অসহযোগ আন্দোলনের ২৫ দিনের কর্মসূচি ও ঘটনাবলির বর্ণনা কর। (Describe the Happenings and 25 Days Long Programme of Non-Cooperation Movement.)

৭ মার্চের ভাষণ ও অপারেশন সার্চলাইট The Non-Cooperation Movement, the 7th March Address of Bangabandhu and Operation Searchlight ভূমিকা
Introduction
ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব পাকিস্তানবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ (১৯৭১) ঢাকায় এবং তার পরদিন সারা প্রদেশে হরতাল ডাকেন। এমনি পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন ।
অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙালির অংশগ্রহণ Non-Cooperation Movement and Participation of Bengali
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকারি কর্মচারীসহ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বাঙালির পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে— গণবিরোধী শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা না-করা। অধিকন্তু তাদের উচিত সবটুকু শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়া।
২ এবং ৩ মার্চ হরতালের ফলে সকল সরকারি কর্মকাণ্ড অচল হয়ে পড়ে। প্রদেশটির যোগাযোগ সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোনো কোনো ছাত্র এবং শ্রমিক সংগঠন স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি করেন। 'পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ' ৩ মার্চ, ১৯৭১ ঢাকায় পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করে ।
স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সভায় দলমত নির্বিশেষে বাংলার প্রতিটি নর-নারীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয় । আর সেই আহ্বানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি ।
সভায় ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচি' শীর্ষক একটি ইশতেহার প্রচার করা হয় (ইশতেহার নং-এক)- এতে বলা হয় যে, ৩টি লক্ষ্য অর্জন করার জন্য স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করা হবে। লক্ষ্যগুলো হলো-‘স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ” গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালি জাতি সৃষ্টি, বাঙালির ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করা।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্য নিম্নলিখিত কর্মপন্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয় : বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, থানা, মহকুমা, শহর ও জেলায় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি' গঠন করতে হবে।
সকল শ্রেণির জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা ও তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
৩. শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সুসংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় মুক্তিবাহিনী গঠন করতে হবে। ৪. হিন্দু-মুসলমান ও বাঙালি-অবাঙালি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। &. স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং
লুটতরাজসহ সকল প্রকার সমাজবিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় পঠিত ইশতেহারে উল্লেখ করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ-দীর্ঘজীবী হোক; স্বাধীন কর স্বাধীন কর বাংলাদেশ স্বাধীন কর; স্বাধীন হ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব; গ্রামে গ্রামে দুর্গ কর-মুক্তিবাহিনী গঠন কর; বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন পেতে চাও-বাঙালিরা এক হও।'
২ মার্চের হরতালের সময় পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হলে শেখ মুজিব বা দিন স্যার এ প্রেস বিজ্ঞন্তির মাধ্যমে নিন্দা প্রকাশ করেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি
৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ (১৯৭১) সময়ে প্রতিদিন সকাল ৬.০০টা থেকে বেলা ২.০০টা পর্যন্ত প্রদেশব্যাপী হরতাল। এ বেলা ২টায় রেসকোর্স ময়দানে জনসভা। ৩ মার্চ শেখ মুজিব ছাত্রলীগ আয়োজিত এক জনসভায় তার নিকট হস্তান্তরের আহ্বান জানান। ক্ষমতা হস্তান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের ট্যাক্স প্রদান বন্ধ রাখার জন্য তিনি জনগণকে নির্দেশ দেন। এমনি অবস্থায় প্রেসিডেন্ট শাসনতান্ত্রিক সংকট সমাধান করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের পার্লামেন্টারি গ্রুপের ১২ জন নির্বাচিত সদস্যকে পরবর্তী ১০ মার্চ ঢাকায় মিলিত হবার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ ঐ ধরনের বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। শেখ মুজিব ছাড়াও নূরুল আমিনসহ জামায়াত-ই-ইসলামি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (হাজারডী গ্রুপ), কনভেনশন মুসলিম লীগ ও অন্যান্য অনেকগুলো দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠ যোগদানে অস্বীকার করায় প্রস্তাবিত এ বৈঠক বাতিল করে দেয়া হয়।
অগত্যা ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ২৫ মার্চ (১৯৭১) জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট বলেন : 'আমি এ কথা পরিষ্কার বলে দিতে চাই যে, পরে কী ঘটবে তাতে কিছু যায় আসে না। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী যতদিন আমার কমান্ডে আছে এবং যতদিন আমি রাষ্ট্রপ্রধান আছি ততদিন আমি পাকিস্তানের পূর্ণ সংহতি বজায় রাখব। এ ব্যাপারে কেউ যেন কোনো সন্দেহ কিংবা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ না করেন। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এদেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আমার রয়েছে। দেশবাসী আমার কাছ থেকে তা আশা করে এবং আমি তাদের নিরাশ করব না।'
৬ মার্চ (১৯৭১) ইয়াহিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি কঠোর প্রকৃতির সামরিক অফিসার জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করেন। শুধু তাই নয়, আলোচনার অন্তরালে শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা শুরু করে। নির্বাচনি ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংস্থা পি.আই.এ-ে করে বেসামরিক পোশাকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য নিয়ে আসা হয়। সিনিয়র আর্মি অফিসার ও বড় বড় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পরিবারবর্গকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে । নগদ টাকাও ব্যাপকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা হচ্ছিল। শেখ মুজিবকে আরও জানানো হয় যে, সেনাবাহিনী প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গোপনে অস্ত্রশস্ত্র বিতরণ করছে। পাকবাহিনীর এ প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে মুজিবের ওপর চারদিক থেকে এককভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈন্য, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ সকলেই মুজিবকে গোপনে জানান যে, এ ধরনের ঘোষণা দিলে তারা মুজিবকে সমর্থন দেবেন।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ও ২৫ দিনের কর্মসূচি
Shadhin Bangla Kendrio Chhatra Songram Parisad and 25 Days Programmes ক. স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (Shadhin Bangla Kendrio Chhatra Songram Parisad) ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৪ সদস্য বিশিষ্ট 'স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয় । এ ৪ জন নেতা ও তাদের দায়িত্ব ছিল নিম্নরূপ :
সদস্যদের নাম দায়িত্ব ও সংগঠন
নূরে আলম সিদ্দিকী সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ
শাহজাহান সিরাজ সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ
আ. স. ম. আবদুর রব সহসভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)
আবদুল কুদ্দুস মাখন সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এ একক পদক্ষেপের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ১১-দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে গঠিত 'সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের' বিলুপ্তি ঘটে। এ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ২ মার্চ ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র সভা আহবান করা হয়েছিল সেখান থেকে আ.স.ম. আব্দুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। সেদিনও একটি গণজাগরণ ছিল। ৩ মার্চ ছাত্র ও যুব নেতাদের তরফ থেকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামে 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচি' সম্বলিত এক নম্বর ইশতিহার প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতার এ ঘোষণা দেয়ার জন্যই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
খ. অসহযোগ আন্দোলনে ২৫ দিনের কর্মসূচি (25 Days Programme in Non-Co-operation Movement )
পর্যায়ে এসে বাংলার মানুষের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। ক্ষমতা হস্তান্তর যে হবে না তা বুঝতে কারো ও বাকি বইল না। এ সময় বাংলার চারদিকে ধ্বনিত হতে লাগল 'আমার দেশ, তোমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ'। ফলে ৬- দফা এক দফায় রূপান্তরিত হলো। দীর্ঘদিনের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপলাভ করে। ভুট্টো- ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমের ফলে স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ১ মার্চের পর থেকে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ পালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, সেক্রেটারিয়েট, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, হাইকোর্ট, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহন সংস্থা পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশ অমান্য ও অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলে। পূর্ব পাকিস্তানের পাকিস্তানি প্রশাসন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন de facto বা কার্যত সরকার প্রধান। বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি পরিণত হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট-এর অনুরূপ অর্থাৎ সকল নির্দেশের উৎস স্থান। লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক Evening Standard পত্রিকার ভাষায়, 'Sheikh Mujibur Rahman now appears to be the real boss of East Pakistan, with the complete support of the population ........ Rahman's home in Dhanmondi, already known as Number 10 Downing Street in imitation of the British Prime Minister's residence has been signed by bureaucrats, politicians, bankers, industrialists and people from all walks of life."
নিম্নে অসহযোগ আন্দোলনের ২৫ দিনের কর্মসূচির তারিখ অনুযায়ী ঘটনাবলি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :
২ মার্চ ১৯৭১ : (১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজনতার সভায় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। (২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আ. স. ম. আবুদর রব সভায় মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
৩ মার্চ ১৯৭১ : পল্টন ময়দানে ৫৬ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত সাড়ে ৭ কোটি মানুষের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ ঘোষিত হয় এবং রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা' আর 'দেশের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'।
৪ মার্চ ১৯৭১ : সেনাবাহিনীর সাথে জনসাধারণের সংঘর্ষে শতাধিক বাঙালি হতাহত হয় এবং ঢাকাসহ সারাদেশের প্রধান শহরগুলোতে কারফিউ জারি করা হয়।
৫ মার্চ ১৯৭১ : (১) পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হুকুম অমান্য করে দেশ চলতে থাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। (২) দেশের অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, স্কুল-কলেজ, শিল্পকারখানা চলতে তাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।
৬ মার্চ ১৯৭১ : (১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের গণসমাবেশে ঐতিহাসিক বক্তব্য দেবেন। এ বক্তব্যে পাকিস্তান থেকে পূর্ববাংলাকে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা হবে। (২) দুপুরে রেডিওর মাধ্যমে ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, 'আমি সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের সংহতি ঐক্য ও নিরাপত্তা নষ্ট হতে দেব না'।
৭ মার্চ ১৯৭১ : (১) ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষাধিক বাঙালির সমাগমে অনুষ্ঠিত জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুি রহমান তাঁর ভাষণে ঘোষণা দেন 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।' (২) এ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ভাষণের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- বাংলাদেশের ঘোষণা, প্রস্তুতির নির্দেশ, সৈন্যদের প্রতি নির্দেশ, জাতি
প্রতি নির্দেশ, যুদ্ধের চূড়ান্ত অঙ্গীকার এবং যুদ্ধের কৌশল ও দিক নির্দেশনা।
৮ মার্চ ১৯৭১ : (১) দেশব্যাপী সহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনে কালো পতাকা উত্তোলন ও সংগ্রাম কমিটি গঠন। (2)
গেরিলা যুদ্ধের প্রচারপত্রের বিতরণ, অস্ত্র সংগ্রহ শুরু, টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ ও বিচারপতিদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ।
৯ মার্চ ১৯৭১ : (১) পল্টন ময়দানে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়ার জন্য ইয়াহিয়ার প্রতি নির্দেশ। (২) ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন লাভ ১০ মার্চ ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রেস সম্মেলনে বন্ধুবা
প্রদান করেন।
১১ মার্চ ১৯৭১ : সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্টের প্রতি
আহ্বান জানান।
১২ মার্চ ১৯৭১ : পূর্ববাংলার সঙ্কট সমাধানে ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন,
‘আমার জনগণ স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে বাস করতে চায়।'
১৩ মার্চ ১৯৭১ : মওলানা ভাসানী রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য জেল ভাঙা আন্দোলনের ডাক দেন ।
১৪ মার্চ ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনাছাউনিতে কর্মরত বাঙালি সৈন্যদের পাকিস্তানিদের মোকবেলার নির্দেশ দেন ।
১৫ মার্চ ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু ৩৫টি নির্দেশনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আওয়ামী লীগের অধীনে বাংলাদেশ হিসেবে নথিপত্রে
ঘোষণা করেন।
১৬ মার্চ ১৯৭১ : মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠকে ভুট্টোকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান ।
১৭ মার্চ ১৯৭১ : প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মুজিব-ইয়াহিয়ার দ্বিতীয় দফা বৈঠকে চার দফা শর্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা
করা হয় ।
১৮ মার্চ ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিসহ বাংলাদেশ চলতে থাকে তাঁরই রাজনৈতিক নেতৃত্বে। ১৯ মার্চ ১৯৭১ : (১) জয়দেবপুরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাসদস্যরা বাঙালির সাথে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবেলা করেন, যাতে টঙ্গী ও জয়দেবপুরে ৫০ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়। (২) বঙ্গবন্ধু টঙ্গী ও জয়দেবপুর হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান ।
২২ মার্চ ১৯৭১ : (১) আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। (২) ৩২ নম্বরে সমবেত জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বলল, ২৪ বছর ধরে আমরা শোষণের শিকার হয়ে আসছি, আর একটি দিনের জন্যও পাকিস্তানি শোষণ সহ্য করা হবে না ।
২৩ মার্চ ১৯৭১ : (১) দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালিত হয় এবং পল্টন ময়দানে জয়বাংলা শ্লোগানসহ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে 'আমার সোনার বাংলা জাতীয় সংগীত' প্রচার করা হয়। (২) ঢাকাস্থ চিন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও নেপাল দূতাবাসে ছাত্রজনতার সহায়তায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
২৪ মার্চ ১৯৭১ : (১) দেশব্যাপী সমরাস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি চলতে থাকে এবং পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ অব্যাহত থাকে । (২) চট্টগ্রামে গণজামায়েত, গণসংগীত ও অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিনের নাটক 'এবারের সংগ্রাম' মঞ্চায়িত হয় । (৩) পাকিস্তানি নৌজাহাজ থেকে শহরের দিকে গোলা নিক্ষেপ করা হয় ।
২৫ মার্চ ১৯৭১ : (১) ইস্টার্ন কমান্ড হেড কোয়াটারে কর্নেল আকবর ও কর্নেল জহিরের বৈঠক শেষে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জহির ৩০টি পাঁচ টনি ট্রাক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে জেনারেল রাও-এর কাছ থেকে গ্রহণ করেন। (২) ক্যাপ্টেন সাঈদকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির আশপাশের রাস্তা বন্ধ, ক্যাপ্টেন হুমায়ুনকে বাড়ি ঘিরে ফেলা এবং ১২ জনের দলসহ মেজর বেলালকে বাড়ি তল্লাশি ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের দায়িত্ব দেয়া হয়। (৩) বঙ্গবন্ধু জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, 'বিশ্বের কোনো শক্তিই পূর্ববাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ন্যায়সংগত ও আইনগত দাবিকে নস্যাৎ করতে পারবে না'। (৪) ৬টি জাহাজভর্তি ১০,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য চট্টগ্রামে ও খুলনা বন্দরে এসে পৌঁছে। (৫) বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক পরিষদ ও সামরিক পরিষদ-এর সদস্যদের ঢাকা ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। (৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার অপরাধে রাত ১টার দিকে বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]