বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক গঠন আলোচনা কর। (Discuss the Anthropological Structure of Bangali Nation.)

নৃতাত্ত্বিক গঠন
Ethnic Composition
Introduction
আমাদের এ ভূখণ্ডের মানবগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বিষয়াদি নিয়ে বহুবিধ পর্যায়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আর এ নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্টের সাথেই জড়িত রয়েছে মানুষের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের গোড়ার কথা। তাই নৃতাত্ত্বিক গঠন আর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন মুটি বিষয়ই পাশাপাশি চলে এসেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক মোঃ মোশারফ হোসেন তাঁর 'প্রত্নতত্ত্ব : ঊর্ধ্ব ও বিকাশ' গ্রন্থে বলেছেন, 'হমনিড পর্বের মানুষ তাদের উদ্ভবের পর থেকে জীবনধারণের জন্য সংগ্রহবৃত্তির ওপর নির্ভর করে প্রায় ৫ লক্ষ বছর অতিবাহিত করেছে। এরপরে আবির্ভূত হয়েছে হমোসেপিয়েন্স প্রজাতি। এরা সর্বপ্রথম জীবন ধারণের ক্ষেত্রে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করে শিকারবৃত্তিতে। শিকারবৃত্তি থেকে কৃষিবৃত্তিতে উত্তরণের পূর্বপর্যন্ত এ সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় মানুষকে পাড়ি দিতে হয়েছে উত্তাল তরঙ্গ, আর নিজেদের খাপখাওয়াতে হয়েছে হাজারো ধরনের ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে। যতদিন পর্যন্ত মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে-নি ততদিন পর্যন্ত তারা বানর জাতীয় প্রাণীকুলের মতো গাছে গাছে আরোহণ করে বা মাটিতে ঝরেপড়া ফল কুড়িয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতো। প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রথমদিকে মানুষ ভাষা, পোশাক, আগুন, হাতিয়ার ইত্যাদির কোনোকিছুরই ব্যবহার জানত না। কৃষিকাজ উদ্ভাবনের পর (আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে) আদিম মানুষ বনের নিকটবর্তী পাহাড়ের গুহা ছেড়ে নেমে এসেছে নদী তীরের উর্বর সমতল ভূমিতে।
ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুন ও মোঃ মাহবুবুর রহমানের ভাষায় সেই সত্যিটাই ওঠে এসেছে এবং তাঁরা বলেছেন যে, 'একটিমাত্র নরগোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি হয়নি বাঙালির । কয়েকটি নরগোষ্ঠীর মিলিত ফল বাঙালি। বাঙালির আকার মাঝারি, তবে ঝোঁক খাটোর দিকে, চুল কালো, চোখের মণি হালকা থেকে ঘন বাদামি, গায়ের রংও ঐ রকম, মুখ সাধারণত লম্বাটে, নাক মাঝারি। কথায় বলে, “মাছে ভাতে বাঙালি'। তাছাড়া এটিও অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি অস্ট্রেলিয়া জনগোষ্ঠীর সভ্যতার দান। পাশাপাশি এ মাছ ধরার কৌশল বা হাতিয়ারের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের সঙ্গে বাঙালিদের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।'
প্রত্নতাত্ত্বিক/ঐতিহাসিক আ.ক.ম জাকারিয়া, মোবারক হোসেন খান-এর মতো নৃতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ অতুল সুর-এর 'বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়' গ্রন্থ (জিজ্ঞাসা, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৭, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৭৯) এবং জুন, ২০১৪ মাসে প্রকাশিত তসিকুল ইসলাম রাজা, বোরহান বুলবুল ও অনুপম হাসান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ এবং বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতি' গ্রন্থে প্রকাশিত তাঁর ‘বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও জাতিগঠন প্রক্রিয়া' প্রাচীন থেকে দূর আধুনিক সভ্যতায় মানবগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য এবং এ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে পর্যালোচনা করতে গেলে দূরপ্রাচ্য ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার অধিবাসীদের সঙ্গে বাঙালিদের প্রধান খাদ্যের যথেষ্ট মিল রয়েছে। পূর্ববঙ্গের জলবায়ু ধান উৎপাদনে বিশেষ সহায়ক বলেই ভাতই বাঙালির প্রধান খাদ্য ।
উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, যে সকল দেশের প্রধান কৃষি উৎপাদন ধান সে সকল ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে তা আদি অস্ট্রেলীয় অস্ট্রিক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় সমৃদ্ধ নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী। আবার এ ধানকেই ভালোবেসে-এর বিভিন্ন নাম দিয়েছে যেমন— রূপশালী, কাটারীভোগ, বালাম ইত্যাদি। পোশাক-পরিচ্ছদ নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যদিও বাঙালিদের পোশাক অতি সাধারণ প্রকৃতির ।
বিগত উনিশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাঙালিরা সবাই ধুতি বা কাছা দিয়েই কাপড় পরতেন এবং মেয়েরা পরতেন একপেঁচে শাড়ি। পরবর্তীতে বর্তমানকালের রঙিন লুঙ্গি বার্মা থেকে আমদানি হয়েছিল বলেই এখনও বার্মিজ লুঙ্গির এত সুনাম ও কদর। আবুল মনসুর আহমদের আত্মজীবনীতেই প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ফারাজিরা এখানে প্রচলন করেছিলেন সাদা লুঙ্গির। যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর পোশাক ও ভাষার সমন্বয় জীবনধারা কিংবা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলে। প্রথমদিকে মুসলমানরাই লুঙ্গি পরা শুরু করে, যা সময়ের চাহিদায় পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলমান তথা পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের সর্বজনীন পোশাকে পরিণত হয়। ভাষা কাজ করে দুভাবে সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক একক হিসেবে। পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের ভাষা একটিই— বাংলা ভাষা। তাই ব্রিটিশরা বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালিকে দুর্বল করে রাখার জন্যই বাঙালির বসত প্রাচীন বঙ্গকে ২ ভাগে ভাগ করে স্বাধীনতা দিয়েছে খ্রিষ্টাব্দে।
নৃ-গোষ্ঠীর সংজ্ঞা
Defindtion of Race
ইংরেজি Race শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ নৃ-গোষ্ঠী। সাধারণত একই দৈহিক আকৃতিবিশিষ্ট লোকের সমষ্টি যাদের মধ্যে কতগুলো আকার-আকৃতির মিল রয়েছে এবং এ মিল বা অভিন্নতা যদি বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয় তবে তাকে নৃ-গোষ্ঠী বা নরগোষ্ঠী বলে। বস্তুত নৃ-গোষ্ঠী বলতে আমরা ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহে গড়ে ওঠা এমন এক জনসমষ্টিকে বুঝি যারা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বাস করে একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলে এবং নিজেদের মধ্যে আবেগ অনুভূতিগত ঐক্য অনুভব করে। নৃ-বিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানিগণ বিভিন্নভাবে নৃ-গোষ্ঠীকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে এগুলো প্রদত্ত হলো :
সমাজবিজ্ঞানী Jon M Shepard তাঁর 'Sociology' গ্রন্থে Race-এর সংজ্ঞায় বলেন, 'Race is a distinct category of people who share certain biologically inherited physical characteristics' অর্থাৎ নৃ-গোষ্ঠী হচ্ছে জনসংখ্যার সেই বিশেষ অংশ যারা জৈবিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কতগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ।
সমাজবিজ্ঞানী Schaefer-এর মতে, 'Race is a group which is set apart from others because of obvious physical difference.' অর্থাৎ নৃ-গোষ্ঠী বলতে এমন একটি গোষ্ঠীকে বোঝায় যারা সুস্পষ্ট দৈহিক ভিন্নতার কারণে অন্যান্যদের থেকে পৃথক ।
সমাজবিজ্ঞানী E.B. Tylor তাঁর Dictionary of Anthropology গ্রন্থে বলেন, "Race is a major division of mankind with a distinctive, hereditarily transmissible physical characteristics." অর্থাৎ নৃ-গোষ্ঠী বলতে মানবজাতির এমন একটি প্রধান গোষ্ঠী বা বিভাগকে বোঝায় যার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলি রয়েছে।
১.২.৩. বাঙালির নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Bengali Race
সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে অনার্য ও আর্য এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় এবং বঙ্গদেশে আর্যদের পূর্বে আগমনকারী উক্ত অনার্য নরগোষ্ঠীই বাঙালি জাতির আদি পুরুষ। আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর মাঝে উল্লেখযোগ্য অস্ট্রিক ভাষার মানবগোষ্ঠীই বাঙালিদের পূর্বপুরুষ। অস্ট্রিক জাতির এদেশে আগমনের পর দ্রাবিড় জাতিও এদেশে আগমন করে। এদের রক্তধারা বর্তমানে বাঙালি জাতির মধ্যে বহমান। এদের পর এসে যুক্ত হয়েছে আর্য জাতি এবং সকলের রক্তের মিশ্রণে কালক্রমে গড়ে ওঠে বাঙালি জনগোষ্ঠী। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম ও বর্ণের মিশ্রণ রয়েছে। যে কারণে বাঙালির শারীরিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে নানা জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় ।
ঐতিহাসিক মুনতাসীর মামুন ও মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘একটি মাত্র নরগোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি হয়নি বাঙালির । কয়েকটি নরগোষ্ঠীর মিলিত ফল বাঙালি । বাঙালির—
* আকার মাঝারি তবে ঝোঁক খাটোর দিকে।
চুল কালো ।
চোখের মণি হালকা থেকে ঘন বাদামি এবং গায়ের রংও ঐ রকম। মুখ সাধারণত লম্বাটে।
নাক মাঝারি।'
নৃ-বিজ্ঞানী বিজলে তাঁর Tribes and caste of Bengal' গ্রন্থে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হলো বাঙালিদের-
অধিকাংশের মাথা গোল।
নাক মধ্যমাকৃতি থেকে চওড়া।
গায়ের রং শ্যাম, কালো এবং কিছুটা শ্বেত বর্ণের।
পার্বত্য অঞ্চলে যেসব উপজাতি বসবাস করে তাদের মাথাও গোল, বিশেষ করে চাকমা ও মারমাদের মাথা গোল।
৬. পুরুষের মুখে দাড়ি ও গোঁফের প্রাচুর্য এবং চোখের গড়ন দেখে অনুমান করা যায় যে, এদের মধ্যে দ্রাবিড় প্রভাবও বিদ্যমান।
চোখের মণি পাতলা থেকে ঘন বাদামি।
৮ চামড়া পাতলা থেকে গাঢ় বাদামি।
৯. মুখমণ্ডল মধ্যমাকৃতির ।
১০. মাথার চুল কালো ।
অপরদিকে ডাল্টন তাঁর 'Description Ethnology of Bangladesh' গ্রন্থে বাঙালি জনগোষ্ঠীর নিম্নলিখিত চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন—
কোল, ভীম, সাঁওতালদের সাথে দৈহিক আকৃতিগত সাদৃশ্য।
দ্রাবিড়দের সাথে সাদৃশ্য।
উত্তর-পশ্চিম থেকে সাইথিয়ান বা অনার্য অনুপ্রবেশকারীর ভাষা কালক্রমে স্থানীয় ভাষার সাথে নিশ্রিত হয়ে উত্তর ভারতে জন্ম নেয় প্রাকৃত ভাষা ।
আর্য আক্রমণ এবং Race মিশ্রণে তাদের প্রভাব ।
ফজলে রাব্বি তাঁর 'হকিকতে মুসলমানে বাঙলা' গ্রন্থে বলেছেন, 'এদেশের মুসলমানদের মাঝে তুর্কি, আফগান, আরবীয়, আবিসিনীয় ও ইরানিদের প্রভাব রয়েছে।'
উল্লেখ্য যে, বাঙালির নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যসমূহ একদিনে গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর রক্তের সংমিশ্রণে গড়ে উঠা বাঙালির দেহের বিভিন্ন অংশে এজন্যই ভিন্ন ভিন্ন নরগোষ্ঠীর চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
মানবজাতির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Human Race
বিভিন্ন নরগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মানবজাতির নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :

মাথার গড়ন : ককেশয়েড নিগ্রোদের মাথা লম্বা। অস্ট্রালয়েডদের মাথার গড়ন লম্বাটে ও মাঝারি। অন্যদিকে, মঙ্গোলয়েডদের মাথা চওড়া ও গোলাকৃতির ।
২ . মুখাকৃতি : ককেশয়েডদের মুখের আকৃতি লম্বাটে ও সরু। নিগ্রোয়েডদের মুখাকৃতি লম্বাটে তবে ককেশয়েডদের মতো অতটা সরু নয়। অস্ট্রালয়েডদের মুখাকৃতি দেহের তুলনায় বড়, চোয়াল চওড়া, থুতনি ছোট, আর মঙ্গোলয়েডদের মুখাকৃতি গোল, চওড়া ও হালকা সমতল ধরনের ।
9
8
নাকের গড়ন : ককেশয়েডদের নাকের গড়ন চিকন ও উঁচু, পক্ষান্তরে নিগ্রোদের ও অস্ট্রালয়েডদের নাক বোঁচা ও থ্যাবড়া, মঙ্গোলয়েডদের নাক মধ্যমাকৃতির।
চোখের গড়ন : ককেশয়েডদের চোখের রং হালকা থেকে বাদামি কালো এবং চোখের মণি নীল। নিগ্রোয়েড, অস্ট্রালয়েড ও মঙ্গোলীয়দের চোখের রং কালো বাদামি থেকে কালো। তবে অস্ট্রালয়েডদের অক্ষিপটের উপরের অংশ বড় এবং মঙ্গোলীয়দের চোখের পাতা একটু মোটা এবং চোখের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট।
দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয়
ঠোট : ককেশীয়দের ঠোঁট পাতলা, মঙ্গোলীয়দের মাঝারি, নিগ্রো ও অস্ট্রালয়েডদের মোটা ও পুরু।
কান : ককেশয়েডদের কান মাঝারি ধরনের লম্বা ও প্রশস্ত, নিগ্রোদের ও অস্ট্রালয়েডদের কান ছোট ও প্রশস্ত, মঙ্গোলীয়দের কান লম্বা ও সরু।
গায়ের রং : ককেশয়েডদের গায়ের রং সাদা ও সাদা-লালচে, মঙ্গোলয়েডদের বাদামি ও হলুদ ধরনের, নিগ্রো ও অস্ট্রালয়েডদের গায়ের রং কালো।
মাথার চুল : ককেশয়েডদের চুলের রং বাদামি ও সোনালি এবং চুল চিকন ও সোজা ধরনের। নিগ্রোয়েডদের চুল কালো থেকে কালো বাদামি, মোটা ও কোঁকড়ানো। অস্ট্রালয়েডদের চুল কালো এবং পাতলা আকৃতির সোজা ও কোঁকড়া। মঙ্গোলয়েডদের চুল প্রধানত কালো ও কালো বাদামি ধরনের তবে মোটা ও খাড়া।
গায়ের লোম : ককেশয়েডদের গায়ে লোম ও মুখে দাড়ির প্রাচুর্য রয়েছে। নিগ্রো ও অস্ট্রালয়েডদের মুখের দাড়ির পরিমাণ কম তবে গায়ে লোমের প্রাচুর্য রয়েছে। মঙ্গোলয়েডদের গায়ের লোম ও মুখের দাড়ির পরিমাণ কম।
১০. উচ্চতা ও দেহের আকৃতি : ককেশয়েডদের দেহের গড়ন বলিষ্ঠ, শক্তিশালী ও লম্বা। নিগ্রোয়েডদের দেহের আকৃতি শক্ত ও বলিষ্ঠ, উচ্চতা মাঝারি ও লম্বা। অস্ট্রালয়েডদের দেহের গড়ন শক্ত, উচ্চতা খর্বাকৃতি ধরনের। মঙ্গোলয়েডদের দেহের গড়ন বলিষ্ঠ, উচ্চতা মাঝারি ধরনের।
১.২.৫. প্রাচীন যুগ
Ancient Period
প্রাচীন যুগ ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ প্রাচীন যুগের জনবসতি কারা এবং তাদের জীবনাচার কেমন ছিল ইত্যাদি। জাতিতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানিগণের মতে, পৃথিবীর ৪টি প্রাচীন ও প্রধান নরগোষ্ঠীর প্রতিটির কোনো না কোনো শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায়। আর সেই নরগোষ্ঠীসমূহ যথাক্রমে-নিগ্রীয়, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অস্ট্রেলীয়। তবে ধারণা করা হয় যে, বাংলার প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রিক ভাষাভাষীরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি (বাংলাপিডিয়া খণ্ড-৯)। কে. এম. মহসিন ও শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও বাংলাদেশ সমীক্ষামালা-৪-এর তথ্য মতে, তারা নিগ্রীয় বা নিগ্রোটোদের পরে বাংলায় এসেছিল। সম্ভবত তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত তাদের আদি বাসস্থান থেকে বাংলাদেশে এসেছিল ।
মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান তাঁর 'বাংলাদেশের জাতিসত্তার সন্ধান' শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের মধ্যে অস্ট্রেলীয় নরগোষ্ঠীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এদেরকে ‘ভেড্ডা’ও বলা হয়। এর কারণ শ্রীলংকার ভেড্ডাদের মতো এদের দৈহিক গড়ন। বেঁটে বা মধ্যমাকৃতির এসব লোকের মাথা লম্বা, নাক চওড়া এবং গাত্রবর্ণ কালো। আমাদের দেশের সাঁওতাল, ওঁরাওদের মধ্যে এমন দৈহিক কাঠামো লক্ষ করা যায়।'
প্রচীন যুগের এক সময় একটি জনগোষ্ঠী দ্রাবিড় ও মোঙ্গল ভাষায় কথা বলত এবং সম্ভবত, ওরা দক্ষিণ-পশ্চিম চিন থেকে ব্রহ্মদেশে ও পূর্বভারতের পাহাড়ি এলাকার মাঝ দিয়ে এ বাংলাদেশে এসে বসতি গড়ে। বাংলাদেশে আর্যদের আগমন ও প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে পুরোপুরি সঠিক তথ্য না থাকলেও এটা ঠিক যে, প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ) আর্যরা ভারতীয় উপমহাদেশে আসলেও তারা বাংলাদেশে আসে অনেক পরে ।
১.২.৬. মধ্যযুগ
Mediaeval Period
মধ্যযুগ ১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমাদের প্রাচীন কিংবা আধুনিক সভ্যতার এ চলমান সমাজে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ওপর যেমনি পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব থাকে জীবনাচার বা জীবন সংস্কৃতির নির্মাণে তেমনি প্রভাব থাকে সেই জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেরও।
১২০৪-০৫ খ্রিষ্টাব্দে বখতিয়ার খলজির সেই নদীয়া বিজয়ের পথ ধরেই মুসলিম অভিবাসিগণের জন্য বাংলার দরজা খুলে যায় তা মনে করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, প্রায় সকল মুসলিমগণই শাসনকর্তা, শাসক, সেনাপতি, সৈনিক, শিক্ষক, ধর্মপ্রচারক, চিকিৎসক, বণিক, স্থপতি, কারিগর এবং এরা ভাগ্যান্বেষী হয়ে এদেশে আগমন করেন। ইলিয়াস শাহী আমলে ও পরে আবিসিনিয়ানদের (১৪৮৭-'৯৩ খ্রি.) বাংলা শাসনের পর ষোলো শতকে শুরু আফগানরা বাংলাদেশে শাসন প্রতিষ্ঠা করে। মুঘলদের বাংলা বিজয়কালে আফগানরা নিজেদের বাংলার অন্যান্য মুসলিমগণের সাথে মিশিয়ে ফেলে তবে তাও উপাধি থেকে বোঝা যায় যে, তারা আফগান ছিলেন। নবাবি আমলে ইরানি বা পারসিক জনগোষ্ঠী বাঙালিদের সাথে মিশে যাওয়ায় আজকের বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায়ের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
আমাদের প্রাচীন কিংবা দূর আধুনিক সভ্যতার চলমান সমাজে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ওপর যেমনি পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব থাকে জীবনাচার বা জীবন সংস্কৃতির নির্মাণে তেমনি প্রভাব থাকে সেই জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেরও। আমাদের চলতি আলোচনার প্রধান বিষয় বাঙালি হচ্ছে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গঠন বা মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আমরা অনেকে অতিপ্রাচীন পেছনের ঐতিহাসিক ভিত্তিকে ভুলে যাই অথবা ইচ্ছে করেই পর্যালোচনা করাটাকে এড়িয়ে চলতে চাই। প্রকৃত সত্যিটাতে পেছনে ঠেলে কখনো সামনে এগুতে গেলে তা মৌলিক ঐতিহাসিক বিকৃতির আশঙ্কা থেকে যায়।
এভাবে সুলতানি ও মুঘল আমলে মুসলিমরা ২ ভাবে এখানে সমাজ গঠন করেন- প্রথমত, বিদেশি মুসলিম অভিবাসী হয়ে: দ্বিতীয়ত, ধর্মান্তরিত হয়ে । আর সেই অভিবাসী মুসলিমগণ প্রধানত আরব, তুর্কি, আফগান, মুঘল ও ইরানি বংশোদ্ভূত এবং ধর্মান্তরিত মুসলিমগণ আসেন স্থানীয় হিন্দু ও বৌদ্ধগণের কাছ থেকে। ফলে বাঙালি নৃতাত্ত্বিক বিচারে মিশ্র জাতিতে পরিণত হয় ।
১.২.৭. আধুনিক যুগ
Modern Period
আধুনিক যুগের বিস্তৃতি ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। আমাদের আলোচিত আধুনিক যুগ-এর সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামল থেকে। তাই ব্রিটিশ শাসনামলে (১৭৫৭-১৯৪৭) বহুজাতিক রক্তের মিশ্রণে বাঙালি নৃতাত্ত্বিক কাঠামোর গঠন নির্ণীত হয়। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এদেশে ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, স্প্যানিশ, আমেরিকান ইত্যাদি জাতির আগমনে বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির নির্মাণ হয় ।
গবেষক ও চিন্তাবিদ আহমদ শরীফ তাঁর ‘বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়' শীর্ষক নিবন্ধে বলেন, “বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় অতি জটিল। তাছাড়া এ বিষয়ে আজো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি। কাজেই নিঃসংশয় সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। তবু বলা চলে এদেশে রক্ত-সঙ্কর্য একটু বেশি পরিমাণেই হয়েছে। তাই নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় হয়তো নির্ভুল তথ্য মেলা ভার।'
আজকের আধুনিক যুগে এসে নৃতাত্ত্বিক গঠন বা উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধিকরণ কোনোটারই তেমন সুযোগ নেই তবে সভ্যতার উন্নয়নের চাহিদায় আধুনিক যুগের সীমানায় বসে সেই প্রাচীন সভ্যতা আর নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে জানতে পারলেই উন্নয়ন- সমৃদ্ধি সম্ভব হবে আর আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি হবে। তাই আধুনিককালের নৃতাত্ত্বিক জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নয়নের স্বার্থেই আজকের আধুনিক সময়ের নৃতাত্ত্বিক বিষয়াদি জানা দরকার।
বাঙালি সংকর জাতি
Bengali is a Hybrid Nation
বাঙালি একক কোনো নৃ-তাত্ত্বিক জাতিসত্তা নয়। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণের সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠেছে। নৃ-তাত্ত্বিক গবেষকদের মতে বাঙালি একটি নতুন মিশ্র জাতি বা সংকর জাতি। বাংলা অঞ্চলে সর্বপ্রথম কোন জাতি বসবাস শুরু করেছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ধারণা করা হয় অস্ট্রালয়েড বা নিগ্রোয়েড জাতিগোষ্ঠীর লোক প্রথম বাংলার ভূখণ্ডে বসবাস শুরু করে। কালের বিবর্তনে এদের সাথে যুক্ত হয়েছে মঙ্গোলয়েড, দ্রাবিড় ও আলপিয়ান জাতি ।
বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। এজন্য বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়। যেসব জাতির সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গঠিত তা নিচে আলোচিত হলো :
১. অনার্য-আর্য নরগোষ্ঠী : বাঙালির আদি মানবদের দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় । যথা
ক. প্রাক আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী ও খ. আর্য নরগোষ্ঠী।
বাংলাদেশে আর্যদের আগমনের পূর্বে অনার্য নরগোষ্ঠী বাস করত। তারাই বাংলার আদি নরগোষ্ঠী। আর্যদের আগমনে তাদের মধ্যে নতুন জীবনধারা চলে আসে।
বাংলার অনার্য নরগোষ্ঠীর উৎপত্তি হয় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মোঙ্গলীয়, আলপীয় এবং নেগ্রিটোসহ আরও কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে।
অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড : বাংলায় বসবাসকারী আদি নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েডরা প্রধান অংশ। এরা ভেড্ডি বা নিষাদ নামেও পরিচিত। বাঙালির মধ্যে এ জনগোষ্ঠীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হয় ৫/৬ হাজার বছর পূর্বে এরা এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। সাঁওতাল, কোল, ভীম, মুণ্ডা, ভূমিজ, মালপাহাড়ি, বাউড়ি, চণ্ডাল প্রভৃতি অস্ট্রালয়েডদের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ ঝুড়ি, গণ্ডা, পন, চোঙ্গা, ঠেঙ্গা, পেট, করাত, দা, লাউ, লেবু, কলা প্রভৃতি অস্ট্রিক ভাষা থেকে এসেছে।
নেগ্রিটো : বাংলায় বসবাসকারী আদি নরগোষ্ঠীর মধ্যে নেগ্রিটোরা অন্যতম। বাংলাদেশের যশোর, সুন্দরবন, ময়মনসিংহ এবং নিম্নাঞ্চলে অনেক জায়াগায় এ জনগোষ্ঠীর প্রভাব ছিল। এরা খর্বাকৃতি, কৃষ্ণবর্ণ, কেশ উর্নাবৎ, বেঁটে, ঠোঁট পুরু ও উল্টানো এবং নাক চ্যাপ্টা প্রভৃতি শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
৪. দ্রাবিড় : সিন্ধু সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বাঙলা ভূখণ্ডে বসবাস শুরু করে। এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য হলো—মাথা লম্বা, নাক চওড়া, চুল কালো বাদামি, গায়ের রং কালো থেকে বাদামি, উচ্চতা খাটো, ঠোঁট পুরু, মুখগহ্বর বড়, মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট।
৫. আলপাইন : দ্রাবিড়দের পরে আলপাইন জাতিগোষ্ঠী ভারতে বসবাস শুরু করে। বাঙালি, গুজরাটি, মারাঠি, উড়িশি জাতির পূর্বপুরুষদের অনেকেই আলপাইন গোষ্ঠীর লোক ছিল। এরা বিহার, উড়িষ্যা হয়ে কাশি এবং পূর্ব আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ।

মঙ্গোলয়েড : মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে বাংলায় এসেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে এদের প্রধান বসবাস। এদের গায়ের রং পীতাভ থেকে বাদামি, চুল কালো, মাথার আকৃতি গোল, নাক চ্যাপ্টা এবং চোখের পাতা ঝোলানো ।
৭. নার্ডিক : বাঙালির নৃ-মিশ্রণে নার্ডিক জাতিগোষ্ঠীর অবদান রয়েছে। এরা বেদপন্থি আর্য ছিল । বেদ রচনার পর এদের
উৎপত্তি হয়। বাংলা, গুজরাট ও মারাঠায় এদের বসবাস ছিল।
b.
আর্য পরবর্তী ধারা : আর্য জাতির পর আরও অনেক জাতি এ অঞ্চলে বসবাস করে। মধ্য এশিয়া, পারস্য, তুর্কিস্তান থেকে আসা শক, তুর্কি, পাঠান, মুঘল, ইরানি, আবিসিনীয়, আরব জনগোষ্ঠীর কিছু ইংরেজ ধারা, পর্তুগিজ আরাকানি প্রভৃতি রক্তধারাও বাঙালির রক্তে মিশেছে। এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো এরা গড়নে মধ্যমাকৃতির, গোলাকৃতির মাথা, দীর্ঘ নাসা ।
মূলত, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর মিশ্রণে বাঙালি জাতি গঠিত হয়। বিভিন্ন জাতিসত্তার মিশ্রণে বাঙালি জাতির উদ্ভব হওয়ায় বাঙালি জাতি সংকর জাতি হিসেবে পরিচিত। বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি আচার-আচরণ, ইতিহাস- বিভিন্ন জাতির দ্বারা প্রভাবিত।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]