১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আলোচনা কর। (Discuss the Importance and Significance of the Election 1954.)

নির্বাচনে যুক্তফন্টের বিজয়ের কারণসমূহ নিম্নরূপ :
১. অন্তর্ষ্য ও আদর্শগত কোন্দল : ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল মুসলিম লীগ ভাতৃবৃন্দের এক সম্মেলনে পাহোর প্রস্তাবকে সংশোধন করা হয় এবং সংশোধনীতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্বের ধারাটি বিলুপ্ত । লাহোর প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলা মুসলিম লীগ প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রগতিশীল গ্রুপে বিভক্ত হয়। নাজিমুদ্দিন- আকরম খাঁ গ্রুপটি প্রতিক্রিয়াশীল এবং সোহরাওয়ার্দী আবুল হাশিম প্রগতিশীল গ্রুপ। তবে জিন্নাহর সমর্থন থাকায় প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপটাই শক্তিশালী হয়। প্রগতিশীল গ্রুপের মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম সম্মেলনে সংশোধনীর বিরোধিতা করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগ থেকে সরে আসেন এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন তাঁরই নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। অধিকন্তু মওলানা ভাসানীর মতো সুযোগ্য নেতার মুসলিম লীগ ত্যাগও দলীয় সংগঠনকে দুর্বল করে ফেলে। ফলে যুক্তফ্রন্টের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠে ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ কালো টাকা আয়ের জন্য অবৈধ ব্যবসায় বাণিজ্যে লিপ্ত হয়। এ রকম কালোবাজারি ও পণ্যদ্রব্য মজুদ রাখার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য অধিক হারে বেড়ে যায়। যার জন্য জনগণ প্রতিবাদী হয়ে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করে যুক্তফ্রন্টকে বিপুল আসনে জয়ী করে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য : মুসলিম লীগ পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির ফলে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে পূর্ব বাংলার জনগণ ক্ষুদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দেয়। ফলে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে।
৪. রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গ : বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানে মুসলিম লীগের ব্যর্থতা, অনীহা এবং ভাষা আন্দোলনে বাঙালিদের রক্তদান পূর্ব বাংলার জনগণকে তীব্রভাবে পশ্চিমা বিরোধী করে তোলে। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার মধ্যে একমাত্র বাংলা ভাষা সম্পর্কীয় ব্যাপারেই ৫টি দফা ছিল। তাই বাংলা ভাষা প্রসঙ্গটিও মুসলিম লীগের পরাজয় তথা যুক্তফ্রন্টের জয়ের অন্যতম কারণ।
৫. মধ্যবিত্ত শ্রেণির মার্থ : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। হিন্দু কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবীদের ভারত গমন, হিন্দু জমিদারদের পাকিস্তান ত্যাগ, স্বাধীন পাকিস্তানে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণি অল্পদিনের মধ্যেই এক প্রভাবশালী শ্রেণিতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ ও কৃষক- শ্রমিক পার্টি ছিল এ মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থরক্ষার মাধ্যম। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এ মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে যুক্তফ্রন্টের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠে।
বাঙালিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থতা : মুসলিম লীগ বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ দল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত করেছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের স্বার্থ আদায় এবং বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। মুসলিম লীগ সবকিছু অনুধাবন করেও পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থের প্রতি ছিল অনুগত। তাই ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বাঙালি জনগণ যুক্তফ্রন্টকে
বিজয়ের মঞ্চে দাঁড় করায় ।
৭. বিরোধীদের নির্যাতন : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে মুসলিম লীগ যখন বুঝতে পারে যে, তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী তখন দলীয় নেতৃবর্গ বিরোধী দলের কর্মী ও নেতাদের নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। এটিও মুসলিম লীগের পতনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৫০-'৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। এটিও পরোক্ষভাবে জনগণকে বিরোধী দল তথা যুক্তফ্রন্টের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে জয়যুক্ত করে । ৮. প্রশাসনিক ব্যর্থতা : ক্ষমতা লাভের পর থেকেই মুসলিম লীগ সরকার প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। খাদ্য সংকট, লবণের মূল্য বৃদ্ধি, তীব্র বন্যা এবং পাট কেলেঙ্কারির জন্য জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনি প্রচারণায় মুসলিম লীগ সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে। ফলে যুক্তফ্রন্টের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয় নিশ্চিত হয় ।
.
সংবিধান প্রণয়ন না করা : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে মুসলিম লীগ সরকার সংবিধান প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি; বরং নানা কৌশলে পূর্ব বাংলার এ সংক্রান্ত দাবিকে উপেক্ষা করেছে। ফলে সুশীল সমাজ তথা বুদ্ধিজীবী মহল মুসলিম লীগের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে। পক্ষান্তরে, যুক্তফ্রন্ট সংবিধান প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়, যা যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ের পথে পরিচালিত করে ।
১০. ২১ দফার জনপ্রিয়তা : যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার মধ্যে পূর্ব বাংলার জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এমন সব দাবি উত্থাপিত হয়, যা অতি সহজেই জনগণকে আকৃষ্ট করে। ফলে নির্বাচনের ফলাফল যুক্তফ্রন্টের অনুকূলে যায় ৷
নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের কারণ (Causes of Defeating Muslim League in Election) নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের পেছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগস্টে শাসনক্ষমতা হাতে পেয়ে দলের নেতৃবর্গ নিজেদের ভাগ্য গড়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া মুসলিম লীগ পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে পূর্ববাংলা শাখা এবং পূর্ববাংলার মুসলিম লীগ সরকার এ প্রদেশের অর্থনৈতিক অবনতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির প্রতি চরম বিরোধিতা করে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দলের বিরুদ্ধে বাংলার আপামর জনসাধারণকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। অপরপক্ষে, ফজলুল হক, ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী-এ ৩ জনের নির্বাচনি প্রচারণায় ‘দেশময় যে প্রাণচাঞ্চল্যের বন্যা আসল, তাতে মুসলিম লীগের মতো ক্ষমতাসীন দল ভেসে গেল।'
খ. যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন (Formation of the United Front Government)
নির্বাচনে মওলানা ভাসানী এবং সোহরাওয়ার্দী প্রার্থী হন নি। ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছেন। অপরদিকে, সোহরাওয়ার্দী জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করবেন বলে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেন নি। নির্বাচনে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর অংশ না নেয়ায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল নির্বাচনে জয়লাভ করলে এ. কে. ফজলুল হক যুক্তফ্রন্টারি বোর্ডের নেতা নির্বাচিত হবেন। ৩ এপ্রিল ফজলুল হক যে ৩ জনকে মন্ত্রিত্বে অন্তর্ভুক্ত করেন তাদের ২ জন তার দলের এবং ১ জন নেজামে ইসলামের। এ সময় আওয়ামী লীগ বাদ পড়ে। পূর্ববাংলায় মন্ত্রিসভা সংবিধান অনুসারে চালানো যাচ্ছে না এ কারণ দেখিয়ে জরুরি ক্ষমতা বলে কেন্দ্রের শাসন জারি করা হয় এর ৭ দিন পর কেন্দ্রের শাসন প্রত্যাহার করে। আবু হোসেন সরকারের পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি লাভের
পিছনে মুসলিম লীগকে দেয়া তাদের ২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রথমত, পাকিস্তান মন্ত্রিপরিষদে পাস করার জন্য যে, খসড়া সংবিধান পেশ করা হবে তা তার দল সমর্থন করবে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত যৌথ নির্বাচনি ব্যবস্থা ও আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি সমর্থন করবে না। পুনরায় আবু হোসেন সরকার সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯ জন সদস্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারের প্রতি ২০০ জন সদস্যের সমর্থন ছিল। এ ২০০ জনের মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্যসংখ্যা ছিল ৯৮ জন, গণতন্ত্রী দলের ১২ জন, সংখ্যালঘু ৭২ জন ।
এ সরকার ভাষা শহিদদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে এ প্রদেশে একটি সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ আসে। মুসলিম লীগ দল ও কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে এবং সর্বোপরি যুক্তফ্রন্টের শরিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংখ্যালঘু সংসদ-সদস্যদের ঘন ঘন সমর্থন বদলের কারণে। মাত্র 8 বছরে ৭টি মন্ত্রিসভার পতন ঘটে এবং ৩ বার গভর্নরের শাসন জারি করা হয়। ফলে বহু প্রত্যাশিত ২১ দফার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
Importance and Significance of Election 1954
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববাংলা প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ছিল অত্যধিক। বাঙালি জনগণের রাজনৈতিক অগ্রগতিতে এ নির্বাচন সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে বিধায় তা তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ।
নিচে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো :
১. মুসলিম লীগের পরাজয় (Defeat of Muslim League) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের শোচনীয় পরাজয়। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ‘ইসলাম' এবং পাকিস্তানের ব্যাপারে সর্বপ্রকার কলাকৌশল অবলম্বন করা সত্ত্বেও যুক্তফ্রন্টের নিকট পরাজিত হয়। পরবর্তী আর কোনো নির্বাচনে মুসলিম লীগ ভালো করতে পারে নি।
২. স্বায়ত্তশাসনের দাবি ( Demand of Autonomy) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বাঙালি জনগণের প্রধান দাবি ছিল স্বায়ত্তশাসন। যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভের ফলে এ দাবি আরও জোরালো হয়, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রভাব ফেলে। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় এটাই প্রমাণ করে যে, পূর্ববাংলার জনগণ পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ।
৩. বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ়করণ (Consolidation of Bengali Nationalism) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ছিল মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই বিজয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে ভাষা আন্দোলনে সৃষ্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও সুদৃঢ় হয়। আর এ জাতীয়তাবাদী চেতনাই পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের দ্বারা আরও বিকশিত হয়।
৪. বিরোধী দলের বিকাশ (Development of Opposition Party) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের ফলে
পাকিস্তানের বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। পূর্ব পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যথার্থ ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। কেননা নির্বাচনের আগে মুসলিম লীগের একক কর্তৃত্ব বহাল ছিল। নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে যথার্থ বিরোধী দলের বিকাশ পরিলক্ষিত হয় ।
৫. মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব বৃদ্ধি (Increasing Influence of Middle Class) : ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রায় সকলেই ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। এ শিক্ষিত ও সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে তাদের প্রভাবও বৃদ্ধি পায়।
৬. ভবিষ্যৎ আন্দোলনের মাইলফলক (Milestone for Future Movement) : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তর পূর্ববাংলার জনগণের কল্যাণ ও স্বায়ত্তশাসনাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি-দাওয়া সংবলিত যে ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তা পরবর্তীকালে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, আওয়ামী লীগের ৬-দফা সংগ্রামী ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির ৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন ও প্রচারণায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।
৭. রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতিতে সংবিধান (Recognition of State Language in Constitution) : ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের বাঙালির ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগ, ঐক্যবদ্ধ দুর্বার গণস্রোত পরবর্তীকালে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের পর ধরে পাকিস্তানের গণপরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে। তাছাড়া ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে প্রথম যে সংবিধান রচিত হয় তাতে এ. কে. ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, আবুল মনসুর আহমদ, আতার রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
৮. রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি (Creation of Political Consciousness) : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন পূর্ববাদের জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলে। এ নির্বাচনে বিজয়ের ফলে বাঙালি জনগণের রাজনৈতিক সাম্প্রতি কর্মপরিকল্পনা, সচেতনতা বৃদ্ধি পায় ফলে রাজনৈতিক সচেতনতাবোধই বাঙালি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রামী তাদেরকে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট করে তোলে।
৯. বাঙালির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা (Establishing Bangali Leadership) : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তরন্টের বিষয় প্রমাণ করে যে, পূর্ববাংলার জনগণ পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনাধিকারের প্রশ্নে সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। ফলে অবাঙালি খাজা পরিবার, ব্যবসায়ী ও অভিজাত শ্রেণিদের নেতৃত্বের বদলে বাঙালির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১০. স্বাধীনতার প্রেরণাশক্তি (Inspiration of Liberation) : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অন্যতম প্রধান প্রেরণা শক্তি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের পর পরই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয় সূচিত হয়। আর-এর পথ ধরেই বাঙালিরা একে একে ১৯৬২, ১৯৬৬-এর ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের সাধারণ নির্বাচন ও পরিশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন তথ্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে বাঙালি জাতি জয়লাভ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]