স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব Leadership of Bangabandhu in Liberation War


বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের এক বিরল ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। বাঙালির স্বাধিকার-স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অতুলনীয়। বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ (বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল) মন্তব্য করেছেন- 'শেখ মুজিবের আবির্ভাব বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তাঁর সমাধি রচিত হয় নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি রূপকথার নায়কের মতোই ভাষর হয়ে থাকবেন। হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ মুজিবের চেয়েও প্রজ্ঞাবান, দক্ষতর, সুযোগ্য ও গতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অভ্যুদয় ঘটেছে বা ঘটবে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় পরিচিতি নির্ধারণে তার চেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।'
বাংলাদেশের স্বপ্ন অনেকে দেখেছেন। তবে হয়ত স্বপ্নই দেখেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে । মুসলিম লীগের রাজনীতি দিয়ে তার যাত্রা শুরু হলেও মনেপ্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাই ঢাকায় ফিরে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধেই তরুণদের সংগঠিত করেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ গঠনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের স্বাধিকার-সায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলনের প্রত্যেকটিতে তাঁর ভূমিকা ছিল সক্রিয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ৬-দফা, ৬৯'র গণআন্দোলন, ৭০'র নির্বাচন, ৭১ খ্রিষ্টাব্দের অসহযোগ আন্দোলন এবং তাঁকে গ্রেফতারের পরও তার নামে মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি তাকে দিয়েছে ইতিহাসের অতি উচ্চ আসন। বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়লেই তাঁর মেধা, মনন, চরিত্র, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, আর্থ-সামাজিক ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায় ৷
মওদুদ আহমদ আরও উল্লেখ করেছেন যে, (বাংলাদেশ : স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, পৃ. ২২০),
'এটা ছিল বাস্তবিক অর্থে বিস্ময়কর যে, শেখ মুজিব পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলেও এবং নিজে গ্রেফতার বরণ করলেও তাঁর জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি ছিল অটুট। এভাবে এমন একজনের নামে ৯ মাসব্যাপী সংগ্রাম পরিচালনা করা হয় যিনি স্বয়ং সংগ্রামে উপস্থিত ছিলেন না এবং কোনোদিন নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসবেন এমন নিশ্চয়তা ছিল না। মুজিবের জীবনে এটাই ছিল সর্বোচ্চ সাফল্য।'
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ইতিহাসের এক বিরল ব্যক্তিত্ব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্ণধার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনো কিছুরই পরোয়া করেন নি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও যার কাছে ছিল তুচ্ছ। এককথায় বলতে গেলে বাংলা, বাঙালি ও শেখ মুজিব যেন একবৃন্তে ৩টি চেতনার ফুল ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেছেন যে, 'শেখ মুজিবের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বও ছিল বিস্ময়কর। নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুব গাওয়ার যখন বললেন, ‘অবিভক্ত পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ; কেন আপনি দেশটিকে ভেঙে দিতে গেলেন।' উত্তরে শেখ মুজিব বললেন, শুনুন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আপনার কথাই হয়তো ঠিক। অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিল। তারচেয়েও শক্তিশালী হয়তো হতো অবিভক্ত ভারত। কিন্তু সেসবের চেয়ে শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া, আর মহাশক্তিশালী হতো একজোট এ বিশ্বটি। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সবকিছু চাইলেই কি পাওয়া যায়।'
এস.এ. করিম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ ঐ সময় স্বাধীন হতে পারত কিনা সে বিষয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে। তাঁর ভাষায়, 'In the final analysis, history is made by men and it is unlikely that Bangladesh would have won its independenc when it did without the leadership of one man, Sheikh Mujibur Rahman. Whose single concern during thirty odd years odd ceaseless activity, spanning his entrie adult life, was the promotion by every menas the self determination of his people.'
অভাদয়ের ইতিহাস-২৬/ক)
সুতরাং বলা যায়, ১৯৪৮ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধাপে ধাপে দক্ষ, সুযোগ্য ও আপসহীন নেতৃত্বদান করে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত ও অধিকার সচেতন করে তোলেন। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতিকে তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত সাপ্তাহিক 'Newsweek' ম্যাগাজিনের একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাকে 'Poet of Politics' বা রাজনীতির কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এককথায় এর চেয়ে চমৎকার মূল্যায়ন আর কিছু হতে পারে না। 'রাজনীতির কবি শেখ মুজিবুর রহমানের অমর কাব্য বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ এ কাব্য রচনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আমাদের পূর্বপুরুষদের হাজার বছরের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন—অনুজ্জল অতীতকে প্রোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে গোথিত করেছেন। ফলে বিবিসি'র জরিপে 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি' রূপে আখ্যায়িত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাই বলা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক ।
মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান
The Contribution of Bangabondhu in the Liberation War প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা ঘোষণা বা স্বাধীনতা লাভের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে অনেক ব্যক্তিই ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির বার্তাবাহক বা স্বাধীনতার নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। একজন স্বদেশভক্ত ও সম্মোহনী শক্তিসম্পন্ন নেতা হিসেবে বাংলার জনগণের মাঝে তিনি সমাদৃত ছিলেন। তার মধ্যে বাংলার মানুষ খুঁজে পেয়েছিল এমন একজন মানুষকে যিনি ছিলেন সাহসী, বিচক্ষণ, আত্মপ্রত্যয়ী, আপসহীন, অনমনীয়, প্রচলিত ব্যবস্থার বিরোধী, দরদি ও অবিচল। আইয়ুব ও আইয়ুব পরবর্তী দমনমূলক রাজনীতিতে তিনি জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও কার্যকরী ভূমিকার কারণেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিম্নরূপ :
বাঙালি জাতিকে মুক্তির ডাক : ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেও কেন্দ্রের টালবাহনার জন্য শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসতে পারেনি। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুরভিসন্ধি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানি শাসন থেকে বেরিয়ে না আসলে বাঙালি জাতির মুক্তি সম্ভবপর নয়। তাই পাকিস্তানি শাসকচক্রের অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, “পাকিস্তান শাসকচক্রকে প্রতিরোধের জন্য গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এদেশের সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর এ তেজস্বী ভাষণ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণারই নামান্তর।
হরতাল আহ্বান : ঢাকায় ১ মার্চ হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির সভা চলছিল। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পক্ষ থেকে ঐ দিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হলে ক্ষুব্ধ জনতা রাজপথে নেমে আসে। আলোচনার পূর্বেই একতরফাভাবে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। উত্তেজিত জনতা হোটেল পূর্বাণীর সামনে জড়ো হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ঘটনার প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল ও ৩ মার্চ সারাদেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন। এছাড়া এক বিবৃতির মাধ্যমে শেখ মুজিব ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত প্রতিদিন অর্ধদিবস হরতাল পালনের নির্দেশ দেন।
ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ : বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি তাদেরকে ‘ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ' গঠনের নির্দেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ২ মার্চ এক সভায় বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এ পতাকার পরিকল্পনা ও অঙ্কন করেন
শিল্পী শিবনারায়ণ দাশ এবং পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ.স.ম আব্দুর রব। ২ মার্চ রাতে কারফিউ জারি করা হয়। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভঙ্গ করলে সেনাবাহিনী গুলি করে। কারফিউ ভঙ্গকারী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক-কৃষক
স্লোগান দেয়' “বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর"। সর্বত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে এ সুযোগে পাকিস্তানি শাসকরা অবাঙালিদের উস্কানি দিলে অবাঙালিরা বাঙালিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ও হামলা করে। সেনাবাহিনীর গুলিতে ৮ জন বাঙালি নিহত হলে পরদিন ৩ মার্চ পল্টনে জনসভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। এ ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পার্লামেন্টারি গ্রুপের বৈঠকে যোগদান না করা : জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের পার্লামেন্টারি গ্রুপের বঙ্গবন্ধুসহ বাকি (১১) এগারো জনকে ১০ মার্চ ঢাকায় একটি বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। বान বৈঠকের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বলেন- 'যখন বাঙালি জনসাধারণকে হত্যা করা হচ্ছে তখন এ আলোচনার আহ্বান একটি নির্দয় তামাশা ছাড়া কিছু নয়।' এর বিপরীতে তিনি বাঙালিকে জেগে উঠার ডাক দেন।
অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন : ৩ মার্চ থেকে শুরু হয়ে অসহযোগ আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ মার্চের ভাষণের পর ব্যাপকভাবে তীব্রতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু দশ-দফা কর্মসূচির মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। তিনি ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান জানালেন। ঐ দিনই টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিকী টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন।
সমান্ত্রাল সরকার পরিচালনা : অসহযোগ আন্দোলন তীব্রতা পাওয়ার সাথে সাথে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বৃদ্ধি পায়। জনগণের দাবির মুখে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ৭ মার্চের ভাষণকে প্রচার করার দাবির মুখে ৮ মার্চ রেডিও ও টেলিভিশনে তা প্রচার করা হয়। অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধু সমান্তরালে বাংলাদেশে সরকার চালান। বিভিন্ন গণতন্ত্রপন্থি, বামপন্থি, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে অগ্রসর হয়। মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের আজাদি রক্ষা ও মুক্তি সংগ্রাম চালানোর আহ্বান জানান। জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার আহ্বান জানিয়ে উগ্র একটি বামপন্থি দল পূর্ব বাংলার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘট পরিহার করে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ের আহ্বান জানায়। পাক হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অন্ধকারে আক্রমণ চালায়। তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কণ্ঠরোধ করার জন্য ।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তারের পূর্বে কয়েকজন প্রকৌশলীর সাহায্যে তার বাসভবনে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেন। যা পরের দিন প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার ও তার স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালিকে জাগিয়ে তোলে। মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তাঁর জীবনে জনগণই ছিল তার অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তার মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন এটাই ছিল তার জীবনের মহানব্রত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এ মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তাই ছিল প্রতিনিয়ত তার মনে। যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে সৃষ্টি করেছেন একটি রাষ্ট্র। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন সফল করেছেন।
গবেষক এস.এ করিম লিখেছেন, “বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ ঐ সময়ে স্বাধীন হতে পারত কিনা সে বিষয়ে
ঘোর সন্দেহ রয়েছে।"
ড. আতিউর রহমান লিখেছেন, “এমন করে স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নিমগ্ন ছিলেন বলেই তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে।” স্বাধীনতার প্রধান রূপকার তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালির মেজাজ, আবেগ, লড়াকু মন, প্রতিবাদ, প্রতিদান, মানবিকতা, নমনীয়তা, সাহস, সকল বৈশিষ্ট্যেরই প্রতীক তিনি। এখনও তিনিই আমাদের আশা-ভরসার প্রতীক।"

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]