আওয়ামী মুসলিম লীগ (আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার পটভূমি সম্পর্কে আলোচনা কর। (Discuss the Background of the Establishment of Awami League.)

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি
Background of Creation of Awami League
আজকের আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার পেছনের ইতিহাস জানা দরকার। একটি রাজনৈতিক দল যদি গণমানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করতে চায় তবে তাঁর কার্যক্রম-কর্মসূচি গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেদিক থেকেই আওয়ামী লীগ গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয় । পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ সরকারের দমননীতি, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সীমাহীন বৈষম্য, বাংলা ভাষার প্রতি বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ ইত্যাদির কারণে মুসলিম লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা মর্মাহত হয়। গড়ে ওঠে বিভিন্ন দল। মুসলিম লীগের সমর্থিত বামধারার কয়েকজন নেতা যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, কামরুদ্দিন আহমদ প্রমুখ মিলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে 'পিপলস ফ্রিডম লীগ' নামে একটি ছোট গ্রুপ গঠন করেন। যদিও সরকারি গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারির কারণে এটি বেশি দূর অগ্রসর হতে পারে নি। এর উদ্যোক্তারাই কামরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে 'গণআজাদী লীগ' গঠন করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে 'গণতান্ত্রিক যুবলীগ' এবং ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি 'পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের প্রাক্কালে গঠিত পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠা নতুন দল গঠনের যৌক্তিকতা ও প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কফিল উদ্দিন চৌধুরী, শামসুল হক ছিলেন-এর উদ্যোক্তা।
মুসলিম লীগ প্রথম থেকেই-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং-এর উদ্যোক্তাদের ভারতীয় চর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৯৪৭-'৪৯ পর্যন্ত মোগলটুলিকে কেন্দ্র করে মুসলিম লীগের যুবকর্মীরা একত্রিত হতে থাকেন। এ সময় তারা অবশ্য প্রয়োজনে একটি দল গঠনেরও উদ্যোগ নেন। এ সময় তারা মোগলটুলি ছাড়াও এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য বহু জায়গায় গোপনে বৈঠক করেন। ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের বড় সাফল্য ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে ক্যাম্পের কর্ণধার শামসুল হক মুসলিম লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন। এছাড়া-এর সাথে যুক্ত কামরুদ্দিন, তাজউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, শামসুজ্জোহা, মোহাম্মদ আলমাস, মোহাম্মদ আউয়াল, শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববাংলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো
Organizing Structure of Awami League
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ঢাকায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি বিরোধী দল গঠনের জন্য আলোচনা করেন। পাঞ্জাবের মিয়া ইফতেখার মুসলিম লীগ ত্যাগ করে ‘জিন্নাহ আওয়ামী লীগ' গঠন করেন। অন্যদিকে মানকী শরীফের পীর সাহেব গঠন করেন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ' ।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় মুসলিম লীগ বিরোধী কর্মীদের সাথে বৈঠকে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন চূড়ান্ত করেন। অলি আহাদসহ কোনো কোনো লেখক মনে করেন সোহরাওয়ার্দী মানকী শরীফের পীরের অনুকরণে দলের নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং দলের সভাপতি হিসেবে আসাম থেকে আগত মুসলিম লীগের নেতা মওলানা ভাসানীর নাম সুপারিশ করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন পূর্ব নির্ধারিত ঢাকার টিকাটুলির কে.এম.দাস লেনের কাজি মোহাম্মদ বশীর হুমায়ুনের রোজ গার্ডেন বাসভবনে কর্মী সম্মেলন হয়। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং ইয়ার মোহাম্মদকে সম্পাদক করে প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হয়। ৩০০ প্রতিনিধি এতে অংশ নেন এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এ.কে. ফজলুল হক, আতাউর রহমান, আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ, মওলানা ভাসানী, কামরুদ্দিন আহমদ, মওলানা রাগীব আহমদ, খান সাহেব ওসমান আলী, খয়রাত হোসেন, অলি আহাদ, শেখ আবদুল আজিজ, কাজী গোলাম মাহবুব, এ মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আনোয়ারা খাতুন, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, আবদুল খ্রিষ্টাব্দাম খান প্রমুখ যোগ দেন। সভায় সর্বসম্মতভাবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে একটি দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান এ সময় জেলে ছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সম্পাদক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে কমিটির প্রধান অংশ ছিল নিম্নরূপ : awami league first committee
, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
Aims and Objectives of Awami League
১. পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, অত এব য়িত্ব
২. পাকিস্তানের সংবিধান এবং আইন যাতে সত্যিকার গণতন্ত্রের ওপর ভিত্তি রচিত তা নিশ্চিতকরণ,
পাকিস্তানের মুসলমানদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক শিক্ষার স্বার্থ নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন অধিকার নিশ্চিত করা;
পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা, যথা : খাদ্য, আশ্রয়, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সৎ ও সম্মানজনক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ;
সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং এনের পূর্ণ মজুরি নিশ্চিতকরণ;
কষ্টের লাঘব, জ্ঞান বিস্তার, সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, নির্বাচন দুরীকরণ, দুর্নীতি দূরীকরণ সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজসেবা সংঘটিত করে জনগণের নৈতিক ও পার্থিব অবস্থার উন্নতি করা;
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের এবং গণকর্ম কমিশনের স্বাধীনতা রক্ষা ক গ্রেফতারের পূর্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত,
নাগরিকের অধিকার; যেমন- ব্যক্তিগত এবং বিশ্বাসের যৌথ স্বাধীনতা, ভাষণ, সংগঠন, বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন শক্তিশালীকরণ; পার্শ্ববর্তী দেশ ও বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সাথে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ; ১০. জনগণের মধ্যে ইসলামের সত্যিকার জ্ঞান এবং এর উচ্চ নৈতিকতা ও ধর্মীয় নীতি প্রচার করা; ১১. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা। সদ্য গঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা ২৪ জুন আরমানিটোলায় অনুষ্ঠিত হয়। মওলানা ভাসানী মুসলিম লীগের ২২ মাসের অপকীর্তির খতিয়ান তুলে ধরেন এবং স্বৈরাচারের অবসানকল্পে জনগণকে মুসলিম লীগ অর্থাৎ আওয়ামী মুসলিম লীগের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। পশ্চিম পাকিস্তানে মানকী শরিফের পীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ (মে, ১৯৪৯) এবং পূর্ববাংলায় মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ (২৩ জুন, ১৯৪৯) গঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ গঠনের গুরুত্ব Importance of Creation of Awami League
পূর্ববাংলার ইতিহাসে আওয়ামী লীগ প্রথম সফল বিরোধী দল। এ দলটি গঠনের ফলে বিরোধী রাজনীতিতে যে শূন্যতা ছিল তা পূরণ হয়। বিশেষ করে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের মুসলিম লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানী ও টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে জয়ী তরুণ নেতা শামসুল হকের সম্পাদক হওয়ার মধ্য দিয়ে আপামর জনগণের মধ্যে আস্থার ভাব লক্ষ করা যায়। সর্বোপরি, এ দলের সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একাত্মতা তাকে লিয়াকত আলীর বিকল্প সর্বপাকিস্তানি নেতারূপে উপস্থাপিত করে। পরবর্তীকালে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনিই পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ভাসানী ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এ দলটি মুসলিম লীগ ও সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এ দলটিই পরবর্তীতে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পাকিস্তানের নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর মুসলিম লীগ একটি নামসর্বস্ব দলে পরিণত হয় এবং বহুধা বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান আমলেই দলটি প্রায় বিলীন হয়। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামধারণ করে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য-এর দ্বার উন্মুক্ত করে। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে জনগণের প্রাণের দাবি ৬- দফা উত্থাপন করে দলটি প্রকৃতই আওয়ামী অর্থাৎ জনগণের দলে পরিণত হয়। এরপর পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব মূলত আওয়ামী লীগের কাছে চলে আসে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং এ দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
• এভাবে প্রতিষ্ঠার সূচনাতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি আন্দোলনমুখী দলে পরিণত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারিতে যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ-এর নেতৃবৃন্দ এবং এতে (মুসলিম) ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ উদ্যোগী ভূমিকা রাখে এবং নির্বাচনে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে ক্ষমতা থেকে এবং বাংলার রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করে।
দ্বিজাতি তত্ত্বের অকার্যকর বিশ্বাসে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে দলকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দলে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম হয় আওয়ামী লীগ। আর তখন থেকেই এ দলটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণের একটি সুসংগঠনে পরিণত হয় ।
রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক বিচারে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বিচ্যুতি ঘটতেই পারে, তবে বাঙালিরা জন্মগতভাবে অসাম্প্রদায়িক ও উদার মতাবলম্বী হওয়ায় এখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী দলগুলো যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি, তেমনি বামপন্থি দলগুলো বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে ১৬০টি আসনে বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যেমনি একটি গণমানুষের দলে পরিণত হয় তেমনি ১৯৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনেও আওয়ামী লীগ গঠনের গুরুত্ব রয়েছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবদান Contribution of Awami League in the Politics of Pakistan
আওয়ামী মুসলিম লীগ তথা আওয়ামী লীগ নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জনগণের দাবি উপলব্ধি করে এগিয়ে যাওয়ার ফলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় । নিম্নে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ভাষা আন্দোলনে : ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর এ দলটির নেতা কর্মীরা ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে : ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাঙালিরা যে একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা তার বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ চেতনা পরবর্তীকালে আওয়ামীলীগের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা ধারণ করে পরবর্তী কালের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হয় ।
প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে এ দলটি ছিল যুক্তফ্রন্টের প্রধান রাজনৈতিক দল। আওয়ামী মুসলিম লীগ তথা আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্ট যে ২২৩টি আসনে জয় লাভ করে তার মধ্যে ১৪০টি আসন লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । সামরিক শাসক বিরোধী আন্দোলন : ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলে। সামরিক শাসক এবডো (EBDO- Electroal Bodies Disqualified order) আইনে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সামরিক সরকার ঘরোয়া রাজনীতি চালু করলে আওয়ামী নেতারা তার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । ছয় দফা দাবি প্রণয়নে : ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এ দলটির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনীতি জীবনের বড় অর্জন বাঙালির প্রাণের দাবি ছয় দফা দাবি পেশ করেন এবং জনগণের নিকট এই দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। ছয় দফার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে জেলখানায় বন্দি করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানা থেকে মুক্তি পেলেন বাংলার মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে।
'৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে : আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত বিজয় হয় ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসন লাভ করে।
মুজিবুর রহমান ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ১০ লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতিতে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। তার স্বাধীনতা ডাক দেওয়ার পর বাঙালি দামাল ছেলেরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে অবশেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান লাভ করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) National Awami Party (NAP)
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম পরিবর্তন করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ হবার জন্য নামধারণ করে আওয়ামী লীগ। এর ফলে দলটি এক সার্বজনীন দলে পরিণত হয়। ফলশ্রুতিতে দলের অভ্যন্তরে মার্কিন নীতির বিরোধী বামপন্থীদের অস্তিত্বও বিরাজমান ছিল। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে জয় ছাড়াও নানা ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হোসেন। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বৃহৎ শক্তির সাথে পাকিস্তানের সখ্যতা স্থাপন করেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের বামপন্থীরা বিশেষ করে ভাসানীর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন।
এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী ও আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দলের অবস্থান প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা দেয় । ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সুয়েজ খাল জাতীয়করণ নিয়ে সৃষ্ট বিশ্বসংকট এবং ফরাসি-মার্কিন বাহিনী কর্তৃক মিশরে হামলা নিয়ে এ দুই নেতার মধ্যে অবস্থানগত বিরোধ দেখা দেয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও পূর্ব বাংলা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থেকে বঞ্চিত থাকায় ভাসানীপন্থিদের ক্ষোভ বেড়ে যায় । ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে (সন্তোষ) অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সোহরাওয়ার্দী পাশ্চাত্য ঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির কট্টর সমর্থক ছিলেন। অন্যদিকে, মওলানা ভাসানী ও তাঁর অনুসারীগণ জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি এবং পূর্ব বাংলার জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে অনড় ছিলেন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন ।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৫-২৬ জুলাই একটি গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে মওলানা ভাসানী নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সম্মেলনে ভাসানীর অনুসারী ছাড়াও হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, মোহাম্মদ তোফাজ্জল ও অলি আহাদের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। পশ্চিম পাকিস্তানের বামপন্থি নেতা মিয়া ইফতেখার উদ্দীন, আব্দুল গাফফার খান, জি এম সৈয়দ মাহমুদুল হক ওসমানী প্রমুখ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত সম্মেলনে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। মওলানা ভাসানী সভাপতি ও মাহমুদুল হক ওসমানী ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিম্নরূপ : পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট বাতিল করা। সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক স্বাধীন নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন এবং সাম্রাজ্যবাদী ও দেশের স্বার্থবিরোধী সমস্ত চুক্তি বাতিলকরণ । প্রাপ্তবয়স্কদের (১৮ বছর) সর্বজনীন ভোটাধিকার ও শ্রেণিসমূহের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। সকল বৃহৎ শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্য জাতীয়করণ করে দেশব্যাপী শিল্পায়ন ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন। ‘কৃষকের হাতে জমি’ এ নীতির ভিত্তিতে সামন্তবাদ বিলোপ, ভূমি ব্যবসায় আমূল সংস্কার ও কৃষি বিপ্লব । সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমর্থন দান ও পাকিস্তানের প্রগতিশীলদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানকে একটি গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রভাবমুক্ত দেশে পরিণত করা। হিসেবে ব্যবহারের দাবি করেছিলেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]