বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়বস্তু আলোচনা কর। (Discuss the Subject Matters of the Speech of 7th March Which were Delivereted by Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman.)

. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ভাষণের বিষয়বস্তু, গুরুত্ব ও তাৎপর্য The 7th March Address of Bangabandhu, Facts of Address, Importance and Significance
ক. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ (The 7th March Address of Bangabandhu)
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার চরম পর্যায়ের প্রেক্ষাপটেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ (১৯৭১) রেসকোর্স ময়দানে তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ (যা 'বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ নামে অভিহিত হয়েছে) দেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পরও পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা বাঙালির হাতে আসেনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার প্রেক্ষিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক দূরদর্শী ও দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন ।
১. নাদপুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রতিকূপ (Representation of Bangabandhu's 7th March Address) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাान) উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন তা পরবর্তী পৃষ্ঠায় তুলে ধরা হলো:
'ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা কिেছ। ক রে नশয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইরে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মু िচাষ, नानाর মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলব, এদেশের মানুষ অর্থ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিছু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ২০ বছরের করুान বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের তিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আই খান মার্শাল ল' জারি করে ১০ বছর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ৬-দফার আন্দোলনে, ৭ জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ই খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাঁকে অনুরোধ করলাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে আমরা এসেম্বলিতে বসব। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব; এমনকি আমি এও পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজন যদিও সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।
জনাব ভুট্টো সাহেব এখানে এসেছিলেন, আলোচনা করলেন। বলে গেলেন যে, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। তারপরে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা আলাপ করলাম, আপনারা আসুন, বসুন, আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরি করি। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি এখানে আসে, তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যে যাবে তাকে মেরে ফেলা হবে। যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে তাহলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত দোকান জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। তারপরে হঠাৎ ১ তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম, আমি যাব। ভুট্টো সাহেব বললেন, যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হলো। দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্ধ করার পর এদেশের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল। আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা হরতাল পালন করেন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সবকিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।
কি পেলাম আমরা? আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী-নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে। তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার জন্য চেষ্টা করেছি, তখনই আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। টেলিফোনে আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তাঁকে আমি বলেছিলাম, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের
প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপরে গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপান আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি না-কি স্বীকার করেছি ১০ তারিখে রাউন্ডটেবিল কনফারেন্স হবে।
আমিতো অনেক আগেই বলে দিয়েছি কিসের রাউন্ডটেবিল, কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টার গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, তাতে সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন।
ভাইয়েরা আমার,
২৫ তারিখে এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঐ শহিদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসি-তে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। এসেম্বলি কল করেছেন আমার দাবি মানতে হবে : প্রথমে, সামরিক আইন মার্শাল ল' উইথড্র করতে হবে; সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে; যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে; আর জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে । তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে এসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এ বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেজন্য সমস্ত অন্যান্য যে জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকসা, গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমিগভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা কোনো কিছুই চলবে না ।
২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল : প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।
আমরা ভাতে মারব। আমরা পানিতে মারব। তোমরা আমার ভাই তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না । কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। ৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।
আর যে সমস্ত লোক শহিদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিকে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এ ৭দিনের হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছে, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছায় দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে । যে পর্যন্ত আমার এ দেশের মুক্তি না হচ্ছে ততদিন খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না । শুনুন-মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলার হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি- অবাঙালি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয় । মনে রাখবেন, রেডিও টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোনো বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না ।
২ ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নেবার পারে। কিন্তু পূর্ববাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন-টেলিগ্রাম আমাদের এ পূর্ববাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে হলে আপনারা চালাবেন।
কিন্তু যদি এদেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেশুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রাম, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো-এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইন্শাল্লাহ ।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।'
২. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ-এর রাজনৈতিক পর্যালোচনা (Political Observation of Bangabandhu's s March Address)
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উচ্চারিত শ্রেষ্ঠ ও কার্যকর সংলাপকে বিশ্বশ্রেষ্ঠ মনো রাজনৈতিক সংলাপ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। এদেশের মওলানা ভাসানী, এ কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে শুরু করে চিনের মাও সে তুং, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী মায়ানমারের অং সাং সুকি, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলাসহ বিশ্বের বহু ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাদের বহু মনো রাজনৈতিক সংলাপের প্রভাবে বদলে গেছে শাসনের অশুভ ধারা শান্তি-সমৃদ্ধি আর গণতন্ত্রের কাঙ্খিত পথ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চের মনো- রাজনৈতিক সংলাপের কার্যকারিতার ভিত্তি একদিনে রচিত হয়নি, হয়েছে দিনে দিনে- বহুদিনে। এভাবেই ব্রিটিশের প্রায় ২০০' এবং পাকিস্তানি ২৩ বছরের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে গোটা বাঙালি জনতার চিন্তা-চেতনায় প্রত্যয়ী পরিবর্তন আসতে আসতেই ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মনো-রাজনৈতিক সমৃদ্ধির ঐতিহাসিক ভিত্তি রচিত হয়।'
প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ.আম.স. আরেফিন সিদ্দিক তাঁর 'সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ' শীর্ষক নিবন্ধে বলেন, 'এক হাজার একশত সাতটি শব্দের এ ভাষণে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই' কোনো বাহুল্য নেই- আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম। ৭ মার্চ একাত্তরের এ ভাষণ বাংলা ভাষায় শুধু শ্রেষ্ঠ ভাষণ নয়, পৃথিবীর মধ্যে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এ ভাষণ যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতিকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো উজ্জীবিত রাখবে জীবনসত্য অনুধাবনে পথ দেখাবে ও বাঙালির সার্বিক মুক্তি আন্দোলনকে দেবে রাজনৈকি দিকনির্দেশনা।'
প্রাবন্ধিক মুশতাক আহমদ তাঁর 'বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ' শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, 'বাংলাদেশের জন্মের প্রাক্কালে বাংলার জনগণের সাথে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতার সংলাপ এই বক্তৃতা। প্রাঞ্জল কথোপকথনের ভঙ্গিমায় অতি সহজ সাবলীল ভাষায় তাৎক্ষণিক রচিত এ ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার মূল দলিল।'
প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও গবেষক এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান তাঁর জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ : একটি অনুপুঙ্খ পাঠ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি শত শত বছর ধরে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহে অংশ নিয়েছে এবং তার ফলে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত একটি ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি সৃষ্টি করেছিলেন। তাই তিনি বাঙালি জাতির স্রষ্টা এবং এই সংগ্রামের ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও প্রতিষ্ঠাতা।'
মুনতাসীর মামুন ও মো. মাহবুবুর রহমান তাঁদের 'স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস' গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, 'ভাষণ বিশ্লেষণ করলে আমরা শেখ মুজিবের দুটো উদ্দেশ্য লক্ষ করি' :
এক. এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।
দুই. শেখ মুজিব তাঁর ৭ মার্চের মাধ্যমে ইয়াহিয়া কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার প্রশ্নে ৪টি পূর্বশর্ত আরোপ করেন।
ক. অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে;
খ. অবিলম্বে সব সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে;
গ. প্রাণহানি সম্পর্কে তদন্ত করতে হবে;
ঘ. নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর (জাতীয় পরিষদের পূর্বেই) করতে হবে । তিনি এ দাবিগুলো উত্থাপন করে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখেন।'
এখানে উল্লেখ্য যে, এ শর্তগুলো মানলে যে আওয়ামী লীগ ২৫ মার্চ আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবে- এমন এখনো নিশ্চয়তা শেষ মুজিব ভাষণে দেননি। বরং তিনি বলেছেন যে এ শর্তগুলো গ্রহণ করা হলে, তখন বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেমব্লিতে বসতে পারব কি পারব না'।
বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।'
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন চলতেই থাকবে বলে ঘোষণা দেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, 'আজ থেকে এ
স্টেটমেন্টে তিনি বলেন যে, 'সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত না-হওয়া ৭ মার্চ ভিন্ন এক ঘোষণায় শেখ মুজিব পরবর্তী ৭দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এক গ্যন্তি আন্দোলন চলতেই থাকবে।'

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]