বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা আলোচনা কর। (Discuss the Role of Soviet Union in the War of Liberation of Bangladesh.)

মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা Role of Soviet Union in Liberation War
তৎকালীন পরাশক্তির মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নই বাঙালি গণহত্যাকে প্রথমে নিন্দা জানায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নীতি সবসময় একই গতিতে প্রবাহিত হয়নি। সময় ও বাস্তবতার সাথে সাথে বিভিন্ন সময় সোভিয়েত নীতিতে নানা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত নীতির ৩টি পর্যায় ছিল।
সোভিয়েত নীতির প্রথম পর্যায় (মার্চ-জুন) (First Step of Soviet Policy) : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত নীতির প্রথম পর্যায়ে সতর্কতা লক্ষ করা যায়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ কমিউনিস্ট পার্টির ২৪তম কংগ্রেসে প্রেজনেড ভাষণে 'পূর্ববাংলার' জনগণের ন্যায়সংগত অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার কথা উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট পদগনি ২ এপ্রিল ইয়াহিয়াকে পাঠানো একটি পত্রে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত ও নির্যাতন বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার জন্য পাকিস্তানকে আহ্বান জানান। ৬-১০ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং রাশিয়া সফর করে রাশিয়াকে বাংলাদেশের ইস্যুতে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। জুন মাস পর্যন্ত রুশ নীতি এ ধারায় চলে।
সোভিয়েত নীতির দ্বিতীয় পর্যায় (জুলাই-নভেম্বর) (Second Step of Soviet Policy) : জুলাই মাসের ৯-১০ তারিখে হেনরি কিসিঞ্জারের পাকিস্তান হয়ে চিন সফর করার পরই উপমহাদেশে কূটনৈতিক বিপ্লব ঘটে। তিনি পিকিং থেকে ফিরেই ঘোষণা করেন ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করলে চিন হস্তক্ষেপ করবে এবং আমেরিকা ভারতের সাহায্যে নাও এগিয়ে আসতে পারে। এর ফলে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পারস্পরিক নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট স্বাক্ষরিত হয় রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি। এ চুক্তি পাকিস্তানকে নৈতিকভাবে দুর্বল করে। রাশিয়া এত দিন বিবৃতি ও পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যার নিন্দা, শান্তিপূর্ণ উপায় সমস্যা সমাধানের যে নীতিতে ছিল সে অবস্থান থেকে সরে এসে ভারতের পক্ষে সক্রিয় নীতির দিকে অগ্রসর হয়। পরের মাসে অর্থাৎ ২৭-২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফরের পর রুশ নীতির এ অবস্থান আরও দৃঢ় হয়।
সোভিয়েত নীতির শেষ পর্যায় (৩ ডিসেম্বর-স্বাধীনতা পর্যন্ত) (Last Step of Soviet Policy) : পাকিস্তান ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে। ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধের জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। সোভিয়তে ইউনিয়ন তার সীমান্ত রক্ষা ও জীতায় স্বার্থে নিষ্ক্রিয় থাকবে না বলেও হুমকি দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এ পর্যায়ও বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছে অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধির (আওয়ামী লীগ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে প্রধান্য দেয়। পাকিস্তান এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। নিরাপত্তা পরিষদের পরিবর্তে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৭ ডিসেম্বর একটি যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব উত্থাপিত হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয়বারের মতো ভেটো প্রয়োগ করে। ভারতীয় বাহিনী ঢাকা দখল করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যেকোনো প্রকারে যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপকে বানচাল করাই ছিল এ ভেটোদানের উদ্দেশ্য। আর তাই ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর ভেটো প্রয়োগ না করায় শেষ পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে চিনের ভূমিকা Role of People's Republic of China in Liberation War
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই চিন সরকার কট্টর পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করে, যা স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালি বিশেষ করে বামপন্থিদের জন্য গভীর হতাশা সৃষ্টি করে। প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধে চিনের অনুসৃত নীতির দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন।
প্রথমত, চিন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানো থেকে সুচিন্তিতভাবে বিরত থাকে।
দ্বিতীয়জ, চিন সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে পাকিস্তান সামরিক চক্রের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। মুক্তিযুদ্ধে চৈনিক নীতির দুটি চৈনিক নীতির প্রথম পর্যায় (এপ্রিল-নভেম্বর) (First Step of Chinese Policy) : ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যার সূচনার পর প্রায় ১৫ দিন মৌন থাকলেও ১১ এপ্রিল প্রথম সরকারি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এদিন জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে দেয়া এক পত্রে চৈনিক প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই পাকিস্তানে 'জাতীয় সম্প্রসারণবাদের' বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় চিন সরকার ও জনগণের সকল সময় সমর্থনের আশ্বাস দেন। পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনাকে তাদের 'অভ্যন্তরীণ সমস্যা' বলে চিন সরকার চিহ্নিত করে পাকিস্তানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির একমাত্র শর্ত হিসেবে পাকিস্তানের ২ অংশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার ওপর জোর দেয়। ন্যাপ সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুক্তিযুদ্ধে চৈনিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হতাশ পিকিংপন্থিদের মধ্যে ভাসানীপন্থি ন্যাপসহ আরও কয়েকটি ছোট গ্রুপ বিভিন্নভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলেও চিনের এ ভূমিকার কারণে পিকিংপন্থি গ্রুপগুলোর বড় অংশই প্রকাশ্যে, গোপনে এবং কর্মকাণ্ডের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী অবস্থান নেয় ।
জুলাই মাসে ড. কিসিঞ্জারের পিকিং সফরের ফলে চিন পাকিস্তানপন্থি নীতিতে আগের চেয়ে সক্রিয় হয়। আগস্ট মাসে রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে চিন শংকিত হয়ে পড়ে এবং সেপ্টেম্বরে চিন পাকিস্তানকে নতুন করে আশ্বস্ত করে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার ন্যায়সংগত সংগ্রামে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে। তবে বরাবরের মতো চৈনিক সামরিক, নৈতিক সহায়তা অব্যাহত থাকে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ অক্টোবর জাতিসংঘের সদস্য পাক-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রাশিয়া ও ভারতকে দায়ী করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে জাতিসংঘের সদস্য হয়ে-এর পরের মাসেই চিনা প্রতিনিধি দলের নেতা চিয়ান কুয়ান দুয়া দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিকে দায়ী করেন। ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধের আগ পর্যন্ত চিন এ নীতি অব্যাহত রাখে ।
চৈনিক নীতির দ্বিতীয় পর্যায় (৩-১৬ ডিসেম্বর) (Second Step of Chinese Policy) : ডিসেম্বরে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে চিন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। চিন জাতিসংঘে সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নেয়। এ যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে দায়ী করে একে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। ৫ ও ৭ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। প্রস্তাবগুলোর লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে 'পূর্ব পাকিস্তানের' জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করা। এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে চিন প্রথম ভেটো প্রয়োগ করে। ৫ ডিসেম্বর চিন এক প্রস্তাবে ভারতকে আক্রমণকারী হিসেবে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চিন এক বিবৃতিতে ‘তথাকথিত বাংলাদেশ' সৃষ্টির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের তীব্র সমালোচনা করে।
এভাবে দেখা যায় যে, চিন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানপন্থি নীতি গ্রহণ করে। নৈতিক সমর্থন ছাড়াও গোপনে প্রচুর অস্ত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর যেসব অস্ত্র বাংলাদেশে উদ্ধার করা হয়-এর ৬০% চৈনিক এবং ৪০% মার্কিন ছাপযুক্ত অস্ত্র এর থেকে ‘নিপীড়িত জনগণের বন্ধু' হিসেবে দাবিদার চিনের হীন ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাক-ভারত যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘের নবীন সদস্য হলেও বারবার পাকিস্তানের পক্ষে ভূমিকা রাখে। এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চিন সরকার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশকে ‘রুশ-ভারতের সৃষ্টি' বলে মন্তব্য করেন।
মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা Role of UK in Liberation War
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকার নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। যুক্তরাজ্যের নীতির মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান কাঠামোর অভ্যন্তরে বাঙালির স্বাধিকার সমস্যা সমাধান করা। তবে বাংলাদেশের ঘটনায় ব্রিটেন সরকারিভাবে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এবং ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের জন্য ব্রিটিশ সরকার আন্তর্জাতিক ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণ করে।
ব্রিটিশ সরকারের নিরপেক্ষ নীতির কারণে বিটেনের পত্রপত্রিকায় ও বেতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার কার্য সহজতর হয়েছিল এবং ব্রিটেনের মাটিতে প্রবাসী বাঙালির মুক্তির পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার জন্য কোনো সরকারি বাধাবিঘ্ন ছাড়াই জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এসব অবস্থা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সফল করে তুলতে সহায়তা করেছিল।
মুক্ত শুরু সময় नনভিত্তিক পত্রিকা ডেইলি পি-র সাংবাদিক ঢাকায় ছিলেন। তিনি ২৫ মাে সংঘটিত গণহত্যার মর্মস্পর্শী বিবরণী ৩০ মার্চ ডেইলি কপিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। পার্ডিয়ান ৩১ মার্চ 'A Massacre in Pakistan' শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। ইনি রুপিয়া ২ এপ্রিল খবরের শিরোনাম করে 'Bengal Tragedy: নিউ স্টেটসম্যান ২ এপ্রিল হেড লাইন : 'Weep for Bengal' । ৩ এপ্রিল ইকোনমিস্ট পত্রিকার শিরোনাম 'Unity at gunpoint'
এপ্রিল শিরোনাম করে 'Pakistan's Path to Bloodshed', একই দিন পার্ডিয়ানের শিরোনাম ছিল 'A Cry for Help'। ১১ এপ্রিল সানডে টাইমান-এ মর্মস্পর্শী খবর ছাপা হয়: 'Murder Has Been Arranged: An East Pakistan Town Waiting To Die' ১৩ এপ্রিল টাইমস-এর খবর ছিল "Thouasnds Still Fleeing Prightened Dacca'। এভাবে ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট তাদের পত্রিকায় তুলে পরে। প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হলে খবরের শিরোনাম হয় 'Slaughter goes on a E. Pakistan Fights For Life ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুশের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্ববাসীর সামনে প্রচার করতে থাকে। জুন মাসের ১০ তারিখে অ্যানী ম্যাসকারেনহাস ( Anthoony Mascarenhas) সানডে টাইমস পত্রিকায় বিশ্বময় আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক অতি দীর্ঘ ফিচার- 'Genocide' শিরোনামে ছাপেন। জুলাই-আগস্ট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের কাহিনীও পত্রিকার পাতায় আসতে থাকে। ৩১ জুলাই ইকনমিস্ট মন্তব্য করে (বাংলায় পাকিস্তানিদের দিন শেষ হয়ে আসছে) Time is Running out in Bengal'। ১০ সেপ্টেম্বর পিটার শোর নিউস্টেটসম্যান পত্রিকায় লেখেন : 'Bangladesh Must be Freedo নভেম্বর টেলিগ্রাফে মুক্তিযুদ্ধের শিরোনাম করে Guerillas Start Street Warfare in East Pakistani, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবিসি ২৬ মার্চ নিয়মিত সংবাদে শেখ মুজিব কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার তথ্য প্রচার করে। সংবাদ ভাষ্যে বলা হয়-
'Extensive fighting is reported from East Pakistan following moves by president Yahya Khan to restore his government's authority and reports from India that Sheikh Mujib-Ur Rahman has declared the province independent.'
এভাবে বিবিসি ২৬ মার্চ থেকেই মুক্তিকামী প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নেয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানের মতো বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানও জনপ্রিয়তা লাভ করে। কেবল সংবাদ প্রচার করেই বিবিসি তার দায়িত্ব শেষ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মন্তব্য ও বিবৃতি, বিশ্ব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ফিচার ইত্যাদিও বিবিসিতে প্রচারিত হয়। এভাবে বিশ্ব জনমত গঠন, মুক্তিযুদ্ধের প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদিতে বিবিসি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কমন্সসভায় বিতর্ক হয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র ৩ দিনের মাথায় ২৯ মার্চ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক সচিব স্যার ডগলাস হিউম কমন্সসভায় বিবৃতি দেন। এতে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাকে যদিও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্ত্রব্য করেন, তবে তার বিবৃতির সুযোগে অন্যান্য এমপিবৃন্দ যে সকল প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং মন্তব্য পেশ করেন তাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গটি সরাসরি আলোচনায় এসে যায়। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস ধরেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বারবার আলোচনায় আসে। লর্ড সভাতেও বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধের দাবি জানানো হয়। পার্লামেন্টের বাইরেও কোনো কোনো এমপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেন। যেমন ৩১ মার্চ মি. রাসেল জনস্টোন এমপি এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেদেশের স্বাধীনতা চায়। সে সময় লেবার পার্টির অনেক এমপি পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের জন্যও দাবি জানান। পাকিস্তানকে সব ধরনের ব্রিটিশ সাহায্য প্রদান বন্ধ করারও দাবি
জানানো হয়। ১৭ জুন ১২০ জন লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য দাবি জানান। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংস্থাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। যেমন- বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে Operation Omega' নামক একটি সংস্থা প্রচারপত্র বিলি করে। Oxfam এর পরিচালক মি. কার্কল ৩ সেপ্টেম্বর টাইমস পত্রিকায় এক বিবৃতি দেন। মি. আর্থার বটমলে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ( ১৩.৯.৭১) কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবের
হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেন। ব্রিটিশ লেবার পার্টি ১১ অক্টোবর বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থনদানের সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করে। মাদার তেরেসা অক্টোবর মাসে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বাংলাদেশি শরণার্থীদের সাহায্য প্রদানের জন্য বিশ্ববাসীর নিকট আবেদন জানান।
এভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক মাত্রা লাভ করে। এজন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যবৃন্দ, ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকা, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্রিটিশ জনগণ গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]