বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আলোচনা কর। (Discuss the Role of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in the Liberation of Bangladesh.

Introduction
Independence Struggle
জনাব ইয়াহিয়া খানের ত্রাণপরিষদের অধিবেশন ঘোষণার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব পাকিস্তানবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ (১৯৭১) ঢাকায় এবং তার পরদিন সারা প্রদেশে হরতাল ডাকেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকারি কর্মচারীসহ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বাঙালির পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে- গণবিরোধী শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা না করা। এমনি পরিস্থিতিতে তাদের উচিত সবটুকু শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়া।'
২ এবং ৩ মার্চ হরতালের ফলে সকল সরকারি কর্মকাণ্ড অচল হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ছাত্র এবং শ্রমিক সংগঠন স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি করেন। 'পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ' ৩, মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করে। এমনি পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।
অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা
Directions of Bangabandhu in Non-Co-operation Movement
১৫ মার্চ তারিখে ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান বাহিনীর প্রায় সমুদয় জেনারেলকে নিয়ে সামরিক প্রহরায় ঢাকা আগমন করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাঁর দলবল নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করার সাথে সাথে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' প্রচার করা হয়। অসহযোগ আন্দোলনকে সংগঠিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩৫টি নির্দেশনা জারি করা হয়। ১৫ মার্চের সকালবেলা ঢাকা বেতার থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ ঘোষণা করেন, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন। তিনি তাঁর অবর্তমানে যুক্তিযুক্ত ও পরবর্তী কর্মসূচি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য বিস্তারিতভাবে জাতির প্রতি পালনীয় ৩৫টি নির্দেশনামা ঘোষণা করেছেন।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনাসমূহ
১নং নির্দেশ—সরকারি সংস্থাসমূহ (Government Organizations ) : কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সেক্রেটারিয়েটসমূহ, সরকারি ও বেসরকারি অফিসসমূহ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ, হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশস্থ সকল কোর্ট হরতাল পালন করবে এবং নিম্নে বর্ণিত বিশেষ নির্দেশনাবলি এবং বিভিন্ন সময়ে যেসব ছাড়-ব্যাখ্যা দেওয়া হবে তা সবই মেনে চলবে ।
২নং নির্দেশ–শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ (Educational Institutions ) : সমগ্র বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৩নং নির্দেশ—আইন ও শৃঙ্খলা (Law and order) :
(ক) ডেপুটি কমিশনারগণ ও মহকুমা অফিসারগণ তাঁদের কোনো দপ্তর না খুলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং উন্নয়ন কাজ ও প্রয়োজন হলে এসব কার্যকরী বা প্রয়োগ করার দায়িত্ব পালন করবেন। ডেপুটি কমিশনারগণ ও মহকুমা অফিসারগণ তাঁদের এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও নিবিড় সহযোগিতা বজায় রাখবেন।
(খ) পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রয়োজনবোধে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সাথে যোগ দেবেন।
৪নং নির্দেশ – বন্দর (অভ্যন্তরীণ বন্দরসহ ) [ Port Including Internal Ports] : বন্দর কর্তৃপক্ষ পাইলটেজসহ সকল ৪জি করে যাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কেবল সেইসব অফিস খোলা থাকবে যেগুলো জাহাজসমূহের সহজ ও সুষ্ঠু আসা- যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। সৈন্য চলাচলে কিংবা সমরাস্ত্র আনা-নেওয়ার কাজে কোনোভাবেই সহযোগিতা বা সাহায্য করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য খাদ্যবাহী জাহাজসমূহের মাল খালাস ত্বরান্বিত করার সম্ভাব্য সকল
সাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর-শুল্ক (পোর্ট ডিউজ) ও মাল খালাসের কর বা শুল্ক আদায় করবেন। অভ্যন্তরীণ বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর শুল্ক ও অন্যান্য শুল্ক আদায় করবেন ।
৫নং নির্দেশ – আমদানি (Import) : আমদানিকৃত সকল মাল দ্রুত খালাস করতে হবে। শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ কাজ করে যাবে এবং ধার্যকৃত শুল্ক সম্পূর্ণরূপে পরিশোধের পর মাল খালাসের অনুমতি দেবে। কাস্টমস কালেক্টরগণ বিশেষ একাউন্ট পরিচালনা করবেন। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে যেসব নির্দেশ ইস্যু করবে, কাস্টমস কালেক্টরগণ তদনুযায়ী একাউন্ট পরিচালনা করবেন এবং যে শুল্ক আদায় করা হবে তা কোনোমতেই কেন্দ্রীয় সরকারের নামে জমা হবে না । ৬নং নির্দেশ – রেলওয়ে ( Railway) : রেলওয়ে চালু থাকবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের কেবলমাত্র সেই অফিসই খোলা থাকবে যেগুলো রেল-চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোর জন্য সৈন্যদের আনা- নেওয়া বা সমরাস্ত্র পরিবহনের কোনো কাজে কোনোভাবেই সাহায্য বা সহযোগিতা করা যাবে না। বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য রেলওয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেল-ওয়াগনের ব্যবস্থা করবে।
৭নং নির্দেশ—সড়ক পরিবহন (Road Transport) : সারা বাংলাদেশে ইপিআরটিসি চালু থাকবে ।
৮নং নির্দেশ—নৌ-পরিবহন (Water Transport) : অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর কাজ চালু রাখার জন্য ইপিএসসি অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ও আইডব্লিউটিএ-এ প্রয়োজনীয় কিছুসংখ্যক কর্মচারী কাজ চালিয়ে যাবেন। গণনির্যাতনের জন্য সৈন্য বা রণসম্ভার আনা-নেওয়ার ব্যাপারে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা কোনো সহযোগিতা করতে পারবেন না । ৯নং নির্দেশ—ডাকবিভাগ ও তার (Postal and Wireless Department) : বাংলাদেশের মধ্যে শুধু চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম ও মনি-অর্ডার পৌঁছানোর জন্য ডাক ও তার বিভাগ কাজ করে যাবে। সরাসরি বিদেশে চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম প্রেরণ করা যাবে। ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশ নেওয়ার ও দেওয়ার জন্য সোম থেকে বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আন্তঃআঞ্চলিক টেলিপ্রিন্টার যোগাযোগ চালু থাকবে। ২৫নং নির্দেশে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আন্তঃআঞ্চলিক প্রেস টেলিগ্রাম চালু থাকবে। পোস্টাল সেভিংস ও বিমা কোম্পানি কার্যরত থাকবে।
১০নং নির্দেশ–আন্ত:জেলা টেলিফোন (Inter District Telephone) : বাংলাদেশের মধ্যে কেবলমাত্র স্থানীয় আন্তঃজেলা টেলিফোন যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে । টেলিফোন মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো কাজ করে যাবে । ১১নং নির্দেশ বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র (Betar, Television and Newspaper) : বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলো কাজ চালিয়ে যাবে। তারা গণআন্দোলন সম্পর্কিত সকল বক্তব্য, বিবৃতি, সংবাদ ইত্যাদি প্রচার করবে। যদি না করে তবে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা সহযোগিতা করবেন না।
১২নং নির্দেশ—স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র (Health Centre and Necessary Medicine) : জেলা হাসপাতাল, টিবি ক্লিনিক, কলেরা ইনস্টিটিউটসহ সকল হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সার্ভিসগুলো যথারীতি কাজ করে যাবে । সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর্স কাজ করে যাবে এবং সকল হাসপাতাল ও হেলথ সেন্টার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে।
১৩নং নির্দেশ-বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট (Electricity Related) : বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজের সাথে ও এ কাজের সংরক্ষণ এবং মেরামত কাজের সাথে জড়িত ইপিওয়াপদা'র বিভাগগুলো কাজ করে যাবে ।
১৪নং নির্দেশ-গ্যাস ও পানি (Gas and Water) : গ্যাস ও পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। এসবের সংরক্ষণ ও মেরামতের কাজও চালু থাকবে।
১৫নং নির্দেশ-ব্রিক ফিল্ড ও কয়লা (Brick Field and Coal) : ব্রিক ফিল্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কয়লা সরবরাহ থাকবে ।
১৬নং নির্দেশ—আমদানির ক্ষেত্রে (In Import Sector) : আমদানি, বণ্টন, গুদামজাত ও খাদ্যশস্যের চলাচল জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী থাকবে। এসবের প্রয়োজনে ওয়াগন, বার্জ, ট্রাক ও অন্যান্য সকল প্রকার পরিবহন ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে চালু থাকবে।
১ ৭নং নির্দেশ-কৃষিক্ষেত্রে (Agriculture Sector) :
ক. ধান ও পাটবীজ, সার ও কীটনাশক ক্রয়, চলাচল ও বন্টন অব্যাহত থাকবে। কৃষি খাবার ও চাপ ইনস্টিটিউট ও এমন সকল প্রকল্পগুলো যথারীতি কাজ করবে।
পাওয়ার পাম্প ও অন্যান্য কারিগরি যন্ত্রপাতির চলাচল, বন্টন, চালু রাখা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া জ্বালানি, যন্ত্রপাতি ও এসবের সংরক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগ খোলা থাকবে।
গ. নলকূপ খনন, খাল খনন ও এ জাতীয় পানি সেচ সম্পর্কিত সকল কাজ চালু থাকবে।
.
পূর্ব পাকিস্তান সমবায় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক ও তার অঙ্গ সংস্থাগুলো থানা সমবায় সমিতি এবং অন্য সমবায় সংস্থাগুলোকে কৃষিঋণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো তার কাজ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন সংস্থার প্রয়োজনীয় শাখাগুলো খোলা থাকবে।
চ. কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকগুলো থেকে ঘূর্ণিদুর্গতদের জন্য সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় অঙ্গ দেওয়া বলবৎ থাকবে।
ছ. আলু কিনে গুদামজাত করার জন্য উন্নয়ন ব্যাংকের তহবিল মজুদ রাখতে হবে।
১৮নং নির্দেশ–নিয়ন্ত্রণ ও শহর-সংরক্ষণ (City Protection and Control) : বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ, শহর সংরক্ষণ এবং নদী খনন ও যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ ওয়াপদার পানি উন্নয়ন কাজ, মালপত্র খালাস ও আনা-নেওয়া এবং এ ধরনের অন্যান্য জরুরি কাজ সুচারুরূপে চালিয়ে যাওয়া হবে। সরকারি এজেন্সি কিংবা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কন্ট্রাক্টরদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে।
১৯নং নির্দেশ—উন্নয়ন ও নির্মাণকার্য (Development and Construction Work) : বৈদেশিক সাহায্যে তৈরি রাস্তা ও পুল প্রকল্পগুলোসহ সকল প্রকার সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে। সরকারি এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা থেকে ঠিকাদারদের পাওনা যথারীতি মিটিয়ে দেওয়া হবে। উক্ সংস্থাগুলো থেকে যদি মালমসলা সরবরাহের চুক্তি থাকে তাহলে সেই চুক্তি মোতাবেক যথারীতি সরবরাহ করা হবে। ২০নং নির্দেশ
সাহায্য ও পুনর্বাসন (Aid and Rehabilitation) : ঘূর্ণিদূর্গত এলাকার বাঁধ তৈরি ও উন্নয়নমূলক কাজসহ সকল সাহায্য, পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে। সরকারি এজেন্সি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো ঠিকাদারদের পাওনা মিটিয়ে দিবে।
২১ নং নির্দেশ—কলকারখানা (Machine-Factory) : ইপিআইডিসি, ইপসিক ফ্যাক্টরি ও ইস্টার্ন রিফাইনারি ইপিআইডিসি ও ইপসিকের সকল কারখানার কাজ চলবে এবং যতদূর সম্ভব উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এসব কারখানায় অর্থ সরবরাহের ব্যাপারে ইপিআইডিসি ও ইপসিকের যেসব শাখা খোলা রাখা প্রয়োজন হবে তা খুলে রাখতে ইস্টার্ন রিফাইনারি কাজ যথারীতি চালিয়ে যেতে হবে।
২২নং নির্দেশ— বেতন দান (Sanction of Salary) : সরকারি ও আধা-সরকারি সংস্থার কর্মচারী ও প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন যাদের রোজ, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক কিংবা মাসিক হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে, তাদের সেভাবে দিতে হবে। যাদের বন্যায় সাহায্য মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বাকি-বেতন দেওয়ার কথা তা দিয়ে দিতে হবে। বেতন-বিল মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বাকি-বেতন দেওয়ার কথা তা দিয়ে দিতে হবে। বেতন-বিল তৈরির জন্য সরকারি ও আধা-সরকারি বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগুলো খোলা রাখতে হবে।
২৩নং নির্দেশ- পেনশন (Pention) : সামরিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন নির্দিষ্ট তারিখে পারিশোধ করতে হবে।
২৪নং নির্দেশ— এ.জি. (ইপি) ও ট্রেজারি (AG and Treasury ) : এ নির্দেশে যেসব কাজ চালিয়ে যাবার জন্য হুকুম দেওয়া হয়েছে তাদের টাকা-পয়সা দেওয়া-নেওয়া ও সরকারি কর্মচারীদের বিল তৈরি করার জন্য সামান্য সংখ্যক কর্মচারী দ্বারা এ.জি. (ইপি) অফিসের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
২৫নং নির্দেশ-ব্যাংক (Bank) :
ক. ব্যাংকিং কার্য পরিচালনার জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক প্রয়োজনে ৪টা পর্যন্ত সকল ব্যাংক খোলা থাকবে (অবশ্য মাঝে টিফিনের ছুটি থাকবে) কিন্তু শুক্রবারে ও শনিবারে ব্যাংকিং কাজের জন্য সকাল ৯টা থেকে ১১-৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ১২-৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকবে। অনুমোদিত লেনদেনের ক্ষেত্রে বুক-ব্যালান্সসহ অন্যান্য কার্যাবলী নিয়মিতভাবে চলবে।
কয়েকটি বিধিনিষেধ ছাড়া ব্যাংকগুলো যেকোনো পরিমাণ জমা গ্রহণ, বাংলাদেশের ভিতর যেকোনো পরিমাণ আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স, বাংলাদেশের ভিতর আন্তঃব্যাংক ট্রান্সফার এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে টিটি বা মেইল ট্রান্সফার ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ ড্র করাসহ তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাবে। যেসব বিধিনিষেধ মানতে হবে সেগুলো হচ্ছে :
১. যদি চেকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধির বা বেতন রেজিস্টারের সার্টিফিকেট থাকে তাহলে বেতন ও মজুরি পরিশোধ করা।
২. সপ্তাহে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বোনাফাইড ব্যক্তিগত ড্রইংস।
৩. চিনিকলের জন্য আখ ও পাটকলের জন্যে পাটসহ শিল্পের কাঁচামাল কেনার জন্য অর্থদান ।
৪. বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়সহ যেকোনো বাণিজ্যিক খাতে সপ্তাহে ১০,০০০ টাকা
পর্যন্ত পেমেন্ট ক্যাশ অথবা ড্রাফট মারফত উঠানো যাবে।
উল্লিখিত ৩ ও ৪ নম্বর শর্তে কোনো অর্থ দেওয়ার পূর্বে অতীত রেকর্ড দেখে ব্যাংককে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, অর্থ গ্রহণকারী একজন বোনাফাইড শিল্প অথবা বাণিজ্যিক সংস্থা অথবা ব্যবসায়ী এবং সে যে অর্থ উঠাচ্ছে তা তার এক বছরে সাপ্তাহিক গড় অর্থ উঠানোর চাইতে বেশি না হয়।
৫. উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত তালিকাভুক্ত কন্ট্রাক্টরদের অর্থদান। তবে যে কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে তার কাছ থেকে ঢেকে একটি সার্টিফিকেট আনতে হবে যে, টাকাটা উঠাতে চাওয়া হচ্ছে তা উল্লিখিত কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ।
9
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেকোনো একাউন্টে ক্রস চেক ও ডিমান্ড ড্রাফট প্রদান করা ও জমা নেওয়া যাবে।
ঘ. স্টেট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা থেকে অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টিটি পাঠানো যাবে। যে সমস্ত ব্যাংক-এর সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সেগুলো ঢাকাস্থ স্টেট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পাওনা গ্রহণ করতে পারবে।
6
চ. অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের জন্য সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আন্তঃশাখা টেলিপ্রিন্টার সার্ভিস চালু থাকবে।
১. প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে সোমবার ও বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি খবর পাঠাতে পারবে।
২. প্রত্যেক ব্যাংক অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে একটি খবর পেতে পারবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিল সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রস চেক বা ক্রস গ্রান্টের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে হবে।
ছ. অনুমোদিত ডিলারের সাহায্যে ফরেন ট্রাভেলার্স চেক ভাঙানো যাবে।
জ. কূটনীতিকগণ অবাধে তাঁদের একাউন্টের কাজ পরিচালনা করতে পারবেন এবং বিদেশি নাগরিকগণ বৈদেশিক মুদ্রা
একাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করতে পারবেন।
ঝ. পকার্স পরিচালনার কাজ বন্ধ থাকবে।
ঞ. স্টেট ব্যাংক বা অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো যাবে না।
ট. বিদেশি রাষ্ট্র থেকে লাইসেন্সের মাধ্যমে দ্রব্যাদি আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট খোলা যাবে ।
ঠ. পণ্য বিনিময়ের চুক্তি (যে সমস্ত দ্রব্য ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে) মোতাবেক প্রেরিত দ্রব্যের ছাড় করতে হবে।
ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডের মারফত বকেয়া রপ্তানি বিল সংগ্রহ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশ মোতাবেক কাজ পরিচালিত হবে।
২৬নং নির্দেশ-স্টেট ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক (State Bank and Other Bank) ট ব্যাংকও অন্যান্য ব্যাংকের মতো কাজ করবে এবং একই অফিস সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং পদ্ধতি কাজ করার জন্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরূপভাবে খোলা থাকবে।
উল্লিখিত কাঠামো ও বিধিনিষেধ এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। 'পি' ফরম বরাদ্দ করা যেতে পারে এবং বিদেশে অবস্থানরত ছাত্র ও অন্যান্য অনুমোদিত প্রাপকের জন্য বিদেশে প্রেরণের টাকাও গৃহীত হতে পারবে।
২৭নং নির্দেশ—আমদানি ও রপ্তানি (Export and Import) : বাংলাদেশের জন্য আমদানি লাইসেন্স ইস্যুকরণ ও আমদানিকৃত দ্রব্যাদি চলাচলের বিধিব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানি কন্ট্রোলারের অফিস নিয়মিতভাবে চলবে।
২৮নং নির্দেশ—ট্রাভেল এজেন্সি ও বিদেশি বিমান (Travel Agency and Foreign Aircraft) : সকল ট্রাভেল এজেন্সি অফিস ও বিদেশি বিমান পরিবহন অফিস চালু হতে পারে। কিন্তু তাদের বিক্রয়লদ্ধ অর্থ বাংলাদেশের ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। ২৯নং নির্দেশ–অগ্নি-নির্বাপক (Fire Resistance) : বাংলাদেশের সকল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু থাকবে।
৩০নং নির্দেশ—জনস্বাস্থ্য বিভাগ (Public Health Department) : পৌরসভার ময়লাবাহী ট্রাক, রাস্তায় বাতি জ্বালানো, সুইপার সার্ভিস এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় অন্যান্য ব্যবস্থাপনা চালু থাকবে।
৩১নং নির্দেশ—খাজনা কর ও শুল্ক আদায় (Collection of Revenue and Duty) : কোনো খাজনা কর আদায় করা যাবে না। ক. পুনঃনির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত
১. সকল ভূমি রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকবে,
২. বাংলাদেশের কোথাও কোনো লবণ কর আদায় করা যাবে না,
৩. বাংলাদেশের কোথাও কোনো তামাক কর আদায় করা যাবে না,
৪. তাঁতিরা আবগারি শুল্ক দান ব্যতিরেকেই বাংলার সুতা কিনবেন। মিল মালিক ও ডিলাররা তাদের কাছ থেকে
কোনো আবগারি শুল্ক আদায় করতে পারবেন না।
এছাড়া সকল প্রাদেশিক সরকারের কর; যেমন- প্রমোদ কর, হাটবাজার, পুল ও পুকুরের ওপর ধার্যকৃত কর আদায় করা যাবে এবং বাংলাদেশের সরকারের একাউন্টে জমা দিতে হবে।
গ. অকট্রয়সহ স্থানীয় কর আদায় করা যাবে।
ঘ. কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ কর; যেমন- আবগারি কর, বিক্রয় কর এখন থেকে আদায়কারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা আদায় হবে, তবে তা কেন্দ্রীয় খাতে জমা করা যাবে না অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে হস্তান্তর করা যাবে না। এসব আদায়কৃত কর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক অথবা ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনে 'বিশেষ একাউন্ট' খুলে জমা রাখতে হবে এবং ব্যাংক দুটিও তাদের প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ী এগুলো গ্রহণ করবে। সকল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশ ও বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রতি যে নির্দেশ দেওয়া হবে, তা মানতে হবে।
৩২নং নির্দেশ—বিমা কর্পোরেশন ও পোস্টাল লাইফ (Insurance Corporation and Postal Life) : পাকিস্তান বিমা কর্পোরেশন চালু থাকবে এবং পোস্টাল লাইফ ইনসুরেন্সসহ সকল বিমা কোম্পানি কাজ করবে।
৩৩নং নির্দেশ—ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (Business Institution) : সকল ব্যবসায় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট নিয়মিতভাবেই চলবে । ৩৪নং নির্দেশ—বাড়ির শীর্ষে কালো পতাকা (Black Flag at Acmy of Home) : সকল বাড়ির শীর্ষে কালো পতাকা উত্তোলিত হবে।
৩৫নং নির্দেশ (Order) : সংগ্রাম পরিষদগুলো সর্বস্তরে কাজ চালু রাখবে এবং এসব নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে যাবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]