১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর। (Discuss the Various Phases of the Mass Upsurge in 1969.)

. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় Different Stages of Mass-Upsurge in 1969
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সারা পাকিস্তানে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটে, তা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ ঘটনা। স্বৈরাচারী একনায়কত্ববাদী শাসন তথা আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানের জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনরূপে বিকাশ লাভ করে এ গণঅভ্যুত্থান। আমাদের জনগণের সংগ্রাম, জাতীয় অধিকারের প্রশ্নসহ জাতীয় গণতন্ত্রে এমন কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামনে এসে উপস্থিত হয়েছিল, যার ফলে পূর্ববাংলায় এ অভ্যুত্থান এক বিপ্লবী অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। আইয়ুব সরকার সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বিরোধী দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক আপসে আসতে বাধ্য হয়। এ পন্থায় শাসকগোষ্ঠী বিপ্লব পরিস্থিতিকে (বিশেষত পূর্ববাংলায়) নিয়মতান্ত্রিকতার পথ হিসেবে ধরে রাখতে চেষ্টা করে।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের গতিপ্রকৃতি, নেতৃত্ব, আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি বহুদিক থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংগ্রামের মধ্যে তারতম্য থাকলেও স্বৈরাচারী আইয়ুবের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানে গণঅভ্যুত্থানের একই সাধারণ পটভূমি গড়ে ওঠেছিল। প্রকৃতপক্ষে, কেবল আইয়ুবি শাসনের ১০ বছরের স্বৈরশাসকশ্রেণিই নয় পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই দীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী একই শাসকশ্রেণির শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে জনজীবনে যে সংকট সৃষ্টি হয় তা গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি রচনা করে। ১৯৬৪-৬৫ খ্রিষ্টাব্দে সারা পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এ অবস্থায়ও ১৯৬৫-এর নির্বাচনে আইয়ুব সরকার টিকে যায়। তারপর ১৯৬৯-'৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের ব্যাপারে আইয়ুব সরকারের ঘোষণায় পুনরায় রাজনৈতিক জোয়ার বইতে থাকে।
অন্যদিকে, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের আওয়ামী লীগের ৬-দফা এ অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। এ সময় সরকারের দমননীতি গণঅভ্যুত্থানকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলে। রওনক জাহানের ভাষায়, 'The response to the six-point was one of the total suppression. But this policy led to intensified frustration that partially explains the spontaneous mass movement of 1968-69.'
সরকারের দমননীতির সবচেয়ে চরম প্রকাশ ঘটে আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলার নামে ৬-দফার অন্যতম প্রবর্তক শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে কারাগারে প্রেরণের মাধ্যমে। তখন সারা বাংলার মানুষ বিদ্রোহে ফেটে পড়ে এবং আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয় ।
গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায় (Different Stages of Mass Upsurge) : ৬-দফার আন্দোলন যখন তুঙ্গে পৌঁছে তখন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ কতিপয় ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি' গঠিত হয় এবং এ পরিষদ ৬-
দফার সম্পূরক হিসেবে ছাত্রসমাজের ১১-দফা দাবি প্রণয়ন করে। নিম্নে ছাত্র সমাজের আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের
রূপধারণের একটি দিবসওয়ারি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলো :
১৭ জানুয়ারি নই। এ দিন ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদের অভুত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অলসতা,
শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
১৮ জানুয়ারি : ঢাকায় ধর্মঘট ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। হত্যা করা হয়। এ হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খালি পায়ে মিছিল করেন। একই দিনে রাজশাহীসহ ২০ জানুয়ারি : রমনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে নৃশংসভাবে অন্যান্য শহরেও ধর্মঘট পালিত হয়।
২৪ জানুয়ারি : এ দিন নারায়ণগঞ্জে পূর্ণদিবস হরতাল পালিত হয় এবং ময়মনসিংহে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
২৫ জানুয়ারি : ঢাকায় ও খুলনাতে সান্ধ্য আইন জারি করা হয় এবং পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়। (এর মধ্যে জহির একজন)।
২৬ জানুয়ারি : এ দিন ন্যাপ (ওয়ালী) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদসহ অনেকেই গ্রেফতার হন ।
১ ফেব্রুয়ারি : এদিন আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানান এবং ইত্তেফাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহার করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি : ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রদেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করে ।
১৫ ফেব্রুয়ারি : কুর্মিটোলা সেনানিবাসে সার্জেন্ট জহরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি, : পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানী এক জনসভায় ভাষণ দেন এবং ১১-দফার বাস্তবায়ন ও শেখ মুজিবের মুক্তির কঠিন শপথ ব্যক্ত করেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহাকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করে ।
২০ ফেব্রুয়ারি : এ দিন ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় এবং সেদিনের স্লোগান ছিল একটাই “জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব” । এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি : এদিন আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে, তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না ।
২২ ফেব্রুয়ারি : শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স বাতিল করা হয়।
৪ মার্চ : এ দিন সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করা হয়।
১০ মার্চ : পিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠকে শেখ মুজিব ৬-দফা ও ১১-দফার পক্ষে কথা বলেন। এ বৈঠকে প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও পার্লামেন্টারি ফেডারেল গভর্নমেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
২৫ মার্চ : এ দিন রাত ৮-১৫ মিনিটে আইয়ুব খান দেশের শাসনভার সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দেন। এ ঘোষণার ফলশ্রুতিতে আন্দোলনের তীব্রতা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]