মুক্তিযুদ্ধে সেক্টরসমূহের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর । (Discuss the War of Sectors in Liberation War.)


মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর (11 Sectors of Liberation War) : মুজিবনগর সরকার ১১টি সেক্টরে বাংলাদেশের রণাঙ্গনকে ভাগ করে প্রত্যেকটির জন্য একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করেন। যে যে এলাকা নিয়ে সেক্টর গড়ে ওঠেছিল এর পরিচয় নিম্নরূপ :
১নং সেক্টর : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী নদী পর্যন্ত এলাকা নিয়ে ১ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের অধীনে নিয়মিত ২,০০০ এবং গণবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ৮,০০০ জন ।
২নং সেক্টর : নোয়াখালী, আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ, ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এ সেক্টরেও ৪,০০০ নিয়মিত এবং ৩,০০০ গণবাহিনীর সদস্য ছিল।
এবং কারর আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, ঢাকা জেলার
অংশবিশেষ
৩ কিশোরগঞ্জ জেলা নিয়ে গঠিত ছিল। এ সেক্টরের অধীনে ৩,০০০ নিয়মিত ১০,০০০ গেরিলা ছিল।
৪নং সেক্টর : সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন ছাড়াও পূর্ব ও উত্তর দিকে ডাউকি সড়ক নিয়ে গঠিত ছিল। এর ৪,০০০ নিয়মিত এবং ৮,০০০ গেরিলা ছিল।
৫নং সেক্টর সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল সিলেট-ডাউকি সড়ক হতে সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। ১,০০০ নিয়মিত এবং ১০,০০০ গেরিলা নিয়ে এ বাহিনী গঠিত ছিল।
৬নং সেক্টর : রংপুর ও দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমা নিয়ে এ সেক্টর গঠিত ছিল। এ সেক্টরে ১,০০০ নিয়মিত এবং ১০,০০০ গেরিলা ছিল।
এবং সেক্টর : দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া জেলা নিয়ে গঠিত ছিল। এ সেক্টরে ২,০০০ নিয়মিত এবং ২,৫০০ গেরিলাসহ মোট ১২,৫০০ সদস্য ছিল।
৮নং সেক্টর : কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের অধিকাংশ এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত। ২,০০০ নিয়মিত এবং ৮,০০০ গণবাহিনী নিয়ে এ সেক্টর গঠিত ছিল।
*সং সেক্টর : দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল, ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ এবং বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে গঠিত। এ সেক্টরে ১,০০০ নিয়মিত ও ১,০০০ গণবাহিনী ছিল।
১০নং সেক্টর ১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নৌকমান্ডোরা, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ। মোট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫১৫ জন নৌকমান্ডো নিয়ে এ সেক্টর গঠিত ছিল।
১১নং সেক্টর : কিশোরগঞ্জ ছাড়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত। মোট ২৫,০০০ সৈন্য নিয়ে এ সেক্টর গঠিত ছিল।
সারণি ২২ : সেক্টর কমান্ডারদের পরিচয়
১নং সেক্টর মেজর জিয়াউর রহমান (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৫ জুন, ১৯৭১) মেজর মোহাম্মদ রফিক (২৮ জুন ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
২নং সেক্টর মেজর খালেদ মোশাররফ (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) মেজর এ.টি.এম. হায়দার (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৩নং সেক্টর মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২১ জুলাই, ১৯৭১) মেজর কাজী নূরুজ্জামান (২৩ জুলাই, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৪নং সেক্টর মেজর সি.আর.দত্ত (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৫নং মেজর মীর শওকত আলী (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৬নং সেক্টর সেক্টর উইং কমান্ডার এম. খাদেমুল বাশার (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৭নং সেক্টর মেজর নাজমুল হক (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) মেজর কাজী নুরুজ্জামান (২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৮নং সেক্টর মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৭ জুলাই, ১৯৭১) মেজর এম.এ. মঞ্জুর (১৪ আগস্ট ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৯নং সেক্টর মেজর এম.এ. জলিল (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) মেজর জয়নুল আবেদিন (২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
১০নং সেক্টর মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং প্রাপ্ত নৌকমান্ডোরা যখন যে সেক্টরে একশন করেছে, তখন সেসব সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছেন।
১১নং সেক্টর মেজর আবু তাহের (১০ অক্টোবর, ১৯৭১-২ নভেম্বর, ১৯৭১) ফ্লাইট লে.এম. হামিদুল্লাহ (২ নভেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
ব্রিগেড ফোর্স গঠন
Formation of Brigade Force
১১টি সেক্টর ও অনেকগুলো সাব-সেক্টর ছাড়াও রণাঙ্গনকে ৩টি ব্রিগেড ফোর্সে বিভক্ত করা হয়। ফোর্সের নামকরণ করা হয় অধিনায়কদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। মেজর জিয়াউর রহমান ছিলেন 'জেড ফোর্স' মেজর কে.এম শফিউ 'এস ফোর্স' এবং মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন 'কে ফোর্স'-এর অধিনায়ক। জুন মাসে ১ম, ৩য় এবং ৮
নিয়ে জেড ফোর্স গঠিত হয়। মে মাসে ২য় ইস্ট বেঞ্চাল ও ৩ নম্বর সেক্টন নিয়ে এস ফোর্স গঠিত হয়। মে মাসে ৪,
১০ম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে 'কে ফোর্স' গঠিত হয়।
মুক্তিবাহিনী সরকারি পর্যায়ে দু'ভাবে বিভক্ত ছিল। যেমন- ক. নিয়মিত মুক্তিবাহিনী অনিয়মিত মুক্তিবাহিনী। ক. নিয়মিত মুক্তিবাহিনী (Regular Freedom Fighter)
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। সৈন্যবলের ঘাটতি পুরণের জন্য আধা সামরিক বাহিনী (যেমন --- পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ) বা যুবকদের পর্যান্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৮টি ব্যাটালিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টপসের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ । নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের সেক্টর ট্রুপসে নেয়া হয়।
রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ান নিয়ে ৩টি ব্রিগেড গঠন করা হয়। সরকারি পর্যায়ে এদের নামকরণ করা হয় এম, এ (মুক্তিফৌজ)। নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮,৬০০ জন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনীও গড়ে তোলে।
১. সেনাবাহিনী (Army) : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ অক্টোবর ভারতে জলপাইগুড়ি জেলার জলঢাকায় বাংলাদেশ সরকার এক আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৬১ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে দ্বিতীয় লেফটেনেন্ট পদে কমিশন দেয়। এভাবে শুরু হয় সেনাবাহিনীর যাত্রা। এসব অফিসাররা পরবর্তীকালে বিভিন্ন সেক্টরে যোগ দেয়ায় যুদ্ধে গতি সঞ্চার হয়। বিমানবাহিনী (Air Force) : ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর ২৮ জন পাইলট ও ৫০ জন বৈমানিক নিয়ে বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। ৩ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী যে আক্রমণ রচনা করেছিল তার প্রথম আক্রমণের কৃতিত্ব বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর। ঢাকা পতনের আগে পর্যন্ত বিমান বাহিনী প্রায় ১২ বার পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালায় ।
নৌবাহিনী (Navy) : মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনী হিসেবে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে নৌবাহিনী গড়ে তোলা হয়। ৯ নভেম্বর পাকবাহিনীর কাছ থেকে ৬টি দখলকৃত নৌযান নিয়ে প্রথম 'বঙ্গবন্ধু' নৌবহরের উদ্বোধন করা হয়। যুদ্ধের শেষদিকে নৌবাহিনী গঠিত হওয়ায় নৌ-পথে যুদ্ধ পরিচালনার কৃতিত্ব মূলত নৌ-কমান্ডো গেরিলাদের।
খ. অনিয়মিত মুক্তিবাহিনী (Irregular Freedom Fighter)
যুবক, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনীর সরকারি নামকরণ ছিল 'গণবাহিনী' বা এফ.এফ. (ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা)। এ বাহিনীর সদস্যদের দু'সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর একজন কমান্ডারের অধীনে তাদের নিজ নিজ এলাকায় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হতো। অনিয়মিত মুক্তিবাহিনীর মধ্যে ছিল :

আঞ্চলিক বাহিনী (Zonal Force) : সেক্টর এলাকার বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব বাহিনী গড়ে ওঠে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙ্গাইল), আফসার ব্যাটালিয়ন (ভালুকা-ময়মনসিংহ), বাতেন বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়তে বাহিনী (গোপালগঞ্জ-বরিশাল), হালিম বাহিনী (মানিকগঞ্জ), আকবর বাহিনী (মাগুরা), লতিফ মীর্জা বাহিনী (সিরাজগঞ্জ-পাবনা) ও জিয়া বাহিনী (সুন্দরবন) উল্লেখযোগ্য। এসব গেরিলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড ছিল ব্যাপক এবং তারাই ছিলেন যুদ্ধের প্রাণ। দেশের অভ্যন্তরে জনগণের মনোবল অটুট রাখা, পাকিস্তানি ও তাদের দোসরদের অতর্কিত আক্রমণে পরাস্ত করা ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু; যেমন- যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করা, যুদ্ধের জন্য লোকবল সংগ্রহ ও তাদের ট্রেনিং প্রদান ছিল এদের প্রধান কাজ। বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলার সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। এছাড়া যেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিল-এর ৩ থেকে ৪ গুণ সদস্য।
রাজনৈতিক মতাদর্শভিত্তিক বাহিনী (মুজিব বাহিনী) (Political Ideology Based Force (Mujib Force)] : বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কর্তৃত্ব ছাড়াই মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বাছাই করা তরুণ ও শিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। ভারতীয় জেনারেল উবানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেরাদুনে এদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মোট ৪টি সেক্টরে মুজিব বাহিনী বিভক্ত ছিল। এসব সেক্টরের প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক। এভাবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডসমূহ, বিভিন্ন সেক্টর ও গেরিলা সমন্বয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য এক বিশাল বাহিনী গড়ে ওঠে।
সেক্টরসমূহের যুদ্ধ
Fighting of Sectors
মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত অসংখ্য প্রথাগত যুদ্ধ ও গেরিলা অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ সংক্ষিপ্ত পরিসরে লিপিবদ্ধ করা স নয়। তবু বিভিন্ন সেক্টরে অপারেশনের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য নিম্নে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের বিবরণ প্রদান করা হলো :
৬নং সেক্টর : ২৪ মে এক কোম্পানি মুক্তিবাহিনী চাঁদগাজিতে সুদৃঢ় পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন অলি আহমদ এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। তিন ঘণ্টা ব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সৈন্যরা পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী চাঁদগাজিতে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। ৬ জুন চাঁদগাজি পুনর্দখলের উদ্দেশ্যে পুনরায় পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করলে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। এ যুদ্ধে ৭৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ১৭ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য পুনরায় ট্যাংক, মর্টার ও গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় আক্রমণ করেও চাঁদগাজি গনদখল করতে ব্যর্থ হয়। এবারও ৪৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ২৯ জুন পাকিস্তানি সৈন্যরা পুনরায় আক্রমণ করে। যাতে ৫টি হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়। সারাদিন যুদ্ধ অব্যাহত থাকার পরে মুক্তিবাহিনী চাঁদগাজি থেকে পেছনে সরে আসে। চাঁদগাজি পাকিস্তানিদের দখলে চলে যায়। এ যুদ্ধে ১৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
ক্যাপ্টেন মাহফুজ ও তার অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধারা ১০ জন হিয়াকু-রামগড় সড়কে পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যামবুশ করে। ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। করলিয়াটিলায় ২৩ জুন মুক্তিবাহিনী পুনরায় পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যামবুশ করে। কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্যসহ একজন অফিসার নিহত হয়। ১ জুলাই মুক্তিবাহিনী দেবীপুর বিওপি আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা এ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং ৫ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। ক্যাপ্টেন মাহফুজ চিকনছড়ায় ৩ জুলাই পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যামবুশ করেন।
করইয়াবাজারে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর ১৯ জুলাই আক্রমণ করা হয়। ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ২৭ জুলাই হিয়াকুতে পাকিস্তানিদের সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা অবস্থানে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করলে ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় ।
২৯ আগস্ট অমালিকা বিওপিতে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয় এবং অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এ আক্রমণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিহার রেজিমেন্ট গোলন্দাজ কামান থেকে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এ যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং ৮ জন গুরুতরভাবে আহত হন। ৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী শালিয়াদিঘিতে প্রতিরক্ষা অবস্থান করে এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা ৭ নভেম্বর এ অবস্থান আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী অতঃপর বেলুনিয়াস্থ পাকিস্তানিদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অবস্থান এবং চম্পকনগর বিওপি ও বল্লমপুর আক্রমণ করে। ৫০ জন পাকিস্তানি সৈন্য এবং ৩ জন্য মুক্তিযোদ্ধা এ যুদ্ধে নিহত হন ।
২নং সেক্টর : ১৯ জুলাই মধ্যভাগে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হয়। ক্যাপ্টেন গাফফার মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন। এ যুদ্ধে ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাইয়ুম এবং ৫৩ আর্টিলারি
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন বোখারীসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ে মুক্তিযোদ্ধারা বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন অফিসার ও 80 গুরুতরভাবে আহত হয়। বেলুনিয়ার বিখ্যাত যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় ৮ নভেম্বর। নবম আজিজের নেতৃত্বে শালদা নদীর নিকটবর্তী পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্র মুক্তিবাহিনী করায়ত্ত করে। দুঃখের বিষয়, লে, আজিজের বুকে এবং মাথায় গুলি পাগে এবং তিনি পশ্চাৎপসরণরত পাকিস্তানি সৈন্যরা তার মরদেহ নিয়ে যায়।
পরে এ কম্প
৩নং সেক্টর : লে. মোর্শেদ ও তার সৈন্যরা ১৪ মে মাধবপুরে পাকিস্তানি সৈন্যদের অ্যামবুশ করে। সিলেট মহাসড়কে ক্যাপ্টেন মতিয়ার রহমান নালুয়া চা-বাগানের সন্নিকেটে পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যামবুশ ক মাধবপুর, কাপাসিয়া, মনোহরদী, কুলিয়ারচর, কটিয়াদী, তেলিয়াপাড়া, মুকুন্দপুর ও কালো জাে গেরিলা অভিযান ও সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে।
৪নং সেক্টর : ২৪ মে সুতাকান্দি যুদ্ধ এবং ১৯ জুন পাঠিটিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ক্যাপ্টেন রব জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে অসংখ্য গেরিলা অভিযান চালানো হয়। ১০ আগস্ট শাহবাজপুর (পাতু) বেপ সংঘর্ষ শুরু হয়। বিয়ানীবাজার, বড়লেখা ও জকিগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর ১৪ সেপ্টেম্বর সৈন্যরা আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। অক্টোবর মাসে এ সেক্টরে প্রথম ও অষ্টম উপস্থিত হয় এবং অসীম বীরত্বের সঙ্গে তারা ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের সঙ্গে যুদ্ধ করে। মুক্তিবাহিনী দক্ষিণ দখল করে। ১০ নভেম্বর আটগ্রাম-জকিগঞ্জে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ক্যাপ্টেন রব সালামটিলা আক্রমণ করেন এ রাজটিলায় ১০ নভেম্বর প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে।
৫নং সেক্টর : গহীন জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বতের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত হওয়ায় মুক্তিবাহিনীর চলাচল ব্যাহত হয়। বড়ছড়া, বালাট, ভোলাগঞ্জ, শেলা এবং ডাউকিতে জুলাই-আগস্ট মাসে অসংখ্য সংঘর্ষ হয়। রাধানগর, টেংরাটিলা ও ছাতক ব্যতীত সুরমা নদী পর্যন্ত দু'শ মাইলব্যাপী বিশাল এলাকা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুক্তিবাহিনী দখল করে। মুক্তিবাহিনী ৫০টি নৌযান দখল করে। অক্টোবর মাসে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল এ সেক্টরে যোগদান করে ছোটখিল গোয়েনহাট এবং ছাতকে যুদ্ধ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি দলকে ৩ নভেম্বর তাহেরপুরে এবং ১৬ নভেম্বর আজমিরিগঞ্জে এ্যামবুশ করা হয়। ২৭-২৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী টেংরাটিলায় পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ করণে। বন্ধু সৈন্য নিহত হয় ।
৬নং সেক্টর : প্রধানপাড়া, ডাংগাপাড়া ও নুনিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। ভজনপুর সাব-সেক্টরের অন্তর্গত জগদ্দলহাট এলাকা ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী দখল করে নেয় এবং চাওই নদী পর্যন্ত তাদের অভিযান অব্যাহত রাখে। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন এবং তার সৈন্যরা ৮ আগস্ট ফুলবাড়ি, ১৩ আগস্ট ভুরুঙ্গামারী এবং ১৫ আগস্ট আলীপুর পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করে। ৪ সেপ্টেম্বর, নাগেশ্বরীতে অনুরূপ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভুরুঙ্গামারী ও জয়মনিরহাটে ১৪ অক্টোবর ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু হয়। ১ জন পাকিস্তান অফিসার ও ৭ জন সৈন্য মুক্তিবাহিনীর হাতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরা পড়ে এবং প্রায় ছয়শত বর্গমাইল এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। ১৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বড়খাতা দখল করে নেয়। ১৮ নভেম্বর জয়মনিরহাট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিবাহিনীর তরুণ লে, আসফাকুস সামাদ এ যুদ্ধে শহিদ হন।
৭নং সেক্টর : মুক্তিবাহিনী ১৮ জুন দিনাজপুর ঠনঠনিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। ৪-৫ জুলাই মেজর নাজমুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী কাঞ্চন ব্রীজ আক্রমণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কলাবাড়ীতে ১ আগস্ট প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে ২৩ আগস্ট কানসাট আক্রমণ করে। ৩ আগস্ট তাহেরপুরে এবং ২৬ আগস্ট দুর্গাপুরে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবলীর নেতৃত্বে একদল গেরিলা শারদায় পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় । শিবলী এ সংঘর্ষে শহিদ হন।
পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে ৮০ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে।
২৭-Sep
২২ আগস্ট চারঘাট থানায় মিরগঞ্জ বিওপি আক্রমণ করে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মেজর গিয়াসের নেতৃত্বে ইসলামপুরে
১৮ নভেম্বর লে. রফিক ও তার সৈন্যরা আলমপুরে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। শাহপুর গড়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান পাকিস্তানিরা দখল করে নেয়। মুক্তিবাহিনী পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে ২২ নভেম্বর শাহপুর দখল করে নেয়। সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান এ আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন - জাহাঙ্গীর, লে, রশিদ, লে, রফিক, লে, কাউয়ুম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নজরুল, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ ও ডা. মিজানুর রহমান নিজ নিজ দলের নেতৃত্বে দান করেন। ১৩-১৪ নভেম্বর খানপুর বিওপি-তে সংঘটিত যুদ্ধে ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
৮নং সেক্টর : মুক্তিবাহিনী ২৭ মে বয়রা আক্রমণ করে। চৌগাছা ও মাসিলার মধ্যবর্তী স্থানে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদার নেতৃত্বে ১০ মে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সৈন্যদের এ্যামবুশ করে। ক্যাপ্টেন হুদা ও তার সৈন্যরা ১৫ মে কাশিপুর বিওপি
অকেমণ করেন এবং ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করেন এবং একটি হালকা মেশিনগান ও ৮টি চাইনিজ রাইফেল হস্তগত করেন। ৩ জুন মুজিবনগরে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ২০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং আরও ২০ জন গুরুতরভাবে আহত হন। ৫ আগস্ট বর্নি বিওপি আক্রমণ করা হয়। ১৭ জুলাই বাগুয়ান রতনপুর এলাকা আক্রমণ করা হয়। ১৭ আগস্ট গয়েশপুরে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী
আক্রমণ চালায়।
এ সময় সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ায় ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সূচনা হয়। ১৫ অক্টোবর সংঘটিত বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ২ জন পাকিস্তানি অফিসার ও ৭০ জন সৈন্য এ যুদ্ধে নিহত হয়। ক্যাপ্টেন হুদা ঝিকরগাছায় এ্যামবুশ করে ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করেন। ৩ নভেম্বর হিজলী বিওপি আক্রমণ করা হয়। লে. কমল সিদ্দিকী নড়াইল সাব ডিভিশন দখল করে যশোরের দিকে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন ।
৯নং সেক্টর : সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ. জলিল এ সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধের বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১২-১৩ জুন বসন্তপুর বিওপি আক্রমণ করা হয়। অনুরূপভাবে খানজি বিওপি ও হিংগলঞ্জ বিওপি আক্রমণ করা হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর গোবিন্দপুর মুক্ত হয়। শ্যামনগরেও প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। ২০ নভেম্বর কালিগঞ্জ যুদ্ধে ৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
১০নং সেক্টর : সমুদ্র ও নদীপথে বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোরা বীরত্বের সঙ্গে অপারেশন চালায়। মুক্তিবাহিনী লিমপেট মাইন ব্যবহার করে এম.ভি. হরমুজ ও আল চালনা আব্বাস জাহাজ দুটি ডুবিয়ে দেয়। উপর্যুপরি ধ্বংসাত্মক অভিযানের ফলে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অকার্যকর হয়ে পড়ে। নৌ-কমান্ডোরা প্রধান সেনাপতির বিশেষ বাহিনীর অন্তর্গত আত্মঘাতী যাদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। একটি পাকিস্তানি সাবমেরিন পরিত্যাগ করে ৭ জন ফ্রগমান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। বাংলাদেশের নদীপথ ও উপকূলীয় অঞ্চলে সফল গেরিলা অভিযান মুক্তিযুদ্ধে প্রবল গতি সঞ্চার করে। এসব অভিযানের ফলে পাকিস্তানি সৈন্যরা হতাশাগ্রস্ত ও হতোদ্যম হয়ে পড়ে।
১১নং সেক্টর : সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের এ সেক্টরে গেরিলা অভিযান বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । অসংখ্যা সম্মুখযুদ্ধ ছাড়া ৪-৫ জুলাই নালিতাবাড়িতে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় ।
কোদালকাঠি, চিলমারি, হালুয়াঘাট ও কামালপুর যুদ্ধ স্মরণীয় হয়ে আছে। ১ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে এসব যুদ্ধ সংঘটিত হয় । ৬ নভেম্বর ঢালু বিওপি-এ ১২ নভেম্বর বন্দরকাটা আক্রমণ করা হয় ।
উপরোক্ত সেক্টরসমূহের যুদ্ধ ছাড়াও 'জেড ফোর্স', 'এস ফোর্স' এবং 'কে ফোর্স' দখলদার বাহিনীর সঙ্গে অসংখ্য সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। জেড ফোর্সের অধীনে কালামপুর, বাহাদুরাবাদ ঘাট ও নকসী বিওপি আক্রমণ বিখ্যাত হয়ে আছে । শালদা নদী, কসবা ও বেলুনিয়া যুদ্ধে কে ফোর্সের আক্রমণ এবং ধর্মনগর, মুকুন্দপুর, আখাউরা, রাধানগর কমপ্লেক্স ও মনতলা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
৯.৩.৬. রণকৌশল ও চূড়ান্ত বিজয়
War Policy and Final Victory
পাকিস্তানি সমরনায়কদের ধারণা ছিল যে একটি বিশাল এলাকা দখল করে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার ও শরণার্থীদের স্থানান্তর করাই ভারতের উদ্দেশ্য। এ দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধরত বাঙালি কর্তৃক বড় ধরনের এলাকা দখল প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তানিরা সৈন্যসমাবেশ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রচলিত রণকৌশল ছিল যুদ্ধ করে কোনো এলাকা দখল করে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে সমরপদ্ধতি অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত রাখা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড-এর অধিনায়ক লে. জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজি প্রথাগত যুদ্ধে এ পদ্ধতি মনে রেখে সৈন্য মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। [তথ্যসূত্র : সিরাজুল ইসলাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৫২।
জেনারেল নিয়াজির কাছে ৪টি পথ খোলা ছিল। যেমন-
প্রথমত, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তীরে শক্ত ব্যূহ রচনা করে ঢাকা বৃত্তকে রক্ষা করা। এতে দুটো অসুবিধা ছিল- এক. ঢাকার বাইরে যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিশাল এলাকায় সৈন্য মোতায়েনের সুযোগ দেয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়ার পর যুদ্ধ করতে করতে ঢাকা বৃত্তের দিকে পশ্চাৎপসরণ করে সুদৃঢ় প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করা। এতে অসুবিধা ছিল, শত্রুর বিমানশক্তির আধিপত্য ও মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার ফলে ঢাকা বৃত্তের দিকে পশ্চাৎপসরণ সম্ভব নাও হতে পারে।
তৃতীয়ত, গতিশীল যুদ্ধ (Mobilized warfare) পরিচালনা করা। এটা ছিল সবচেয়ে উপযোগী, কিন্তু এতে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক তাড়িত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি ।
চতুর্থত, গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বড় বড় রাস্তাগুলোর ওপর শক্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করে শত্রুর অগ্রগতিকে প্রতিহত করা (Fortress concept of defence)। এ পরিকল্পনায় দুটো বড় ধরনের সুবিধা ছিল। প্রথমত, সীমান্তের বিশাল এলাকা বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দিতে হচ্ছে না; আর দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানিদের সীমিত সম্পদ দিয়ে অগ্রসরমান শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করা সম্ভব ছিল।
যেভাবেই হোক, ভারতীয় বাহিনীকে সীমান্ত এলাকায় বাধা দিয়ে বিলম্ব ঘটানো ছিল নিয়াজীর পরিকল্পনা। সীমান্তে সব ক'টি পাকা রাস্তার উপরে শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করে অগ্রসরমান সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিহত করাই ছিল-এর উদ্দেশ্য। ১৪০০ মাইল বিস্তৃত সীমান্ত এলাকায় শত্রুঘাঁটিগুলোতে প্রচুর গোলাবারুদ ও রসদপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করে নিয়াজী চতুর্থ পরিকল্পনা গ্রহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্মিলিত বাহিনীকে বিলম্বিত করতে চাইলেন ।
পাকিস্তানি জেনারেলরা যুদ্ধের গতি ও পরিণতি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন নি। ফলে ঢাকা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় বাধা দিতে ব্যর্থ হয় পাকবাহিনী । বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পলায়নপর পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে।
-
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর নির্বিচারে গণহত্যার যে সূচনা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী করেছিল ১৬ ডিসেম্বরের (২৭৬ দিন) পর তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এ পরাজয়ের মাধ্যমে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ'র দ্বিজাতি তত্ত্বের ফসল পাকিস্তানের সমাপ্তি ঘটে, বাঙালি জাতি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন দেশের জন্ম দেয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]