পাকিস্তানি বাহিনীর গনহত্যা
Genocide by Pakistani Force
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এদেশে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ও ফসলীলা চালায়। ২৫ মার্চ 'অপারেশন সার্চ লাইট' শুরু করার আগেই সকল বিদেশী সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং সংবাদ মাধ্যমের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ছয় সপ্তাহ ধরেও গণহত্যা চলে। এসোসিয়েট প্রেস (এপি)-এর মর্ট রোজেনরুম রিপোর্ট করেন যে, প্রায় দশ লাখ লোককে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস এর ম্যালকম ব্রাউন লেখেন, 'সেনাবাহিনী যতই সাফাই গাক না কেন তারা বসতির পর বসতি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বা কামান দেগে ধ্বংস করেছে।' তার মতে ছয় সপ্তাহে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক ডান কাগিন এর প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- 'ঢাকা একটি মৃত শহর।'
৯ এপ্রিল জারিকৃত সামরিক আইন (৭৮ নং) বলে দেশদ্রোহিতার সন্দেহে যে কাউকে গ্রেপ্তার করার বিধান করা হয়। ২৭ এপ্রিল জারিকৃত সামরিক আইন ( ১৪৮ নং) বলে কোনো সরকারী সম্পত্তির ক্ষতিকারককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান এবং যে এলাকায় এমন ঘটবে সেখানে পাইকারী ভাবে সাজা প্রদানের বিধান ঘোষণা করা হয়। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে পুরোপুরি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিটি সম্ভাবনাময় ছাত্র, প্রকৌশলী, ডাক্তার বা নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের হত্যা করতে থাকে। পুরো নয় মাস ধরে চলে এই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর ও আল-শামস বাহিনী অনেক দেশ বরেণ্য ব্যক্তিকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। রায়ের বাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে তাদের অনেকের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। মাত্র নয় মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর বিহারী, আলবদর, আল-শামস ও রাজাকার বাহিনী প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে এবং দু'লাখ মা- বোনের ইজ্জত নষ্ট করে।
রাজাকার-আলবদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যা Killing of Intellectuals by Rajakar-Al-Badar
যেকোনো দেশে চিন্তাচেতনার দিক দিয়ে অগ্রসর শ্রেণিই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। সাধারণ অর্থে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, প্রযুক্তিবিদ, সংগঠক, সাহিত্যিক, আমলা, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সমাজ ও সংস্কৃতিসেবীরা বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। সমাজের অগ্রগতির ধারাকে চলমান রাখার প্রক্রিয়ায় তারা সদা নিয়োজিত থাকেন। তাই স্টালিন বুদ্ধিজীবীদের ‘আত্মার কারিগর' বলে অভিহিত করেছেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর কিছুদিন না যেতেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য-শোষণ ও দমন নীতির বিরুদ্ধে এ দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার কারণে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী এ সম্প্রদায়ের ওপর বিক্ষুব্ধ ছিল। সে কারণে পাকিস্তান সরকারের হত্যাযজ্ঞের নীলনকশা 'অপারেশন সার্চলাইট'-এ 'সর্বাধিক সংখ্যক রাজনীতিক ও ছাত্রনেতা, শিক্ষক সম্প্রদায়ের ভিতরকার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যকার চরমপন্থিদের গ্রেফতার করতে হবে' বলা হয়। এ পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ রাত থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অবরুদ্ধ ৯ মাস এ পরিকল্পনার অধীনে এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বেলুচিস্তানের কসাই নামে খ্যাত লে. জেনারেল টিক্কা খানের পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে ‘আমি মানুষ চাই না, মাটি চাই' নীতির বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে টিক্কা খান ছাড়াও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। তার সম্পর্কে রবার্ট পেইন বলেন, ‘পুরো ৯ মাস ঢাকায় যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার হোতা ছিলেন তিনিই।'
৯) সময় পাক হানাদার বাহিনীর জিীবীদেরকে হত্যার জন্য টার্গেট করেছিল কেন? এর
ान নি শাসকচক্র বাঙালি মাতি শ্রেণির উত্থান ও প্রভাবকে মেনে নিতে পারে নি
অন্যতম আরেকটি কারণ হলো,
ডালি
সমাজে জাগত মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রেরণাদাতা।
তাদের
যদি নাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয় তবে যেন নেতৃত্বহীন থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যে মুক্তি তোলে ধরা হয়েছে তা খুবই যুক্তিযুদ্ধ। এটা অবধারিত হয়, বুদ্ধিজীবীগণ জাগিয়ে রাখেন জাতির
বিবেক, জানিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলির মাধ্যমে ानानর কলমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়গুলোতে পাঠদানে,
চিকিৎসা প্রকৌশল রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে আসে। একটি জাতিকে নির্জীব করে দেবার প্রথম উপায় পৃষ্ঠিতীনী শুনা করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অতর্কিত, তারপর ধীরে ধীরে, শেষ পরাজয় অনিবার্য
ডিসেম্বর ১০ তারিখ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দুতগতিতে
সুস্থিজীবী হত্যায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল আলবদর বাহিনী। সমগ্র পাকিস্তানের আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী। আলবদর হাইকমান্ডের মধ্যে যারা এখন স্বাচ্ছন্দ্যে রাজনীতি করছে তাদের মধ্যে নিজামী ছাড়াও আছেন জামায়াতের আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান । ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ জামায়াতের মুখ্যপত্র দৈনিক সংগ্রামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে লেখা হ
আলবদর একটি নাম। একটি বিস্ময়। আপনদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই। যেখানে দুষ্কৃতিকারী আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতিকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।
সারা বছর যাবত তারা হত্যাকাণ্ড চালালেও পরাজয় আসা জোনে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা মরণ কামড় দেয়, সম্পর্কে সে সময়কার দৈনিক বাংলায় ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল একটি প্রতিবেদন-
"এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে গত সপ্তাহ ধরে জামায়াতে ইসলামীর আলবদর। শহরের কয়েকশ বুদ্ধিজীবি ও যুবককে ধরে নিয়ে গিয়ে অমানুষিকভাবে হত্যা করেছে। গতকাল রায়ের বাজার ও ধানমণ্ডি এলাকার বিভিন্ন গর্ত হতে বহু সংখ্যক লাশ উদ্ধার করা হয় । এদর মধ্যে অধ্যাপক, ডাক্তার, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের লাশও রয়েছে। এ পর্যন্ত কতিপয় ব্যক্তির লাশ সনাক্ত করা গেছে। অনেক লাশই বিকৃত হয়ে গেছে, চেনার উপায় নেই। গত সপ্তাহে যতজন নিখোঁজ হয়েছেন অনুমান করা হচ্ছে যে, এদের একজনকেও আলবদর রেহাই দেয়নি।
ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামীর ছাত্র সংস্থা ইসলামী ছাত্রসংঘের সশস্ত্র গ্রুপ আলবদর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নগরী মুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এক সপ্তাহে শহরের কয়েকশত বুদ্ধিজীবী ও যুবকদের ধরে নিয়ে যায়। লন্ডনের দিক টাইমস পত্রিকায় পিটার হেজেলহার্স্ট, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭১ লিখেছেন,
..
একথা কেউ কোনোদিন বলতে পারবে না যে, মুক্তিযুদ্ধে কতজন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রমুখকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই কোন দিনই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তবুও এদের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে।”
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর আলবদরদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজনের নামের তালিকা নিম্নে
প্রদত্ত হলো-
অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী,
অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
8
ড. সিরাজুল হক খান,
ড. আবুল খায়ের,
৬
ডা. আলীম চৌধুরী,
१
অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ,
b.
ড. আবুল কালাম আজাদ,
ডা. ফজলে রাব্বী,
১০
সেলিনা পারভীন,
১১
কবি মেহেরুন্নেসা,
১২. শহীদুল্লাহ কায়সার,
১৩. চলচিত্রকার জহির রায়হান,
১৪. সৈয়দ নাজমুল হক ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত