“ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। ....এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রিত ইতিহাস। আর মুক্তিযুদ্ধের কথা এলেই চলে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা । বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল বেতার ভাষণে বলেন- 'এ যুদ্ধ গণযুদ্ধ, এ যুদ্ধ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের যুদ্ধ।'
পাক সেনাবাহিনীর অঘোষিত যুদ্ধের প্রতিবাদে বাংলাদেশে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তা চলে দীর্ঘ ৯ মাস । বাঙালির এ যুদ্ধের মাধ্যমেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রমাণ করে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ নামের একটি দেশ, অহংকৃত শান্তি- সমৃদ্ধির স্বপ্নের বাংলাদেশ। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির স্বপ্নের বাংলাদেশ-এর স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একবার বলেছিলেন, '২৫ মার্চ দিনটি হবে সংকটজনক।'
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের প্রবহমান ধারায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ প্রক্রিয়ার সুদীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি সারা বিশ্বের নিকট একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হলেও-এর প্রকৃত সূত্রপাত ঘটেছিল অনেক পূর্বেই। তবে ১৯৪৭-'৭১ কালপর্ব আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসের মহত্তম সূচনা অধ্যায়। এ
সূচনা অধ্যায়ের প্রারম্ভিক পর্যায়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। এ সময়কালেই বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের তথা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লড়াই সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে। আমাদের জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম, রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াই, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তদান, ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন- শুধু এ অঞ্চলের নয় বরং এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপসহ সমগ্র পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী, মুক্তিসংগ্রামী, নিপীড়িত জাতিসমূহের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত। বাঙালির সশস্ত্র লড়াই এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসে একটি মাইলফলক। নিঃসন্দেহে, বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরব ও অর্জনের সর্বোত্তম
ক্ষেত্র হলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ দিক বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, যা নিম্নরূপ :
1 একটি রাষ্ট্রে যারা সংখ্যায় বেশি [সংখ্যাগরিষ্ঠ] তারা যারা সংখ্যায় কম [সংখ্যালঘু] তাদের দমিয়ে রাখে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা, বাঙালি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদের দমিয়ে রেখেছিল অবাঙালি সংখ্যালঘুরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের যুদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে।
২. পৃথিবীর যে ক'টা দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে যুদ্ধ করেছে এবং জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। ৩. দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সৈন্যরা শুধু যুদ্ধ করেনি, সাধারণ মানুষও যুদ্ধ করেছে। এ যুদ্ধকে বলা হয় জনযুদ্ধ, এ যুদ্ধ যারা পরিচালনা করেছেন তাঁরা ছিলেন রাজনীতিবিদ ।
8
বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যে দেশের নেতা যুদ্ধের সময় অন্য দেশের কারাগারে বন্দী ছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি । সেই নেতার নাম নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করেছে।
৫. পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বড় গণহত্যা চালানো হয় নি । ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে।
৬
আর কোনো দেশ এত অল্পসময়ে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়নি এবং এত হাজার সৈন্য ও কর্মচারীর আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেনি।
দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য কোথাও এত বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়নি। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শহীদুল্লাহ কায়সার, গোবিন্দচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ডা. আলিম চৌধুরী, নিজামুদ্দিন আহমদ, সেলিনা পারভীন প্রমুখ বিভিন্ন পেশার মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সৈন্য ও আলবদররা।
৮. স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এত লোক একেবারে বিদেশে চলে গেছেন শরণার্থী হয়ে এবং যুদ্ধ শেষে আবার ফিরে
এসেছেন এমন ঘটনাও ঘটেনি
৯. পৃথিবীর বড় বড় শক্তিশালী দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ এত অল্প সময়ে
জিতেছে এমন ঘটনাও কম ঘটেছে।
১০. শত্রু আক্রমণের দু'সপ্তাহের মধ্যে আর কোনো দেশ সরকার গঠন করে যুদ্ধ চালাতে পারে নি।
১১. ইসলামের নামে আর কখনো এতোগুলো ইসলামি রাষ্ট্র [পাকিস্তান, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি] ক্ষুদ্র একটি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় এত মুসলমান হত্যার ঘটনা আগে কখনো ঘটায়নি। ইসলামের ইতিহাসে এটি একমাত্র ব্যতিক্রমী ঘটনা ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত