যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি আলোচনা কর। (Discuss the 21 Point Programme of the United Front.)

হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট :
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন ও পরিণতি United Front of Haque-Vasani-Sohrawardi : Flection of 1954 and Consequences
চিন্তা করে। মুসলিম লীগের উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত কানে শহীদ সোহরাाী আবুল পাকিস্তানের শুধু তৃন্দ অত্যাচার ও নির্যাতনমূলক পদ আর লেলিয়ে দেয়া করে। সর্বাপরি পাকিস্তান রা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্বক তাদের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ কে। তারা পূর্ববাংলাকে নানাভাবে শোষণ করতে থাকে। আর এ ঘটনাপ্রবাহ বন্টের পটভূমি হিসেবে কাজ করে।
. গঠন (Formation of the United Pront)
পাকিস্তানের জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে সानী মুসলিম পাকিস্তানভিত্তিক উপদল, তাদের মধ্যকার ভাষা ও আদানিক রাজনীতি, স্বাধিকারের প্রশ্নে অব্যাহত মত্য দেশটিতে নতুন গঠন আবশ্যক করে তোলে। পূর্ব পাকি
পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, নেজাম-ই-ইসলাম, পাকিস্তান জাতীয় প্রভৃতি আগলিক রা পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের ওপর জোরপূর্বক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ক্রমবর্ধমা পাকিস্তানের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করে।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠন ছিল একটি নির্বাচনি কৌশল। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল ত মূল উদ্যোক্তা। নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগকে চরম শিক্ষা দেয়ার জন্য এ অন্যদের কয়েকটি সমমনা 'যুক্তফ্রন্ট' নামে একটি নির্বাচনি জোট গঠিত হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে আগ্রাসী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশে 'যুক্তফ্রন্ট' গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট মূলত চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত। হলো- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলু কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেজাম-ই-ইসলাম এবং হাজি মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনে মধ্যমপন্থি, ইসলামি, গণতন্ত্রী ও বামপন্থি ইত্যাদি দল নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট সত্যিকার অর্থে একটি বা রাজনৈতিক জোটের রূপলাভ করে। মুসলিম লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্য এ দূরের বিরোধিতা ছিল জোটের সর ভিত্তি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং নেতৃত্বের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন-এর কর্ণধার। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় 'নৌকা
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি 21 Point Programme of United Front
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা জারির সঙ্গে সঙ্গে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, আবদুল ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেন। একই সাথে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা ঘোষণা করেন। নীতি (Principle) : কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক নীতির বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হইবে না এবং ইসলামের সাম ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবনধারণের ব্যবস্থা করা হইবে। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি যথাক্রমে নিম্নরূপ:
1 বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হইবে।
2 বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করিয়া ভূমিহীন কৃষকের মধ্যে উচ্চ জমি বিতরণ করা হইবে এবং উচ্চহারের খাজনা ন্যায়সঙ্গতভাবে হ্রাস করা হইবে এবং সার্টিফিকেটযোগে খাজনা আদায়ের প্রথা রহিত করা হইবে।
3 পার্ট ব্যবসায়কে জাতীয়করণ করার উদ্দেশে তাকে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে আনয়ন করিয়া পাটচাষিদের পাটের মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইবে এবং মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলের পাট কেলেঙ্কারি রান করিয়া সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তির ব্যবস্থা ও তাহাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
4 কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইবে ও সরকারি সাহায্যে সকল প্রকার কুটির শিল্প ও হস্তশিল্পের উন্নতি সাধন করা হইবে ।
5 পূর্ববঙ্গকে লবণশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করিবার জন্য সমস্ত উপকূলে কুটিরশিল্প ও বৃহৎশিল্পে লবণ তৈরির কারখানা স্থাপন করা হইবে এবং মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলের লবণের কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তির ব্যবস্থা ও তাহাদের অসদুপায়ে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
6 শিল্প ও কারিগরি শ্রেণির গরিব জনগণের কাজের আশু ব্যবস্থা করিয়া তাহাদের পুনর্বসতির ব্যবস্থা করা হইবে।
7 খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।
৮. পূর্ববঙ্গকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিল্পায়িত করিয়া ও কৃষিকে আধুনিক যুগোপযোগী করিয়া শিল্প ও খাদ্যে দেশকে স্বাবলম্বী করা হইবে এবং সকল প্রকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হইবে ।
9 দেশের সর্বত্র একযোগে প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করা হইবে এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে ।
১০. শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার করিয়া শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকরী করিয়া বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহের বর্তমান ভেদাভেদ উঠাইয়া দিয়া একই পর্যায়ভুক্ত করিয়া সকল বিদ্যালয়সমূহকে সরকারি সাহায্যপুষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে।
১১. ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল কানুন বাতিল বা রহিত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করিয়া উচ্চশিক্ষাকে সস্তা ও সহজলভ্য করা হইবে এবং ছাত্রাবাসের অল্প ব্যয়সাধ্য ও সুবিধাজনক বন্দোবস্ত করা হইবে ।
১২. শাসন ব্যয় সর্বাত্মকভাবে হ্রাস করা হইবে এবং তদুদ্দেশ্যে উচ্চ বেতনভোগীদের বেতন কমাইয়া নিম্ন বেতনভোগীদের বেতন বাড়াইয়া তাহাদের আয়ের একটি সুষ্ঠু সামঞ্জস্য বিধান করা হইবে। যুক্তফ্রন্টের কোনো মন্ত্রী ১,০০০ এর বেশি বেতন গ্রহণ করিবেন না ।
১৩. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-রিশওয়াত বন্ধ করার কার্যকরী ব্যবস্থা করা হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি পদাধিকারী ব্যবসায়ীর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ নেওয়া হইবে এবং সন্তোষজনক কৈফিয়ত দিতে না পারিলে তাহাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে ।
১৪. জননিরাপত্তা আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রভৃতি কালাকানুন রদ ও রহিত করত বিনা বিচারে আটক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হইবে ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশ্য-আদালতে বিচার করা হইবে এবং সংবাদপত্র ও সভা- সমিতি করিবার অধিকার অবাধ ও নিরঙ্কুশ করা হইবে।
১৫. বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ হইতে পৃথক করা হইবে ।
১৬. যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম বিলাসের বাড়িতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউসে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষা গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে ।
১৭. বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যাহারা মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার গুলিতে শহিদ হইয়াছেন তাহাদের পবিত্র স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ঘটনাস্থলে একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হইবে এবং তাহাদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে ।
১৮. ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ঘোষণা করিয়া উহাকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হইবে।
১৯. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করা হইবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত সমস্ত বিষয় (অবশিষ্ট ক্ষমতাসমূহ) পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে এবং দেশরক্ষা বিভাগের স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তান ও নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা হইবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র নির্মাণের কারখানা নির্মাণ করত পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মরক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হইবে । আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হইবে ।
২০. যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা কোনো অজুহাতেই আইন পরিষদের আয়ু বাড়াইবে না। আইন পরিষদের আয়ু শেষ হওয়ার ৬ মাস পূর্বেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করিবে।
২১. যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার আমলে যখন যে আসন শূন্য হইবে, ৩ মাসের মধ্যে তাহা পূরণের জন্য উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হইবে এবং পর পর ৩টি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হইলে মন্ত্রিসভা থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিবেন । (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৭৩-৩৭৪)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]