সামরিক শাসনের সংজ্ঞা দাও। সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর। (Give the Definition Military Rule Discuss the Characteristics of Military Rule.)

সামরিক শাসনের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও কারণ Definition, Characteristics and Causes of Military Rules
ভূমিকা Introduction
সামরিক শাসন হচ্ছে একধরনের স্বৈরাচারী শাসন। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাষ্ট্রভেদে সামরিক শাসনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার, রাজনৈতিক কাঠামোর কার্যকারিতা ও শক্তি প্রভৃতির ওপর। তবে সর্বত্রই সামরিক শাসকগণ সামরিক শাসন জারি করার পর কতিপয় অভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। যেমন- সংবিধান রহিতকরণ, মন্ত্রিসভা বরখাস্ত, আইনসভা বাতিল, শাসন পরিষদ গঠন এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে শাসন ইত্যাদি। দীর্ঘদিন এরূপ শাসন ব্যবস্থায় বসবাস করলে মানুষের সৃজনশীলতা লোপ পায় । বিনষ্ট হয় প্রতিভা। ভেঙ্গে পড়ে সমাজ ব্যবস্থা। তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়া জাতিগুলোর মধ্যে সামরিক শাসনের প্রবণতা দেখা যায়। কারণ, এসব দেশে দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে জনগণের স্বাধীনতার বিকাশ ঘটে নি। এছাড়া ব্যাপক দারিদ্র্য তাদের সামাজিকভাবে অবহেলিত গোষ্ঠীতে পরিণত করে। ফলে এসব দেশে সামরিক বাহিনীর পক্ষে খুব সহজেই শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বেচ্ছাচারী শাসন চালু করা সম্ভব হয়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেন, 'রাজনীতিকদের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দেবার দায়িত্বটা সামরিক বাহিনীরই।' আইয়ুব খান ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেন ।
. সামরিক শাসনের সংজ্ঞা
Definition of Military Rule
সামরিক শাসনের অর্থ হলো, বেসামরিক কর্তৃত্ব বিলোপ। সামরিক শাসনের প্রকৃতির জন্য একে সাধারণত জংলি আইন বলে উল্লেখ করা হয়। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে সামরিক শাসন বলে। এককথায় বলা যায়, সামরিক শাসন হলো প্রচলিত আইন বিরোধী দায় দায়িত্বহীন উৎপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা হয় এবং স্বৈরাচারী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। আরও সহজ করে বলা যায়, বেসামরিক ক্রিয়াকলাপে বা দেশ শাসন কাজে সামরিক বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মানুসারে নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে যে শাসন ব্যবস্থা প্রয়োগ করে তাকেই সামরিক শাসন বলে। বন্দুকের নলই সামরিক শাসনব্যবস্থায় সকল ক্ষমতার উৎস। সামরিক শাসন মানুষের সৃজনশীল চিন্তাশক্তি, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার খর্ব করার পাশাপাশি মানুষকে বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন অথর্ব যন্ত্রে পরিণত করে ।
বর্তমানেও সামরিক শাসন বা শাসকদের কার্যক্রম লক্ষ করা যায় মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, মিশর, লিবিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোতে। তবে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশেই সামরিক শাসনের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। সামরিক শাসনের সংজ্ঞায় বলা যায় যে—
'Military rule is a form of government where in the politics and power of the nation reside with the military. Military governments are often established after the successful military occupation of a country in an armed conflict. The military often has more cohesion and institutional structure than most civilian institution of society.'
'Military rule is when a country run by the military army,' 'Military rule is by force and not the will of the people unlike civil rule.'
সামরিক শাসন বলতে আরও বোঝায় এমন একজন নির্দিষ্ট বা একাধিক নেতা, যে বা যারা রাষ্ট্রের সমুদয় ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে সশস্ত্র শক্তির মাধ্যমে।' সামরিক শাসন জারি হয় মূলত একটি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অরাজকতার প্রেক্ষাপটে। এ সামরিক শাসন জারি হলে মূলত ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, রক্তপাত বা রক্তপাতহীন বিপ্লব ঘটে, সামরিক কর্তৃত্বের অধীনে সবাইকে কাজ করতে হয়, সংবিধান বিলোপ করা হয়, মানুষের মৌলিক অধিকার পর্যুদস্ত হয়, বেসামরিক কর্তত্বকে অধীনস্থ করা হয়, রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, সভা- সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, রাজনীতিবিদ, ধনী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কলঙ্কিত করা হয়, সংসদীয় কার্যক্রম ও আইন প্রণয়ন ব্যাহত হয় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শাসনকে সামরিক শাসন হিসেবে অভিহিত করা যায়। আরও বলা যায় যে, 'However military regimes can after be quite brutal staying in power for long periods of time and committing many human rights abuses.'
বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Robert Pinkney-এর ভাষায় সামরিক শাসনের চরিত্রটি আরও সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে- The term military government will be used in the narrow sense of a government in which sovereignty lies with the armed forces, sometimes acting in conjunction with the police. Regimes in which the military are merely a strong pressure group.'
সামরিক শাসনের আরও সংজ্ঞার বাংলা রূপান্তর উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন—
অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Finer) বলেন, 'সামরিক বাহিনী যখন তার নিজস্ব নীতি বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে তাকেই সামরিক শাসন বলে।'
অধ্যাপক এ আর বল (Prof. A. R. Ball) বলেন, ‘সামরিক শাসন বলতে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বা সোজাসুজি ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করাকে বোঝায়।
ডব্লিউ এ রুশো (W. A. Rustow) বলেন, রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্বলতার সুযোগে যখন অরাজনৈতিক সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করে নেয় এবং শাসন করতে থাকে তখন তাকে সামরিক শাসন বলে।'
সুতরাং বলা যায়, সামরিক শাসন হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সামরিক শাসকরাই রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রশাসন ও আইনের শীর্ষস্থানে অবস্থান করার ফলে অনেক গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হয় ।
সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Military Rule
সামরিক শাসনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সব রাষ্ট্রে এক রকম নয়। রাষ্ট্রভেদে সামরিক শাসনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করে রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার, রাজনৈতিক কাঠামোর কার্যকারিতা ও শক্তি প্রভৃতির ওপর। তবে সর্বত্রই সামরিক শাসকগণ সামরিক শাসন জারি করার পর কতিপয় অভিন্ন
পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন । যেমন-
১. সংবিধান রহিতকরণ (Suspension of Constitution);
২. মন্ত্রিসভা বরখাস্ত (Dissolution of the Cabinet);
৩. আইনসভা বাতিল (Dissolution of Parliament );
৪. শাসন পরিষদ গঠন (Formulation of Ruling Council);
৫. অধ্যাদেশের মাধ্যমে শাসন ( Ruling by Ordinance).
এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেনা শাসকরা স্বীয় ক্ষমতা বিস্তারে সক্ষম হয়। যদিও তারা ক্ষমতা দখলের প্রাক্কালে বলে থাকে, একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তারা আবার ব্যারাকে ফিরে যাবেন। পৃথিবীর অনেক দেশে সামরিক শাসকেরা কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে তথাকথিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করেছে। অনেক দেশে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে সামরিক শাসনের অবসান ঘটেছে। রাষ্ট্রভেদে সামরিক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সামরিক শাসনের কতিপয় অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
নিম্নে সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১১. সামরিক একনায়কত্ব ও কর্তৃত্বপূর্ণ শাসন (Military Despotism and Authoritarian Rule) : সামরিক শাসনামলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেশ থেকে রাজনীতি উচ্ছেদ করে সামরিক একনায়কত্ব কায়েম করা। এ লক্ষ্যে সামরিক শাসকগণ সামরিক শাসন জারির পর পরই মন্ত্রিসভা বরখাস্ত, আইনসভা বিলুপ্ত এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রকে সামরিক শাসকের পূর্ণ কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসা হয়। সামরিক শাসনামলে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়। সামরিক গোয়েন্দাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সামরিক চেকপোস্ট বসানো হয়, মার্শাল ল' কোর্ট বসানো হয়। মোট কথা সামরিক জান্তার হাতেই সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে । ফলে সামরিক শাসনামলে কর্তৃত্বপূর্ণ শাসনের সৃষ্টি হয়।
সামরিক বাহিনীর দাপট (Dominance of Military ) : সামরিক শাসনামলে সামরিক বাহিনীর দাপট ও দৌরাত্ম্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এ সময় সামরিক বাহিনীকে তার পেশাগত উৎকর্ষের চেয়ে করপোরেট স্বার্থরক্ষা, অধিকার সুবিধা আদায়, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্বের ব্যাপারে অধিক সক্রিয় হতে দেখা যায়। বস্তুত সামরিক শাসকগণ স্বীয় ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে অধিক সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। মূলত সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রভূত দাপট ও একচেটিয়া কর্তৃত্বের কারণে রাষ্ট্র একটি গ্যারিসন স্টেট (Garrison State) - এ পরিণত হয় ।
আমলাতন্ত্রের সামরিকীকরণ (Militarization of Bureaucracy) : আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো। আমলারা তাদের পেশাগত নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দক্ষতার সাথে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো সরকারের সুনাম ও স্থায়িত্ব বহুলাংশে আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সিভিল প্রশাসনে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এতে রাষ্ট্র কাঠামোতে আমলাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতাও ক্ষুণ্ণ হয়। সামরিক শাসকগণ জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদেরকে সার্বিকভাবে আমলাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সংস্থাসমূহে আমলা আধিপত্য অব্যাহত থাকে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগের ফলে রাষ্ট্র ও সরকারের সামরিকীকরণ প্রক্রিয়া সুদৃঢ় হয় ।
৪. অধ্যাদেশের মাধ্যমে শাসন (Rule by Ordinance) : সামরিক শাসন জারির ফলে আইনসভা বাতিল করা হয় বিধায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামরিক শাসকগণ অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করেন। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অধ্যাদেশ জারি করে থাকেন। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনসভাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। এমন কি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন আইনসভা গঠন করা হলেও সেটিকে সামরিক জান্তার একান্ত রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করা হয় । প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্বশীল আইনসভার অনুপস্থিতিই হচ্ছে সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য।
রাজনৈতিক দমন পীড়ন (Political Repression) : রাজনৈতিক দমন পীড়ন ও নির্যাতন সামরিক শাসনের এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। সামরিক শাসকগণ ক্ষমতা দখলের পর প্রথমে যে কাজটি করে তা হলো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি। এ সময় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন করা হয়, বিরোধী পক্ষের ওপর চলে নির্যাতনের স্টিমরোলার। ছাত্র রাজনীতিকেও নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজরদারি বৃদ্ধি পায়। এ সময় সাধারণ আইন আদালতের তোয়াক্কা করা হয় না। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের নামে চালানো হয় নিপীড়ন, নির্যাতন । বিরোধীপক্ষকে দমন করার জন্য যে কোনো কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দান করা হয়। বস্তুত, সামরিক শাসন কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বৈরশাসনকেও হার মানায়।
6. ধान করণ ও মৌলিক অধিকার পর্ব (Dissolution of Constitution and Violating Human Rights): সাধারণত সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সংবিধান রহিত করা হয়। এর কারণ হলে ক্ষমতা দখল। কারণ কোন দেশের সংবিধান সেনাশাসনকে বেদরুপে স্বীকার করে না। এ সংবিধান রহিত থাকে। পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়। সংগঠন করা, রাজনৈতিক পরিচালনা করা, স্বাধীন মত প্রকাশ করা এসব কর্মকাণ্ডের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ থাকে। কোনো কোনো ি শাসক সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করণের প্রয়োজনীয় ধারা নিজের অনুকূপে সংশোধন করে নেয়। সংবিধান রচনারও চেষ্টা করে। পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান তৈরি করে। 9. শাসন পরিষम গঠন (Formation of Ruling Council) : সামরিক শাসকগণ যেহেতু বৈধ সরকারকে উৎসা করে ক্ষমতা দখল করে। যেহেতু তারা প্রথমেই সেই সরকারের মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে। অধিকাংশ ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে দেশ পরিচালনায় অযোগ্যতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনয়ন করা হয়। মন্ত্রিসভার পরিবর্তে সামরিক শাসকগণ কখনো কখনো দলছুট নেতাদের সমন্বয়ে একটি শাসন পরিষদ গঠন করে দেশ পরিচালনা থাকেন। এক্ষেত্রে শাসন পরিষদের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা থাকে না। তারা মূলত সামরিক একনায়কের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে।
প্রহসনের নির্বাচন (False Election) : সামরিক শাসনামলে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে পারে না। সাধারণভাবে সেনাশাসকগণ বেসামরিকীকরণ (Civilianization) প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণভোট, স্থানীয় সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু সেনাশাসনামলের নির্বাচনগুলো বৈধতা পায় না। এর কারণ হলো প্রতিটি নির্বাচন প্রহসনে পর্যবসিত হয় এবং জনগণের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বিনষ্ট হয়। বস্তুত সামরিক শাসকদের অধীনে কখনই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সেহের জনগণ সামরিক শাসনকে পছন্দ করে না, তাই তার পক্ষে সমর্থনও ব্যক্ত করে না। এমতাবস্থায়, সামরিক শাসকগণ নির্বাচনি কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় ।
ব্যাপক গণঅসন্তোষ (Mass Public Dissatisfaction) : সামরিক শাসনামলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট যেমন অর্থনীতির ধ্বংস সাধন করে তেমনি রাজনীতিতেও নতুন করে অস্থিরতার জন্ম দেয়। ফলে দেশে বিনিয়োগ কমে যায়, বেকারত্ব বাড়ে, মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়। জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে ব্যাপক গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ সামরিক শাসককে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
১০. বৈধতার সংকট (Crisis of Legitimacy) : সামরিক শাসকগণ সর্বদাই বৈধতার সংকটে ভোগে। বৈধতার সংকট বলতে শাসন ক্ষমতার বৈধ প্রকৃতি এবং সরকারের ক্ষমতা বিষয়ে মতৈক্যের সমস্যাকে বোঝায়। সরকারের প্রতি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের অভাবে বৈধতার সংকট দেখা দেয়। সামরিক শাসকগণ অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে বিধায় সামরিক শাসনামল বৈধতা পায় না। এমন-কি বারবার নির্বাচন দিয়ে অনেক সামরিক শাসক বৈধতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহ অবাধ ও নিরপেক্ষ না হওয়াতে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে-নি। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার আস্থাহীনতা সামরিক সরকারের বৈধতাকে আরো বেশি সংকটাপন্ন করে তোলে।
১১. গণভোট / আস্থা ভোট (Referendum) : প্রত্যেক সামরিক শাসকই দেশ শাসনের এক পর্যায়ে স্বীয় ক্ষমতাকে বৈধতা দানের উদ্দেশ্যে আস্থা ভোট বা গণভোটের আয়োজন করে। তাদের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করা। কিন্তু সে নির্বাচনও প্রহসনে পরিণত হয়। কারণ এতে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে না। অধিকাংশ সামরিক শাসকই ভোটারবিহীন ভোট কেন্দ্রে ভোটের বাক্সে পূর্বে ব্যালট বোঝাই করে বা নির্বাচনি কর্মকর্তাদের। যোগসাজশে মিডিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রচার করে বা গণজাল ভোটের মাধ্যমে স্বীয় বিজয় নিশ্চিত করে। এর ফলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং নির্বাচন নামক প্রক্রিয়াটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
১২. রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা (Attempt to Formulate Political Party) : সামরিক শাসন অধিকাংশ দেশে নোংরা ও আদর্শহীন রাজনীতির সূত্রপাত ঘটায়। বিভিন্ন দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করে বা রাজনীতিবিদদের বিশেষ
সুবিধা প্রদান করে স্বপক্ষে আনার চেষ্টা করে রাজনীতিতে এক আদর্শহীনতার জন্ম দেয়। অনেক সামরিক শাসকই। প্রথমদিকে রাজনৈতিক দলের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও শেষাবধি নিজেই রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। সাধারণত দলছুট এবং আদর্শহীন, বিভিন্ন মতাদর্শের লোকদের জড়ো করে নতুন দল গঠন করে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান এরূপ 'কনভেনশন মুসলিম লীগ' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]