স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণ আলোচনা কর। ( Discuss the Causes of Emergence of the Independent Bangladesh.)

পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ও বাঙালির বিজয়ের কারণ Causes of Failure of Pakistani Army and Victory of Bengali ভৌগোলিক অবস্থা ও জলবায়ু (Climate and Geographical Condition) : পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব প্রায় ১,২০০ মাইল, তিনদিকে ভারতীয় রাষ্ট্রসীমা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পরিবেষ্টিত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, যেখানে সহজেই ভারতীয় নৌবাহিনী প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। শুধু দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে বার্মার দিকে একটি ছোট মুখ খোলা আছে। এ অগ্রমুখ বরাবর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ অঞ্চলে কোনো সামরিক অপারেশন সম্ভব নয়। উপরন্তু রয়েছে বিপুল জলপথ। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবন। মে-সেপ্টেম্বর সাধারণত বর্ষাকাল। মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত সৈন্য ও সমর সরঞ্জাম চলাচল প্রায় অসম্ভব। ফলে এসময় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের নৈতিক মনোবল ও কায়িক শক্তির ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনীর নিজ ভূখণ্ড থেকে অভিযান করে আবার ফিরে যাওয়ার সুবিধা ছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষ মধ্য নভেম্বর শীত মৌসুমকে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য বেছে নেয়। ১৩ নভেম্বর পশ্চিম বাংলার বায়রা এলাকা থেকে ট্যাঙ্কসহ ভারতীয় সৈন্য পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে। ১৯, ২১ নভেম্বর পাকবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যর্থ হয়। সব দিক দিয়ে শত্রু পরিবেষ্টিতে এ ধরনের ভৌগোলিক অবস্থায় পরাজিত সৈন্যদের পালিয়ে যাওয়াও অসম্ভব ছিল।
ভারতীয় সৈন্যদের বিপুলসংখ্যক উন্নত রণকৌশল (Large Number of Developed Warfare Strategy of Indian Army) : নভেম্বরে পাকিস্তান তার সশস্ত্রবাহিনীর সমরশক্তি বিমান, নৌ পদাতিক শক্তিমত্তা নিয়োগ করে পশ্চিম পাকিস্তান ফ্রন্টে পাকবাহিনীর পূর্ব রণাঙ্গনে ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্যের বিপরীতে ভারত নিয়োজিত করে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার সৈন্য। এছাড়া ছিল ১ লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও-এর চেয়েও বেশি স্বেচ্ছাসেবক। ভারতীয় ৮ ডিভিশন, ৩ ব্রিগেডের বিপরীতে পাকিস্তানের ছিল ৩ ডিভিশন ও ১টি ব্রিগেড। বিমান শক্তিতে দেখা যায় ভারতীয় ১০ স্কোয়াড্রনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ১ স্কোয়াড্রন। শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তাই বেশিক্ষণ পাকিস্তান টিকে থাকতে পারেনি। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই পর্যুদস্ত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ
করে। এ সময় ভারত পাকিস্তানের ১৭৫টি ট্যাঙ্ক, ৮৩টি বিমান ধ্বংস করে। ভারতের যুদ্ধ কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোভিয়েত পরামর্শকের পরামর্শ। এছাড়া সহযোগিতা ছিল প্রায় প্রতিটি বাঙালির। বিজয়ের জন্য তাদের আস্থা তাদের জয় নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, দুর্বল সামরিক শক্তি, যুদ্ধ কৌশল এবং মার্কিন সপ্তম নৌবহরের প্রতি নির্ভরশীলতা এবং তা না আসায় পাকিস্তান বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায় ।
৩. মনস্তাত্ত্বিক কারণ (Psychological Reasons ) : হানাদার বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় এবং পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকায় নৈতিক মনোবল হারিয়ে ফেলে। মুক্তিবাহিনীর কোনো বন্দী শিবির না থাকায় ধৃত পাকিস্তানি সৈন্যদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নানা লোমহর্ষক কাহিনী সৈন্যদের শিবিরে ছড়িয়ে পড়েছিল। লে. জেনারেল নিয়াজির জনসংযোগ অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক সৈনিকদের দুর্বল মনোবল সম্পর্কে বলেন, 'তাদের প্রশিক্ষণের সময়, সমর উপকরণ ও নৈতিক মনোবল ছিল নিম্নস্তরের। তারা দীর্ঘ ৮ মাস যাবৎ নিয়োজিত। তবে পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে তারা বিশ্রাম পায়নি। তাদের অনেকেরই বুট আছে, কিন্তু মোজা ও শোয়ার চৌকি নেই। সবচেয়ে খারাপটি হলো, অপারেশনে যাবার সময় তাদের অনেকেরই মনের দিক থেকে সায় ছিল না।'
৪. অর্থ সংকট (Crisis of Money) : সামরিক উপকরণ ও অর্থ সংকট পাকবাহিনীর পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে। যুক্তরাজ্য, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স ও কানাডার অর্থ সাহায্য বন্ধের ফলে পাকিস্তানের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বিশ্ব ব্যাংক জুন মাস থেকে অনুদান স্থগিত, যুদ্ধের কারণে রপ্তানি হ্রাস সব মিলিয়ে নগদ অর্থে বৈদেশিক মুদ্রায় অস্ত্র কেনার পথ বন্ধ থাকে। ডিসেম্বরে চূড়ান্ত যুদ্ধে এসব উৎস থেকে যে বিমান সহযোগিতা পাওয়া গিয়েছিল তা পশ্চিম রণাঙ্গনে নিয়োজিত করায় পূর্ব রণাঙ্গনে যৌথবাহিনী সহজে জয় লাভ করে ।
৫. পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা ও নারী নির্যাতন (Pervasive Genocide and Women Repression by Pakistan Army) : ২৫ মার্চ, '৭১ মধ্যরাত থেকে পাকবাহিনী বাঙালি সেনা, রাইফেলস, পুলিশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক গণহত্যার সূচনা ঘটায়। গণহত্যার এ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ফলেই বাঙালি জাতির একাংশ-এর আগে পর্যন্ত স্বাধীনতার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকলেও পরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বাহিনী গঠনের মাধ্যমে সংগঠিত রূপ লাভ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনে যার চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হয়। বিদেশেও গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে।
৬. প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন ও-এর নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা (Formulation of Emigrant Bangladesh Government and Operating War by Its Leadership) : মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান, ১ কোটি শরণার্থীর আশ্রয় ও ত্রাণ ব্যবস্থায় সহযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের প্রশিক্ষণ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সরকার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসহ একটি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন হয়, যা মুজিবনগর সরকারের ছিল। বহির্বিশ্বে ব্যাপক তৎপরতার ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি জাগতে থাকে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের গোড়ার দিকে বহির্বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও অচিরেই এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের শেষদিকে জাতিসংঘ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে।
৭. বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সমর্থন (Support of Freedom Loving People of the World) : মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বকে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সে দেশের জনগণ, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, শিল্পী-সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন। ভারত, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিশাল অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জনমত গড়ে ওঠে। জাতিসংঘও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
৮. পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক আমলা ও রাজনীতিবিদদের দ্বন্দ্ব (Conflict between Pakistani Military- Civil Bureaucrats and Politicians ) : মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের জেনারেল ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাঙালির গৃহীত ব্যবস্থাবলির ব্যাপারে ঐকমত্য সৃষ্টি হলেও ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট ছিল। পাকিস্তান পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ, জামায়ত-ই-ইসলামি, পিডিপি'র মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এ সময় প্রশাসনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একদিকে জেনারেল ইয়াহিয়া, জেনারেল পরীজাদা, জেনারেল হামিদের দল, অন্যদিকে ভুট্টোর বেসামরিক মন্ত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নে মতবিরোধে পিণ্ডি কর্তৃপক্ষ বেশ অগোছালো হয়ে পড়ে। ফলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে যখন সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়, তার আগেই ইয়াহিয়ার বাহিনী পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে সামরিক-বেসামরিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুতে সাময়িক মতৈক্য হলেও ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রায় নিশ্চিত তখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকট রূপ নেয়, যা তাদের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে।
সর্বোপরি, এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং বাঙালির বিজয়ের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি গণযুদ্ধ যাতে কতিপয় ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী ছাড়া প্রায় সকলেই ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে। বাঙালি জাতি দুর্জয় দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, একাগ্রতার মাধ্যমে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করে। অন্যদিকে, পাকিস্তানি বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসতা, পাশবিকতাকে আশ্রয় করে লক্ষ্যহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি, আলশামস-এ যোগ দেয় বেকার যুবক, '৭০-এর নির্বাচনে পরাজিত রাজনীতিক কর্মী, অবাঙালি বিহারি সম্প্রদায়। মুখে ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার কথা বললেও তাদের মূল লক্ষ্য ছিল লুটপাট, নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন। এ নৈতিকতা বর্জিত, দেশপ্রেম বর্জিত বাহিনীর দ্বারা যুদ্ধে জয় ছিল অসম্ভব। সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির বিপরীতে এদের স্বল্প সংখ্যাও পরাজয়ের কারণ। পাকবাহিনীর নৈতিকতা ও দুর্নীতি পরায়ণতার জন্য আটক পাকিস্তান যুদ্ধবন্দীরা পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পর এদের বড় অংশকেই চাকরিচ্যুত করা হয় ।
৯.১১.৬. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Liberation War of Bangladesh
১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ব্যাপক রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলন । রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্রমাগত তীব্র হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তা স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে নানা প্রসঙ্গ চলে আসে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে যথাক্রমে আলোচনা করা হলো :
সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার আদায়ের যুদ্ধ (War for Realizing Majority People's Rights) : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬%। পশ্চিম পাকিস্তানি সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থকে বিবেচনায় নেয়নি; বরং চেয়েছিল সবক্ষেত্রে দমিয়ে রাখতে। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে যখন অধিকার ও ক্ষমতা হাতে এল না তখন সংখ্যাগরিষ্ঠকে যুদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীনতা লাভকারী একমাত্র দেশ (The Only Country of South Asia Obtaining Independent) : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যে দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে যুদ্ধ করেছে এবং অনেক ত্যাগ-তীতিক্ষা ও আত্মবলির বিনিময়ে বিজয় লাভ করতে হয়েছে।
বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম দেশ (One of the Country of World History) : দুনিয়ার ইতিহাসের যে কটা দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় লাভ করেছে বাংলাদেশ এদের মধ্যে অন্যতম দেশ।
8. জনযুদ্ধ (People's war)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের যোদ্ধারা যেমন যুদ্ধ করেছেন তেমনি এদেশের গণমানুষও যুদ্ধ করেছে। এজন্য এ মুক্তিযুদ হচ্ছে জনযুদ্ধ।
প্রধান নেতৃত্ব কারাগারে বন্দী ( Main Leadership Detained in Jail) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি অবদান যার তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তিনিই ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস ।
গণহত্যা (Genocide) : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল গণহত্যা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধুর মতে, ৩০ লক্ষ মানুষকে তথা বাঙালিকে পাকিস্তান সরকার হত্যা করে। অন্যকথায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে।
স্বল্পসময়ে স্বাধীনতা (Independence Within a Short Time ) : পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যা অল্পসময়ে যুদ্ধ করে তথা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে।'
৯৩ হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণ (Surrender of 93 Thousands Soldier) : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রধান লে. জে. আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি ৯৩ হাজার সৈন্য, কর্মচারী ও সহযোগীদের নিয়ে যৌথ বাহিনীর প্রধান লে. জ. জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করে ।
৯. বুদ্ধিজীবী হত্যা ( Killing of Intellectuals) : মুক্তিযোদ্ধারা যখন বিজয়ের লগ্নে উপস্থিত তখন দেশকে
মেধাশূন্য করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।
১০. শরণার্থীর বিপুলতা ( Intensity of Refugee) : যুদ্ধের শুরুতে এবং যুদ্ধচলাকালীন সময়ে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমার চলে গেছে এবং স্বাধীনতা লাভের সাথে সাথে তারা আবার ফিরে এসেছে।
১১. বড় পরাশক্তির মদদ (Support of Big Superpower) : পৃথিবীর বড় বড় কয়েকটি শক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিশালী
দেশ পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারপরও বাংলাদেশের মানুষ বিজয় অর্জন করেছে।
১২. দ্রুত প্রবাসী সরকার গঠন (Formulation of Emigrant Government) : শত্রু আক্রমণের এক পক্ষকালের মধ্যেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দ্রুত প্রবাসী সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানে সক্ষম হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।
১৩. মুসলিম বিশ্বের নিস্পৃহতা ( Indifferent to Muslim World ) : মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো তখন পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে। রুশ ভারতের সম্পৃক্ততার কারণে মুসলিম বিশ্বে ভুল তথ্য যাওয়াতে এমনটি হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]