সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর ১১ দফা কর্মসূচি আলোচনা কর। (Discuss 11 Point Programme of All Student Action Committee- ASAC.)

Programme, Importance and Result of the Movement
. ভূমিকা Introduction
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও ৬-দফাপন্থি অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বন্দী অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে থাকলে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বভার সচেতন ছাত্রসমাজের ওপর গিয়ে বর্তায়। বস্তুত ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের গণ অভ্যূত্থানই পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে। যার পথ ধরেই ১৯৭১ খ্রিষ্টব্দে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। জন্ম নেয় বিশ্ব মানচিত্রে আর একটি স্বাধীন দেশ-বাংলাদেশ। .
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচি
Programme of Mass-Upsurge of 1969
ক. ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচি (Eleven Point Programme of Student's Society)
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাঙালিদের প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও ৬-দফাপন্থি অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বন্দী অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে থাকাকালে বিশেষ করে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হওয়ার পর বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন ছাত্রসমাজ গ্রহণ করে। এসময় পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে আইয়ুব খানের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রগণও আন্দোলন শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানি ছাত্রসমাজ পশ্চিম পাকিস্তানের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনকে স্বাগত জানায় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘট পালন করে। ফলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন অতিদ্রুত সমগ্র পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন-মতিয়া উভয় গ্রুপ), সরকারি ছাত্র ফেডারেশন, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ (দোলন গ্রুপ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব বিরোধী মঞ্চ হিসেবে 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' (All Student Action Committee ASAC) গঠন করে। ডাকসুর তৎকালীন সহ-সভাপতি ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমদ সভাপতি নির্বাচিত হয়। আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১-দফা নামক এক বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচি যথাক্রমে
১. হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, ছাত্র বেতন হ্রাস ও ছাত্রদের অন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্ৰবৰ্তন, বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে চালু।
সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। ৬-দফার ভিত্তিতে পূর্ববাংলাকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান ।
পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্থান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধুসহ সকল প্রদেশকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে দেশের পশ্চিম অংশে একটি সাব-ফেডারেশন গঠন।
ব্যাংক, বিমা, ইন্স্যুরেন্স ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।
কৃষকের ওপর হতে খাজনা ও ট্যাক্সের বোঝা হ্রাস, বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল ।
শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও বোনাস প্রদান।
৮. পূর্ববাংলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জনসম্পদের সার্বিক ব্যবহারের ব্যবস্থা।
৯ জরুরি অবস্থা, নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইন বাতিল।
১০. সিয়াটো, সেন্টো, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং ছোট বহির্ভূত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ। ১১. সকল রাজবন্দীর মুক্তি, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও চুলিয়া প্রত্যাহার এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ সকল রাজনৈি
মামলা বাতিল ঘোষণা ।
এভাবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ ধারণসহ একটি বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করে,
যা এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুসহ রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। মূলত, ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত এ ৫ মাস সমগ্র পূর্ববাংলায় গণবিদ্রোহ দেখা দেয়। একই সময় পশ্চিম পাকিস্তানেও আইয়ুববি ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে।
খ. 'ডাক'-এর ৮-দফা কর্মসূচি (Eight Point Programme of DAC)
অনেকদিন যাবৎ গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও দিয়ে উঠেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (জুলফিকার আলী ভুট্টো) ব্যতীত ৮টি বিরোধী রাজনৈতিক দল যেমন-
3
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ),
2
নেজামে ইসলাম পার্টি,
8
জামায়াতে ইসলাম,
পাকিস্তান আওয়ামী লীগ,
৫. পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ (৬-দফা পন্থী),



পাকিস্তান মুসলিম লীগ,
জামায়াতে উলামায়ে ইসলাম ও
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)
Committee-DAC)
নিয়ে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ' (Democratic Action Committee - DAC) নামক একটি জোট গঠন করে এবং ১১ দফার পরিপূরক হিসেবে ৮ দফা কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ।
এতে বলা হয়, পাকিস্তানের আদর্শের বাস্তবতায় এবং মূল্যবোধ রক্ষার জন্য এ ৮টি দল পাকিস্তানে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ও জনগণের রাজনৈতিক সাবভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। তারা দেশে-
১ফেডারেল পদ্ধতির পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা কায়েম;
2 প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচন;
8 অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার;
৫পূর্ণ নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সকল কালাকানুন বিশেষ করে বিনা বিচারে আটক রাখার আইন ও বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল;
আবদুল ওয়ালী খান, শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, রাজনৈতিক কারণে জারিকৃত সব গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার;
৬ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আওতায় জারিকৃত সকল নির্দেশ প্রত্যাহার;
9 শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা;
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১-দফা আন্দোলন
৮. নতুন ডিক্লারেশন দানের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ সমূহ প্রত্যাহার, সংবাদপত্রের ওপর জারিকৃত সকল নির্দেষাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইত্তেফাক, চাতন, প্রগ্রেসিভ পেপারস্ লিমিটেডসহ সকল বাজেয়াপ্তকৃত কিংবা ডিক্লারেশন বাতিলকৃত গ্রেস পত্রিকা ও সাময়িকি তাদের আদি মালিকের কাছে প্রত্যাবর্তনের দাবি করেছেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি উত্থাপিত ৮ দফা বাঙালি জাতিকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করে তোলে।
সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দুর্বার আন্দোলনে পরিণত হয়। লৌহমানব মুহাম্মদ আইয়ুব খান স্পষ্ট দেখতে গান দেওয়ালের লিখন ।
গ. ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃতি (Nature of Mass Upsurge of 1969)
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানের পর্যালোচনা করলে প্রেক্ষাপট যেমনি ওঠে আসে তেমনি ধরা পড়ে আন্দোলনের প্রকৃতিও । ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে পর্যলোচনা করলে কতিপয় প্রকৃতি চোখে পড়ে। যেমন-
১. প্রথম গণআন্দোলন (First Public Movement) : পাকিস্তানের ইতিহাসে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল প্রথম ব্যাপক গণআন্দোলন ।
2 সকল শ্রেণিপেশার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন (United Movement of All Professionals) : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বস্তরের মানুষের তথা নিম্ন-মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক-কর্মচারী আর কৃষকের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ।
৩. স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ( Movement for Autonomy) : সামরিক শাসনের অবসানে গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন
প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ে সর্বস্তরের শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে ব্যাপক গণআন্দোলন ।
৪. জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রকাশ (Expression of Nationalist Spirit) : বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনে দেশব্যাপী ব্যাপক গণমানুষের অংশগ্রহণ।
৫. দীর্ঘকালীন আন্দোলন ( Long Time Movement) : দেশব্যাপী সর্বোচ্চ সময়ে বিস্তৃত গণমানুষের অংশগ্রহণে
গণআন্দোলন যা ৫ মাস স্থায়ী হয়ে সামরিক শাসনের পতন ঘটায় ।
৬. নেতৃত্বের ধরন (Nature of Leadership) : সচরাচর রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশনায় যেকোনো আন্দোলন পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মূল ও প্রধান নেতৃত্বে ছিল ছাত্র সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাত্র নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল।
৭. ৰামপন্থি কর্মসূচি (Leftist Programme) : ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের পক্ষে বামপন্থি ১১-দফা
ঘোষিত হয়, যাকে কেন্দ্র করেই পূর্ববাংলায় গণঅভ্যুত্থানের জোয়ার প্রবাহিত হয়।
৮. গণঅভ্যুত্থান (Mass Upsurge) : পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র,
শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী তথা সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় সেটাই মূলত ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]