১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল

১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার : পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন যখন প্রচণ্ড আকার ধারণ করে তখন তিনি দেখলেন যে আর সন্তোষমূলকভাবে টিকে থাকা যাবে না। তাই ঘোষণা করেন যে, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট, প্রার্থী হবেন না । এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের প্রচণ্ডতা দেখে তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ফলে শেখ মুজিব ও অন্যান্য নেতারা বিনাশর্তে মুক্তি পান (২২ ফেব্রুয়ারি/১৯৬৯)। কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর শেখ মুজিব ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এক জনসমাবেশে ভাষণ দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্সের সংবর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয় 1967 (২৩ ফেব্রুয়ারি) ।
২. গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান : কারাগার থেকে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়ার পর আইয়ুব খান রাজনৈতিক/শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের জন্য আহ্বান জানান। গোলটেবিল বৈঠক সম্পর্কে মুজিব বলেছেন যে, দেশবাসীর স্বার্থে তিনি গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করবেন এবং ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আলোচনা করবেন। ১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠক বসল। 'ডাক' এর (DAC) প্রতিনিধিরা এবং বিচারপতি মুর্শেদ ও এয়ার মার্শাল আজগর খানের মত স্বতন্ত্র নেতৃবৃন্দ এতে যোগদান করেন। জনাব জেড এ ভুট্টো, লেফটেন্যান্ট আজম খান ও মাওলানা ভাসানী গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন নি। 'ডাক' পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকটি দাবিদাওয়া যথা জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব ও স্বায়ত্তশাসন তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় শেখ মুজিব বৈঠক থেকে বের হয়ে আসেন। ফলে অবস্থা আরো বেগতিক হয়।
৩. আইয়ুব খানের পতন : স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। গণ ঐক্যজোটও ভেঙে যায়। দেশে আইন শৃঙ্খলারও চরম অবনতি হয়। পরিস্থিতির প্রচণ্ডতা লক্ষ্য করে আইয়ুব খান দেখলেন যে, তার পক্ষে শাসন ক্ষমতায় থাকা আর সম্ভব না। তাই তিনি তদানীন্তন সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে ক্ষমতা থেকে সড়ে দাঁড়ালেন। (২৫ মার্চ/১৯৬৯)
৪. ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণ ও সামরিক আইন জারি : সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য ছিল যে, তারা সামরিক বিভাগ ছাড়া জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন না। কারণ, জনগণের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করলে স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশ ঘটতে পারে। তাই ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে দ্বিতীয় বার সামরিক শাসন জারি করেন। ফলে অবস্থা আরো বেগতিকের দিকে ধাবিত হয় ।
৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে আন্দোলনের প্রচণ্ডতা লক্ষ্য করে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। ফলে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। ফলে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পথ প্রশস্থ হয় । ৬. মুক্তি সংগ্রামের ভিত্তি রচনা : ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বাঙালি ছাত্র, যুবক, জনতা জাতীয়তাবাদী চেতনায় ফেটে পড়েন। ফলে নির্বাচনে (১৯৭০ সালের) দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচনে সাফল্য লাভ করলেও সরকার গঠন নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে এরই প্রেরণা থেকে দেখা দেয় অসহযোগ আন্দোলনের। আর এ অসহযোগ আন্দোলন এর প্রেরণা থেকেই সংঘটিত হয় মুক্তি সংগ্রাম ।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে যে চরম, শোষণ, নির্যাতন আরম্ভ করেন তারই প্রত্যক্ষ ফলাফল। তবে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে ছিল পশ্চিমা শোষকের অত্যাচার অন্যদিকে ছিল এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সকল শ্রেণীর সক্রিয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আর বাংলার মুক্তিপাগল জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকেই সংঘটিত হয় গণআন্দোলন। তবে আন্দোলনে প্রত্যক্ষ কিছু অর্জিত না হলেও আইয়ুব খানের পতন ছিল একটি বড় সাফল্য। এ সাফল্যের প্রেরণা থেকে পরবর্তীতে বাঙালিরা শিক্ষা লাভ করেন। যে শিক্ষা থেকে তারা মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]