মোহাম্মদ আলী ১৭.০৪.১৯৫৩ - 23.10. ১৯৫৪
৪. মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) 24.10. ১৯৫৪ – ১১.০৮.১৯৫৫
৫. চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ১১.০৮.১৯৫৫ – ১২.০৯.১৯৫৬
৬. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১২.০৯.১৯৫৬ – ১৮.১০.১৯৫৭
৭. আই আই চন্দ্ৰীগড় ১৮.১০.১৯৫৭ - 15.12.১৯৫৭
8. মালিক ফিরোজ খান নুন 16.12.1957 - ০৭.১০.১৯৫৮

পূর্ব পাকিস্তান বাঙালির একান্ত নিজস্ব এলাকা হলেও প্রশাসনিক অধিকার পায়নি অর্থাৎ বাঙালিরা নিজ প্রদেশেও শাসনের সুযোগ পায়নি। পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলো দখল করে রেখেছিল কেন্দ্রীয় শাসকচক্রের অনুগত পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা বাঙালি জনগণকে কারণে-অকারণে হেয় প্রতিপন্ন করতো। পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাগণ পূর্বাঞ্চলের বাঙালি মুসলমানদেরকে নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান আখ্যায়িত করে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখত এবং পারতপক্ষে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতো না।
এমনি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশাসনিক পরিবেশে স্বাভাবিকভাবেই বাঙালিরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং তাদের মনে ক্ষোভ-অসন্তুষ্টি বাড়তে বাড়তে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমান ও পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমান যেন পৃথক সত্তার দুই জাতিতে পরিণত হয়ে পড়েন। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ঘোষণার মাধ্যমে ভারতের মুসলমানদেরকে আলাদা জাতি হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের জন্য আলাদা আবাসভূমি পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন। এবার তিনিই আবার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বাঙালিদের ন্যায়সংগত ভাষার ও প্রশাসনিক অধিকার উপেক্ষার মাধ্যমে (যেমন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি না দেয়া) পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি আর পশ্চিম পাকিস্তানিরা আলাদা জাতি- এমনি অযৌক্তিক ধারণা সৃষ্টির আত্মঘাতি প্রেক্ষাপট রচনা করেন। তিনি পাকিস্তানে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন না করে এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা চালু করে দেশের পূর্বাঞ্চলের জনগণকে বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত করেন । মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজ হাতে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং রাজনৈতিক দলের সর্বময় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে কার্যত স্বৈরতান্ত্রিক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ফলে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান- তাদের জীবদ্দশায় পাকিস্তানের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন করতে প্রায় ৯ বছর সময় লেগেছে। তাই ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১১ বছর পাকিস্তানে সংসদীয় গণতন্ত্রে কোনো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি যা কাঙ্ক্ষিত নয়
সামরিক আমলাতন্ত্রের প্রভাব
Influence of Military Bureaucracy
আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্র কাঠামো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আর সামরিক শাসন পুরোপুরি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের বিধায় একটিতে যখন কমবেশি খেটে খাওয়া মেহনতি গণমানুষের অধিকার আর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্যোগ-প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে তখন আরেকটি এ অধিকার ও নিরাপত্তাকে গলাটিপে হত্যা করার অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে থাকে। তাই কোনো দেশে যখন সামরিক শাসন জারি করা হয় তার মানে সেখানে মানবসভ্যতার সকল দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া হয় ।
পাকিস্তান : রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বৈষম্য
১৫-Mar
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সামরিক জান্তা আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করলে স্বাভাবিকভাবেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বৈষম্য আরো বেড়ে যায়। অগণতান্ত্রিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত সামরিক সরকার ঐ শাসনের BB মাসে १জুনিয়র গ্রেড কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। যে দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের চেয়ে বেশি বাঙালি তথা পূর্ব পাকিস্তানের সেখানে সেই নিয়োগকৃত ৭৯০ জনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল মাত্র ১২০ জন (১৫.২%) ।
পাকিস্তানের সামরিক শাসক ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত ৯ মাসে ৩৪ জন সেকশন অফিসার নিয়োগ করে তার মধ্যে মাত্র ৭৪ জন (১০%) ছিল পূর্ব পাকিস্তানের যা দেশের দুই অংশের বৈষম্যকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে ১৯৫৯-৮৩ পর্যন্ত প্রশাসনিক সময়কালে রাওয়ালপিন্ডিস্থ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের নিয়োগকৃত ৩১৫ জন কেরানির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল মাত্র ৩৬ জন (১১%)। অন্যদিকে ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যে ১৪ জন সামরিক কর্মকর্তাকে বেসামরিক প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয় তারা সকলেই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিক।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে এসব আমলা গোষ্ঠীই ছিল প্রশাসনের সকল ধরনের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। পরবর্তীতে পাকিস্তানের নামে প্রাপ্ত স্বাধীন দেশেও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে সকল প্রকার গণউন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় আমলা গোষ্ঠীই। তাই পাকিস্তান সৃষ্টির পর এ আমলাশ্রেণি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং সেখানে পূর্ববাংলার প্রতিনিধিত্ব তেমন একটা ছিল না। " At the time of the Pakistan bureaucracy, independence had been a West Pakistan show", পাকিস্তান সৃষ্টির সময় (১৯৪৭) মুসলমান ICS অফিসারদের এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন পাঞ্জাবি, অবশিষ্টরা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি শরণার্থী মুসলমানগণ, বাঙালি মুসলমানদের সেখানে উপস্থিতি ছিল না। তাই তারা পাকিস্তান প্রশাসনের সর্বস্তরে অবাঙালি মুসলমানদের একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পাকিস্তানে ১৯৪৭-এর পর ১৫ জন প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিসের সদস্যকে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সি.এস.পি) পদোন্নতি দেয়া হয় যাদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ৪ জন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের উন্নয়ন-সমৃদ্ধির স্বার্থেই সেই সময় সিভিল সার্ভিসে বাঙালিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বৈষম্য কমানো উচিত ছিল, তবে তা না করে কমসংখ্যক বাঙালিকে নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি দিয়ে উল্টো বৈষম্য বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে প্রতিষ্ঠা করার ফলে নবসৃষ্ট ছোটবড় সকল প্রশাসনিক পদে পশ্চিম পাকিস্তানিরাই একচেটিয়া চাকরির সুযোগ লাভ করে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তোলেন। এভাবে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দেয়ায় বাংলাভাষী বাঙালি ছাত্রদের পক্ষে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে ওঠে বিধায় পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে যা সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণেও বাঙালি মুসলমানগণ ব্রিটিশ শাসনামলে পিছিয়ে ছিল আর তাকে প্রকট করে তুলেছিল একশ্রেণির মানুষের চিন্তাচেতনা। অজয় রায় তাঁর 'শেষ কথা: ভূখণ্ড বাংলাদেশ, জন-জাতি ও সভ্যতা-সংস্কৃতি' নিবন্ধে বলেছেন, উচ্চশ্রেণির এবং তথাকথিত অভিজাত মুসলমান নেতৃবৃন্দ অবশ্য সবসময়ে দাবি করে এসেছেন এবং এখনো করেন যে বঙ্গদেশের মুসলমান সম্প্রদায় মূলত বিদেশজাত।'
তাই প্রশাসনে অবাঙালি মুসলমানদের একচেটিয়া আধিক্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নে পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য তাদের স্বার্থ চিন্তা ছিল বিধায় পূর্ব পাকিস্তানিদের ন্যায্য অধিকার লাভ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে যে ৯৪ জন অবাঙালি মুসলমান ICS অফিসার পাকিস্তানে এসেছিলেন তাদের মধ্যে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ৪৭ জন কর্মরত ছিলেন এবং দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ তাদের দখলে ছিল। তাই বাঙালিরা ছিল সুযোগ বঞ্চিত।
একইভাবে ব্রিটিশের কাছ থেকে অর্জিত দ্বিখণ্ডিত সেই পাকিস্তানের নামে স্বাধীনতার পরবর্তী ৪ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের বহুলোককে সামরিক বিভাগে নিয়োগ দেয়া হলেও পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়োগ দেয়া হয় মাত্র ৮১০ জনকে। প্রতিরক্ষা সার্ভিসে আসার জন্য পূর্ব পাকিস্তানিদেরকে উৎসাহিত করা হয়নি, আবার যারা স্বেচ্ছায় উৎসাহিত ছিল তাদের বঞ্চিত করা হয় অপকৌশলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরক্ষা সার্ভিসে পূর্ব ও পশ্চিমের বৈষম্য বাড়তে বাড়তে রাষ্ট্রকাঠামোতে সৃষ্টি হয় বৈষম্যের পাহাড়। (সারণি-৪ দ্রষ্টব্য)।
পরবর্তী বছরগুলোতে এ বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে অনুপাত ছিল জোয়ানদের ক্ষেত্রে ১ : ২৫ এবং অফিসারের ক্ষেত্রে ১ : ৯।
উল্লিখিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিরক্ষা সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের লোক লে জেনারেল ছিল না, মেজর জেনারেল ছিল না, ব্রিগেডিয়ার শতকরা ২.৮৫ ভাগ, কর্নেল শতকরা ২.০০ ভাগ, লে. কর্নেল শতকরা ১.৩৩ ভাগ এবং মেজর শতকরা ১.৬৬ ভাগ কর্মরত ছিল। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল শতকরা ১.৫৬ ভাগ, নৌবাহিনীতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল শতকরা ১.১৬ ভাগ এবং বিমানবাহিনীতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল শতকরা ৮.৫৭ ভাগ। তাই প্রতিরক্ষা সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের নিয়োগের সুযোগ বঞ্চিত করেছে সাংঘাতিকভাবে।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোট ৮৯৪ জন সেনা-অফিসারের মধ্যে মাত্র ১৪ ছিল পূর্ব পাকিস্তানি। নৌ-বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৯৩ জনের মধ্যে ৭ জন এবং বিমানবাহিনীতে ৬৪০ জন অফিসারের মধ্যে ৮০ জন। এমনকি ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দেও সমগ্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩,০০০। ১৯৬৪-৬৫ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর মোট ৮টি ডিভিশনে সৈন্যসংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৩০ হাজার; নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর আনুমানিক সদস্য সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭,০০০ এবং ১৭,০০০-২৫,০০০। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে মোট ৬,০০০ সেনা অফিসারের মধ্যে মাত্র ৩০০ বাঙালি ছিল। তবে বাঙালিদের অভাব-অভিযোগের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় আগরতলা (১৯৬৮) ষড়যন্ত্র মামলায়। এ মামলা শেষ হওয়ার পর ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের কোটা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক আধিপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাগত বহিঃপ্রকাশ ছিল সামরিক বাহিনীতে অব্যাহতভাবে বাঙালিদের স্বল্প প্রতিনিধিত্ব। বিশেষত এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠকে বাইরে রেখে একটি গোষ্ঠী বা অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে কালক্রমে পাঞ্জাবিদের অব্যাহত কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বাঙালিদের অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করে। ফলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সামরিক বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিল।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]