রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকের সিদ্ধান্ত আলোচনা কর। (Discuss the Decisions of the Round Table Meeting in Rawalpindi.)

খ. রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকের সিদ্ধান্ত (Decision of Rawalpindi Round Table)
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ গোলটেবিল বৈঠকের সমাপ্তিকালে আইয়ুব খান প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এবং ফেডারেল পার্লামেন্টারি পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। তদুপরি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে রাজনৈতিক নেতাদের একটি গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং ১০-১৩ মার্চ রাওয়ালপিণ্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের দলীয় প্রতিনিধিদল যোগদান করেন। এ গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানকারী পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ, নূরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, মাহমুদ আলী, মৌলভী ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক গোলাম আযম, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ প্রমুখ। এ গোলাটেবিল বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়-
পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর প্রতিনিধিরা নতুন সংবিধান রচনা করবেন। রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে প্রবর্তিত হবে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার। দেশের শাসনকাঠামো হবে যুক্তরাষ্ট্রীয়।
৪. পূর্বপাকিস্তানের ন্যায্য দাবি মেটানো হবে ।
পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানের ৬-দফা গ্রহণ না করায় তিনি সম্মেলন হতে বের হয়ে আসেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং অরাজনৈতিক কার্যকলাপ ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। আইন ও প্রশাসনযন্ত্র অচল হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের (১৮৯৯-১৯৭১) বহিষ্কারের দাবিতে হরতাল আহ্বান করা হয়। ২১ মার্চ ড. মির্জা নূরুল হুদাকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ 'ডাক' (Democratic Action Committee) ত্যাগ করে এবং ৬-দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এদিকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন এবং তাঁর অনুসারীরা ঘেরাও, জ্বালাও, পোড়াও কর্মসূচি গ্রহণ করে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দারুণ অবনতি ঘটে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান সার্বিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাতে (২৫ মার্চ) সেনাপতি বা কমান্ডার ইন চিফ আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পাকিস্তানের রাজনীতি হতে বিদায় গ্রহণ করেন । বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্জিত নির্বাচনি বিজয় এবং একাত্তরের স্বাধীন বাংলাদেশ।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে গণমানুষের সম্পৃক্ততা
People's Connectivity with Mass-Upsurge in 1969
বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে সিভিল সমাজের সফল উত্থান হয়েছিল ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুবি শাসন থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সিভিল সমাজ মাঝে মাঝে পিছু হটেছে বটে তবে পর্যুদস্ত হয়নি। গোটা ঊনসত্তরের আন্দোলন ছাত্ররাই সংগঠিত করেছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের বাধ্য করেছে ঐক্যবদ্ধ হতে। তৎকালীন সিভিল সমাজকে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের অনুকুলের মানসিকতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্বভার যার ওপর ছিল তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অচিরেই পরিচিত হয়ে উঠলেন 'বাংলার বন্ধু' বা 'বঙ্গবন্ধু' নামে। বাংলাদেশে সিভিল সমাজের প্রতীক হয়ে উঠলেন তিনি । স
১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠায় কতজন আত্মাহুতি দিয়েছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। এম. এ. হান্নান বিভিন্ন সূত্র থেকে একটি হিসাব দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর হিসাব অনুযায়ী এ এক দশকে
নিহত হয়েছেন ১২১ জন এবং এর মধ্যে '৬৯ খ্রিস্টাব্দেই ৬১ জন।
৬১ জনের পেশাওয়ারি ভাগ এ রকম-
শ্রমিক 29
ছাত্র 21
কৃষক 3
শিক্ষক 2
চাকরিজীবী 3
সৈনিক 1
গৃহবধূ 1
অজ্ঞাত 1
এখানে অবশ্য উল্লেখ করতে হয় স্বাধীনতার দলিলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। সুতরাং, ঐ ভিত্তিতে জনাব হান্নানের হিসেবের সঙ্গে আরও ৩১ জন যোগ করলে ৯ বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫২ জন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের নিহতের মধ্যে ছিলেন ৩৪ জন শ্রমিক, ২০ জন ছাত্র, ৭ জন সরকারি কর্মচারী, ৫ জন খুদে ব্যবসায়ী ও ১ জন স্কুল শিক্ষক। মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত ধ্বংস করার জন্য ছাত্রনেতারা আন্দোলনের সময় মৌলিক গণতন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় মৌলিক গণতন্ত্রীরা পদত্যাগে রাজি না হলে মানুষ তাদের বাধ্য করেছিল পদত্যাগ করতে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রায় ১০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারীর সংখ্যা ছিল ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ মাত্র। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণআন্দোলনের সূচনা ছাত্ররা করলেও মওলানা ভাসানী ছিলেন এর প্রাণপুরুষ ।
ধর্মের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ মিশ্রণ হলে সমাজতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্যই পরিবর্তিত হয়ে যায়। ভাসানীর সারাটা রাজনৈতিক জীবন অনেকাংশে বৈপরীত্যে ভরা। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকেই ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। আবার ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের ৬-দফার বিরোধিতা করেছিলেন, যা ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি। আইয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খান যখন সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন তখন ভাসানী নির্বাচনে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করলেন।
আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে দিশেহারা হয়ে জেনারেল আইয়ুব প্রথমে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তিদানে তাঁর সম্মতির কথা ঘোষণা করলেও শেখ মুজিব তাতে রাজি হলেন না। অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি জেনারেল আইয়ুব তাকে (শেখ মুজিবুর রহমানকে) নিঃশর্ত মুক্তিদান ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঐতিহাসিক গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন এবং তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে দিয়ে ২৫ মার্চ দেশে সামরিক আইন জারি করান। আর এভাবে পাকিস্তানে দ্বিতীয় বারের মতো সামরিক শাসন জারি হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]