সংশোধনীসহ নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশ আলোচনা কর। (Discuss the Legal Framework Order of Election with Amendments.)

ভূমিকা Introduction
পাকিস্তানে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সর্বাত্মক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে একবার প্রাদেশিক নির্বাচন হয়। সামরিক শাসক আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের পাশাপাশি জাতীয় পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করেন, তবে তা ছিল উদ্ভট মৌলিক গণতন্ত্র ফর্মুলায়। পাকিস্তানের আরেক সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের অধীনে হলেও ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনই পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচন, যাতে গোটা পাকিস্তানের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ পায়। অবশ্য পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনের রায় কার্যকর হয়নি বরং নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলকে দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে হয়। সমঝোতা ও সংহতির সকল পথ রুদ্ধ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ হয় 'বাংলাদেশ'।
ইয়াহিয়া খানের গৃহীত পদক্ষেপ ও নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশ
Steps Taken by Yahia Khan and Legal Framework Order of Election
ক. ইয়াহিয়া খানের গৃহীত পদক্ষেপ (Steps taken by Yahia Khan)
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। প্রথমে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদের এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের দিন স্থির করা হয়। তবে আগস্ট মাসে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানায়। তাই ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে সামারিক সরকার নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিয়ে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে। পূর্ব ঘোষণানুযায়ী নির্বাচন উপলক্ষে জনসাধারণের সামনে বক্তব্য রাখার জন্য নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতাকে বেতার ও টেলিভিশনের মারফত ভাষণ প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৩০টি আসনের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। বাকি সমস্ত আসনে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এবং ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় উভয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি তারিখে।
খ. নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশ (Legal Framework Order of Election)
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন যে, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর দেশে জাতীয় পরিষদের এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জাতীয় পরিষদের কাজ হবে দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে উক্ত নির্বাচনের 'আইনগত কাঠামো আদেশ' (Legal Framework Order)-এর মূলধারাগুলো ঘোষণা করেন। নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশে নির্বাচন ও জাতীয় পরিষদ গঠন এবং-এর কার্যাবলি কেমন হবে তা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ৩১৩ জন সদস্যর সমন্বয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ১৩টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে । প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ নির্বাচিত হবেন।
প্রত্যেক প্রদেশে একটি করে প্রাদেশিক পরিষদ থাকবে। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন ।
জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত সদস্যগণ স্ব-স্ব প্রদেশের সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীগণকে নির্বাচিত করবেন।
৪. জাতীয় পরিষদের কোনো আসন শূন্য হলে ৩ সপ্তাহের মধ্যে উক্ত শূন্য আসন নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।
২৫ বছর বয়স্ক যেকোনো পাকিস্তানি নাগরিক যার নাম ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ আছে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে আদালত কর্তৃক ঘোষিত বিকৃত মস্তিষ্ক কোনো ব্যক্তি, কিংবা আদালত কর্তৃক ২ বছরের বেশি সময়ের সাজাপ্রাপ্ত ইত্যাদি এমন ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।
কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী হতে পারবেন তবে একাধিক আসনে নির্বাচিত হলে তাকে একটি আসন রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দিতে হবে।
কোনো সাংসদ স্পিকার বরাবর স্বহস্তে লিখিত চিঠির মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারবেন। কোনো সদস্য স্পিকারের নিকট থেকে ছুটি না নিয়ে একাধিক্রমে ১৫ কার্যদিবসে অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ শূন্য হয়ে যাবে।
৮. জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে
ভাষণ দিতে পারবেন।
৯. জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করবেন। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ।
১০. জাতীয় অধিবেশনে কোরাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত রাখবেন কিংবা মুলতবি করে দিবেন।
১১. সদস্যরা জাতীয় পরিষদে বাংলা, উর্দু কিংবা ইংরেজিতে বক্তৃতা দিবেন । পরিষদের কার্যবিবরণীর সরকারি রেকর্ড উর্দু,
বাংলা এবং ইংরেজিতে রক্ষিত হবে।
১২. শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আইনগত কাঠামো আদেশে কতকগুলো মূলনীতি উল্লেখ করে দেয়া হয়।
১৩. ইয়াহিয়া খান ঘোষিত 'আইনগত কাঠামো আদেশ'-এর উপক্রমণিকায় উল্লেখ করা হয় যে, এ আদেশের সঙ্গে
সংগতি রেখে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরি করতে হবে।
আইনগত কাঠামো আদেশের সংশোধনী (Amendment of Legal Framework Order)
নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশের অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা প্রমাণ করবেন প্রেসিডেন্ট। এতদসংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং তাকে কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। প্রেসিডেন্ট কেবল এ আদেশের যেকোনো ধারা সংশোধন করতে পারবেন। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের কোনো ক্ষমতা থাকবে না।
আইনগত কাঠামো আদেশের প্রতিক্রিয়া (Reaction of Legal Framework Order)
এই আদেশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় সংসদের যে রূপরেখা ঘোষণা করেন তা ছিল অনেকটাই দুর্বল জাতীয় সংসদ। এ জাতীয় সংসদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল ছিল প্রেসিডেন্টের ইচ্ছের ওপর। ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন ও তাতে প্রেসিডেন্টের সম্মতি নিতে ব্যর্থ হলে যদি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে এটিকে সার্বভৌম সংসদ বলা যায় না।
এমনি অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও ন্যাপসহ অন্যান্য গণআমনাদলসমূহ আইনগত কাঠামো আদেশ থেকে অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাদ দেয়ার দাবি জানান। নির্বাচনের আইনগত কাঠামো আদেশ থেকে অগণতান্ত্রিক ধারা ও সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে ন্যাপ (ওয়ালী) ২৬ এপ্রিল (১৯৭০) দাবি দিবস পালন করে। অন্যদিকে, প্রায় সকল ডানপন্থি দলসমূহ উক্ত আইনগত কাঠামো আদেশ মেনে নেয় ।
ইয়াহিয়া খান ঘোষিত আইনগত কাঠামো আদেশের বিরূপ সমালোচনা করলেও ভাসানী ন্যাপ বাদে অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনে ব্যাপক জনসমর্থন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিধায় তিনি নির্বাচনকে ৬-দফা ও ১১ দফা দাবিসমূহের ওপর 'রেফারেন্ডাম' হিসেবে অভিহিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনকে সকল শোষণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদ করার সুযোগ বলে মনে করে ঘোষণা করেন যে, আসন্ন নির্বাচন হচ্ছে ব্যালটের মাধ্যমে পূর্ববাংলার জনগণের দাবি আদায়ের সর্বশেষ সংগ্রাম। ন্যাপ (ওয়ালী) নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ ঘোষণা করেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংসদ প্রতিষ্ঠা করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। ন্যাপ-নেতা ওয়ালী খান জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। মওলানা ভাসানীর দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নি। 'পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগ' ও এ নির্বাচন বয়কট করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]