বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর (Describe the Way of Following of the Main Rivers of Bangladesh.) জাতীয় জীবনে নদনদীর প্রভাব The Influences of Rivers in Life

নদনদী
Rivers
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং নদী মানেই মাটির উর্বরতার জন্য মায়ের আশীর্বাদের মতো। এ নদী পানিপ্রবাহ দিয়ে পলির আবরণ দিয়ে মায়ের মতো সমৃদ্ধ করে ভূপ্রকৃতিকে। তাই নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ এ নদীই সমৃদ্ধি দিয়ে গড়েছে তাকে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রদানকারী অসংখ্য নদনদী রয়েছে এখানে। ছোটবড় অসংখ্য নদনদীর মায়া দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে এ বাংলাদেশকে। ভৌগোলিকভাবে এত অল্প আয়তনের সীমানায় পৃথিবীর আর কোথাও এত নদনদীর উপস্থিতি নেই।
ঐতিহাসিক আর নদী বিশেষজ্ঞগণের মতে, বাংলাদেশের নদীপ্রবাহ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আমাজান প্রবাহের পরই মোট প্রবাহের পরিমাণের দিক থেকে পদ্মা-মেঘনার স্থান। এছাড়া বাংলাদেশে মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত নদীনালা খালের দৈর্ঘ্য হবে কমপক্ষে ১৫,০০০ মাইল। এর মাঝে আছে খরস্রোতা, পার্বত্য নদী, শান্ত ক্ষীণকায়া উপনদী বা পদ্মা-মেঘনার
বিবর্ণ ঘন সবুজ প্রকৃতি যেমন মানবমনে কথা মানবগোষ্ঠীকে করে তোলে কঠোর আর পরিশ্রমী কে
বেঁচে থাকার শিক্ষা। তাই বিশ্বের নদী আর পাহারি প্রকৃতির ক বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় ৭০০ নদ-নদী রয়েছে। বাংলাদেশের নদী সংস্থানকে ৫ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. গঙ্গা বা পদ্মা এবং এর নদী,
২. মেঘনা এবং সুরমা প্রবাহ,
৩. ব্রহ্মপুত্রের শাখা-প্রশাখা,
৪. উত্তরবঙ্গের নদীসমূহ এবং
৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সংশ্লিষ্ট সমতল ভূমি নদী ।
প্রতিটি নদী পূর্ব বা দক্ষিণ প্রবাহিণী। আর যে সময়টিতে নৌকা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, সে স এবং দক্ষিণে। সুতরাং, বিনা আয়াসে বা পাল তুলে নৌকা চলতে পারে। প্রকৃতি প্রদত্ত এ সুবিধা ছাপানো যমুনা বা মেঘনায় নৌকা বাওয়াই মুশকিল হয়ে উঠত, বন্ধ হয়ে যেত নৌপথের সব ব্যবস প্রাগৈতিহাসিক সময়ে রাজাবাদশাহ কিংবা আঞ্চলিক শাসকগণের মাঝে নিজ নিজ এলাকা সময় জটিলতা দেখা যায়। আর সেই সীমানা নির্ধারণের সময় নদীনালা-খালবিল আর পাহা
কাজে লাগিয়েছেন কার্যকরভাবে। বিশাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সীমানা নির্ধারণে এখনও নদীর ব্যবহার প্রমান্য পায়। বাংলার বিভিন্ন প্রদেশের বা অঞ্চলের সীমারেখা নির্ণয় করত এ নদী। সুতরাং নদীর প্রবাহ বদলে গেলে সীমাে ব্যাপারে তা প্রভাব বিস্তার করতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, হিউয়েন সাং ৬০০-৪ যখন বাংলায় এসেছিলেন তখন করতোয়া ছিল এক বিশাল নদী যা পুণ্ড্রবর্ধনকে (উত্তরবঙ্গ) আলাদা করে রেখেছিল কামরুপ (আসাম) থেকে। পরবর্তীকালে যমুনা হয়ে উঠেছিল উত্তরবঙ্গ ও আসামের সীমানা খুঁটি ।
নিম্নে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নদ-নদীর গতিপথ বর্ণিত হলো :
বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলো হচ্ছে—
১. পদ্মা,
২. ব্রহ্মপুত্র,
৩. যমুনা,
৪. মেঘনা, ৫. কর্ণফুলী,
৬. তিস্তা,
৭. পশুর,
৮. সাঙ্গু,
৯. ফেনী,
১০. নাফ ও মাতামুহুরী।
বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে চিরচেনা ও পরিচিত বেশিরভাগ নদীর উৎপত্তিস্থল হিমালয়, তিব্বত, আসামের বরাক এবং লুসাই পাহাড়ে। এগুলো শেষপর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।
পদ্মা : পদ্মা নদী ভারত ও ভারতের উত্তরবঙ্গে গঙ্গা এবং বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত। এর উৎপত্তিস্থল মধ্য হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহে। উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্য অতিক্রম করে গঙ্গা বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে। গোয়ালন্দের নিকট ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারা যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চাঁদপুরে মেঘনার সঙ্গে পদ্মা নাম ধারণ করে মিলিত হয়ে। বরিশাল ও নোয়াখালি হয়ে এ নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
কুমার,
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী গঙ্গা-পদ্মা বিধৌত অঞ্চলের আয়তন ৩১,১৮৮ বর্গ কি.মি. । পশ্চিম থেকে পূর্ব নিম্নগঙ্গায় অসংখ্য শাখা নদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ভাগীরথী, হুগলি, মাথাভাঙ্গা, ইছামতী, ভৈরব, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা, চিত্রা, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ ইত্যাদি ।
সাংকেতিক চিহ্ন
প্রধান নদী শাখানদী উপনদী
বাংলাদেশ
নদ-নদী
তিস্তা
যমুনা
ভারত
মাথাভাঙ্গা
করতোয়া
বড়াল
পদ্মা
কুমার
না
গড়াই
কপোতাক্ষ
ধলেশ্বরী
ভৈরব
১০০ কি.মি.
যোগা
পরা
বাউলা
মেঘনা
গোম
মেঘনা
উত্তর
সুরমা
ভারত
বোয়ালখালি
বঙ্গোপ সাগ র
মায়ানমার
ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা : তিব্বতের মানস সরোবরে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে। আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় এটি প্রবেশ করেছে। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের আগের ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারাটি ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত হতো। কিন্তু ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্রের তলদেশ উত্থিত হওয়ায় পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং নতুন স্রোতধারায় শাখা নদীর সৃষ্টি হয়। নতুন স্রোতধারাটি যমুনা নামে পরিচিত হয়। এটি দক্ষিণে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যমুনা নদী বলে পরিচিত। গঙ্গার সঙ্গে মিলিত
হয়ে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী এবং ধলেশ্বরীর শাখা নদী বুড়িগঙ্গা, ধরলা, তিস্তা, করতোয়া; আত্রাই যমুনার উপনদী। গঙ্গার সঙ্গমস্থল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের দৈর্ঘ্য ২,৮৯৭ কি.মি. এবং অববাহিকার আয়তন ৫,৮০,১৬০ বর্গ কি.মি. । এর ৪৪,০৩০ বর্গ কি.মি. বাংলাদেশে অবস্থিত।
মেঘনা : মেঘনা নদী সৃষ্টি হয়েছে সিলেট জেলার সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিতস্থলে। সুরমা ও কুশিয়ারার উৎপত্তি আসামের নাগা-মনিপুর অঞ্চলে। কুশিয়ারা ও সুরমা নদী বাংলাদেশের সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। সুনামগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জের কাছে কালনী নামে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মেঘনা নামধারণ করেছে। এটি ভৈরব বাজার অতিক্রম করে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কাছে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার ...মিলিত জলধারাই মেঘনায় এসে যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে চাঁদপুরের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে বিস্তৃত ... মোহনার সৃষ্টি করেছে। এটি পতিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। মুন, তিতাস, গোমতী, বাউলাই মেঘনার শাখা নদী।
বর্ষার সময় প্লাবন ও পলি মাটিতে মেঘনা বাংলাদেশের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
কর্ণফুলী : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী কর্ণফুলী। এর উৎপত্তিস্থল আসামের লুসাই পাহাড়ে। ৩২০ কি.মি. দৈর্ঘ্যের এ নদীটি চট্টগ্রাম শহরের খুব কাছ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদী হচ্ছে কাপ্তাই, হালদা, কাসালাং, রাঙখিয়াং। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর তীরে অবস্থিত। পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এ নদীর গুরুত্ব অধিক ।
তিস্তা নদী : সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে তিস্তা নদী ভারতের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং-এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ডিমলা অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করেছে। এ নদী ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের প্রবল বন্যায় গতিপথ পরিবর্তন করে ব্রহ্মপুত্রের একটি পরিত্যক্ত গতিপথে প্রবাহিত হতে শুরু করে । গতিপথ পরিবর্তনের পূর্বে গঙ্গা নদীতে মিলিত হলেও বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়। তিস্তা নদীর বর্তমান দৈর্ঘ্য ১৭৭ কি.মি ও প্রস্থ ৩০০ থেকে ৫৫০ মিটার ।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় তিস্তা নদীর ভূমিকা সর্বাধিক। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি ১৯৯৭- ৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। এ ব্যারেজটি ঐ অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ, পানি নিষ্কাশন, পানি সেচ ও বন্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
পশুর নদী : খুলনার দক্ষিণে ভৈরব বা রূপসা নদী আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ত্রিকোণা ও দুবলা দ্বীপদ্বয়ের ডানদিক দিয়ে এবং মংলা বন্দরের দক্ষিণে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে ।
প্রায় ১৪২ কি.মি. দীর্ঘ ও ৪৬০ মিটার থেকে ২.৫ কি.মি প্রস্থ এ নদীর গভীরতা এত বেশি যে, সারা বছর সমুদ্রগামী জাহাজ এর মোহনা দিয়ে অনায়াসে মংলা সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে পারে। খুলনা-বরিশাল নৌপথ হিসেবে পশুর নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
সাঙ্গু-ফেনী, নাফ, মাতামুহুরী : আরাকান পাহাড় থেকে নির্গত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করার পর নাম হয়েছে সাঙ্গু নদী। এটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এটি ২০৮ কি.মি দীর্ঘ। অন্যদিকে, ফেনী নদী পার্বত্য ত্রিপুরায় উৎপত্তি হয়ে ফেনী জেলায় প্রবেশ করেছে। সন্দ্বীপের উত্তরে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশের মায়ানমারের সীমান্তে নাফ নদী অবস্থিত। এর মোহনা অত্যন্ত প্রশস্ত। এ নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬ কি.মি। অন্যদিকে, লামার মাইভার পর্বতে মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এ নদীটি কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ার পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কি.মি. ।
জাতীয় জীবনে নদনদীর প্রভাব
The Influences of Rivers in Life
বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ও প্রাণ হলো এর নদনদীসমূহ। ঐতিহাসিক সতীশ মিত্র তাঁর যশোর- খুলনার ইতিহাস' গ্রন্থে বলেছেন যে, “দেহে যেমন শিরা ও ধমনী, এদেশে তেমনি নদনদী।" নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ এ নদীই সমৃদ্ধি দিয়ে গড়েছে এদেশকে। বাংলাদেশে ভূ-প্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রদানকারী অসংখ্য নদনদী রয়েছে
এখানে। ছোটবড় অসংখ্য নদনদী মায়া দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে এদেশকে। ভৌগোলিকভাবে এত অল্প আয়তনের সীমানায় পৃথিবীর আর কোথাও এত নদনদীর উপস্থিতি নেই। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় তাঁর ‘বাঙালির ইতিহাস (আদি পর্ব) গ্রন্থে বলেছেন, ‘বাংলার ইতিহাস রচনা করিয়াছে বাংলার ছোট-বড় অসংখ্য নদনদী। এই নদনদীগুলোই বাংলার প্রাণ। ইহারাই বাংলাকে গড়িয়াছে, বাংলার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ণয় করিয়াছে যুগে যুগে, এখনও করিতেছে।' তাই এদেশের জনসাধারণের উপর নদনদীর প্রভাব অপরিসীম 1
জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছিলেন, 'বাংলার ইতিহাস এক হিসেবে বাংলার নদীর ইতিহাস।' কথাটা মিথ্যে নয়। নদী বাঙালির প্রাণ, সবসময় বাঙালি থাকতে চেয়েছে নদীর কাছে, ভালোবেসে নদীর নাম দিয়েছে মধুমতি, ইছামতি, দুধকুমার, কপোতাক্ষ, কর্ণফুলি বা বাঙালি। আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরার মতো এ দেশের নদী। প্রমাণ হিসেবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি' বা অদ্বৈত মল্লবর্মণের 'তিতাস একটি নদীর নাম' । নদী কীভাবে পূর্ববঙ্গবাসীদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে তার একটি চিত্র পাওয়া যায় এ উপন্যাস দুটিতে।
প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের মতে, নদীর বা প্রদেশের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে উত্থান-পতন। নদীর গতি হ্রাসবৃদ্ধি বা পরিবর্তন এবং প্রদেশের উত্থান-পতনের সঙ্গে বাংলার বাণিজ্য, রাষ্ট্র ও কৃষ্টির বিশেষ সম্পর্ক। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের নদী এ অঞ্চলকে এবং এর মানুষকে গড়েছে, ভেঙেছে। তলিয়ে গেছে নদীর জলে অনেক লোকালয়, কীর্তি। এ কারণেই বোধহয় বাংলার মানুষ নদীর আরেক নাম দিয়েছে ভাঙ্গাগড়া। বিস্তীর্ণ ঘন সবুজ প্রকৃতি যেমন মানব মনে তথা মানুষের জীবনাচারে শান্তির ছায়া ফেলে, পাহাড়ি প্রকৃতি যেমন মানবগোষ্ঠীকে করে তোলে কঠোর আর পরিশ্রমী, তেমনি ভাঙাগড়ার বৈশিষ্ট্যের নদীর কাছ থেকে মানুষ শিখে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার শিক্ষা । নদনদীর প্লাবন যেমন এ অঞ্চলের মাটিকে পলিযুক্ত ও উর্বর করেছে, তেমনি অনেক সময় তা মানুষকে দুর্ভোগেও ফেলেছে। এদেশের মানুষ ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সাথে সংগ্রাম করে টিকে আছে। অপরদিকে, নদনদী এদেশকে প্রাকৃতিক শোভায় সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। বর্ষাকালে নদীগুলো হয়ে ওঠে ভরাযৌবনা । পল্লির গ্রামগঞ্জ, বাড়িগুলোকে দেখে মনে হয় এগুলো যেন পানিতে ভেসে আছে। এ অঞ্চল একসময় ছিল মাছের অভয়ারণ্য। যদিও আগের মতো মাছ নেই তবুও আজ মাছ ও ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য এবং আমাদের বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। বাংলার বিভিন্ন প্রদেশের বা অঞ্চলের সীমারেখা নির্ণয় করত এ নদী। সুতরাং নদীর প্রবাহ বদলে যাওয়ায় সীমানা নির্ধারণের ব্যাপারেও তা প্রভাব বিস্তার করত।
শুধুমাত্র জীবনপ্রণালি নয় বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপরও নদনদীর প্রভাব লক্ষণীয়। তাইতো ভাটিয়ালি সুর, জারি-সারি গান নদীমাতৃক বাংলাদেশের একান্তই নিজস্ব।
১.১.৯. জলবায়ু
Weather
একটি দেশের উৎপাদন-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা, সেখানকার মানবগোষ্ঠীর জীবনাচারকে অনেকাংশেই নির্মাণ করে সেই অঞ্চলের বিদ্যমান জলবায়ু। পাহাড় ও সমতল এলাকা, নদীনালা-খালবিল, সমুদ্রের লোনাজল ইত্যাদি মিলে বাংলাদেশকে সহজেই চেনা যায় এক স্বকীয় জলবায়ুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বিচারে। বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত বাংলার ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা গিয়েছে বিধায় এ অঞ্চলের আবহাওয়া মৃদু ও নাতিশীতোষ্ণ এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। আর্দ্র ও জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাসের প্রভাবে কালবৈশাখী ঝড়, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস এখানে অনেক সময় জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী সাইক্লোনকে বাংলার জলবায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন যে, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টিপাতই হচ্ছে পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ববাংলার জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি বায়ু দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বাংলাদেশে প্রধান ৪টি ঋতুর উপস্থিতি দেখা যায় । যথা-
১. প্রাক বর্ষা মৌসুম,
২. বর্ষা মৌসুম,
৩. বর্ষা উত্তর মৌসুম এবং ৪. শুষ্ক মৌসুম (শীতকাল)।
প্রাক বর্ষা মৌসুম (Pre-Rainy Season ) : বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে তাপমাত্রা ও বাষ্পীভবনের হার সবচেয়ে বেশি থাকে। ঝড়বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
বর্ষা মৌসুম (Rainy Season ) : জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমায় বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমের বিস্তৃতি হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও মেঘাচ্ছন্নতা এ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এ মৌসুমে।
বর্ষা উত্তর মৌসুম (Post-Rainy Season) : বাংলাদেশে অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমায় বিস্তৃত এ বর্ষা- উত্তর মৌসুম। এ সময় জলবায়ু সূর্যালোকোজ্জ্বল, তপ্ত ও আর্দ্র হলেও রাতে প্রচুর শিশিরপাত হয়। ঝড়বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৪. শুষ্ক মৌসুম (শীতকাল) [Dry Season (Winter)] : বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম বা শীতকাল বিস্তৃত। শুষ্ক মৌসুম তুলনামূলক শীতল, শুষ্ক ও সূর্যকরোজ্জ্বল হয়ে থাকে। এ মৌসুমে স্বল্প মাত্রার শীতকালীন বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, তবে তা সব সময় নাও হতে পারে।
সাকিনা জাহানারা তাঁর 'প্রাগুরু' নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন, ‘যদিও আমরা বছরকে ৬টি ঋতুতে ভাগ করি, তবুও মাত্র ৩টি সুনির্দিষ্ট ঋতু লক্ষ করা যায়। শীতকাল, গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল। অন্য ৩টি ঋতু-শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তকাল তেমন স্পষ্টভাবে লক্ষিত হয় না।'

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]