ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা সম্পর্কে যা জান লিখ। (Write Down Whatever you Know About Historic Agartala Case.)

আগরতলা মামলা, ১৯৬৮
Agortola Case, 1968
. ভূমিকা Introduction
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আগরতলা মামলাটি একটি মাইলফলক। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র উদ্‌ঘাটিত হয়েছে, যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জন আওয়ামী লীগ নেতা, সিভিল সার্ভিসের ২ জন কর্মকর্তাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে সাহিত্যিক ও গবেষক ড. জাকিরুল হক তাঁর ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন, 'আসলে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য তাঁরা এ অভিযোগ তৈরি করে। এ মামলার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ছয়দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ।
আগরতলা মামলা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ
Agortola Case and Bengali Nationalism
ক. আগরতলা মামলা (The Case of Agortola)
পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি ঘোষণা করে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে, যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ জন আওয়ামী লীগ নেতা, ২ জন সি. এস. পি কর্মকর্তাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এক প্রেসনোটে বলা হয় যে, গ্রেফতারকৃত আসামিরা নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন এবং এ ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে। ১৮ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং তাঁকে ১ নম্বর আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। পূর্বের ২৮ জনসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনয়ন করে দায়েরকৃত এ মামলার সরকারি নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য' । শেখ মুজিবুর রহমান এ মামলাকে 'ইসলামাবাদ ষড়যন্ত্র মামলা' নামে অভিহিত করেছেন। যদিও লোকমুখে এ মামলা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করে।
খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদ (Bengali Nationalism)
আগরতলা মামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হতে থাকে। বাঙালির মনে এ ধারণা জন্মায় যে, শেখ মুজিব যেহেতু বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আদায় করার জন্য লড়ছেন সে কারণেই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এ সময়কালে পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় প্রতিদিন মামলার বিচারের বিবরণ প্রচার হতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জবানবন্দিতে এ মামলায় অভিযুক্ত সকল আসামিকে নির্দোষ বলে দাবি করেন এবং অভিযুক্তদের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানান ।
অপরদিকে, রাজসাক্ষীদের অনেকেই তাদেরকে জোরপূর্বক সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। ফলশ্রুতিতে বিচারকগণ বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন। এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে পড়ে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি 'ডাকসু' কার্যালয়ে তৎকালীন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া ও মেনন উভয় গ্রুপ), জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ (দোলন গ্রুপ) নিয়ে গঠিত হয় 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' বা (All Student Action Committee- ASAC) এবং তারা ঘোষণা করে ঐতিহাসিক ১১-দফা কর্মসূচি। ছাত্র সমাজের মিছিলের পর মিছিল ও গগনবিদারী স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকে। ১১-দফা দাবি যখন প্রচণ্ড জোরালো আকার ধারণ করে তখন রাজনীতিবিদগণও
গা ঝাড়া দিয়ে উঠেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (জুলফিকার আলী ব্যতীত অন্যান্য ৮টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি গঠিত হয় 'গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ' বা (Democratic Action Committee-DAC) এবং ১১-দফার পরিপূরক হিসেবে তারা ৮-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এভাবেই ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। ২০
জানুয়ারি থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতার মিছিল শহিদ মিনারের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) গ্রুপের নেতা এ. এম. আসাদ্দুজ্জামান (আসাদ) শহিদ হন। ১ “যদি রাওয়ালপিন্ডির আগরতলা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ষড়যন্ত্র মামলা নিঃশর্তভাবে তুলে নেওয়া হয় এবং সকল আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয় তাহলেই কেবল আমি
গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেব। ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে ঘোষণা করেন, “মুজিবর মিয়ার যদি কিছু হয়, তবে
পাকিস্তান বলে আর কিছু থাকবে না" ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে সেনাবাহিনী বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করলে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ২০ ফেব্রুয়ারি জনতা ঢাকা সেনানিবাস আক্রমণ করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার আল্টিমেটাম প্রদান করে।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বেতার ভাষণে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেন। যার প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরাও কুর্মিটোলা সেনানিবাস থেকে মুক্তি লাভ করে এবং পরবর্তীতে আইয়ুব খানের পতন ঘটে। এর দ্বারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।
. আগরতলা মামলার বিষয়বস্তু ও আসামিগণের নাম
Facts or Allegation and Names of Accused Persons of Agortola Case
ক. মামলার বিষয়বস্তু (Facts of the Case)
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি মামলার আর্জিতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত ২৮ জন কর্মকর্তা পাকিস্তানের একটি বিশেষ দিনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করবে ।
রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অভিযুক্তরাসহ ভারতীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এ ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন করে। তারা এ বিপ্লবকে সফল করার জন্য ভারতীয়দের নিকট থেকে অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এই মর্মে অর্থ ও অস্ত্রের একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই এক প্রেসনোটে বলা হয় যে, গ্রেফতারকৃত আসামিরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং এ ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি পেলেও ১৮ জানুয়ারি তাকে পুনরায় আর্মি, নেভী ও এয়ারফোর্স অ্যাক্টে গ্রেফতার করা হয়। এসময় এক প্রেসনোটে বলা হয়, “পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক শেখ মুজিব ।
যদিও আগরতলা মামলার প্রথমদিকে শেখ মুজিবকে যুক্ত করা হয়নি কিন্তু ১৮ জানুয়ারি ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা ও পরিচালনার অভিযোগ এনে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে পূর্বে অভিযুক্ত ২৮ জনসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আর একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা ইতিহাসে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে পরিচিত। এ মামলার অভিযোগনামায় বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও ভারতের সহযোগিতায় অভিযুক্ত সামরিক সদস্যরা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন ।
খ. আসামিগণের নাম (Name of Accused Persons)
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি মামলার অধীনে চূড়ান্তভাবে প্রণীত আসামিদের তালিকা ছিল নিম্নরূপ :
শেখ মুজিবুর রহমান (ফরিদপুর)
লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (বরিশাল)
সুন্নাত মুজিবর রহমান (মাদারীপুর)
गान, এ, সুলতান উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা)
এল, এম, নূর মোহাম্মদ (ঢাকা)
আহম্মদ ফজলুর রহমান, সি. এস. পি. (ঢাকা)
৭. ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজউল্লাহ (নোয়াখালি)
কর্পোরাল আবুল বাশার মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (বরিশাল) হাবিলদার দলিল উদ্দিন (বরিশাল)
. . . এস. পি. (খুলনা)
১১. ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (বরিশাল)
১২. শ্রী বিভূতি ভূষণ চৌধুরি (মানিক চৌধুরি) (চট্টগ্রাম) ১৩. বিধান কৃষ্ণ সেন (চট্টগ্রাম) ১৪. সুবেদার আব্দুর রাজ্জাক (যশোর)
১৫. অবঃ হাবিলদার ক্লার্ক মুজিবর রহমান (কুমিল্লা) ১৬. অবঃ ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুর রাজ্জাক (কুমিল্লা) ১৭. সার্জেন্ট জহুরুল হক (নোয়াখালী)
১৮. মোহাম্মদ খুরশীদ (সাবেক এবি) (ফরিদপুর) ১৯. কে. এম. শামসুর রহমান, সি. এস. পি. (ঢাকা) ২০. রিসালদার শামসুল হক (ঢাকা)
২১. হাবিলদার আজিজুল হক (বরিশাল)
২২. এস. এ. সি. মাহফুজ বারি (বরিশাল) ২৩. সার্জেন্ট শামসুল হক (নোয়াখালী) ২৪. মেজর শামসুল আলম (ঢাকা)
২৫. ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল মোত্তালিব (ময়মনসিংহ) ২৬. ক্যাপ্টেন শওকত আলী (ফরিদপুর) ২৭. ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা (বরিশাল)
২৮. ক্যাপ্টেন এ. এন. এম. নুরুজ্জামান (ঢাকা) ২৯. সার্জেন্ট আবদুল কাদের (ঢাকা)
৩০. মোঃ মাহবুব উদ্দিন চৌধুরি (সিলেট)
৩১. ফার্স্ট লে. এম. এস. এম. রহমান (যশোর)
৩২. অবঃ সুবেদার এ. কে. এম. তাজুল ইসলাম (বরিশাল)
৩৩. মোহাম্মদ আলী রেজা (কুষ্টিয়া)
৩৪. ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দিন আহমেদ (ময়মনসিংহ)
৩৫. ফার্স্ট লে. আবদুর রউফ (ময়মনসিংহ)
এদের বাইরেও ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয় । কিন্তু তারা পরে রাজসাক্ষী হতে রাজি হওয়ায় ক্ষমা পেয়ে যান ।
গ. আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য (The Objectives of Agortola Case)
১. শেখ মুজিবুর রহমানকে জনগণ ও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে ৬-দফা আন্দোলনকে চিরতরে নস্যাৎ করা ।
২. পূর্ব পাকিস্তানিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমূলে ধ্বংস করা।

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে বিভেদ ও ব্যবধান আরও বৃদ্ধি করা।

পরবর্তী নির্বাচনে আইয়ুব খান ও তার কনভেনশন মুসলিম লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করা।
৪. পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে এ মনোভাব জাগ্রত করা যে, বাঙালিরা কখনই বিশ্বাসযোগ্য নয় ।
আগরতলা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ও পরিণতি
Judicial Procedure and Result of Agortola Case
ক. আগরতলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া (Judicial Procedure of Agortola Case)
আগরতলা মামলার বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এক অর্ডিন্যান্স জারি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুন বেলা ১১টায় পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২-ক এবং ১৩১ ধারা অনুসারে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের একটি বিশেষ কক্ষে মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলার চার্জশিট ছিল ১০০ টি অনুচ্ছেদ সংবলিত। সাক্ষীর সংখ্যা ছিল সরকার পক্ষে ১১ জন রাজসাক্ষীসহ মোট ২০০ জন। প্রখ্যাত আইনজীবী আবদুস সালাম খানের নেতৃত্বে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের নিয়ে একটি আত্মপক্ষ সমর্থকদের দল গঠন করা হয়। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিরা ব্রিটেনের প্রখ্যাত আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়াম এমপিকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী হিসেবে প্রেরণ করেন ।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি ছিলেন এস. এ. রহমান। অপর দুই বিচারপতি ছিলেন এম. আর. খান ও মকসুমুল হাকিম ২৯ জুলাই ১৯৬৮ মামলার শুনানি শুরু হয়। এ সময় স্যার টমাস উইলিয়াম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ৫ জুলাই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছিলেন। তবে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে গেলে ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আর কিছু ছিল না ।
খ. আগরতলা মামলার পরিণতি (Results of Agortola Case)
আইয়ুব খানের পূর্বের ফৌজদারি অর্ডিন্যান্স (১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল) অনুযায়ী পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস.এ. রহমান বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম.আর. খান ও পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি মকসুমুল হাকিম-এর সদস্য নিযুক্ত হন। প্রধান ফরিয়াদি হিসেবে থাকেন পাকিস্তানের এককালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রখ্যাত পাঞ্জাবি আইনজীবী মঞ্জুর কাদের। অপরদিকে, আসামিদের পক্ষ নেন ইংল্যান্ডের রানির আইন বিষয়ক উপদেষ্টা প্রখ্যাত আইনজীবী টমাস উইলিয়াম। এছাড়া তাদের পক্ষে ছিলেন ড. আলীম আল রাজি, আতাউর রহমান খান, আবদুস সালাম খান, জুলমত আলী, মোল্লা জালাল উদ্দিন ও মওদুদ আহমদসহ বহুসংখ্যক আইনজীবী । সরকার দুটি প্রধান খাতে ৪২ পৃষ্ঠার সুদীর্ঘ একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে মামলার প্রধান আসামি শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এছাড়াও আদালতে ১১ জনের নামের একটি তালিকা রাজসাক্ষী হিসেবে এবং ১২টি চিঠি, ২ কপি টেলিগ্রাম, ‘বাংলাদেশ ও বেতারবাণী' লেখা দুটি তারিখবিহীন কাগজ, অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত দলিল, ১০টি প্রবন্ধের একটি তালিকা এবং ২০০ সাক্ষীর নামসহ ৮২টি দলিল উত্থাপিত হয়। ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশের পর মামলাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দেন এবং এতে তালিকাভুক্ত আসামিদের নির্দোষ দাবি করেন। এভাবে সকল আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপরপক্ষে, রাজসাক্ষীদের অনেকেই গোপন কথা ফাঁস করে দেন এবং তাদের জোরপূর্বক সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
এর ফলে বিচারকগণ বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে শুনানি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। একদিকে সাক্ষীদের মিথ্যা বলার অনীহা, অপরদিকে আসামিদের জোরালো প্রতিবাদের মুখে আগরতলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শিথিল হয়ে আসে। আবার ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান নামে এক ছাত্র নেতাকে, ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলে আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যা করার প্রতিবাদে মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণআন্দোলন দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নিজের দুর্বল অবস্থান অনুমান করতে পেরে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি বেতার ভাষণে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করেন। এভাবে আগরতলা মামলা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা বলে প্রমাণিত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]