খ. অপারেশন সার্চলাইট (Operation Searchlight)
সংজ্ঞা (Definition) : পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনের জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী
বাঙালিদের কঠোর
চান করে
একে অপারেশন সার্চলাইট' নামে অভিহিত করে। মূলত, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে যে সশস্ত্র অভিযান চালার তার সাংকেতিক নাম দের অপারেশন সার্চলাইট কলঙ্কময় রাতে সংঘটিত। অপারেশন সার্চলাইটা ছিল কার্যত নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর
পরিচালিত একটি পরিকল্পিত গণহত্যা।
পরিকল্পনা (Planning) : পাকিস্তানি বিভিন্ন উৎস থেকে-এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
অফিসে বসে জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আान এ পরার
ইনস্ট্রাকশন' প্রস্তুত করেন। তাদের সহায়তা করেন জেনারেল পীরজাদা, জানজুয়া, প্র। এতে তা পরিব খুঁটিনাটি লিপিবদ্ধ ছিল। ১৬ প্যারা সংবলিত এ পরিকল্পনাটি চূড়ান্তকরণের পর ২০ মার্চ এটি অনুমোদন করেন জেলাকে হামিদ ও জেনারেল টিক্কা খান। এ ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ সারা নিরপরাধ, ঘুমন্ত জনগণের ওপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and objectives) : অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান উদ্দেশ্য ি পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে বিশিষ্ট আওয়াগী লীগ নেতা ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের
প্রয়োজনে হত্যা, সামরিক, আধা-সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিরন্ত্রীর পার, রেডিও ও টেলিফোন
এক্সচেঞ্জ দখলসহ প্রদেশে সামগ্রিক কর্তৃত্ব গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করে প্রদেশে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করা । লিঙ্গ, শ্রেণি ও পেশাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ গণহত্যার প্রধান লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপ :
১. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজভিত্তিক ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী;
2 সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইপিআর ও আনসারের বাঙালি অংশ;
3 কথিত আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক কর্মী ও কলকারখানায় তাদের শ্রমজীবী সমর্থক; ব্যাপক হিন্দু সম্প্রদায়;
৫. তরুণ ছাত্র এবং যুব সম্প্রদায়;
৬
বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী এবং
৭. শ্রমজীবী ও গ্রামীণ জনগণ ।
প্রস্তুতি (Preparation) : অপারেশন সার্চলাইটে ঢাকার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য রংপুরস্থ ২৯ ক্যাভালরির ৬টি ট্যাংক এবং তার 'ক্রুদের' আনা হয়। মার্শাল হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয় দ্বিতীয় ক্যাপিটালে (আগারগাও)। একটি গোপন সংকেতের মাধ্যমে ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে ‘গ্যারিসনগুলোকে' 'এইচ আওয়ার' বা আক্রমণের সময় সম্পর্কিত সংকেতটি পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে রাত ১ টায় এ আঘাতের সময় নির্ধারণ করে কাগজে কলমে এইচ আওয়ারটি লেখা হয় ২৬-০১-০০। অর্থাৎ ২৬ মার্চ রাত ১ টায় 'অপারেশন সার্চলাইট' নামক নারকীয় সামরিক আঘাত শুরুর সময় নির্ধারিত হলেও পরে এটি ২৫ মার্চ রাত ১১.৩০টায় এগিয়ে আনা হয় ।
নৃশংস হত্যাযজ্ঞ (Barbarous Killing) : পাকিস্তান সৈন্যরা রাত ১১.৩০ টায় সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে ফার্মগেটে মিছিলরত বাঙালিদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের সূচনা ঘটায়। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক একযোগে পিলখানা, রাজারবাগে আক্রমণ চালায়। রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হল, বেগম রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন শিক্ষকসহ বহু ছাত্রকে হত্যা করে। একই পরিকল্পনার আওতায় পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও, ইন্দিরা রোড, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা বিমান বন্দর, গণকটুলী, ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান প্রভৃতি স্থানে আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ জনতাকে হত্যা করে। এ রাতে চট্টগ্রামে পাকসেনাদের গুলিতে অনেকে হতাহত হয়। মার্চ মাসের মধ্যেই অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনায় সেনানিবাসকে কেন্দ্র করে পাকবাহিনী তাণ্ডব চালায়। বাঙালির মুক্তির আন্দোলন সমর্থনের কারণে ইত্তেফাক, সংবাদ ও দি পিপলস অফিসে অগ্নিসংযোগ করে । বহু সংবাদকর্মী আগুনে পুড়ে মারা যায় ৷
২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় অভিযানে প্রকৃত হতাহতের সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে জেনারেল টিক্কা খান ও তার বাহিনী পরিচালিত এ গণহত্যাযজ্ঞে শুধুমাত্র ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা নগরীতে অন্তত ৭,০০০ নিরীহ বাঙালি নিহত হয় । ২৭ মার্চ দুপুর পর্যন্ত মাত্র আড়াই দিনে কেবল ঢাকায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩,০০০ থেকে ১৫,০০০ হাজার পর্যন্ত। মতান্তরে, ২৫ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে ৫০,০০০ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করলেও পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকার ইন্টার কন্টিনেন্টল হোটেল (বর্তমান রূপসী বাংলা বা শেরাটন) থেকে অভিযান প্রত্যক্ষ করেন। পরদিন ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে সেনাবাহিনীর পূর্বরাতের অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করে মন্তব্য করেন, 'আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে পাকিস্তানকে রক্ষা করা গেছে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সংযোজন করে। অদম্য বাঙালি জাতি গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং শুরু করে মুক্তির জন্য যুদ্ধ। ফলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত