. মুক্তিযুদ্ধের স্বতঃস্ফূর্ত প্রাথমিক ও সংগঠিত প্রতিরোধ সম্পর্কে পর্যালোচনা কর। (Review About the Spontaneous Early Resistance of the War of Liberation.)

স্বতঃস্ফূর্ত প্রাথমিক প্রতিরোধ ও সংগঠিত প্রতিরোধ (মুক্তিফৌজ, মুক্তিবাহিনী, গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ) The Spontaneous Early Resistance and Subsequent Organized Resistance (Mukti Fouz, Mukti Bahini, Guerillas and Frontal Warfare) ভূমিকা
Introduction
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ঢাকার গণহত্যার খবর পৌঁছা মাত্র ঢাকার বাইরে প্রতিরোধ শুরু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মেজর রফিক ও মেজর জিয়ার প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্য। চুয়াডাঙ্গায় মেজর ওসমান তার ইপিআর বাহিনী নিয়ে প্রতিরোধ করেন। মেজর খালেদ মোশাররফ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সবচেয়ে আগে প্রতিরোধ শুরু করেন মেজর শফিউল্লাহ রাজেন্দ্রপুরে। এভাবে বিভিন্ন রেজিমেন্টে বাঙালি অফিসার যারা ছিলেন তাদের অনেকে স্বপক্ষ ত্যাগ করেন। এসব সামরিক অফিসারদের কমান্ডের অধীনে বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্র, যুবক, জনতা সংগৃহীত পুরনো আমলের অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করেন। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়, ২৬ মার্চ থেকেই স্বতঃস্ফূর্ত প্রাথমিক প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়, যদিও এসব প্রতিরোধ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে ভেঙে পড়ে।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর সৈন্যরা নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে আক্রমণ করার ফলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। ইতিহাসে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা কবলিত সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি দুর্জয় আক্রোশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ।
যেকোনো গণআন্দোলন আর প্রতিরোধে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ দরকার। সর্বস্তরের জনগণ বর্বরোচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং বাংলাদেশের নগরে-বন্দরে গ্রামে-গঞ্জে অমিততেজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধযুদ্ধ আরম্ভ করে। ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক, কৃষক ও লক্ষ লক্ষ মৃত্যুঞ্জয়ী তরুণ সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। যার যা আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সৈন্য, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পেছনে একতাবদ্ধ হয়। মুষ্টিমেয় পাকিস্তানপন্থি দালাল ব্যতীত সমগ্র বাঙালি জাতি পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ নামক সদ্য ঘোষিত স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের পেছনে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ।
৯.৩.২. স্বতঃস্ফূর্ত প্রাথমিক প্রতিরোধ
Spontaneous Early Resistance
২৫ মার্চ (১৯৭১) দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা শহরের ঘুমন্ত নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর যে গণহত্যাযজ্ঞ ও সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে তার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে রুখে দাঁড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ই.পি.আর. সেনাবাহিনী, পুলিশ, মুজাহিদ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ান ও অফিসারবৃন্দ। ঢাকা ও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে বিপুল সংখ্যাধিক্যের কারণে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি অফিসার ও জওয়ানদের সহজেই হত্যা করতে সক্ষম
হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের পিলখানায় এবং বিভিন্ন সীমান্ত চৌকিতে ই.পি.আর-এর বাঙালি সদস্যগণ এবং ঢাকার রাজারবাগ ও দেশের বিভিন্ন পুলিশ লাইনের বাঙালি পুলিশ সদস্যগণ প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এপ্রিল মাসের অধিকাংশ সময় দেশের অধিকাংশ স্থান প্রতিরোধ সংগ্রামীগণ (তখনো এরা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিফৌজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেনি) মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। দেশের বিভিন্ন অংশে সেসময় যেসব সামরিক অফিসার প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন।
মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম অঞ্চল।
মেজর রফিকুল ইসলাম-নোয়াখালী অঞ্চল।
মেজর খালেদ মোশাররফ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব বাজার, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, সিলেট অঞ্চল ।
মেজর কে এম সফিউল্লাহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চল ।
মেজর আবু ওসমান—কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল ।
মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ-রাজশাহী অঞ্চল।
মেজর নাজমুল ও মেজর নওয়াজেশ সৈয়দপুর ও রংপুর অঞ্চল।
সামরিক জওয়ান ও অফিসারদের প্রতিরোধ যুদ্ধের পাশাপাশি দেশের প্রায় সকল নগর-বন্দর-শহর, থানা ও জেলা সদর দপ্তর, রেলওয়ে স্টেশন, হাট-বাজারে ২৬ মার্চ থেকেই প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন সরকারি অস্ত্রাগার থেকে (যেমন : থানা, রেলওয়ে, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রেজারি ইত্যাদি) অস্ত্র বের করে আনা হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মাঠে সশস্ত্র ট্রেনিং ক্যাম্প চালু হয় এবং ছুটিতে আসা সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা ট্রেনিং দেন। কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষকগণ এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনিং প্রদানে অংশ নেন। একই সঙ্গে বড় বড় গাছ কেটে রাজপথে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয় যেন পাকিস্তান বাহিনী চলাচল করতে না পারে। কোথাও রাস্তা কেটে ফেলা হয় এবং ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে দেয়া হয়। এভাবে শুরু হয় আপামর জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ। পাকিস্তান বাহিনীর সামনে টিকতে না পেরে যখন প্রতিরোধ ভেঙে যায় তখন সংগ্রামী জনতা নিকটবর্তী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায়। এরা ছিল অধিকাংশই যুবক ও তরুণ এবং পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এদের সঙ্গে (আগে কিংবা পিছে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও) সীমান্ত অতিক্রম করেন এবং তারা স্থানীয় কংগ্রেস নেতা ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সীমান্ত এলাকায় যুব শিবির স্থাপন করেন। স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধে উৎসাহী তরুণ যুবকরা এসব যুবশিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেন । এখান থেকেই তাদেরকে মুক্তিবাহিনীর জন্য রিক্রুট করা হয় ।
সংগঠিত প্রতিরোধ (মুক্তিফৌজ, মুক্তিবাহিনী, গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ)
Organized Resistance (Mukli Fouz, Mukti Bahini, Guerillas and Frontal War fare) ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার আঞ্চলিক কমান্ডারদের নিয়ে গঠন করে একটি মুক্তিফৌজ যা পরবর্তীকালে মুক্তিবাহিনীরূপে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত হয়। এছাড়া গঠিত হয় ব্রিগেড এবং স্থানীয় পর্যায়ে দেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে আঞ্চলিক বাহিনী বা গেরিলা । এভাবে সামরিক ও বেসামরিক উদ্যোগে মুক্তিবাহিনী ও গেরিলা সম্মুখযুদ্ধের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে বাঙালি জাতি রণাঙ্গনে ক্রমান্বয়ে সাফল্য লাভ করতে থাকে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]