বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব আলোচনা কর। (Discuss the Importance of 7th March Which were Delivereted by Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman.)

খ. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়বস্তু, গুরুত্ব ও তাৎপর্য (The Subject Matter, Importance and Significance of 7th March Address of Bangabandhu)
১. বিষয়বস্তু (Subject Matter)
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের উত্তাল জনসমুদ্রের সভামঞ্চে 'রাজনীতির কবি' (নিউজউইক ম্যাগাজিনের ভাষায়, 'Poet of Politis') বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এলেন বর্ণ-বৈষম্যবাদ বিরোধী, আমেরিকার কালো মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা, বিশ্বনন্দিত মার্টিন লুথার কিং-এর মতো তাঁর জনগণকে একটি স্বপ্নের কথা বলতে নয়, নির্দেশের অপেক্ষারত উত্তাল বাঙালি জনসমুদ্রকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানাতে মাত্র ১৮ মিনিটের এক ভাষণ দিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ তেজস্বী ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনীতি ও বাঙালিদের বঞ্চনার ইতিহাস ব্যাখ্যা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ উপস্থাপন, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা, সারাবাংলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ, প্রতিরোধ সংগ্রাম শেষাবধি মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়ার ইঙ্গিত, শত্রুর মোকাবেলায় গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন, যেকোনো উস্কানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পরামর্শ দান ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার পর ১০ লক্ষাধিক জনগণের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। ......... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা' তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নিদের্শ দেন। যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে তিনি পরামর্শ দেন ।
২. গুরুত্ব ও তাৎপর্য (Importance and Significance)
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। বিভিন্ন দিক থেকেই এ ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। অতি সংক্ষেপে এ ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
• মুক্তির আহ্বান (Convening of Freedom) : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর অন্যতম জননেতাদেরও অন্যতম । গণমানুষের প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা অনন্য দেশপ্রেম আর অতুলনীয় সাহস তাঁকে গণমানুষের নেতাতে পরিণত করেছিল। তাই ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির সামগ্রিক শোষণ বঞ্চনার শিকল ছিন্ন করে অধিকার প্রতিষ্ঠা আর মুক্তির যুগান্তকারী আহ্বান ।
জাতিকে সুসংগঠিতকরণ (Well-organization of the Nation) : যেকোনো সংকট-সমস্যায় সবচেয়ে বেশি দরকার প্রবল আত্মবিশ্বাসী দৃঢ়তার নেতৃত্ব আর জাতির প্রতি দিকনির্দেশনা। সুসংগঠিত না হতে পারলে কোনো জাতিই তার কাঙ্ক্ষিত শক্তির পথে সফলতা আনতে পারে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ভাষণটি বাঙালি জাতিকে সুসংগঠিত করেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার সাহসে। তাই তিনি দৃঢ়চিত্তে জাতিকে নির্দেশনা দেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
গণসচেনতার উম্মেষ সাধন (Creating Public Awareness) : ৭ই মার্চের ভাষণ যেকোনো আন্দোলন বা সংগ্রামের সফলতার লক্ষ্যে গণসচেনতার সৃষ্টি ও সমৃদ্ধিতে অনন্য কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, যা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত নিউজউইক সাপ্তাহিক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর এ গুণের কারণেই তাঁকে রাজনীতির কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়।
পাকিস্তানের দুই অংশের দ্বন্দ্বের কারণ চিহ্নিতকরণ (Identification of the Causes of Conflict Between Two Parts of Pakistan) : যেকোনো উদ্ভূত সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য সমস্যা সৃষ্টির কারণ চিহ্নিত করা অত্যাবশ্যক। জাতির জনকের নির্দেশিত ৬-দফা, ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবি যেমন-পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ বঞ্চনাকে চিহ্নিত করে সমাধান দাবি করা হয়েছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণেও পাকিস্তানের দু অংশের কারণ
চিহ্নিত করে-এর ন্যায়সংগত যৌক্তিক সমাধানের পথ ধরে স্বাধীনতার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার পথনির্দেশনা ( Guidelines for Independence from Non • Cooperation Movement) : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ১৯৭১-এর ভাষণের অন্তরালে গণতান্ত্রিক পন্থায় দাবিদাওয়া পেশ, অসহযোগ আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত ঘোষণারই ইঙ্গিত ছিল। বিশ্বের আর কোনো দেশে এভাবে সুচিন্তিত কার্যকর পন্থায় ধাপে ধাপে একটি জাতিকে কঠোর সংগ্রামের পথে ত্যাগী করে গড়ে তোলার দৃষ্টান্ত বিরল।
ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশনা (Order of Making Resistance at Door to Door) : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক তাঁর মেধাদিপ্ত চিন্তায় বুঝতে পেরেছিলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনো সহজে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না। তাই তিনি ৭ মার্চ ১৯৭১-এর ভাষণে চূড়ান্ত সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন ।
শত্রুর মোকাবিলায় গেরিলা কৌশলের নির্দেশনা (Direction of Guerilla Strategy to Resist Enemy ) : পাকিস্তানি শত্রুদের স্বাভাবিক পন্থায় মোকাবিলা সম্ভব হবে না বলেই তিনি তাঁর ভাষণে চূড়ান্ত যুদ্ধের কার্যকর কৌশলেরও ইঙ্গিত দেন, যা বিশ্বের আর কোনো নেতার একটিমাত্র ভাষণ থেকে পাওয়া সম্ভব ছিল না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার নির্দেশনা (Derection of keeping Communal Harmony) : বাংলাদেশের মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বজায় রাখাই বাঙালির প্রধান বৈশিষ্ট্য। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলের মাঝে প্রয়োজনীয় কার্যকর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার নির্দেশনাও ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ-এর অনন্য ভাষণে ।
শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক ও পরিণতি Meeting of Sheikh Mujib-Yahia-Bhuttu and Result
পূর্ব পাকিস্তান তথা সমগ্র পাকিস্তানে যখন চরম রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজমান তখন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান কতিপয় নেতৃবৃন্দসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার জন্য ।
১৬ মার্চ বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক চলে আড়াই ঘণ্টা। শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন বেলা ১১টায়, বেরিয়ে এলেন বেলা দেড়টায় । শেখ মুজিবুর রহমানের গাড়ি গেটে আসতেই সাংবাদিকরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরলেন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, 'দেশের রাজনৈতিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর আলোচনা হয়েছে।' আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, 'আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। এজন্য পর্যাপ্ত আলোচনার প্রয়োজন আছে।
প্রথম দিনের আড়াই ঘণ্টার এ আলোচনা প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে কোনো সহকারী ছাড়াই একান্তে অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভবত, আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সৈন্যবাহিনীকেও ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
১৭ মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব দ্বিতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিনও উভয়ের মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও মুজিবের মধ্যে কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৮ মার্চ করাচিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো উচ্চ পর্যায়ের দলীয় নেতাদের সাথে আলোচনার পর সাংবাদিকদের জানালেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফরের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা তিনি রক্ষা করতে পারছেন না। তিনি কতিপয় বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় আগামীকাল যদি তিনি ঢাকা যান তবে তাতে কোনো লাভ হবে বলে তিনি মনে করেন না।
১৯ মার্চ সকাল ১০টায় ইয়াহিয়া-মুজিবের মধ্যে তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকটি প্রেসিডেন্ট ভবনের রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। দেড়ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে ইয়াহিয়া ও মুজিবের সাথে এদিনও কোনো সহকারী ছিল না। ২০ মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিবের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাঁদের উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর উপদেষ্টার মধ্যে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ও ড. কামাল হোসেন। আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ছিলেন বিচারপতি এ. আর. কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা এবং জজ এটর্নি জেনারেল কর্নেল হাসান। আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ফিরে শেখ মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, 'আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে তারা এগুচ্ছেন।' এ দিন বিবিসি'র সংবাদ ভাষ্যে মন্তব্য করা হয়, পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সংকট দূরীভূত হচ্ছে।
২০ মার্চ করাচিতে তাড়াহুড়া করে আহুত সাংবাদিক সম্মেলনে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, গতকাল রাতে অবিলম্বে ঢাকা যাওয়ার জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে অপর একটি আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং এ আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ মার্চ ঢাকা রওয়ানা হবার মনস্থ করেছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো ২১ মার্চ ঢাকায় এলেন। এসেই তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্টের সাথে এক আলোচনায় মিলিত হন। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সংবাদপত্রে তার কিছুই প্রকাশিত হয়নি। সাংবাদিকরা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাক্ষাৎ পায়নি। এ তারিখে প্রেসিডেন্ট আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে শেখ মুজিবেরও একটি অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক ৭০ মিনিট চলে। এ বৈঠকের বিবরণও ঠিক আগের মতই কিছু জানা গেল না ।
২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে প্রেসিডেন্ট ভবনে মুজিব, ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো । বৈঠক চলাকালেই প্রেসিডেন্টের জনসংযোগ অফিসার বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানালেন, 'প্রেসিডেন্ট ২৫ মার্চ আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন। দেশের উভয় অংশের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের সুবিধার জন্য প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত করা সম্পর্কে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিক্রিয়া একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'একথা আপনাদের জানা আছে যে, আমি বলেছিলাম আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অধিবেশনে যোগদান করব না। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে।' শেখ মুজিব সাংবাদিকদের আরো জানালেন, তিনি পুনরায় আজ (২৩ মার্চ) প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করবেন এবং তাঁদের উভয় পক্ষের উপদেষ্টাদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে।
২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে কোনো বৈঠক এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হয়নি, তাঁদের উপদেষ্টাদের মধ্যেও নয়। ২৩ মার্চ করাচিতে জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বকারী পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট ছোট দলগুলোর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানের একমাত্র মুখপাত্র বলে উক্ত দলটি যে দাবি করছে সর্বসম্মতিক্রমে তা প্রত্যাখান করা হয়। বলা হয়, সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের একমাত্র উপায়। সভায় প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এস.এম আহমদকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয় ।
মুহাম্মদ শামসুল হক তাঁর স্বাধীনতার সশস্ত্র প্রস্তুতি/আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি' গ্রন্থে বলেন, ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। ওইদিন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে সারা বাংলায় উড়ানো হয় 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' নির্ধারিত বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা। ওইদিন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জয় বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজে
অভিবাদন গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর ৪ খলিফা খ্যাত নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আ.স.ম. আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। সেই কুচকাওয়াজে জাতীয় সংগীত হিসেবে বাজানো হয়, "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।' কুচকাওয়াজ শেষে মার্চপার্টি করে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গেলে তিনি দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ে তাঁর দৃঢ় সংকল্পের কথা ঘোষণা করেন। তাঁর বাসভবনে সেদিন টাঙিয়ে দেয়া হয় নতুন জাতীয় পতাকা।
২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মধ্যে কোনো বৈঠক হবার খবর সংবাদপত্রে এলো না। তবে তাঁদের উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক হয়। এরা ছিলেন আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ এবং ড. কামাল হোসেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে তাজউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানালেন, উপরোক্ত বৈঠকে তাঁরা তাদের সকল মতামত ব্যক্ত করেছেন ।
পিপিআই-এর ২৪ মার্চের এক খবরে জানা যায় ২৫ মার্চ ভুট্টোর উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে বসছেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোও তার হোটেলে সাংবাদিকদের একথা বলেছিলেন। বৈঠক হয়েছিল কিনা সে খবর আর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।
১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসার পর ২৫ মার্চের কালোরাত পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং ভূট্টোর মধ্যে কী নিয়ে কী ধরনের আলোচনা হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে অনেকের কাছ থেকেই জানা গেছে। আলোচনায় নিম্নবর্ণিত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেন :
3. সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং একটি প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লোমেশনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধনের হাতে ক্ষমতা হস্তान।
প্রাদেশিক ক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অর্পণ ।
ইয়াহিয়ার হাতে প্রেসিডেন্ট এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে।
৪. পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ সদস্যদের প্রথম প্রস্তুতিমূলক বৈঠক এবং তারপর সংবিধানের চূড়ান্ত টেক্সট প্রণয়নের জন্য জাতীয় পরিষদে যুক্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই দিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তা অনুমোদন করেছিলেন *তাজউদ্দিন আহমদ তাঁর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিলের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, ভুট্টোকে এ্যাকোমোডেট করা- এ সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকে এবং ফেডারেল গভর্নমেন্টকে তাদের অবস্থান নিরূপণ করার সুযোগ দেয়ার জন্য ইয়াহিয়া নিজেই এ প্রস্তাব করেছিলেন। কারণ ৬-দফা পুরোপুরি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল না।'
ইয়াহিয়াকে তার এ কথা বলার সাহস ছিল না যে, ৬-দফা থেকে পিছিয়ে এসে বাস্তব অর্থে একটি কনফেডারেশন গঠনের মধ্যদিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজা যায়। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মনোভাবের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা স্থাপনে ব্যর্থ হয় ।
ইয়াহিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ পর্যায়ের বৈঠকে মুজিব যে খসড়া ঘোষণাপত্র পেশ করেছিলেন, খুব তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে তা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ থেকে এমন একটা ধারণা জন্মে যায় যে, কেবলমাত্র পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনকে যেকোনো রকমের একটা আইনগত বৈধতা প্রদান করাই ছিল এ ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দ্বিতীয় সারির নেতা-কর্মীদের সুসংবদ্ধ সংস্কারমুখী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে সমাধান নিহিত ছিল অত্যন্ত উদার ধরনের একটি ফেডারেশনে কিংবা একটি কনফেডারেশনে, যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্ততপক্ষে নিজস্ব একটি জাতীয় পতাকা এবং সম্ভব হলে একটি নিজস্ব আঞ্চলিক জাতীয় সংগীতও থাকবে । শেষ মুহূর্ত অবধি মুজিবের বিশ্বাস ছিল যে, তিনি দরকষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে দাবি-দাওয়াগুলোর বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন। এ মৌলিক কারণেই মুজিব জনগণের সঙ্গে থাকার চাইতে গ্রেফতার হওয়াকে উত্তম বলে মনে করেছিলেন যদিও তাঁর আদেশ ছিল শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দুর্গ প্রতিষ্ঠার।' পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমপর্ণ কিংবা গ্রেফতার হওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় ধরা দেয়া- যাই বলা হোক না কেন, মুজিবর তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে এবং সুচিন্তিতভাবে করেছিলেন।
প্রথমত, তিনি সুসংগঠিত একটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সময় সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, মুজিব সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলার প্রকৃতি ও আবহতা সম্পর্কে পূর্নাকে কোনো ধারণা অর্জন করতে
পারেন নি। তৃতীয়ত, তিনি দৃঢ়ভাবে আস্থাবান ছিলেন যে তাঁকে হত্যা করা হবে না।
সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান লিখেছেন, 'স্বাধিকার আন্দোলনের অনলবর্গী এ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চ ভাষণের পূর্বেই সম্যক উপলগ্নি করতে পেরেছিলেন যে, আন্দোলনের সুফল বাংলার আপামর জনসাধারণের আকাশচুম্বি প্রত্যাশা জন্মে গেছে, তার সাথে ৬-দফা সম্ভাব্য প্রাপ্তি সামঞ্জস্যপুর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।'
জয়দেবপুর প্রতিরোধ যুদ্ধ ও অপারেশন সার্চলাইট
Protesting War at Joydebpur and Operation Searchlight
ক. জয়দেবপুর প্রতিরোধ যুদ্ধ (Protesting War at Joydebpur)
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হলেও প্রথম সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছে গাজীপুর চৌরাস্তায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত যে রেওয়াজ প্রযোজ্য ছিল, সে মোতাবেক পাঞ্জাব রেজিমেন্টের শতকরা ৯৯ ভাগ জেসিও আর সৈনিক হতেন পাঞ্জাবিভাষী এবং ভৌগোলিকভাবে পাঞ্জাবের অধিবাসী। ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের শতকরা ৯৯ ভাগ জেসিও এবং সৈনিক হতেন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অধিবাসী এবং পশতু ভাষায় কথা বলার লোক। বেলুচ রেজিমেন্টের শতকরা ৯৯ ভাগ জেসিও এবং সৈনিক হতেন বেলুচিভাষী এবং ভৌগোলিকভাবে বেলুচিস্তানের অধিবাসী। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের শতকরা ৯৯ ভাগ জেসিও এবং সৈনিক হতেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী এবং বাংলাভাষী। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট আবার বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট লাহোর থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা শহর থেকে অল্প উত্তরে জয়দেবপুর এসে রাজবাড়িতে অবস্থান নেয় ।
১৯ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সেকেন্ড বেঙ্গল ও জয়দেবপুরের প্রতিরোধ যুদ্ধ সম্পর্কে মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক লিখেছেন, '১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ উত্তাল ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে, অতিরিক্ত অস্ত্র জয়দেবপুর থেকে ঢাকায় ফেরত আনতে হবে। একই কর্তৃপক্ষ আরও সিদ্ধান্ত নেয় যে, যদি সম্ভ হয় তবে সেকেন্ড বেঙ্গলের সব অস্ত্রই কত্ত্বা করে ফেলতে হবে, যেন সেকেন্ড বেঙ্গল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো রকম বিদ্রোহ করলেও অস্ত্রের অভাবে সেই বিদ্রোহ কার্যকর করতে না পারে। এ দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি পদক্ষেপ ছিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের অভিযান এবং তার প্রতিরোধ তথা জয়দেবপুরের প্রতিরোধ যুদ্ধ ।'
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৫৭ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবারের নেতৃত্বে ৭২ জন অফিসার ও সৈনিক সংবলিত একটি দল জয়দেবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ সফরের কারণ ব্যাখ্যা করা হলো এ বলে যে জয়দেবপুরে সেকেন্ড বেঙ্গল কেমন আছে, এটা দেখা। ওই সেনাদল সকাল সাড়ে ১০টা-১১ টার দিকে রাজপ্রাসাদে এসে পৌঁছায়। স্থানীয় দেশপ্রেমিক বাঙালি জনগণ সব কিছুই অনুসরণ করছিলেন। তারা অনুধাবন করলেন যে, সেকেন্ড বেঙ্গলকে নিরস্ত্র করা হবে। স্থানীয় জনগণ সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা হতে দেয়া যাবে না। স্থানীয় 'সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের' আহ্বানে ও নেতৃত্বে জয়দেবপুর বাজারে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গেল।
জয়দেবপুর রেলস্টেশনে দণ্ডায়মান থাকা মালগাড়ির দুটি বগিতে কে আছে আসে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো যেন রাজবাড়ি থেকে কেউ বাজারের দিকে যেতে না পারে বা বাজারের দিক থেকে দিকে আসতে না পারে। ব্রিগেডিয়ার আরবার, সেকেন্ড বেঙ্গলের অধিনায়ক কর্নেল মাকে
দিলেন, যেকে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সরিয়ে লেভেল ক্রসিং থেকে মালগাড়ির বদি সরিয়ে আরবারের সে যাওয়ার পথ নির্বিঘ্ন করা হোক। আনুষ্ঠানিকভাবে কর্নেল মাসুক দিলেন সে অধিনায়ক মেজর মইনুল হোসেনকে। এটা ছিল একটি রান স্পর্শকাতর পরী। পানি জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি না ছুড়ে বরং গাছের আগার ও কচুরিপানার লক্ষ কে
স্থানীয় হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতাও কঠিন পরীক্ষার সামনে ছিল। তারা পারি সে পর্যুদস্ত করতে জনগণ তাদের কাছে যেকোনো ভাবেই রাখা বা পাও
মাধ্যমে পাওয়া ৫টি চাইনিজ রাইফেলের দু-একটি ব্যবহার করেছিল। স্থানীয় জনতা পারিনি লক্ষ করে গোলাগুলি করে। বাঙালি মেজর মইনুলকে ব্রিগেডিয়ার আনার, কর্ণপা
করে এবং শাস্তির ভয় দেখায় এ মর্মে যে, 'কী গোলাগুলি করলাম যে এখনো
মোটামুটিভাবে কৌশলগত কথার ইশারায় জানিয়ে দিলেন, নিরস্ত্র বাঙালি জন গুলি করা জয়দেবপুরে ৫০ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়।
১৯ মার্চের ঘটনায় স্থানীয় বাঙালি জনগণ প্রমাণ করেছিলেন যে, বাঙালির মনে রান
জ্বলছিল। একই ঘটনা প্রমাণ করেছিল, বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি
সাতদিন পর সেকেন্ড বেঙ্গলের যে দুটি অংশ ময়মনসিংহ শহরে এবং টাঙ্গাইল শহরে ছিল তারা ২৬ মার্চের বিে
রাজেন্দ্রপুর ও সমরাস্ত্র কারখানায় পাহারারত সৈনিকরাসহ জয়দেবপুর রাজপ্রাসাদে অ
উপ-অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহর আনুষ্ঠানিক নেতৃত্বে ২৭ মার্চ সন্ধ্যার মুক্তিযুদ্ধে রাগনানের সঙ্গে র তথা জয়দেবপুর ত্যাগ করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]