ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতাগ্রহণ ও আইনগত কাঠামো আদেশ বর্ণনা কর। (Describe the Takeover of Power of Yahia Khan and Legal Frame Work Order.)

(এক ইউনিট বিলুপ্তিকরণ, সর্বজনীন ভোটাধিকার, আইনগত কাঠামো আদেশ) Fall of Ayub Khan and Yahia Khan's Rule (Abolition of One Unit, Universal Suffrage, the Legal Framework Order) . ভূমিকা
Introduction
আইয়ুব খান ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেন। আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসনের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের বীজ নিহিত ছিল। শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা দখল করেই তিনি তার সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন, গ্রেফতার, হয়রানি এবং ছাত্র নির্যাতন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আইয়ুব সরকার যেকোনো সরকার বিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ জাতি ক্ষেপে ওঠে এবং আইয়ুব বিরোধী রাজনৈতিক জোট গঠন করে।
আইয়ুব বিরোধী রাজনৈতিক জোট Anti Ayub Political Alliance
প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের পিছনে থাকে কিছু কিছু যৌক্তিক কারণ। এখানেও তেমনি কিছু কারণ বিদ্যমান ছিল। আইয়ুব খান ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেন। সামরিক শাসনামলে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ থাকে। দুর্নীতি দমনের নামে দেশের অনেক জনপ্রিয় ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতার ওপর উৎপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক জোট গঠিত হয় ।
সামরিক আইন জারির কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় ১৫০ জন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পার্লামেন্টের সেক্রেটারি এবং প্রায় ৬০০ জন সাবেক জাতীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তদন্ত করে দেখা যায় (দুর্নীতিপরায়ণ) রাজনীতিকগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আইয়ুব খান ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর নির্বাচিত সংস্থাসমূহ (অযোগ্যতা) আদেশ ১৯৫৯ Elective Bodies Disqualification Order 1959 সংক্ষেপে (EBDO) and PODO (Public Office Disquaification Order)- (সরকারি পদ লাভে অযোগ্যতা সংক্রান্ত আদেশ) নামে দুটি আদেশ জারি করেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তাধারা
Ideology of Hossain Saheed Sohrawardi and Sheikh Mujibur Rahman আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও পাকিস্তানের প্রধান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আইয়ুব-বিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্লাটফরম এন.ডি.এফ-এর মূল নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব ক্ষুরধার যুক্তি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কারণে বিভিন্ন মতাদর্শে বিভক্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততোদিন সক্রিয়ভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। আইয়ুবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানতে তিনি অপরিহার্য মনে করতেন। তাঁর দৃষ্টিতে, একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের দাবি ছিল ন্যূনতম কর্মসূচি, যাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সহজ ছিল। বিভিন্ন দল পুনরুজ্জীবিত আন্তঃদলীয় কলহ বা বিরোধ বৃদ্ধি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বিপর্যস্ত হবে বলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দৃঢ়ভাবে মনে করতেন । তাই আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের দাবি তিনি অনুমোদন করতে পারেননি ।
অন্যদিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক শিষ্য ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ক্রমান্বয়ে দলের পুনরুজ্জীবনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতা এবং সাংগঠনিক শক্তিতে প্রচণ্ড বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর যুক্তি হলো, এন.ডি.এফ-এর পক্ষে বড় বড় সমাবেশ অনুষ্ঠান সম্ব, কিন্তু আইয়ুবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই-সংগ্রামে জয়ী হতে হলে আবশ্যক দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তিসম্পন্ন শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। পাঁচমিশালী দলের সমন্বয়ে গঠিত ঢিলেঢালা জোট দ্বারা তা সম্ভব নয়। তাছাড়া পাকিস্তানের দু'অংশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং-এর কার্যকর প্রতিকার বিধানের জন্য পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবির প্রশ্নে এন.ডি.এফ-এর অবস্থান ছিল দ্বিধাগ্রস্ত। শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়ভাবে মনে করতেন, ভবিষ্যতের দিনগুলোতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে দু'অঞ্চলের বৈষম্যের প্রশ্নটি হবে প্রধান বিষয় এবং বাঙালিদের এককভাবে-এর প্রতিকার বিধানের সংগ্রাম করতে হবে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগকেই সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। উপরন্তু, এক এক করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবনের পর আওয়ামী লীগের আর পিছিয়ে থাকা আদৌ সমীচীন নয় বলে তিনি মনে করেন ।
ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা লাভ
Takeover of Yahia khan
আইয়ুব খান ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের মানুষের উপর নানা অত্যাচার নির্যাতন চালায়। তার এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন। আইয়ুব সরকার তাকে দমানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা দায়ের করে যেখানে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাংলার ছাত্রজনতা, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করলে আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল করতে বাধ্য হয়। তারপর আইয়ুব খানের পদত্যাগ আন্দোলন জোরালো হলে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেন।
Disolve of One Unit, Universal Suffrage and the Legal Framework Order এক ইউনিট বিলুপ্তিকরণ (Disolve of one Unit) : পূর্বে পাকিস্তানের (পশ্চিম) ৪টি প্রদেশ বিদ্যমান ছিল। আইয়ুব খান সেসব প্রদেশগুলোকে একত্রিত করে পাকিস্তানের জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতা তথা ঐক্যের জন্য একটিমাত্র ইউনিট তথা একটি প্রদেশে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ইতোমধ্যে এক ইউনিট ব্যবস্থা বাতিলের অসন্তোষকে প্রাধান্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ব্যবস্থা বাতিল করে সেখানে ৪টি প্রদেশ সৃষ্টি করেন । প্রদেশগুলো হলো- (ক) পাঞ্জাব, (খ) সিন্ধু, (গ) বেলুচিস্তান ও (ঘ) উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ । খ. সর্বজনীন ভোটাধিকার (Universal Suffrage) : ইয়াহিয়া খানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি প্রদান। ঘোষণা করেন, সাধারণ আসনে নির্বাচন হবে নির্বাচনি এলাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে । তিনি নির্বাচনে এক ব্যক্তি এক ভোট নীতি গ্রহণ করেন। প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি মেনে নেন ।
গ. আইনগত কাঠামো আদেশ (Legal Framework Order) : ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কতিপয় শাসনতান্ত্রিক পদক্ষেপসহ আইনগত কাঠামো আদেশ বা এল.এফ.ও (L.F.O-Legal Framework Order) জারি করেন। আইনগত কাঠামো আদেশের বিধানসমূহ ছিল নিম্নরূপ :
সাধারণ নির্বাচনসংক্রান্ত বিধানসমূহ :
সর্বজনীন ভোটাধিকার;
'এক ব্যক্তি এক ভোট' নীতি;
৩. প্রত্যেক প্রদেশ বা অঙ্গরাষ্ট্রের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বণ্টন ।
জাতীয় পরিষদের গঠনসংক্রান্ত বিধানসমূহ :
জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ৩১৩ নির্ধারণ;
জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রত্যেক প্রদেশের আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
এলাকাভিত্তিক সাধারণ আসন সংখ্যা ৩০০ এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৩;
সংবিধান প্রণয়নসংক্রান্ত বিধানসমূহ :
পাকিস্তানের সংবিধান ইসলামি রীতিনীতির সমন্বয়ে রচিত হবে।
নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুরক্ষা।
প্রত্যেক প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের জন্য স্বায়ত্তশাসন, কেন্দ্রের হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা এবং দেশের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা।
সংবিধান রচনা এবং কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সামরিক শাসন বহাল থাকবে ।
জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের দিন থেকে ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের
মধ্যে সংবিধান রচনা করতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজন করবে।
জাতীয় পরিষদ কর্তৃক প্রণীত সংবিধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া বাধ্যতামূলক ।
সংবিধান বিল কোন পন্থায় গৃহীত হবে তা জাতীয় পরিষদ নির্ধারণ করবে।
আইনগত কাঠামো আদেশের মূলনীতি –
শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত ইয়াহিয়া খান তাঁর Legal Framework Order (LFO) এ কতগুলো মূলনীতি উল্লেখ করেন। যেমন :
পাকিস্তান রাষ্ট্র হবে একটি ফেডারেল রিপাবলিক যার নাম হবে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান ।
দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজন মুসলমান ।
নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহে অবাধ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ নিশ্চিত করা হবে।
নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]