সামাজিক ইতিহাস হচ্ছে অতীত সমাজস্থ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের কার্যাবলির বিজ্ঞানভিত্তিক বর্ণনা ও বিশ্লেষণ। অন্যদিকে খনন কাজ থেকে উদ্ধারকৃত হাতিয়ার তীর ধনুক, স্থাপত্য, ফসিল, আসবাবপত্র ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব সমাজ সম্পর্কে গবেষণার বিষয়ই হচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব। নৃবিজ্ঞানী ই.বি. টেইলর-এর মতে, প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে অতীতের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কিত পাঠ। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, প্রত্নতত্ত্ব ঐসব সমাজের অধ্যয়ন যে সমাজ ও সংস্কৃতির লিখিত কোনো দলিল বা ইতিহাস জানা নেই ।
সামাজিক ইতিহাসের সাথে প্রত্নতত্ত্বের যেমন রয়েছে গভীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আবার অন্যদিকে রয়েছে সুস্পষ্ট পার্থক্য।
ইতিহাসের সূত্র ধরেই যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞান সম্প্রসারিত হয়ে থাকে তেমনি প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব সমাজের জীবনযাত্রা প্রণালি জানার কোনো বিকল্প পন্থা নেই। অর্থাৎ সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের জ্ঞান একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এদের একটিকে ছাড়া অপরটি অচল। নিচে সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা হলো—
১. প্রাচীন সভ্যতার অনুসন্ধান : প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান করতে গিয়ে মানুষের ঘাত-প্রতিঘাত, রুচি-অভ্যাস প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে এসব মানুষের সামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছবি সামাজিক ইতিহাসে ফুটিয়ে তোলা হয়। সুতরাং সামাজিক ইতিহাস প্রাচীন সভ্যতার অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য প্রত্নতত্ত্বের সাহায্য গ্রহণ করে থাকে।
২. প্রাচীন মানুষের জীবন প্রণালি : সামাজিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিভিন্ন খনন কার্যের মাধ্যমে আবিষ্কৃত নিদর্শনাবলি থেকেই সে যুগের সমাজব্যবস্থা, ধর্ম, দর্শন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায় ।
৩. প্রাগৈতিহাসিক কালের শ্রেণিবিভাগ : খনন কার্য থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতেই ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ইতিহাসের সময়কে শ্রেণি বিভাজন করেছেন। সুতরাং উভয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
৪. আলোচ্য বিষয়ের সামঞ্জস্য : সামাজিক ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় ব্যাপক হলেও সমাজ ও সংস্কৃতির আলোচনায় প্রত্নতত্ত্ব অনেকটাই এক ও অভিন্ন। কালের বিবর্তন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সবই প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকদের কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং এদিক থেকেও সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য
Difference between Social History and Archeology
নিচে সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো-
১. প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের জন্য একজন প্রত্নবিদকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অপরদিকে একজন সমাজ ঐতিহাসিকের
তেমন কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না।
২. প্রত্নতত্ত্ব মানব সমাজের অতীত নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করে। অপরদিকে সামাজিক ইতিহাস মানুষ ও সমাজের অতীত
জীবনের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ।
৩. সামাজিক ইতিহাসের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। পক্ষান্তরে, প্রত্নতত্ত্বের পরিধি অপেক্ষাকৃত কম বিস্তৃত। সামাজিক ইতিহাস যেখানে অতীত মানব সভ্যতার সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও প্রথা, উত্থান-পতন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে, প্রত্নতত্ত্ব সেখানে কেবল অতীত সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করে ।
৪. সামাজিক ইতিহাসের মূল উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে— কিংবদন্তি, ঐতিহাসিক জনশ্রুতি, ধর্মীয় শাস্ত্র, চিঠিপত্র, দলিল,
দস্তাবেজ। অপরদিকে প্রত্নতত্ত্বের উৎস হলো কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, সামাজিক ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয় দুটোই মানুষকে অধ্যয়ন করে। দুটো বিষয়ই মানবিক বিজ্ঞান। আলোচনায় আমরা দেখেছি, বিষয় দুটোর মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গভীর মিল রয়েছে এবং পরস্পর নির্ভরশীল। বস্তুত সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম ভিত্তিভূমি হলো প্রত্নতত্ত্ব।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত