১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ বর্ণনা কর। (Describe the Result of Election of 1970 and Causes of the Victory of Awami League.)

নির্বাচন প্রস্তুতি পর্ব ও অংশগ্রহণকারী প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ Election Preparatory Stage and Participant Main Political Parties
ক. ১৯৭০-এর নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্ব (Preparatory Stage of Election in 1970)
প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রথমে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ৫ অক্টোবর জাতীয় পরিষদের এবং ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আগস্ট মাসে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানায়। তাই ভয়াবহ বন্যার প্রেক্ষিতে সামরিক সরকার নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিয়ে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূল দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসের স্মরণকালের বৃহত্তম ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। আওয়ামী লীগের প্রস্তাব মোতাবেক কেবল ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৩০টি আসনের নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। বাকি সকল আসনে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এবং ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় উভয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি।
খ. আসন বিন্যাস
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের সাধারণ আসনসংখ্যা ছিল ৩০০ এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল ১৩টি। অন্যদিকে, প্রাদেশিক পরিষদের সর্বমোট আসনসংখ্যা ছিল ৬২১টি। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ৩০০টি, মহিলা আসন ১০টি, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আসন ৩০০টি, মহিলা ১১টি। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথকভাবে প্রার্থী মনোনীত করে। জাতীয় পরিষদের আসনগুলোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত হয়েছিল সাধারণ ১৬২টি এবং মহিলা ৭টি আসন। পাকিস্তানের দুই অংশে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং মোট ১৮৬৮ জন প্রার্থী (পূর্ব পাকিস্তানে ৭৮১) জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ নির্বাচনে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা অনুযায়ী পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একজন বাঙালি বিচারক বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এ নির্বাচনে পাকিস্তানে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬৪ লক্ষের উপর, তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ৩ কোটি ২২ লক্ষ এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ২ কোটি ৫২ লক্ষ (মোট জনসংখ্যা ১১ কোটি ৫০ লক্ষ)। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ আসনসমূহে সরাসরি প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরে নির্বাচিত হন।
১৯৭০-এর নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
গ. অংশগ্রহণকারী দলসমূহ (Participant Parties)
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বেশকিছু নির্দলীয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে আদর্শগত বিচারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জি, ডব্লিউ, চৌধুরী ত ভাগে ভাগ করেছেন ।
ৰাম
সারণি-১৯ : পাকিস্তানের দলগুলোর আদর্শগত অবস্থান party in 1970 election
সূত্র : জি. ডব্লিউ, চৌধুরী, অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ দিনগুলো, ঢাকা, হক কথা প্রকাশনী, ১৯৯১, পৃ: ১২।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগঠন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি। তবে এ নির্বাচনে পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দলই এলাকাভিত্তিক ৩০০টি আসনের সবকটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি । নির্বাচন কমিশন দলগুলোর প্রতীক বরাদ্দ করার পরই ২৭ অক্টোবর (১৯৭০) থেকে নির্বাচনি প্রচারাভিযান শুরু হয়। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনে তাদের প্রচারাভিযান চালানোর সুযোগ পায়। নির্বাচনি প্রচারে মূলত আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রাধান্য লাভ করে ।
ঘ. ১৯৭০-এর নির্বাচনি প্রচারাভিযান (Campaign of Election in 1970 ) -
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচন ছিল পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের জন্যই একটি অস্তিত্বের লড়াই। উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের প্রচারাভিযান নিম্নরূপ
আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান 'নৌকা' প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের পূর্বে জাতির উদ্দেশ্যে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর রেডিও-টেলিভিশনে একটি ভাষণ প্রদান করে ৬-দফা ও ১১-দফা কর্মসূচির ওপর 'গণভোট' বলে আখ্যায়িত করেন। পূর্ব বাংলার ওপর দুই দশকের অধিক সময়ব্যাপী পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণ, বঞ্চনা, আঞ্চলিক বৈষম্য, ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের ঔদাসীন্য, ৬-দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, গণতান্ত্রিক পথে ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা', কৃষক-শ্রমিকদের আর্থসামাজিক কল্যাণের লক্ষ্যে সংস্কারমূলক কর্মসূচি ইত্যাদি আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারে গুরুত্ব পায় । পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) : জুলফিকার আলী ভুট্টোর পি.পি.পি.-এর নির্বাচনি স্লোগান ছিল “ইসলাম আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্র আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সমাজতন্ত্র আমাদের অর্থনীতি।” তাছাড়াও প্রচারণার মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘শক্তিশালী কেন্দ্ৰ,' ইসলামি সমাজতন্ত্র ও অব্যাহত ৬-দফা এবং ভারত বিরোধিতা ।
ম্যাপ (ভাসানী) : পূর্ব বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় দল ন্যাপ (ভাসানী) 'ভোটে মুক্তি আসবে না' স্লোগান তুলে নির্বাচন বয়কট করে।
জামায়াতে ইসলামি : ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের অখণ্ডতা সংরক্ষণ ও ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনে দুই অঞ্চলের বৈষম্য হ্রাস বিষয় দুটিকে সামনে রেখে তাদের নির্বাচনি প্রচারাভিযান শুরু করে।
অন্যান্য : মুসলিম লীগসহ তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ ইসলামি সংবিধান, শক্তিশালী কেন্দ্র এবং ভারত বিরোধিতার উপর তাদের নির্বাচনি প্রচারে গুরুত্ব আরোপ করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]