পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর বিচার ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা কর। (Discuss About the Trial of Bangabondhu in the Time of Imprisonment in Pakistan and the Reaction of World.)

পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর বিচার ও বিশ্বপ্রতিক্রিয়া
Trial of Bangabandhu and Reaction of the World Community
ভূমিকা Introduction
পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার নামক প্রহসনের আদালতের কার্যক্রম শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর এবং আদালত ৪ ডিসেম্বর বিশেষ সামরিক আদালতে জেলা জজ ব্যতীত সকল সদস্য অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। প্রদত্ত এ আক্রোশমূলক রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি হলে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন ।
পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর বিচার
Trial of Bangabandhu Under Imprisonment in Pakistan
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের লায়ালপুরে নিয়ে যায় এবং তাকে কারাগারে ফাঁসির প্রকোষ্ঠে রাখা হয়। প্রথমে বঙ্গবন্ধু কোথায় কীভাবে আছেন জানা না গেলেও পরে পত্রিকার সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় তিনি কারাগারে বন্দী। আর তখন থেকেই তাঁর মুক্তির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাবি জানানো হয়। ২ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দাপ্তরিক প্রেসনোটে বলা হয় যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও অন্যান্য অপরাধে বিশেষ সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের বিচার করা হবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, 'শেখ মুজিবের বিচার করা হবে এবং পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের আইন অনুসারে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।'
পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রহসনমূলক বিচারকার্য শুরু হবার খবর জানতে পেরে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালিরা একজন সলিসিটারসহ খ্যাতনামা আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিচারপতি আবু সাঈদের নেতৃত্বে আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইড ইসলামাবাদে পৌঁছে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করতে ব্যর্থ হন। এ বিচারকার্য চলাকালীন সময় কোনো বিদেশি আইনজীবীকে শেখ মুজিবের সাথে দেখা বা তাঁর পক্ষ সমর্থন করতে দেয়া হবে না বলে সরকারের সিদ্ধান্ত ইয়াহিয়া খানের আইন উপদেষ্টা কর্নেলিয়াস তাকে জানান ৷
এমনি অবস্থায় পাকিস্থান সরকার শেখ মুজিবের অনুমতি নিয়ে তাঁর সমর্থনে আইনজীবী এ. কে. ব্রোহীকে নিয়োগ দিলেও মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তীতে মামলা পরিচালনার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ তারিখের ইয়াহিয়া খানের দেওয়া ভাষণের টেপ শোনানো হলে বঙ্গবন্ধু আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করে আইনজীবী ব্রোহীকে অব্যাহতি দেন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর আত্মপক্ষ সমর্থনের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ব্রোহীকে মামলা চালিয়ে যেতে বললে সরকার নির্ধারিত ১০৫ জন সাক্ষীর অর্ধেক সংখ্যক বাঙালি সেনা কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার নামক প্রহসনে আদালতের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর ।
এদিকে ইয়াহিয়া খান বিচারকদের মধ্যে লে. কর্নেল ও ব্রিগেডিয়ারদের রাওয়ালপিন্ডিতে ডেকে পাঠান এবং রায় দেয়ার আদেশ দেন। বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর কারাকক্ষের কাছেই কবর খুঁড়ে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু ডেভিড ফ্রস্টকে জানান, তিনি ভুট্টোর কাছ থেকে জানতে পারেন যে, ইয়াহিয়া নাকি ভুট্টোকে বলেছে যে, তার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই মুজিবকে মেরে না ফেলা ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি ভুট্টোকে আরও বলেন যে, ক্ষমতা হস্তান্তর করার আগে তাকে অনুমতি দেয়া হোক শেখ মুজিবকে মেরে ফেলার এবং তাকে বলতে দেয়া হোক যে, অনেক আগেই তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। (বাংলাদেশ ডকুমেন্টস, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৬১৭-৬১৯)।
সংবাদ মাধ্যমে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া World Reaction in News Media
-
৭ জুলাই, ১৯৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ 'পাকিস্তানের একমাত্র উপায়' শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লিখে, “পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমশই শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং মিসেস গান্ধীর ওপর চাপ ক্রমশই বাড়ছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাতে। বিলেতের প্রেস ক্রমশই পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। ইয়াহিয়ার ভুলত্রুটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের অন্যত্ব পাকিস্তানকে যে গভীর খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা থেকে রক্ষা করতে পারেন একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে বন্দীশালা থেকে মুক্তি দেয়া এবং তাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে দিলে তিনিই কেবল শান্তিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারেন। ঐ নেতার প্রজ্ঞা তার রাজনৈতিক – বিরোধীদের পথ দেখাতে পারে ।” ২ আগস্ট, ১৯৭১-এর নিউজউইকে লেখা হয় যে, “মুজিবকে সামরিক ছাউনি মিয়ানওয়ালি নামক একটি জেলে রাখা হয়েছে । জে . ইয়াহিয়া গর্বের সাথে জানায় যে, তার জেনারেলরা মুজিবের সামরিক আদালতে বিচার এবং ফাঁসির জন্য কাজ করে চলেছে। সে রাজি হয়েছে এবং বিচারের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। পত্রিকাটিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে, এ পদক্ষেপের চেয়ে স্বল্প দৃষ্টির আর কোনো কাজ হতে পারে না এবং এতে মুক্তিযুদ্ধকে আরও কঠিন পথে নিয়ে যাবে ১২ আগস্ট, ১৯৭১-এ দি টাইমস পত্রিকায় 'শেখ মুজিবের ভাগ্য' শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লেখা হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের গোপনে বিচারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া' কাজটি দৃশ্যত অস্বাভাবিক। এ সম্পাদকীয়টিতে বলা হয় যে, শেখ মুজিবই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সমস্যা সমাধানের জন্য কথা বলতে পারেন, যাতে পাকিস্তানের আরো বড় ট্র্যাজেডি না হয় । শেখ মুজিবই একমাত্র ব্যক্তি, যার ওপর আস্থা রেখে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তার আদেশ মেনে চলবে। সমস্ত সম্পাদকীয়টি পাকিস্তানের ভ্রান্ত রাজনীতির ওপর জোর দিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। সম্পাদকীয়টির পরিশেষে বলা হয়েছে “আমাদের সকলকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে শেখ মুজিবকে বাঁচাবার জন্য।'
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-এ তেহরান থেকে প্রকাশিত দৈনিক আয়েনলেগেন লিখেন যে, মুজিবুর রহমানের বিচার পাকিস্তানের পক্ষে আত্মহত্যার শামিল হবে এবং তাতে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক সমাধান অসম্ভব হয়ে উঠৰে । বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান রাজনীতির একজন প্রধান নায়ক তা এ উদ্বেগ থেকেই বোঝা যায়।
৫. প্যারিসের দৈনিক ল ফিগারোর সাথে ১.৯.৭১ তারিখ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জে. ইয়াহিয়া জানায় যে, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জনগণের শত্রু।
দি ডনের এক খবরে প্রকাশ হয় যে, ১১.৮.৭১ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার আরম্ভ হয়েছে। ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
দি ডনের ২০.১০.৭১-এ প্রকাশ করা হয় যে, প্যারিসের ল মডেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জে. ইয়াহিয়া জানায় যে, সে একজন বিদ্রোহীর সাথে কথা বলতে পারে না।
দি ইভিনিং স্টার, করাচি, ১৫.৯.৭১-এ লিখে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত ও আইনানুগ হবে।
২৬.৯.৭১ তারিখে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি জানায় (রয়টার, ২৭.৯.৭১)।
বাটার- ৫.১১.৭১-এ নাম যে, পাকিস্তানের ৪২ জন রাজনীতিবিদ, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট, সাংবাদিক, আইনবিদ, লেখক, ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দাবি করে।
ইউ.পি.আই ইসলামাবাদ থেকে ১৮.১২.৭১- আনায় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শেষ হয়ে গেছে। তবে তখনত রাখ দেখা হ
ক ২২.১২.৭১-এ লেখে 'মুজিব বাংলাদেশের জনক এবং এটা অপরিকল্পনীয় যে, তিনি তার জনগণকে অন্য কোনো পতাকার নিচে নিয়ে যাবে।' একই পত্রিকা ৪.১.৭২-এ লেখে, 'শেখ মুজিব বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। '
মানভূমের পত্রিকা আল আইয়াম ১০.১.৭২-এর সম্পাদকীয়তে লেখে, “শেখ মুজিবুর রহমান কেবল মুক্ত ব্যক্তিই নন তিনি সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের প্রধান।" শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে যে, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার ক্ষমতা এবং অধিকার আছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার।
দি তকেট অস্ট্রেলিয়ান (পার্থ) ১২.১.৭২-এ এক সম্পাদকীয়তে লেখে, "বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে গেছে, শেখের পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। অন্য কোনো জাতীয় নেতা এ রকম নাটকীয়ভাবে এক দুরূহ
প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকে ক্ষমতায় আসতে পারত না। "
ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে বিশ্বপতিক্রিয়া
World Reaction Through Personal Interview
কায়হান ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুলাই, ১৯৭১ ইয়াহিয়া খানের এক সাক্ষাৎকার থেকে জানায় 'মুজিবকে শীঘ্রই রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য বিচার করা হবে, অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে মামলা তৈরির কাজ শেষ হলেই। পত্রিকার পক্ষ থেকে এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াহিয়া খান জানায় যে, সামরিক বিচারকদের হাতে বিষয়টি রয়েছে। কাজেই সে বলতে পারবে না যে, জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের আগে মুজিবের বিচার বা তার ফাঁসি হয়ে যাবে কিনা। কোর্ট মার্শালে তার বিচার হবে এবং পরিষদের অধিবেশনের আগে সে বেঁচে থাকবে কিনা, তা ইয়াহিয়া খান জানে না।'
এই সাক্ষাৎকার থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালে বিচারের প্রহসন চলছিল এবং বিচারে যে তার ফাঁসির হুকুম হবে, তাও নিশ্চিত ছিল।
১ নভেম্বর, ১৯৭১-এ ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক আর্নো দ্য বুরশগ্রাদের সাথে সাক্ষাৎকারে তার এক প্রশ্নের উত্তরে জে. ইয়াহিয়া বলেন যে, তিনি যদি শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পাঠান, তাহলে সেখানকার লোকই তাকে মেরে ফেলবে। জে. ইয়াহিয়া ভালো করেই জানত যে, যদি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়, তাহলে জনমুক্তিযুদ্ধ আরও তীব্র হবে এবং পাকিস্তানের পরাজয় ত্বরান্বিত হবে। সে যদি তার নিজের কথায় বিশ্বাস করতো তাহলে বঙ্গবন্ধুর বিচার এবং তারপর ফাঁসির ঝুঁকি তাকে নিতে হতো না। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রনায়ক বুঝতে পেরেছিলেন যে- বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ সমার্থবোধক হয়ে গেছে।
ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, কোর্ট মার্শালে ৫ জন সামরিক কর্মকর্তা ছিল এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা ইত্যাদি। সর্বমোট ১২টি অভিযোগ ছিল, তার মধ্যে ৬টির শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন যে, সরকার তাকে সমর্থনের জন্য অ্যাডভোকেট দিতে চায়, তবে তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা তিনি বুঝতে পারেন বিচারটি একটি প্রহসনমূলক নাটক। তিনি বিচারককে অনুরোধ করেন এডভোকেটদের চলে যেতে, কেননা জে. ইয়াহিয়া রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং তিনিই তার শাস্তি পাকা করবেন এবং তিনিই আদালত বসিয়েছেন ।
জে, ইয়াহিয়া ১৯৭১-এর ৩ আগস্ট সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে জানায় যে, শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী এবং-এর জন্য তার বিচার হবে। সে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করে, 'তোমরা তোমাদের অপরাধীদের সাথে কি রকম ব্যবহার করবে' (দি ডন, করাচি, ৫.৮.৭১)। আগস্টের ৯ তারিখে একটি সরকারি প্রেসনোটে জানানো হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য একটি বিশেষ সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। ১১ আগস্ট বিচার আরম্ভ হবে। তাকে ২৫.৩.৭১ তারিখে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। (দি ডন, করাচি, ১০.৮,৭১)। . প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিশ্বপ্রতিক্রিয়া
১৪-১৫ আগস্ট, ১৯৭১-এর ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন জানায় যে, মার্কিন সিনেটর কেনেডি, যিনি সিনেটে শরণার্থী সাবকমিটির চেয়ারম্যান, পূর্ব পাকিস্তানে ৪ দিনের সফর শেষে নতুন দিল্লি পৌঁছেছেন। তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। তাকে অভ্যর্থনার জন্য যে জনসমাগম হয়েছিল, তাদের হাতে ছিল প্লাকার্ড, যাতে লেখা ছিল, শান্তির মানুষ কেনেডি স্বাগতম।' অন্যান্য প্লাকার্ডে লেখা ছিল 'মুজিবকে বাঁচাও', 'শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা।' ফলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি দৃঢ় হতে থাকে এবং তা আসতে থাকে পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই।
১৭ আগস্ট, ১৯৭১-এর হেরাল্ড ট্রিবিউনে সিনেটর কেনেডি বলেছেন যে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচার আন্তর্জাতিক আইনের ধারণার পরিপন্থী। সংবাদপত্র জানাল যে, বঙ্গবন্ধুর বিচার আগের সপ্তাহে পাকিস্তানের কোনো এক জায়গায় আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার বিচার বা তার সম্বন্ধে কোনো খবর নেই। পত্রিকা জানায় যে, সিনেটর কেনেডির মতে, শেখ মুজিবের একমাত্র অপরাধ হচ্ছে যে, তিনি নির্বাচনে জিতেছেন। ঐ পত্রিকা আরও লেখে যে, রাষ্ট্রদূত আগা হিলালি জোর দিয়ে বলেছেন যে, শেখ মুজিবকে যে আইনের অধীনে বিচার করা হচ্ছে তা ব্রিটেন এবং ভারতের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। তাকে দেয়ালে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হবে না। পত্রিকা লেখে যে, যদি শেখ মুজিবের ফাঁসি দেয়া হয় বা আরো শরণার্থী ভারতে আসে, তাহলে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে যেতে পারে ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার জানায় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত অপরাধের বিচারে যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা পাকিস্তান সরকার গ্রাহ্য করে না (দি ডন, করাচি, ১৬.৮.৭১)। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা হিলালি জানায় যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপরাধে ২ সপ্তাহের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার হবে। বিচার কোথায় হচ্ছে তা জানাতে রাষ্ট্রদূত অস্বীকৃতি জানায় (দি ডন, করাচি, ১.৯.৭১)।
জি.ডি.আর. ১৪.৮.৭১ পাকিস্তানের সামরিক জান্তার কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং তা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। ২০.৮.৭১ ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল একই প্রতিবাদ ও অনুরোধ জানায়।
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের এক সভায় আর্থার বটম বেল (ব্রিটেনের ভূতপূর্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সরকারদের অনুরোধ জানান পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে, যাতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার বন্ধ হয়।
মার্কিন সিনেটর এইচ. পার্সি বলেন যে, যদি শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেয়া হয়, তাহলে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তান সরকারকে ঘৃণা জানাবে।
আরব লীগের প্রাক্তন প্রতিনিধি এবং আল আইয়ামের সম্পাদক কডিস মাকসুদ ২০.৯.৭১ তারিখে বলেন যে, আন্তর্জাতিক সমাজ এবং জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর পক্ষ থেকে অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার বন্ধ করে তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানো হোক।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]