মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা
Role of Muslim World in Liberation War
মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা ছিল একাধারে বাংলাদেশ বিরোধী এবং পাকিস্তানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনমূলক। সামগ্রিকভাবে তাদের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ ইসলামি ঐক্য বিরোধী অপপ্রয়াস এবং ইসলামি সংহতির প্রতি হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছিল। ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC) জেদ্দা অধিবেশনে জাতীয় সংহতি ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানো হয়। অধিবেশন শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কারণে বিদেশি শক্তিসমূহকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়। মিশরের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা সঠিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়নি। কাজেই দু'প্রদেশের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতে হলে প্রয়োজন সমস্যার সমাধান। অপরদিকে অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র শুধু সমর্থন জানিয়েই ক্ষান্ত হয়নি; বরং পাকিস্তানকে সরাসরি সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করেছিল। সৌদি আরব ৭৫টি জঙ্গি বিমান ও ইরান অনির্দিষ্ট সংখ্যক জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সামরিক্যান, পাকিস্তানকে সরবরাহ করে।
আরব দেশসহ মুসলিম বিশ্বের মুক্তিযুদ্ধবৈরী ভূমিকার বেশ ক'টি ব্যাখ্যা প্রাসঙ্গিক ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে পাকিস্তানের দু'অংশের মধ্যে ইসলামি বন্ধন ও ইসলামি সংহতি বিনষ্টের অপপ্রয়াস মনে হয়েছিল।
পাকিস্তানের অপপ্রচারও ছিল অভিন্ন; এবং তার সঙ্গে যুক্ত ছিল বাংলাদেশের তথাকথিত ইসলামি সংগঠনসমূহের অভিন্ন প্রচার । মুসলিম বিশ্ব যে তথ্য ঘাটতির (Information gap) শিকার হয়েছিল তা প্রমাণিত হয় কিছুদিন পর । ‘৭১-এর জানুয়ারি মাসে ঢাকা সফররত মিশরীয় সাংবাদিকদের নেতা 'আল-আহরাম' পত্রিকার যশষী সম্পাদক হায়কল বলেছিলেন, 'সম্পূর্ণ ব্যাপারটি আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না । এখন মনে হয় আমরা যা ভেবেছিলাম ঘটনাটি আদৌ তা ছিল না।'
তবে সার্বিক বিচারে এটা বলা সংগত যে, মুসলিম দেশগুলোর ধর্মীয় প্রেরণায় তাদের কাছে মনে হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ ভারত ও ধর্মহীন সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সহায়তায় কিছু বিপথগামী বাঙালি ইসলাম ও ইসলামি সংহতি বিপন্ন করেছিল। আসলে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বঞ্চনা, স্বৈরাচার ও ধর্মাবন্ধতার বিরুদ্ধে, যা ইসলামি চেতনা ও আদর্শের নিরিখে সমর্থনযোগ্য। অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যর্থ নীতির শিকার হয়েছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একান্তই বাঙালির যুদ্ধ। তা করতে হয়েছিল পাকিস্তানি অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে বাইরের শক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি ছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত।
অবশ্য উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাইরের শক্তির জড়িয়ে পড়ার ব্যাপার অবশ্যম্ভাবী ছিল। বিশ্ব ব্যবস্থার কাঠামো ও চরিত্রের কারণেই তা হয়েছিল। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের মতো কোনো ঘটনায় বাইরের বড় বা আঞ্চলিক শক্তির সম্পৃক্ত হবার দৃষ্টান্ত বিরল নয়। আগেও এমন দৃষ্টান্ত ছিল, আর তা শক্তিগুলোর স্বার্থ উৎসারিত চিন্তাচেতনার কারণে। বিশ্ব ব্যবস্থা সামগ্রিক পরিমণ্ডলে আন্তরাষ্ট্রিক সম্পর্কের রূপরেখা এমনিভাবেই তৈরি হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও বিশ্ব শান্তি পরিষদ
Liberation War and World Peace Parisad
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন সরিয়া ভূমিকা পালন করেছিল তাদের মধ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। বাংলাদেশে গণহত্যার শুরু থেকেই হেলসিংকিতে অবস্থিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সদর দপ্তর সংগ্রামী বাঙালির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী মহাসচিব রমেশচন্দ্র সরাসরি অভিসদের মহাসচিব কুর্ট ওয়ার্ল্ডহাইমের নিকট প্রেরিত এক তারবার্তায় অবিলম্বে জাতিসংণ কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান, এপ্রিল-মে মাসে বুদাপেস্ট আয়োজিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের বার্ষিক কাউন্সিলর অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধকে 'জাতীয় মুক্তি' হিসেবে অভিহিত করে তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়। এ অধিবেশনে আবদুস সামাদ আজাদের ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এক প্রৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের সঙ্গে সতি প্রকাশ করেন।
জুলাই মাসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশচন্দ্রের দীর্ঘ বৈঠক ও মতবিনিময় হয়। এ বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আশু মুক্তির জন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। এ সময়ে হেলসিংকি থেকে বাংলাদেশ পরস্থিতি ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি শ্বেতপত্র একই সঙ্গে ৭টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদের মাধ্যমে সংগৃহীত ঔষধ, রক্ত ও বিভিন্ন সাহায্য সামগ্রী বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের প্রধান আলী আকসাদের মাধ্যমে যথাস্থানে পৌঁছানো হতো।
বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হবার পর বিশ্ব শান্তি পরিষদ যে পুনর্গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে তার লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপ ১. বঙ্গবন্ধুর আশু মুক্তি দাবি;
বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায় করা;
৩. যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও ছিন্নমূল বাঙালির জন্য ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ এবং গুরুতর আহত
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় শান্তি কমিটি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।
৯.৬.৮. মুক্তিযুদ্ধ ও জাতিসংঘ
Liberation War and United Nations
জাতিসংঘের সনদে সকল দেশ ও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষা ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের জেনেভা সনদে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধে মানবিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর 'গণহত্যা নিবৃত্তি ও শান্তি বিষয়ক সনদ' গ্রহণ করা হয় ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এসব সনদের ধারাসমূহ কার্যকর করার বিষয়ে জাতিসংঘ যেসব ভূমিকা পালন করেছে আমরা এ অংশে তা পর্যালোচনা করব।
আমরা প্রথমেই দেখি ২৫ মার্চের পূর্বে জাতিসংঘের মহাসচিব ঢাকা থেকে সকল জাতিসংঘ কর্মীকে প্রত্যাহার করে নিলেও এদেশে গণহত্যা বন্ধের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেন-নি। তবে মহাসচিব ১ এপ্রিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ত্রাণ সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং এমনকি রেডক্রসের একটি বিমানকে ঢাকায় অবতরণ করতে দেয় নি।
২২ এপ্রিল জাতিসংঘের মহাসচিব পুনরায় ইয়াহিয়ার নিকট ত্রাণ সাহায্য ব্যবস্থার জন্য আবেদনকালে আন্তর্জাতিক চাপে ২২ মে পাকিস্তান জাতিসংঘকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। জাতিসংঘ ৭ জুন পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার নাম হয় 'UNROD। ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ 'বাংলাদেশ' নামটি মেনে নিয়ে এখানে তার ত্রাণ সংস্থার নাম দেয় UNROB' |
মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময় থেকে ভারতে শরণার্থীর আগমন ঘটতে থাকলে ভারত ২৩ এপ্রিল আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানায়। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এ বিষয়ে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে। UNHCR ছাড়াও UNICEF এবং WFP ভারতের শরণার্থী শিবিরসমূহে সক্রিয় থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ডিসেম্বর পর্যন্ত শরণার্থীদের জন্য ভারতের খরচের পরিমাণ ছিল ১০০০ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে জাতিসংঘের সহায়তা ছিল মাত্র ২১৫
মিলিয়ন ডলার ।
জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখলেও সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি কোনো বিষয়েই কোনো আলোচনার সূত্রপাত করেনি। এমনকি সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতেও বাংলাদেশ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের ভাষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। এ বিষয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত লিখেছেন :
অনেকগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশ নিউজিল্যান্ড, মাদাগাস্কার, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, নরওয়ে এবং সুইডেন উপমহাদেশের সার্বিক সঙ্কটে উদ্বেগ প্রকাশ করে-এর আশু সমাধান চায়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন পরিষ্কার বলে দেয় যে, পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করুক। সোভিয়েত ইউনিয়ন জানালো যে, সঙ্কটটিকে তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা আর করে না। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল দ্ব্যর্থবোধক এবং পাকিস্তানের প্রতি নমনীয়। একেবারে অসহিষ্ণুভাবে লুক্সেমবার্গের প্রতিনিধি প্রশ্ন করলেন, ‘যখন আমাদের চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ লোকের বর্ণনাতীত দুর্দশা দেখতে পাই, যখন দেখি যে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার ধুয়া তুলে, যখন দেখি যে সভ্য সমাজে যে মৌলিক অধিকার দুর্বলতম জনের জন্যও স্বীকৃত তা ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে, তখন প্রশ্ন জাগে যে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার নামে এ ধরনের বর্বরতাকে চলতে দেয়া উচিত হবে?' কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল শার্প ২৯ সেপ্টেম্বর প্রশ্ন করলেন, ‘যখন একটি অভ্যন্তরীণ বিবাদ অগণিত দেশকে এতো প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলিত করে, তখন তাকে কি আর অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচনা করা সমীচীন হবে?' সুইডেনের প্রতিনিধি পাকিস্তানকে সংযম ও নমনীয়তার আশ্রয় নিতে আহ্বান জানালেন। তিনি আরও বললেন যে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ভোটের মাধ্যমে ঘোষিত জনমতকে মেনে নেয়া পাকিস্তানের জন্য উচিত হবে।' মার্কিন সরকার বেহায়ার মতো পাকিস্তানকে সমর্থন করে গেল, ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়টি পাকিস্তানের জনগণ ও সরকারই মোকাবেলা করবে।' কিন্তু এতে যে একটি বিশ্ব সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় ছিল না এবং এ বিশ্ব সঙ্কটের মূলে ছিল পাকিস্তানি বর্বরতা, যার ফলে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করে অন্য দেশে আশ্রয় খুঁজছিল। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌক্তিকতার সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন যে, ‘এই অন্যায়কে যদি মূলে শুধরানো না যায় তাহলে শরণার্থীর স্রোত বন্ধ হবে না।
বেলজিয়ামের প্রতিনিধি ফরাসি মন্ত্রী শুম্যানের প্রশ্নটিই আবার তুলে ধরলেন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন কী সম্ভব হবে?' তিনি বললেন যে, এ সঙ্কটের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমাধান বের করতে হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই এ সমাধান খুঁজতে হবে। তারা যখন নিশ্চিত হবে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না এবং তারা যখন ভবিষ্যতে আস্থা রাখতে পারবে, তখনই শরণার্থীরা দেশে ফিরে যাবে।' ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক হিউমও সমস্যার সমাধান সম্বন্ধে ছিলেন দ্ব্যর্থহীন ।
নভেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অবশেষে ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে নিরাপত্তা পরিষদের টনক নড়ে। যুদ্ধ শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন দাবি করে এবং
ধার করা হয়, পাকিস্তান
দখল
যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছেতেই নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন
তাতে 'মুক্তিবাহিনীকে
উত্থাপন করা
এবং পাকিস্তানকে
আন্তর্জাতিক অনুমোদনে বাংলাদেশে তার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে गाওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রস্তাবে ভেটো প্রদান করে এবং যাগ ও ব্রিটেন ভোটদানে বিরত থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান মোভিয়েত ইউনিয়ানের ভেটো প্রয়োগে নাকচ হলো কালে মার্কিন উদ্যোগে আর্জেন্টিনা, সোমালিয়া, সিয়েরালিয়ন ও নিকারাগুয়া একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। এ প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। দ্বিতীয় আরেকটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বেলজিয়াম, ইতালি ও আপান। এ म শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের
পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। তৃতীয় প্রস্তাব উত্থাপন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ প্রস্তাन পূর্ব পাকিস্তা পাকিস্তানি সন্ত্রাস কর এবং মুক্তির রাজনৈতিক সমাধানের উপায় অনুসন্ধানের আহ্বান জানানো হয়। অবশেষে যুদ্ধবিরতি ও সৈনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব ভোটে দেয়া হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাতে ভেটো প্রয়োগ করে। এভাবে মার্কিন উদ্যোগ নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রয়োগের ফলে ব্যর্থ হলে মার্কিন রাষ্ট্র বিষয়টি সাধারণ পরিষদে বিবেচনার প্রস্তাব করে। নিরাপত্তা পরিষদ সেই প্রস্তাব অনুমোদন করলে ৬ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় :
ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং নিজ নিজ সেনাবাহিনীকে নিজেদের এলাকায় ফিরিয়ে নিবে এবং শরণার্থীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের অনুকূলে পরিবেশ তৈরি করবে।
প্রস্তাবটি ১০৪-১১ ভোটে গৃহীত হয়। ১০ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় (৬.১২.৭১) এবং বাংলাদেশকে জাতিসংঘে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানায়। নিরাপত্তা পরিষদের সভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং এবং পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। ভারত বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বৈঠকে অংশগ্রহণের অনুমতি দানের প্রস্তাব করে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরোধিতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনরায় ভেটো প্রদান করে (১৩.১২.৭১)। ১৪ ডিসেম্বর একটি ব্রিটিশ-ফরাসি প্রস্তাব নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সুবিধার্থে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন মুলতবি করা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে যৌথবাহিনীর বিজয় সমাপ্তির পথে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এমনি অবস্থায় ১৫ ডিসেম্বর ভুট্টোর আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে ভুট্টো এক নাটকের সৃষ্টি করেন (১৫.১২.৭১)।
তিনি একটি ভাগাবেগতাড়িত বক্তৃতা দিলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন। তার মতে পরিষদটিই ছিল 'প্রবঞ্চণা ও প্রহসনের' মঞ্চ। তিনি তার আসন থেকে সব কাগজপত্র ছিন্নভিন্ন করে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, অশ্রুসিক্ত নয়নে, রাগতভাবে ওঠে দ্রুতগতিতে পরিষদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এরপর দিন (১৬.১২.৭১) পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এভাবে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা ছাড়াই বাংলাদেশ মুক্ত হলো।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত