মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা আলোচনা কর। (Discuss About the Role of Those Bengalies Who were Living Abroad in the War of Liberation.)

প্রবাসী বাঙালি ও বিশ্বের বিভিন্ন নাগরিক সমাজের ভূমিকা Role of Bengali Living in Abroad and Different Foreign Civil Society
ভূমিকা Introduction
প্রাথমিক নিরীক্ষণে '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ নির্দিষ্ট ভূখন্ডে একটি মানব গোষ্ঠীর আত্মঅধিকার (Self-determination) প্রতিষ্ঠা লাগাতার সংগ্রামের ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত সশস্ত্র সংগ্রাম ছিল। কিন্তু তৎকালীন সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সীমানা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সন্নিকটের অপাল ও দূরবর্তী বৈশ্বিক পরিমণ্ডলকে নানাভাবে আলোড়িত প্রভাবিত করেছিল। ফলে উৎপত্তির বিচারে যুদ্ধটি একটি স্থানীয় ঘটনা হলেও প্রভাবের বিচারে তা ছিল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক। স্বদেশে লড়াইরত বাঙালির সমান্তরালে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত সংগ্রাম ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল প্রবাসী / অভিবাসী বাঙালির উদ্যোগ, সংগঠন ও কর্মে। তাদের কর্মোদ্যম ও কর্মফলই যেন রচনা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক রণাঙ্গন। বহির্বিশ্বে প্রবাসী/অভিবাসী বাঙালির সংগ্রাম ছিল মারণামহীন, তবে নানা কৌশলমূলক পদক্ষেপপূর্ণ। উভয় রণাঙ্গনের অভিলক্ষ্যে পার্থক্য দৃষ্টিগোচর ছিল। যদেশে রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে শত্রুকে পরাস্ত করে মুক্ত স্বদেশ বাস্তবায়ন ছিল চূড়ান্ত অভিলক্ষ্য । আর বহির্বিশ্বের রণাঙ্গনে লক্ষ্য ছিল চূড়ান্ত বিজয়কে নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জনমতকে বাংলাদেশের সহযোগী ও পাকিস্তানের বৈরী পক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা। সমান্তরালে অন্য লক্ষ্যটি ছিল মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক নানা ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
'৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকায় সহমর্মিতা ও সহযোগিতার পাশাপাশি নীতিগত বৈরিতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে সক্রিয় বিরোধিতা ছিল। তবে সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়ার প্রধান পটভূমি তৈরি করেছিল, সে সময়ে চলমান পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধ; এবং যার বাতাবরণে নির্ধারিত হয়েছিল অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তির ভূমিকা।
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী/অভিবাসী বাঙালির ভূমিকা
Role of Immigrant Bengalies in Liberation War প্রাবসী/অভিবাসী বাঙালিদের নানামাত্রিক ভূমিকার মধ্যে প্রধান ভূমিকা ছিল নিম্নরূপ :
১. পুরনো সংগঠনের নতুন ভূমিকা;
2
নতুন সংগঠন তৈরি;

মিছিল মিটিং করা;
8
বিদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান;

প্রচারপত্র বিলি করা;

গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন;

পত্রিকা/নিউজলেটার প্রকাশ এবং

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সাহায্য-সহোযাগিতার ব্যবস্থা করা। এমন সব কর্মকাণ্ডের দুটো প্রধান লক্ষ্য ছিল।
এক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবদান রেখে শত্রুমুক্ত বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশকে নিশ্চিত করা। এমন ভূমিকাকে 'Pro-active' হিসেবে অভিহিত করা যায় ।
দুই, পাকিস্তানি অপপ্রচারকে নানা কৌশলে ও পন্থায় প্রতিহত করা, যাকে বলা যায়, Reactive ভূমিকা। প্রবাসী/অভিবাসী বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক রণাঙ্গনে স্মরণীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছিল।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী/অভিবাসী বাঙালিদের আন্দোলন ছিল লন্ডনভিত্তিক। তৃতীয় দুনিয়ার অসংখ্য মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বিদেশ-কেন্দ্র হিসেবে লন্ডন শহরটির দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। বিবিসির বাংলা সার্ভিস পুরো ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ-ভাষ্য উপস্থাপন করে বিশ্বজনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। ২৭ আগস্ট লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপন করা হয়। ভারতের বাইরে বিদেশের মাটিতে এটাই ছিল প্রথম বাংলাদেশ মিশন। বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে মিশন উদ্বোধন করার সময়ে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছিলেন, 'লন্ডন থেকেই বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হবে এবং লন্ডন হবে বহির্বিশ্বে মুক্তি আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র।'
যুক্তরাজ্যের যে বাঙালি সংগঠনসমূহ সক্রিয় ছিল তাদের মধ্যে প্রধান ছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি, বিভিন্ন শহরে তৈরি করা অ্যাকশন কমিটি, বাংলাদেশ উইমেন্‌স অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেট ব্রিটেন, পিপল্স ডেমোক্রেটিক লীগ অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন স্কটল্যান্ড, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন র্যাঙ্কাশায়ার, বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি ইউরোপ, বাংলাদেশ পিপল্‌স সোসাইটি ইন গ্রেট ব্রিটেন, বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ইত্যাদি।
তসাদ্দুক আহমদ, তার স্ত্রী রোজমেরী ও আবদুল মতিন ২৭ মার্চ একটি ইংরেজি ‘নিউজলেটার' প্রতিষ্ঠা করেন। পত্রিকাটির ষষ্ঠ সংখ্যায় পরিবর্তিত শিরোনাম হয় 'বাংলাদেশ নিউজলেটার'। '৭১-এর মাঝামাঝি পত্রিকাটি প্রচার সংখ্যা ছিল ১,২০০ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে বাঙালি সংগঠন ছাড়াও পত্রিকাটি পৌঁছে যেত বিভিন্ন দূতাবাসে, সারা দুনিয়ায় সংগ্রামরত বাঙালির কাছে। উপরন্তু এ পত্রিকার সুবাদে আমেরিকার যে সকল মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক সংগঠনের সাথে যোগাযোগ হয় সেগুলো ছিল। যথাক্রমে- Americans Concerned for Bangladesh (New York), East Pakistan League of America, The Bengal Action Committee of East Pakistan League of America (New York), Friends of Bangladesh (USA), Bangladesh League of America (New York), The Friends of East Bengal (Philadelphia), People's Coalition for Peace and Justice (USA), Bangladesh Information Center (Washington, DC) ইত্যাদি। কানাডার Bangladesh Association-এর সাথেও সংযোগ হয়েছিল। উপরন্তু যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক পাকিস্তানি সংগঠন The West Pakistanis in Solidarity with Bangladesh in Great Britain-এর সাথেও নিউজলেটার গ্রুপের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
প্রবাসী/অভিবাসী বাঙালি নারীদের অসংখ্য কার্যক্রম ছিল যুক্তরাজ্যে। তবে ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ উইমেন্স এসোসিয়েশন অব গ্রেট ব্রিটেন ট্রাফালগার স্কয়ারে যে সমাবেশ করে তা ছিল বেশ নজরকাড়া। সমাবেশের স্লোগান ছিল ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ”, ‘গণহত্যা বন্ধ কর' 'Stop Genocide' এবং 'Recognise Bangladesh'। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি প্রদান করে ।
অবশ্য যুক্তরাজ্যে সব বাঙালিই যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ছিল তা নয় ১৫ আগস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে বাংলাদেশ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এ সমাবেশে বক্তৃতা করেছিলেন সোহরাওয়ার্দী কন্যা বেগম আখতার সোলায়মান। আবুল হায়াত (যুক্তরাজ্যে ‘মুক্তি' পত্রিকার সম্পাদক) আজহার আলী, আবদুল হামিদ এবং পাবনা জেলার ২/৩ জন সমাবেশে উপস্থিত ছিল। 'বাংলাদেশ নিউজলেটারে' এ সমাবেশকে অদ্ভুত সার্কাস হিসেবে অভিহিত করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছিল যার কয়েকটির নাম 'বাংলাদেশ নিউজলেটার' প্রসঙ্গে উল্লিখিত হয়েছে। যাদের কর্মকাণ্ড যুক্তরাজ্যের বাঙালিদের অনুরূপ ছিল। তবে ২৪ জুলাই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে আয়োজিত বাঙালিদের সমাবেশটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বেশকিছু মার্কিন নাগরিকও এ সমাবেশে যোগ দিয়েছিল। সমাবেশের প্লেকার্ডের যোগান ছিল 'Free Mujib immediately', 'Trial Yahya, not Mujib' ইত্যাদি।
১৮ জুলাই 'পাকিস্তান অবজার্ভার' পত্রিকার মালিক হামিদুল হক চৌধুরী ও গণতন্ত্রী দলের নেতা মাহমুদ আলী হাজির হয়েছিলেন কানাডার টরেন্টো শহরে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচার চালানোর উদ্দেশ্যে। তবে সে সভায় তাদের ভাষণ দেয়ার কথা ছিল তা পণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডার সদস্যদের বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে। তাদের স্লোগান ছিল "Long live long live, Bangladesh Bangladesh, down with Taritors", Ali-Chowdhury go back home" ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের নাগরিক সমাজের ভূমিকা
Role of World Civil Society in Liberation War
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক মর্মস্পর্শী প্রচার ও প্রবাসী / অভিবাসী বাঙালির বিস্তৃত সংগ্রামী কর্মকাণ্ডের ফলে '৭১-এ ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রথম সারির বিশ্বসংবাদ। ফলে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিবেকী মানুষ তাড়িত হয়েছে গণহত্যার শিকার বাঙালির জন্য মানবিক সহমর্মিতায়। অন্তরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বাঙালির লড়াইয়ের সমান্তরালে তাদের মুক্তিযুদ্ধলগ্ন নানাবিধ উদ্যোগ, সংগঠন ও কর্মকাণ্ড নির্মাণে সেদিন যেন এক জাগ্রত বিশ্ববিবেক দীপ্ত প্রত্যয়ে লড়াকু বাঙালির সমান্তরাল অবস্থান নিয়েছিল। বিবেক ও মানবিক প্রণোদনাসমৃদ্ধ এ সমর্থন সেদিন যেন এক বিশাল মারণাস্ত্র হয়ে উঠেছিল মানবপীড়ানকারীদের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে মানবিক বিজয় বাঙালির বড় অর্জন। তবে তারচেয়ে বড় অর্জন ছিল ৯ মাস বিশ্ববিবেককে তাদের সাথে সম্পৃক্ত রাখা।
বিশ্ববিবেকের প্রতিনিধিত্ব যারা করেছিল তারা ছিল ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ে। অবশ্য অনেক ব্যক্তিই অন্য অনেকের সাথে মিলে সংগঠন গড়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কার্যকর অবদান রেখেছিল। এদেরকে একক বা সম্মিলিতভাবে নাগরিক সমাজের (Civil society) অংশ বলা যায়। আবার আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজেরও (International civil society) অংশ বলা যায় । প্রকারান্তরে বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধ ছিল আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ ও তাদের সংগঠনের সমর্থনপুষ্ট। একক ভূমিকায় অনন্য অবদান রেখেছেন এমন বিদেশি মানুষের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ও মার্ক টালি-র প্রেরিত প্রথম প্রতিবেদন বিশ্বের দৃষ্টিকে ঢাকার প্রতি আকর্ষণ করেছিল। মার্কিন কবি অ্যালেন জিনসবার্গের কবিতা September on Jessore Road মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও পকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অকাট্য দলিল হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল । পণ্ডিত রবিশংকর আর জর্জ হ্যারিসন-এর ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন-এর বিবেক ছুঁয়ে যাওয়া গান 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ' হয়েছিল তাৎক্ষণিক হিট। কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন আরও ২৫ জন মার্কিন শিল্পী ।
স্মরণ করা যাক, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাটা কোম্পানির নির্বাহী প্রধান একজন ঔডারল্যান্ডকে। পাকিস্তানি সেনা ছাউনির ভিতরের খবর তিনি পৌঁছে দিতেন ২নং সেক্টরের মেজর এটিএম হায়দার এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। ২নং সেক্টরের তালিকায় তার ক্রমিক নম্বর ছিল ৩১৭। নামের শেষে যোগ হয়েছিল 'বীর প্রতীক'। কারণ তিনিই একমাত্র বিদেশি যিনি সামনাসামনি যুদ্ধ করেছিলেন। ফরাসি সাহিত্যিক ও বামপন্থি রাজনীতিবিদ আঁদ্রে মালরো ১৭ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিসরে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের কথা। মার্চের ৩০ ও ৩১ তারিখে কলকাতায় কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভৃতি দলের উদ্যোগে 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতি', 'বাংলাদেশ সংহতি ও সাহায্য কমিটি' গঠন করা হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক
কমিটি'র সভাপতি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় । সিপিএম-এর ছিল 'বাংলাদেশ সংহতি ও সাহায্য কমিটি', যার সভাপতি ছিলেন জ্যোতি বসু। এসব সংগঠনই মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ৩০ মার্চ এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা একই দাবি জানান ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ক'জন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য মার্কিন নীতির সমালোচক ছিলেন। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি মার্কিন সরকারকে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। কারণ, মার্কিন সমরাস্ত্র দিয়েই গণহত্যা চলছিল। সিনেটর মাস্কী, ওয়ান্টার মনডেল ও এডওয়ার্ড ব্রুক সম্মিলিতভাবে কিসিঞ্জারকে পত্র লিখে জানতে চান যে, পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য নিক্সন প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করবে কিনা। অপরদিকে, ১০ জন সিনেটর অনতিবিলম্বে পাকিস্তানের জন্য আর্থিক ও সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে সুপারিশ করেন। তবে এডওয়ার্ড কেনেডিই নিক্সন প্রশাসনের কট্টর সমালোচক ছিলেন।
মার্কিন প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক নিক্সন-কিসিঞ্জারের নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। তবে এদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন ঢাকার কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড। ১৯ জন কূটনীতিকের স্বাক্ষরসহ তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে একটি কড়া চিঠি লিখেছিলেন।
মার্কিন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ন্যায়সঙ্গত ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। এসোসিয়েশন ফর এশিয়ান স্টাডিজ-এর বার্ষিক সম্মেলনে প্রায় ২,০০০ শিক্ষাবিদ অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানান। হার্ভার্ড অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড মেসন, রবার্ট ডর্ফম্যান ও স্টিফেন মার্গোলি, প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, ইয়াহিয়া সামরিক চক্রের দমন নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের অভ্যুদয় অবধারিত। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের প্রতিকূল কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। ৩০ জন বুদ্ধিজীবী দলবদ্ধভাবে ঘোষণা করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায়সংগত দাবিকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উপেক্ষা করার কোনো অধিকার পাকিস্তানের নেই।
মার্কিন কংগ্রেসে ৯ মাস ধরেই বাংলাদেশ বিষয়টি আলোচিত ও বিতর্কিত হয়েছিল। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১০টি বক্তৃতা হয়েছিল। ৪৫ জন সিনেটর ও ৩৬ জন প্রতিনিধি এ বক্তৃতাগুলো দিয়েছিলেন। সামগ্রিক বিবেচনায় এটা প্রমাণিত হয় যে, জনমতকে উপেক্ষা করেই মার্কিন নীতি নির্ধারিত হয়েছিল এবং তা প্রয়োগ করা হয়েছিল। ৪ এপ্রিল হ্যামস্টেড টাউন হল- এ অনুষ্ঠিত একটি সভায় ব্রিটিশ এমপিরা প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে পূর্ববঙ্গ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান দাবি করেছিলেন। ৫ এপ্রিল, ১৬০ জন কমনসভার সদস্য সমর্থিত একটি প্রস্তাবে ‘গৃহযুদ্ধ' বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল লেবার পার্টি ‘জাস্টিস ফর ইস্ট বেঙ্গল' নামের একটি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। ১৫ জুন জন স্টোনহাউসে উত্থাপিত প্রস্তাবে পূর্ববঙ্গে গণহত্যার জন্য ইয়াহিয়া ও সামরিক নেতৃবৃন্দকে দায়ী করা হয়। প্রস্তাবটিতে ৩০০-এর বেশি এমপির সমর্থন ছিল। ১ আগস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে অনুষ্ঠিত জনসভায় জন স্টোনহাউসসহ ৬ জন এমপি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]