রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সাংগঠনিক প্রচার ও জনমত গঠন Political-Cultural-Organizational Publicity and Formation of Public Opinion

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রচার ও জনমত গঠনে দেশের বেশকিছু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সাহিত্য-সা রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় সাংগঠনিক প্রচার কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন আর ধ্বংসযজ্ঞের মুখে মুক্তিবাহিনীর ও জনগণের মনোবল ধরে রাখার ব্যাপারে পরিত সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের প্রচার কার্যক্রম সহায়ক হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধের সময়কালীন বিভিন্ন গণরাজনীতির ও ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের প্রচার কার্যক্রম যেমনি সহায়ক ছিল তেমনি সহায়ক ছিল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ও ক. রাজনৈতিক সংগঠনের প্রচার ও জনমত গঠন (Publicity of Political Organization and Formation of Public Opinion)
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে নিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরদের নানাবিধ অত্যাচার-নির্যাতনে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে টিকে থাকা জনগণের মনোরূপ ঠিক রেখে জনমত গঠনে বহু সংগঠনই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তবে তাদের সকলের সম্পর্কে এখানে তুলে ধরা সম্প নয় বিধায় দুয়েকটির কথা তুলে ধরা হলো। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক ও ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন সমূহ যথাক্রমে- ১. ছাত্রলীগ (Chatra League)
৮ মার্চ (১৯৭১) এক সভায় মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ এ মর্মে প্রস্তাব করে যে : আগামী মেয়াদেও কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পরিবর্তে শুধুমাত্র 'ছাত্রলীগ' নাম ব্যবহৃত হবে। প্রত্যেক জেলা শহর হতে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত শাখার সভাপতিকে আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদককে সম্পাদক করিয়া এবং ৯ জন সদস্যসহ সর্বমোট ১১ জনকে নিয়া 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করার প্রস্তাব গ্রহণ করিতেছে। দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি পতাকা প্রদর্শন, পাকিস্তানি সংগীত বাজানো এবং উর্দু বই প্রদর্শন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে এবং বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সিনেমা করও প্রদান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রাপ্তির পর থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন তথা ১৬ ডিসেম্বর এদেশ আর বাঙালি গণমানুষেরা শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়া পর্যন্ত 'স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং বাঙালি জনগণের মনোবল তথা দেশের জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ কিংবা তারও পূর্ব থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
২. ছাত্র ইউনিয়ন (Chatra Union)
১১ মার্চ (১৯৭১) ছাত্র ইউনিয়ন এক প্রচারপত্রে শোষণমুক্ত স্বাধীন পূর্ববাংলা কায়েমের সংগ্রাম আরও দুর্বার করে তোলার আহ্বান জানায়। ছাত্র ইউনিয়ন বর্তমানে করণীয় হিসেবে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে : রাজনৈতিক প্রচার অব্যাহত রাখুন; গ্রাম অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে উহা ছড়াইয়া দিন', যেকোনোরূপ দাঙ্গা-হাঙ্গামা-উস্কানি প্রতিরোধ করুন। শান্তি-শৃঙ্খলা নিজ উদ্যোগে বজায় রাখুন। এ সংগ্রামের সফলতার জন্য সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামী শক্তির একতা গঠনের জোর আওয়াজ তুলুন।
. কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) ( Communist Party (Marxist-Leninist) |
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জনতার ঐক্যই ছিল যুদ্ধজয়ের মূল চালিকাশক্তি। এ দল ৯ মার্চ (১৯৭১) এক প্রচারপত্রের পূর্ববাংলার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন নয়, হরতাল ধর্মঘট নয়; অস্ত্র হাতে লড়াই করতে, শত শত মানুষের হত্যার বদলা নিতে এবং গ্রামে কৃষকদের গেরিলা লড়াই সংগঠিত করার আহ্বান জানায়। পূর্ব পাকিস্তান।
মামমউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল রক্ষায় ও বাঙালি জনমত গঠন আর সংরক্ষণের যে সহায়ক প্রচার কার্যক্রম চালায় তা মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে।
৪. মওলানা ভাসানীর প্রচারপত্র (Leaflet of Mowlana Bhasani )
একাত্তরের ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী 'পূর্ব পাকিস্তানের আজাদী রক্ষা ও মুক্তিসংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়ুন' শীর্ষক এক প্রচারপত্র প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি ৭ কোটি পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এ জরুরি আহ্বান জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দল, মত, ধর্ম ও শ্রেণি নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একত্রে এবং একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করুন, যার মূল লক্ষ্য হবে ২৩ বছরের অমানুষিক এবং শোষণকারী গোষ্ঠীর করাল কবল থেকে পূর্ববাংলাকে সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা ।' মওলানা ভাসানী ১০ মার্চ (১৯৭১) পল্টনের এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, ২৫ মার্চের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে এক হয়ে বাঙালির স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করবেন। উক্ত জনসভায় মওলানা ভাসানী ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ কিংবা তারও পূর্ব থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসে মওলানা ভাসানীর এ অবদান ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে ।
খ. সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রচার ও জনমত গঠন (Literature-Cultural Publicity and Formation of Public Opinion) পাকিস্তান নামক পশ্চিমা রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় শোষণ-বঞ্চনার শেকল ভেঙে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম তথা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সাহসী ও দৃঢ় রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বশীল আন্দোলন। তাই কবিতা-গানের সেই অনন্য আবেদন ও কার্যকারিতা মুক্তিযুদ্ধ আর-এর সফলতাকে ত্বরান্বিত করলেও সেই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রচার কার্যক্রম তেমন একটা সাংগঠনিক রূপ পায় নি ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীগোষ্ঠী ও ঢাকায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংগীত বিষয়ক ঢাকার ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি' আর স্থানীয় পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আলাউদ্দীন সংগীত একাডেমির মতো বাংলাদেশের বহু সংগীত- নৃত্য, নাটক-যাত্রা ও উদ্দীপক যন্ত্রসংগীত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন জনমত গঠন ও সংরক্ষণের বিক্ষিপ্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। পাশাপাশি কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, আসাদ চৌধুরী, সাহিত্যিক আহমদ শরীফ ও রাহাত খান-এর মতো বহু কবি-সাহিত্যিক কেন্দ্রিক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ কলেজের মতো বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক সাহিত্য চর্চার খণ্ডখণ্ড কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধকালীন জনমত গঠন ও সংরক্ষণে কার্যকর সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আমার সোনার বাংলা', জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল' বা ‘শিকল পরা ছল', জীবনানন্দ দাশ রচিত 'রূপসী বাংলা' কিংবা সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর “চিঠি'র, মতো বহু খ্যাতিমান কবির কবিতার উচ্চারণই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে করেছে ত্বরান্বিত । কবি আসাদ চৌধুরী কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘জয়বাংলা' পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে ‘মৃত্যুহীন প্রাণ' ও ‘মোদের গর্ব মোদের আশা' নামে দুটি কথিকা পাঠের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। কবি আল মাহমুদ কলকাতার ‘জয়বাংলা' অফিসে প্রবাসী সরকারের স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখেন । মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করার উদ্দীপক কবিতা, কথিকার মতো উদ্দীপক যন্ত্রসংগীতও যে জনমত গঠনে সহায়ক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে তার প্রমাণ সুর সম্রাট আলাউদ্দীন খাঁর সরাসরি শিষ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওস্তাদ আফজালুর রহমানের স্থানীয়ভাবে পরিবেশিত যন্ত্রসংগীত। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংকটময় সময়ের বাংলাদেশ সীমানাধীন এলাকার জনগণের জনমত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল গঠন ও সংরক্ষণে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রচার কার্যকর ও সহায়ক ভূমিকা রাখলেও যেকোনো কারণে-এর ওপর তেমন একটা সমৃদ্ধ গবেষণা হয় নি।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]