বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সংক্ষেপে আলোচনা কর । (Discuss Briefly the Homecoming Process of Bangabandhu.)

‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।'
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। সাড়ে সাত কোটি সাহসী বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার সশস্ত্র জনযুদ্ধের ফসল লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান দেশে ফিরে ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পূর্ণগঠন কাজে মনোনিবেশ করেন ।
বাঙালির অনন্য ঐতিহাসিক বিজয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১ বছর সময়ের মধ্যেই ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক সরকার জাতিকে একটি উত্তম সুপ্রণীত সংবিধান উপহার দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধু সরকারের এ সফলতাকে মেনে নিতে পারেনি, যার নির্মম পরিণতি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড। এমনিভাবেই জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।
পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশটির অভ্যুদয় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর হঠাৎ করে ঘটে যায় নি। সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়, বহু ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে এবং অপমান, বঞ্চনা, অত্যাচার ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির কাঙ্ক্ষিত প্রিয় স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবদান সর্বাধিক। ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ও প্রহসনের বিচার ছিন্ন করে পাকিস্তানের কারাগার থেকে বিজয়ীর বেশে বঙ্গবন্ধু ফিরলেন স্বাধীন বাংলাদেশে। তিনি জাতির জনকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলেন। এমনকি বিবিসির বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাবর্গের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি খেতাবে ভূষিত হন। তাঁর শাসনকাল ১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ - ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ অর্থাৎ ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন স্থায়ী ছিল
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া
Process of Homecoming of Bangabandhu
বাংলাদেশের বাঙালি জনতার রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় প্রত্যয়ী অনঢ় দাবি আর বিশ্ব জনমতের বিরামহীন কঠোর চাপের মুখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারে বিচারের নামে প্রহসনের দিন শেষ। বাঙালির এমনি অনঢ় দাবি আর সচেতন বিশ্ব জনমতের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক জেট বিমানে উঠিয়ে দিয়ে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে, ‘শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন।'
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির এ সংবাদে বাংলাদেশের আপামর জনতা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে, দায়িত্বশীল বিশ্ব বিবেকও আশ্বস্ত হলো বঙ্গবন্ধুর মুক্তির তথ্য পেয়ে। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী পাকিস্তানি সামরিক জেট বিমানটি ৯ জানুয়ারি ভোর ৬ টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামল, সাথে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে স্বাগত জানান
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড ও লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বললেন, 'আমি শেখ মুজিবুর রহমান।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি উচ্চারণ করতেই অভিভূত হয়ে ঊর্ধ্বতন কমান্ডো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে সম্মানজনক
কায়দায় স্যালুট দিয়ে বললেন, 'লন্ডনে আপনাকে সুস্বাগতম।'
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বপূর্ণ মুখাবয়ব উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তিনি বললেন, 'ধন্যবাদ।'
বিমান থেকে নামতেই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে, বিবিসি নির্ধারিত অনুষ্ঠান প্রচার স্থগিত রেখে বঙ্গবন্ধুর শুভাগমনের ওপর বিশেষ বুলেটিন প্রচার করতে থাকে। এভাবে বিবিসির মাধ্যমে মুহূর্তেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মহা আনন্দের বার্তাটি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রশ্ন করেন, 'মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমরা আপনার জন্য কী করতে পারি?'
জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বললেন, 'আমার দেশকে স্বীকৃতি দিন।'
ব্রিটিশ সরকার রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য নির্দিষ্ট হোটেলে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তিনি টেলিফোনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলেন। তিনি তাঁদের
১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে দেশে প্রত্যাবর্তনের কথা জানালেন।
৯ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখ সকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মিস্টার এডওয়ার্ড হীথের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর ভবনে গেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের মিস্টার হীথ বললেন, 'শেখ মুজিবুর রহমান একজন রাষ্ট্রপ্রধানই নন তিনি একটি মহান জাতির স্রষ্টা এবং বর্তমান বিশ্বের একজন বিরল জনপ্রিয় বিপ্লবী নেতা। তাঁকে সম্মানিত করে আমরা আমাদেরকে ধন্য করেছি, সম্মানিত করেছি, মহিমান্বিত করেছি।'
৯ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখ রাতে ব্রিটিশ সামরিক বিমানে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করে ১০ জানুয়ারি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নামলে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী তাঁকে প্রাণঢালা লালকাে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। এ সময় কুশল বিনিময়ের ফাঁকে বঙ্গবন্ধু বললেন, 'আমি জানতে চাই, আপনার সামরিক বাহিনীকে কখন আমার দেশ থেকে প্রত্যাহার করছেন।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সহাস্যে বললেন, 'আপনি যখনই চাইবেন।'
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে সহায়ক শক্তি ছিল ভারত সরকার আর ভারতের জনগণ। বঙ্গবন্ধু দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নেমেই দেখলেন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় জনগণ তাঁর আগমণের অপেক্ষায়, তাঁকে বরণের অপেক্ষায় সেখানে অবস্থান করছে। বিমানবন্দরে উপস্থিত ভারত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণ প্রদানের সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাষণের এক পর্যায়ে কবিতার ভাষায় বলেন, 'রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিলাম শুধু তাই।'
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু নামলেন ঢাকা বিমানবন্দরে, দেখলেন লক্ষ লক্ষ জনতা সেখানে তাঁকে বরণের অপেক্ষায়, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার রাইফেলের ফাঁকা গুলির বরণীয় শব্দে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত। লক্ষ লক্ষ উৎসাহী বাঙালি জনতা বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো তাঁকে বহনকারী বিমানের চারদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বিমানের ওপর লালসবুজের বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে মুক্ত বাতাসে। দরজা খুলে সহাস্য বঙ্গবন্ধু বেরিয়ে এসে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন বিজয়ীর বেশে।
বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণের সারবার্তা
Summary of the Address by Bangabandhu on 10th January চারদিক তখন মুখরিত ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানে স্লোগানে। বাংলাদেশের মহান স্থপতি দু'হাত নাড়তে নাড়তে বিমানের সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে নিচে নেমে এলেন। মহান রাষ্ট্রপতির শুভাগমনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাঁকে বরণ করা হলো। সামরিক বাহিনীর বিউগলে বেজে উঠল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুর। আর সেই সাথে লক্ষ লক্ষ জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।'
শেখ মুজিব ২৪ বছরের সুদীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অর্জিত আশা ও প্রত বাংলাদেশের গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। শেখ মুজিবকে ঢাকায় জানানো হয় অপূর্ব অভিনন্দন। অবিসংবাদিত প্রতি জনগণের এ অভিনন্দন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও অন্তর উৎসারিত। একজন মডারেট পলিটিশিয়ান এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক হিসেবে পরিচিত শেখ মুজিব মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন বছরের পর ব করেছেন অবর্ণনীয় নির্যাতন। অসংখ্যবার এবং সংখ্যাতীত কারণে শেখ মুজিবকে কারাবরণ করতে হয়েছে এবং জীবনের সৃষ্টিশী সময়গুলোর বিশালতম অংশ তিনি কাটিয়েছেন কারাভ্যন্তরে। এতদিনকার বিক্ষুদ্ধ জনপ্রিয় নেতা এবং প্রায় সারাজীবন বিে রাজনীতির মহানায়ক শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি এবং জাতির পিতা হিসেবে তার স্বজন অধ্যুষিত নিজ বাসভূমে প্রত্যাবর্তন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি প্রদেশে প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানে তাঁর সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যে ভাষণ প্রদান করেন তার রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় অপরিসীম
। এ ভাষণের দিকনির্দেশনা থেকেই রচিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী নীতিমালা। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি এর ভাষণের সারবার্তা হলো-
ক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রত্যয় (Belief of keeping Unhindered the Independence of Bangladesh)
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন, 'গত ৭ মার্চ আমি এ রেসকোর্সে বলেছিলাম 'দুর্গ গড়ে তোল', আজ আবার বলছি, 'আপনারা একতা বজায় রাখুন'। আমি বলেছিলাম 'বাংলাদেশকে শত্রু মুক্ত করে ছাড়ব। বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন। একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন দেশরূপেই বেঁচে থাকবে। বাংলাকে দারিয়ে রাখতে পারে এমন কোনো ব্যক্তি নাই।'
ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার (Abstraction of Indian Army)
বাঙালি জাতির কাছে বঙ্গবন্ধু কখনো কোনো কিছু অস্বচ্ছ-অস্পষ্ট রাখেন নি, বাঙালি আর বঙ্গবন্ধু চিরদিন একপ্রা হয়েছিল এবং আজও আছে। তাই তিনি তাঁর ভাষণে বাংলাদেশে ভারতীয় যে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে তাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিরূপ ধারণা সৃষ্টি না হয় সেজন্য তিনি ১০ জানুয়ারি ভাষণে তাও জাতির কাছে স্পষ্ট করে দেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে ১০ জানুয়ারি (১৯৭২) তিনি বলেন, 'আমি যখনই বলব, ভারতীয় সেনাবাহিনী তখনই দেশে ফেরত যাবে। এখনই আস্তে আস্তে অনেককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গ. দেশের স্বাধীনতা রক্ষা (Protection of Independence of the Country)
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন ৩০ লক্ষ শহিদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের মূল্যে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করা জাতির জন্য এক মহান দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, 'এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তাঁর প্রাণ দেবে। বাঙালি আর স্বাধীনতা হারাতে পারে না।
ঘ. যুদ্ধাপরাধী-দালালদের বিচার (Judgement of War Criminals Brokers)
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণে যুদ্ধাপরাধী-দালালদের বিচার প্রসঙ্গে দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, 'গত ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। তারা আমার মানুষকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। বিশ্ব এসব ঘটনার সামান্য কিছুমাত্র জানে। বিশ্বকে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বর্বর পাকবাহিনীর কার্যকলাপের সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি জাতিসংঘের নিকট।
দেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনীতি (Future State Policy of the Country)
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি কেমন হবে সে বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।
চ. দেশের স্বাধীনতা অর্থবহ করার ঘোষণা (Declaration of Meaningful Independence of the country)
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার ব্যাপারেও নির্দেশনা প্রদান করেন। দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজকের এ শুভলগ্নে আমি সর্বপ্রথম আমার দেশের সংগ্রামী কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সেসব বীর শহিদদের কথা স্মরণ করছি, যারা গত নয় মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমার জীবনের স্বাদ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার সোনার বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।" বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা (Parliamentary Government System of Bangladesh) ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের ভিত্তি ছিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় ঘোষিত স্বাধীনতার সনদ। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি থাকবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন এবং প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
(সূত্র : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান, ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে পর্যন্ত)
১০.১.৪. বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন
Formation of the Cabinate of the Peoples Republic of Bangladesh Lead by Bangabondhu
১১ জানুয়ারী, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জারিকৃত 'অস্থায়ী সংবিধান আদেশ এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করে ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই দিন অর্থাৎ; ১২ জানুয়ারি তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। যেমন :
ক্র. নং
নাম শেখ মুজিবুর রহমান পদবি প্রধানমন্ত্রী
2 সৈয়দ নজরুল ইসলাম त्रী
৩ তাজউদ্দিন আহমদ त्रী
8 ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মন্তী
৫ খন্দকার মোশতাক আহমদ মন্ত্রী
৬ আব্দুস সামাদ আজাদ মন্ত্রী
৭ এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান
৮ শেখ আব্দুল আজিজ মন্ত্রী
ইউসুফ আলী মন্ত্রী
১০ জহুর আহম্মদ চৌধুরী মন্ত্রী
১১ ড. কামাল হোসেন মন্ত্রী
১২ ফনীভূষণ মজুমদার মजী
১৩ এম মতিউর রহমান মগ্ৰী
১৪ মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী মন্ত্রী
১৫ শামসুল হক মন্ত্রী

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]