১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। (Discuss the Characteristics of Constitution in 1962)

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান এর বৈশিষ্ট্য Characteristics of the Constitution of 1962
এক বুক স্বপ্ন-সাধ নিয়ে জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা চেয়েছিলেন সাফল্যের সোনার হরিণ করায়ত্ত করতে। কিন্তু আইয়ুব খান তাঁর রঙিন স্বপ্নগুলোকে ভূলুন্ঠিত করে দেয়। রচিত হয় আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান। সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় প্রণীত ও প্রবর্তিত ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের নতুন সংবিধানের বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো :
ক. ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান (The Constitution of 1962)
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করা হয় এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান বাতিল করা হয় । ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থাসূচক ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আইয়ুব খান ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সরকার গঠনের লক্ষ্যে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংবিধান কমিশন গঠন করেন। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন ছিলেন এ কমিশনের সভাপতি। কমিশন নিজেদের প্রচারিত প্রশ্নাবলির প্রায় ৬,০০০ উত্তর পরীক্ষা করে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় ৬০০ ব্যক্তির সাথে সরাসরি মতবিনিময় করে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে একটি শাসনতান্ত্রিক রিপোর্ট প্রদান করে। উক্ত রিপোর্টটি মন্ত্রিপরিষদে বিশেষভাবে আলোচিত হয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ অক্টোবর পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি প্রায় চার মাস সময় ব্যয়
করে একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে। তার ভিত্তিতে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার পদ্ধতি, এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার ও মৌলিক ব্যবস্থা সম্মিলিত পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের নতুন সংবিধান ঘোষণা করেন। এটিই ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান নামে পরিচিত। খ. ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of the Constitution of 1962) ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের পাকিস্তান সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
৩ লিখিত সংবিধান ( Written Constitution) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। এটি ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের মতো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দলিল। এ সংবিধান ১টি প্রস্তাবনা, ১২টি ভাগে বিভক্ত এবং ২৫০টি ধারায় লিপিবদ্ধ। এর সাথে ৩টি তফসিলও সংযুক্ত ছিল।
ইসলামি প্রজা ( Islamic Republic) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে পাস্তিানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র' হিসেবে। ঘোষণা করা হয় । কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থি কোনো আইন পাস করা যাবে না।
ইসলামি ব্যবস্থা (Islamic System) : এ সংবিধানে ইসলামি বিধি ব্যবস্থার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। ইসলামি জীবনধারা যাতে মুসলিম জনগণ অনুসরণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
৪. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন (Federal Government System) : এ সংবিধান পাকিস্তানে যুক্ত
শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান, এ দুপ্রদেশের সমন্বয়ে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হয়। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এবং অবশিষ্ট বিষয়গুলো প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত করা হয়। ও
এক কক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ (Unicameral Legislature ) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের আইয়ুবী সংবিধানে কেন্দ্র ও প্রদেশের জন্য এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় পরিষদের ১৫৬ জন সদস্য নিয়ে আইনসভা গঠন । জাতীয় পরিষদের ১৫৬ জন সদস্যের মধ্যে ৭৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানের এবং ৭৫ জন পূর্ব পাকিস্তানের মৌলিক গণতন্ত্রীদের দ্বারা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন।
৬. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার (Presidential Form of Government) : এ সংবিধানে পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রবর্তন করা হয়। রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসক। মন্ত্রিপরিষদ প্রেসিডেন্টের নিকট দায়ী ছিল। তাঁর হাতে নজিরবিহীন ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়।
৭. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান (Rigid Constitution) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি নির্দিষ্ট ছিল। জাতীয় পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এবং প্রেসিডেন্ট একমত হলে সংবিধান সংশোধিত হতো ।
আইন পরিষদের কেন্দ্র ঢাকা (Dhaka will be the Centre of Parliament) : এ সংবিধানে কথা ছিল, রাজধানী এলাকা ঢাকা হবে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের কেন্দ্র এবং ইসলামাবাদ হবে সরকার প্রধান কেন্দ্র ৷
আইন প্রণয়নের মূলনীতি (Principles of Law Formulation) : এ সংবিধানে মৌলিক অধিকারের পরিবর্তে ১৬টি আইন প্রণয়নের মূলনীতি সংযোজন করা হয়। তবে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের তালিকা সংযোজন করা হয়েছিল।
১০. একটি বিষয় তালিকা (One Subject Schedule) : সংবিধানে একটি মাত্র বিষয় তালিকা ছিল। সংবিধানের তৃতীয় তালিকায় জাতীয় পরিষদের আওতাভুক্ত বিষয়ের বিবরণ দেয়া হয়। তালিকা বহির্ভূত অবশিষ্ট বিষয়সমূহ প্রাদেশিক আইন পরিষদের ওপর ন্যস্ত হয় ।
১১. মৌলিক গণতন্ত্র (Basic Democracy) : এ সংবিধানে মৌলিক গণতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচকমণ্ডলী (Electoral College) গঠন করে জাতীয় পরিষদ, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও প্রেসিডেন্টের পরোক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তরে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করা হয়।
১২. নীতি নির্ধারক মূলনীতি (Principles of Policy Formulation) : এ সংবিধানে ২১টি নীতি নির্ধারক মূলনীতি ছিল। তন্মধ্যে ইসলামি জীবন পদ্ধতি, সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষা, জাতীয় সংহতি রক্ষা ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য। এগুলো আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য ছিল না। মূলনীতিগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পাদনের আদর্শস্বরূপ।
১৩. বিচার বিভাগের পৃথককরণ (Separation of Judiciary ) : এ সংবিধানে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে
স্বতন্ত্র করার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।
১৪. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের অনুপস্থিতি (Absence of Provincial Autonomy) : ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন উপেক্ষিত হয়।
১৫. গণভোটের বিধান (Rule of Referendum) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল গণভোটের বিধান। প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পরিষদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে গণভোটের ফলাফল প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পরিষদ মেনে নিতে বাধ্য থাকতেন ।
১৬. বৈষম্য দূরীকরণের ব্যবস্থা (Elimination of Discrimination) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যদ্বয়ের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের (বিশেষ করে অর্থনৈতিক বৈষম্য) ব্যবস্থা গ্রহণ নীতি স্বীকৃত হয়েছিল।
১৭. রাজনৈতিক দল (Political Party) : এ সংবিধানে পাকিস্তানে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, জাতীয় পরিষদ রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পরবর্তী সময়ে জাতীয় পরিষদ কতিপয় শৃঙ্খলামূলক শর্তাধীনে রাজনৈতিক দলকে আইনসম্মত করার উদ্দেশ্যে ‘রাজনৈতিক দল আইন' পাস করে ।
১৮. পরোক্ষ নির্বাচন ( Indirect Election) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে পরোক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা নির্বাচিত হতেন । ১৯. জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশন ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন (Formation of national Economic Commission and national Economic League) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের রাজস্ব বণ্টন বিষয়ে সুপারিশ করার জন্য একটি জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশন গঠনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল । ২০. প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন (Centralized Administration and the Leadership of the President) : ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানের আওতায় প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ মৌলিক গণতন্ত্রীদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন । কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিগণ প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত ও তাঁর মর্জির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কেন্দ্রীয় আইন সভা ছিল প্রেসিডেন্টের আজ্ঞাবহ। প্রদেশের গভর্নরগণ প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত এবং তাঁর কাজে জবাবদিহি করতেন। প্রেসিডেন্টের সম্মতি ব্যতীত তারা প্রাদেশিক পর্যায়ে কোনো মন্ত্রীকে নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারতেন না।
এভাবে আইয়ুব প্রবর্তিত ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট ছিলেন শাসন ব্যবস্থার মধ্যমণি। খালিদ বিন সাঈদ একে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের সরকার, প্রেসিডেন্ট দ্বারা সরকার, প্রেসিডেন্টের জন্য সরকার (Government of the president, by the president and for the president) I

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]