১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও পরিণতি আলোচনা কর। ( Discuss the Importance and Result of Mass- Upsurge of 1969.)

. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব ও পরিণতি
Importance and Result of Mass-Upsurge in 1969
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থরক্ষা ও গণমানুষের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র সমাজের ১১-দফাভিত্তিক আন্দোলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় রচনা করে। বিভিন্ন দিক থেকে এ আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ যা নিম্নরূপ :
১. আইয়ুব খানের শাসন অবসান (Conclusion of Ayub Khan's Rule) : ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯৬৮-৬৯-এর গণআন্দোলন যখন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়, আইয়ুব-মোনায়েম খানের
পতন তখন তুরান্বিত হয়ে পড়ে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বাংলার দ্বিতীয় ‘মীরজাফর' বলে খ্যাত মোনায়েম খানকে গভর্নর পদ থেকে অপসারণ করে তার স্থলে নতুন গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে অপসারণের জন্য দৃঢ় শপথ গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে বাধ্য হয়ে ড. এম. এন. হুদাকে । কিন্তু এতে পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে জন উল্লাস জনরোষে পরিণত হয় এবং জনগণ স্বৈরাচারী জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ রাত ৮.১৫ মিনিটে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এভাবেই আইয়ুব-মোনায়েম সরকারের স্বেরাচারী শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তারা নিক্ষিপ্ত হন ইতিহাসের ঘৃণ্য আস্তাকুড়ে। এর ফলেই পাকিস্তানের অন্যান্য সামরিক-
বেসামরিক আমলাদের মনোবল ভেঙে যায় এবং তারা প্রশাসনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার (Abstraction of Agortola Case ) : উনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন ও আপামর জনসাধারণের দুর্বার গণআন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি প্রদান এবং আলোচনার সূত্রপাত করেন ।
সংসদীয় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের স্বীকৃতি (Parliamentary Democracy and Recognition of Voting Rights) : স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার জনগণের গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি সর্বদলীয় গোলটেবিল বৈঠক ডাকতে বাধ্য হন। উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে নানাবিধ যুক্তিতর্ক শেষে নেতৃবর্গ তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন । বিষয়গুলো হলো-
ক. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ।
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতির প্রবর্তন ।
গ. সংসদীয় সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন।
যদিও এগুলো কার্যকর হয়েছিল পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে ।
৪. বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি (Increasing Status of Bengali Language) : ঊনসত্তরের ছাত্র আন্দোলন ও গণমানুষের আন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। ১১-দফায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি উত্থাপনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজ বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়াস নিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের সামরিক আইন জারির পর এ ছুটি বাতিল হয়ে গিয়েছিল
৫. অর্থনৈতিক মুক্তি (Economic Freedom) : এ আন্দোলনে ৬-দফার অনুসরণে ১১-দফায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি তুলে ধরা হয়। ১১-দফা দাবির মধ্যে ছাত্র সমাজ, শ্রমিক, উকিল, শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, ব্যবসায়ীসহ মধ্যবিত্ত ও কৃষকশ্রেণির স্বার্থ সংবলিত দাবি সংযুক্ত করে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন লাভে সক্ষম হয় ।
৬. রাজনীতিতে ছাত্রসমাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি (Extending Importance of Students Community in Politics) : ঊনসত্তরের আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ ১১-দফাভিত্তিক গণদাবি সংবলিত আন্দোলন গড়ে তোলে এবং দেশবাসীর প্রাণের দাবিগুলো সরকারের সম্মুখে তুলে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছাত্র সমাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে।
9. ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবোধ (United Movement and Bengali Nationalism) : ঊনসত্তরের গণআন্দোলন তথা ১১-দফাভিত্তিক আন্দোলন বিস্তারের আগে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী কয়েকটি দল ছাড়া-এর প্রতি অনেক দল সমর্থন দেয় নি। আসাদের শহিদ হওয়ার পর জামায়াত, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ জানায়। এমনকি পিন্ডি, করাচিতে ছাত্ররা ১১-দফার পক্ষে সহানুভূতি জানায়। সরকারি দল এন.এস.এফ.এ ভাঙ্গন ধরে এবং-এর একাংশ ১১-দফা সমর্থন করে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বামপন্থিদের বৃহৎ অংশ এবং ডানপন্থি সংগঠনভুক্ত সদস্যদের মধ্যে পূর্ববাংলায় পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। ফলে বাঙালির যে জাতীয়তাবোধ ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল, এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পায় ।
স্বাধীনতার প্রেরণাশক্তি (Inspiration of Independence) : ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালির মধ্যে যে জাতীয় চেতনা ও ঐক্য গড়ে ওঠে তা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোকে পর্যুদস্ত করে এবং আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণআন্দোলন ছিল পাকিস্তানের ২২ বছরের গণআন্দোলনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আন্দোলনের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। তাই ঊনসত্তরের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান গণমানুষের প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলন ছিল। আর যেকোনো গণআন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হয়ে থাকে বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে, ধাপে ধাপে গতিশীল হয় সেই আন্দোলন। তাই ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান যে সকল পর্যায় অতিক্রম করে সফলতার দিকে এগিয়ে যায় তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]