স্বাধীনতা সনদের গুরুত্ব ( Importance of the Documents of Liberation)

স্বাধীনতা সনদের গুরুত্ব ও আইনের ধারাবাহিকতা
Importance of the Documents of Liberation and Legal Continuation
ক. স্বাধীনতা সনদের গুরুত্ব ( Importance of the Documents of Liberation)
যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের মৌলিক আইনের ভিত্তি ছিল এ স্বাধীনতার সনদ। এর মাধ্যমে মুজিবনগর প্রশাসনের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধকরণ করা হয়। মওদুদ আহমদ লিখেছেন-
'এই সনদ ছিল আইনের মূল সূতিকাগার এবং সরকারের সকল কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার উৎস। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর দেশের সংবিধান কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এটিই ছিল দেশের সংবিধান।'
বিদ্যমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এ সনদ প্রেসিডেন্টের ওপর রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত করে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে সকল কার্যনির্বাহী ও আইন সম্বন্ধীয় ক্ষমতা প্রদান করে এক থানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের এ পদক্ষেপ যথার্থ ছিল। মওদুদ আহমদ মন্তব্য করেছেন— এছাড়া জনগণকে সুশৃঙ্খল ন্যায় নির্ধারক একটি সরকার উপহার দেয়ার লক্ষ্যে ক্ষমা ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ নিয়োগ, কর ও খাজনা আরোপ, সাংবিধানিক সংসদ আহ্বান ও স্থগিতকরণ এবং ইত্যাকার নানাবিধ ক্ষমতাসহ রাষ্ট্রপতিকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবেও নিয়োগ করা হয়।'
এ সনদটি পর্যালোচনা করলে উপলব্ধি করা যায় যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনে রেখে তার নামে সংগ্রাম পরিচালনার উদ্দেশ্যেই এটি রচনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সে সময় বঙ্গবন্ধুর স্থলাভিষিক্ত হবার মতো কোনো নেতা ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী থাকা সত্ত্বেও তার জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি ছিল অটুট। সেজন্য তার নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হয় যাতে জনসমর্থন ধরে রাখা যায়। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না। তাই সনদ প্রণেতাগণ সনদে উল্লেখ করেন যে, 'যেকোনো কারণে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত না থাকলে, কার্যালয়ে আসতে অপারগ হলে বা তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে উপ-রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সনদের মাধ্যমে সরকারের সিভিল প্রশাসন ও সামরিক প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড নিশ্চিত করা হয়। 'মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতাকে সুনিয়ন্ত্রিত করে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালনা করা এবং তাকে একটি আইনগত ভিত্তি দেয়ার জন্য এটি প্রয়োজন ছিল।' এ সনদটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে সনদে উল্লেখ করা হয়। এ সনদে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন দেয়া হয়। এ সনদটি যে জাতিসংঘ ঘোষিত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায় সংক্রান্ত সনদের আলোকে বৈধ ছিল, এ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে উল্লেখ করা হয় যে, আওয়ামী লীগ ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র এলাকা এবং সম্মিলিত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে শাসন করার আইনগত অধিকার অর্জন করেছিল। পূর্ববাংলা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা নিজেদের একত্রিত করার একটি আইনগত অধিকার অর্জন করেছেন। এ অধিকার বলেই ঘোষিত স্বাধীনতার সনদ বৈধতা পেয়েছে। সনদে জাতিসংঘের সকল দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয় এবং এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাশা করা হয়।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এ সনদ অসীম তাৎপর্যময় স্থান দখল করে আছে। মওদুদ আহমদ লিখেছেন— ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বরের পর দেশ পরিচালনার জন্য আইনসমূহের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে এ সনদ অব্যাহতভাবে কার্যকর থাকে এবং-এর অধীনে প্রণীত সকল আইনের প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল অবিসংবাদিত। এভাবে এ সনদটি একটি বাস্তবতায় পরিণত হয়;-এর মাধ্যমেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় সূচিত হয়।' খ. চলমান আইনের ধারাবাহিকতা (Continuation of Existing Law)
সর্বক্ষেত্রে আইনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার সনদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট ১০ এপ্রিল (১৯৭১) এ আদেশ জারি করেন। এটি ২৬ মার্চ (১৯৭১) থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়। আদেশের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান স
আমল থেকে চলমান সকল আইন (প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন সাপেক্ষে) বৈধকরণ ও কার্যকর করা। তবে বাংলাদেশের জন্য যে সকল আইন সামঞ্জস্যহীন বলে মনে হবে তা কার্যকর করা যাবে না। এ আদেশের মাধ্যমে চাকরিজীবীগণকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় যে, 'সরকারি, বেসামরিক, সামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক যে সব অফিসার বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করেন, তারা তাদের চাকরির প্রচলিত শর্ত অনুযায়ী পদমর্যাদা এবং প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার অধিকার পাবেন।' এভাবে এ আইন চাকরিজীবীগণের চাকরির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে এবং পাকিস্তান আমলে তারা যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছিলেন তা অব্যাহত রাখার আইনগত বৈধতা লাভ করেন।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণের আদেশ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ক্ষমতাবলে 'আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ' নামে একটি আদেশ জারি করেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের যে সব আইন চালু ছিল, তা রক্ষার্থে এ আদেশ জারি করা হয়। অবশ্য ১৭ এপ্রিল থেকেই মূলত এ আদেশ কার্যকর ও বলবৎ হয়।
নিন্মে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণের আদেশ তুলে ধরা হলো:
‘আমি বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল তারিখে আদেশ জারি করছি যে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের যেসব আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে, এ রাষ্ট্র গঠন বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষেত্রে সকল সরকারি সামরিক-বেসামরিক বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগ বিধির আওতায় যে শর্তে তারা চাকরিতে বহাল ছিলেন সেই শর্তে তারা চাকরিতে বহাল থাকবেন ।
বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তাঁরা সমস্ত সরকারি কর্মচারীদে স্ব-স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন। এ আদেশ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।'
স্বাক্ষর
সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি)

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]