১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও মুসলিম লীগের পরাজয় বরণের কারণ আলোচনা কর । (Discuss the Causes of Victory of the United Front and Those of the Defeat of Muslim League in the election of 1954.)

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন ও পরিণতি Election of 1954 and Results
ক. ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন ( Election of 1954 ) :
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনাধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন অনুযায়ী প্রাদেশিক আইনসভা চলছিল। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের পরাজয়ের আশঙ্কাই নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণ ছিল। অবশেষে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে পূর্ববাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে তা অনুষ্ঠিত হলেও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা তখন পর্যন্ত কার্যকর ছিল। প্রাদেশিক পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০৯। এর মধ্যে ২৩৭টি আসন (৯টি মহিলাসহ) মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য এবং ৭২টি আসন (৬টি মহিলাসহ) অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ১৫টি মহিলা আসনের মধ্যে ৯টি মুসলমান, ১টি বর্ণ হিন্দু এবং ২টি তফসিলি হিন্দু, ১টি পাকিস্তানি খ্রিস্টান এবং ২টি বৌদ্ধ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। নির্বাচন পদ্ধতি (Election Method) : ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইনের নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি সংশোধন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, ক. নির্বাচন হবে ২১ বছর বয়স্ক সকল নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভোটে অমুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে পৃথক নির্বাচনি ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে। গ.
পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের আসন সংখ্যা হবে নিম্নরূপ : . joint front election
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারির রিপোর্টকে ভিত্তি করে আসন বণ্টন করা হয়। আনুমানিক ১ লক্ষ ৪০ হাজার অধিবাসীর জন্য একটি আসন করা হয়। পূর্ববাংলা যেখানে মুসলমানদের জন্য ২২৮টি নির্বাচনি এলাকায় বিভক্ত করা হয়, সেখানে বর্ণ- হিন্দুদের ক্ষেত্রে ৩০টি এলাকায় ও তফসিলি হিন্দুদের জন্য ৩৬টি এলাকায় বিভক্ত হয়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ব্যতিরেকে অন্য আসনেও মহিলাপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন । মহিলাদের জন্য যে ১২টি আসন সংরক্ষিত ছিল সে আসনসমূহের নির্বাচনে কেবলমাত্র মিউনিসিপ্যাল এলাকায় মহিলাদেরই ভোটদানের অধিকার ছিল।
জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও সম্প্রদায়ভিত্তিক আসন বণ্টন নিম্নে দেখানো হলো। সারণি-১৫ : জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও সম্প্রদায়ভিত্তিক আসন বণ্টন joint front election comunal census
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ২১ বছর পূর্ণ হয়েছিল তারা ভোটার হওয়ার যোগ্য ছিলেন। ভোটার তালিকায় অসংখ্য ভুলভ্রান্তি ছিল । ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি পেশের শেষ তারিখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দাবির মুখে ১০ দিন বাড়ানো হলেও আপত্তি পেশের মোট সংখ্যা শতকরা এক ভাগেরও কম ছিল। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৩। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১,৯৭,৩৯,০৮৬ জন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র গ্রহণ শুরু হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৪ জানুয়ারি, ১৯৫৪। মনোনয়ন পত্র বাছাই ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি (১৯৫৪) এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২১ জানুয়ারি (১৯৫৪)।
নির্বাচনি প্রচার কৌশল ( Strategy of Electoral Campaign) : নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট পূর্ববাংলার শিক্ষক, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক তথা আপামর জনসাধারণের ভাবাবেগের প্রতি লক্ষ রেখে কর্মসূচি গ্রহণ করে। নির্বাচনি ইস্যু হিসেবে যুক্ত ফ্রন্ট বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবি এবং পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনকে প্রাধান্য দেয়। তাছাড়াও আঞ্চলিক বৈষম্য, শোষণের নীতি ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, পাট শিল্প জাতীয়করণ, সমবায় ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য সাহায্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করে বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে। অপরদিকে, মুসলিম লীগ গণমুখী কোনো ইস্যু তুলে ধরতে পারেনি। তাদের একমাত্র বক্তব্য ছিল ইসলামিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন। মুসলিম লীগের নির্বাচনি স্লোগান ছিল ২টি। একটি 'ইসলাম বিপন্ন', দ্বিতীয়টি 'পাকিস্তান বিপন্ন'। মুসলিম লীগের নির্বাচনি প্রচারাভিযানে পূর্ববাংলার জনসাধারণের মৌলিক সমস্যা ও প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়। যুক্তফ্রন্ট সরকারকে নানা কেলেঙ্কারির জন্য ‘গণবিরোধী’, দুর্নীতিপরায়ণ' ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় ফেলে দেয়। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যে যুবক, ছাত্র, তরুণরা মুসলিম লীগের পক্ষে কাজ করে তারাই ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সমর্থনে এ অঞ্চলে গণজোয়ার সৃষ্টি করে। পূর্ববাংলার খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ মওলানা ভাসানী, আবুল মনসুর আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান খান, এ. কে. ফজলুল হক এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে গিয়ে প্রচারাভিযান চালান ।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও জোট (The Participant Parties and Aliances) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববাংলা আইন পরিষদ নির্বাচনে মোট ১৬টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে মুসলমান আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল, খেলাফতে রব্বানী পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, অমুসলমান আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস, তফসিলি জাতি ফেডারেশন, পূর্ব পাকিস্তান সমাজতন্ত্রী দল, গণসমিতি, কুমিল্লার অভয় আশ্রম ইত্যাদি। কমিউনিস্ট পার্টির মুসলমান সদস্যগণ মুসলমান আসনে এবং হিন্দু সদস্যগণ হিন্দু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

খ. ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পরিণতি (Consequences of the Election 1954 )
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জনের পর যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্বাচনোত্তর যুক্তফ্রন্টের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনের পূর্বেই পূর্ববাংলার গভর্নর চৌধুরী খালিকুজ্জামান ও ফজলুল হককে মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানান। ফ্রন্টের অন্যতম নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকায় এ. কে ফজলুল হক ৩ এপ্রিল (১৯৫৪) ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু এ মন্ত্রিসভা নিয়ে যুক্ত ফ্রন্টের শরিক দল বিশেষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। কেননা, ফ্রন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া সত্ত্বেও-এর কাউকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আশরাফউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ব্যতীত (নেজামে ইসলাম) মন্ত্রিসভার অন্য সবাই এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টিভুক্ত ছিলেন। ফলে প্রথম দফার মন্ত্রিসভা গঠনের ১ মাস ১২ দিন পর ১৫ মে তা সম্প্রসারিত হয় যেখানে আরও নতুন ১০ জন সদস্য (৭ জন আওয়ামী লীগ, ৩ জন কৃষক-শ্রমিক পার্টি) অন্তর্ভুক্ত হন। এদের নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ জন। joint front election ministry
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার শুরু থেকেই মন্ত্রিত্ব নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়, যা ছিল যুক্তফ্রন্ট সরকারের চরম দুর্বলতা। মন্ত্রিসভা গঠনের কিছুদিন পর মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক কলকাতা সফরে যান এবং সেখানে দুই বাংলার অধিবাসী, তাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে এক আবেগপ্রবণ ভাষণ দেন, যা ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষেপিয়ে তোলে। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করেই নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন, পূর্ববর্তী মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন 'বর্ধমান হাউজ'কে ভাষা আন্দোলনের স্মারক গবেষণাগার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরাগভাজন হন। এ সময় হক মন্ত্রিসভাকে ২টি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। সেগুলো হলো ২ মে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্মুখে জেল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় মহল্লাবাসীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং ১৫ মে আদমজি পাটকলে বাঙালি ও বিহারি শ্রমিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট সরকারের দুর্বলতা বলে আখ্যায়িত করে। এমনি পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে, ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ৯২(২) ধারা অনুসারে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা বরখাস্ত এবং পূর্ববাংলায় গভর্নরের শাসন ঘোষণা করেন। এভাবে মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অবসান ঘটে।
পাকিস্তান সরকার যুক্তফ্রন্টের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার শুরু করে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হককে পাকিস্তান রাষ্ট্রের একজন আত্মস্বীকৃত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতা এবং 'পাকিস্তানের অখণ্ডতা' রক্ষায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় । চৌধুরী খালিকুজ্জামানকে সরিয়ে তদস্থলে মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ববাংলার গভর্নর করে পাঠানো হয়। ফজলুল হককে গৃহে অন্তরীণ করা হয়, ইউরোপ সফররত মওলানা ভাসানীর স্বদেশে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। শেখ মুজিবসহ বহু তরুণ নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং যুক্তফ্রন্ট অফিসে তালা লাগানো হয়। পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গতিবিধি সীমাবদ্ধ করা হয়। ইস্কান্দার মির্জা ঘোষণা করেন, “ভাসানী দেশে ফিরলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে'। কিছুদিনের মধ্যে সরকারি এক ঘোষণায় কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায়রূপ পূর্ববাংলায় চরম অসন্তোষ দেখা দেয় ও তীব্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফজলুল হকের অনীহা, ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর অনুপস্থিতিতে ও অন্যদিকে সরকারের কঠোর দমননীতির মুখে যুক্তফ্রন্টের আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের ফলাফল ও সরকার গঠন
1954 Election Results and Formation of Government
ক. নির্বাচনের ফলাফল ( Result of the Election)
নির্বাচনে মুসলমান আসনে ৩৭.৬০% ভোট পড়ে। নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় ১৫ মার্চ (১৯৫৪) থেকে। সরকারি ফলাফল ঘোষিত হয় ২ এপ্রিল। joint front election government
মুসলমান আসনের স্বতন্ত্র সদস্যদের ৮ জন যুক্তফ্রন্টে যোগ দেন, ফলে যুক্তফ্রন্টের সদস্য সংখ্যা ২২৩-এ উন্নীত হয়। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত একজন স্বতন্ত্র সদস্য মুসলিম লীগে যোগদান করলে ঐ দলের সদস্য সংখ্যা ১০ হয়। joint front election muslim seats
নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন এবং আরও ৪ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং কমপক্ষে ৫০ জন মুসলিম লীগ দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। নূরুল আমিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে খালেক নেওয়াজ খান নামক ২৫ বছর বয়সী এক আইনের ছাত্রের নিকট প্রায় ৭,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
বিজয়ী সদস্যবৃন্দের সামাজিক পটভূমি (Social Background of Winner Members)
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনে পরিষদ সদস্যদের সামাজিক পটভূমি নির্ণয় বর্তমানে দুঃসাধ্য। নির্বাচিত সদস্যদের অনেকেই এখন জীবিত নেই। তাদের অধিকাংশের কোনো জীবনীগ্রন্থ লিখিত হয় নি। অধ্যাপক নাজমা চেধুরীর গবেষণাগ্রন্থ থেকে আমরা কিছু তথ্য পাই। তিনি ১৯৬৭-'৬৯ সময়ে তার পি.এইচ.ডি গবেষণাকর্মের অংশ হিসেবে ১৯৫৪-এর নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট তাদের জীবনীর বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রেরণ করেন। ৩২২ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির নিকট প্রশ্নমালা প্রেরিত হলেও মাত্র ১২৩ জন (৩৯.২%) প্রশ্নমালা পূরণ করে ফেরত পাঠান। উক্ত ১২৩ জনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অধ্যাপক চৌধুরী তাদের যে সামাজিক পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :
নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ অধিকাংশই ছিলেন বেশ বয়স্ক। ৬০-এর বেশি বয়স্ক সদস্যের সংখ্যা যেখানে ছিল ১৭%, ৩০-এর কম বয়স্ক সদস্যসংখ্যা সেখানে মাত্র ৭% । ৪৫-এর অধিক বয়স্ক সদস্যসংখ্যা ছিল ৫১%।
নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ অধিকাংশই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। আইন পাস সদস্যসংখ্যা ছিল লক্ষণীয় (৪৫%)। ভান্ডারি পাস ছিলেন ৫% । স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ১৫%। ম্যাট্রিক পাস করেন নি এখন সদস্যসংখ্যা ৬%, ম্যাট্রিক পাস ৬% এবং ইন্টারমিডিয়েট পাস ৮%। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, নন-গ্র্যাজুয়েট সদস্যসংখ্যা ২০% ( ২৪ ) ম জমিদার পরিবারের সদস্য, ২ জন বড় জোতদার, 2 জন এমন পরিবারের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, ৫ জন মোক্তার, ৩ জন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ১ জন বড় ব্যবসায়ী, ১ জন দীর্ঘদিন স্থানীয় আয়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্বাচিত সদস্যদের পেশার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে যে, আইন সর্বাধিক- ৫১%। জমিদার ভূস্বামী ১১%, শিক্ষাবিদ ৯%, সাংবাদিক ৩%, ডাক্তার ৬%, অন্যান্য ৯%। কেউই শিল্পপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন নি।
পরিবার থেকে ইতিপূর্বে পরিষদ থাকায় পড়াশুনা করতে পারেননি, অর্জিত ছিলেন, ১ জন বিপ্লবী কর্মী। পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা ছিল
নির্বাচনে 'যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ (Causes of victory of the United Front in Election)
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]