পাশ্চাত্যে/ ইউরোপে পুঁজিবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ Growth and Development of Capitalism in Europe/ West

পাশ্চাত্যের সমাজ জীবনে সামাজিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে আমূল পরিবর্তনের ধারার সূচনা হয়েছিল মূলত ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দের শিল্প বিপ্লবের ফলে। মানুষ ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিল সামন্ততন্ত্রের অবসানের পর এবং যন্ত্র কল-কারখানায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যই। এভাবেই পুঁজিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল বস্তুত ইংল্যান্ডে যে নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত উন্মোচক হয়েছিল শিল্প বিপ্লবের পর এর ফলেই পুঁজিবাদের বিকাশ পূর্ণভাবে হতে লাগল। পাশ্চাত্য/ ইউরোপে পুঁজিবাদ বিকাশের পেছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ এবং বিরাট প্রেক্ষাপট পুঁজিবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হতো মূলত ইংল্যান্ডের ১৮ শতকের শেষ ভাগ থেকে ১৯ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কে।
মার্কসীয় ও ওয়েবারীয় দৃষ্টিভঙ্গি হলো পুঁজিবাদ বিকাশের অন্যতম প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদ বিকাশের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজ ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেক মতভেদ বিদ্যমান ছিল। সুতরাং বিশেষ কোনো মতবাদ বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পক্ষপাত না দেখিয়ে নিম্নে পুঁজিবাদ বিকাশের প্রধান কারণসমূহ তুলে ধারা হলো-
১. কৃষি অর্থনীতির পরিবর্তন (Change of agricultural economy) : সামন্ত সমাজের অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর। কিন্তু ক্রমান্বয়ে যখন পণ্য সরবরাহ বেড়ে যায় এবং কল কারখানার সৃষ্টি হয় তখন সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোর মোড় ঘুরে যায়। বণিক শ্রেণি আইন করে জমিদারের চাষীদেরকে নিজেদের কল কারখানায় নিয়োগ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। বণিক শ্রেণি সমাজের একচ্ছত্র আধিপত্য লাভের সুযোগ পেয়ে যায়, সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা শিথিল হয়ে পড়ার কারণে। ২. সামন্ততন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ও পতন (Full Development of Feudalism and it's Downfall) : ইউরোপে সামন্ত উৎপাদন কৌশল পূর্ণ উৎপাদন কৌশল হিসেবে বিকশিত হয়। পূর্ণ বিকশিত সামস্তপ্রথার গর্ভ থেকে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে। আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে, মধ্যযুগের শেষার্ধে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি বর্তমান থাকলেও এর মধ্যে ধনতান্ত্রিক সম্পর্ক ব্যবস্থায় নয়া উৎপাদিকা শক্তিসমূহ দৃঢ়ভিত্তি পেতে থাকে। এমতাবস্থায় সামন্ত প্রথা আবার নতুন উৎপাদন শক্তির বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং পুরাতন উৎপাদন ব্যবস্থা ও উৎপাদনের সামাজিক সম্পর্ক উচ্ছেদের মাধ্যমে একটা নয়া আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর এরূপ অনিবার্যতার ফলশ্রুতিতেই পতন হয় সামন্ততন্ত্রের এবং অনশন ঘটে পুঁজিবাদের।
পুঁজিবাদ একটি বিশেষ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নাম, যেখানে ব্যক্তি মালিকানা ও মুনাফার নিশ্চয়তা থাকে। এ সমাজব্যবস্থা চিরন্তন বা শাশ্বত নয়। এটা বিকাশ লাভ করে বা গড়ে ওঠে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডে এর পূর্ণ বিকাশ লক্ষ করা যায়। এরপর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে এর বিস্তৃতি ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে উপনিবেশাকারে তা বিশ্বকেই প্রায় গ্রাস করে ফেলে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মূলধনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, শ্রমের বিশেষীকরণ ও শ্রমবিভাজন জটিল রূপ ধারণ করে। ফলে দ্রব্যের বিনিময়, উৎপাদন, ব্যক্তি বিশিষ্ট ও সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি রাষ্ট্রের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে না। মোটকথা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের এক অদ্ভুত প্রকাশ ঘটতে থাকে এই পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায়।

৩. রেনেসাঁর অবদান (Contribution of penaissance) : পঞ্চাদশ শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে ইউরোপে চিন্তার রাজ্যে বিপু দেখা দেয় এবং গির্জার কুপমণ্ডূকতা অতিক্রম করে গোঁড়ামি বর্জিত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমস্ত কিছুকে বিচার বিশ্লেষণের প্রবণতা দেখা দেয়। জ্ঞান জগতের এ বিপ্লবকে ইউরোপের নব জাগৃতি বা রেনেসাঁ নামে অবহিত করা হয়। রেনেসাঁর মাধ্যমে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি বিরূপতা হ্রাস পায় এবং বুর্জোয়া নিজ নিজ ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ফলে পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়।
৪. বণিক শ্রেণির উদ্ভব (Rise of merchant class) : সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন কি এর পূর্ব হতেই বণিক শ্রেণির কার্যক্রম
শুরু হয়। তাদের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবর্তিত হয় এবং পুঁজি গঠন শুরু হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে বাণিজ্যিক ঘনতন্ত্র বণিক শ্রেণিরই সৃষ্টি। পণ্ডিত অমিত সেন তাঁর ইতিহাসের ধারা গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেন যে, বণিক শ্রেণি বাণিজ্যিক তৎপরতার মাধ্যমে প্রচুর পুঁজির সমাবেশ ঘটায়। এভাবে বণিকের মূলধন শিল্প মূলধনে এবং বণিক পুঁজিপতি শিল্প পুঁজিপতিতে পরিণত হলে ইউরোপে শিল্প সমাজের গোড়া পত্তন ঘটে।
৫. জাতীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা (Establishment of national monarchy) : মধ্যযুগে ইউরোপে জাতীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাত পুঁজিবাদ বিকাশের একটা যোগসূত্র রয়েছে। রাজতন্ত্রের উত্থান শুধু প্রভুত্বই নিশ্চিহ্ন করেনি, বুর্জোয়ার বিকাশকেও পালন করেছিল। ৬. শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) : ইউরোপ পুঁজিবাদ বিকাশে কৃষি ও শিল্প বিপ্লব (ইংল্যান্ডে) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৭৬২ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে পুরাতন যন্ত্রপাতির স্থলে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতিকে উৎপাদনের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করা হয়। শিল্প বিপু পুঁজিবাদ বিকাশের একটি প্রত্যক্ষ কারণ যা ধনতন্ত্রের অগ্রগতিতে বিপুলভাবে সহায়তা করেছিল।
৭. ঔপনিবেশিক নীতি (Colonial Policy) : পঞ্চদশ হতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের ঔপনিবেশিক নীতি পুঁজিবাদ বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। এ সময় আমেরিকা ও ভারত আগমনের নতুন পথ আবিষ্কার নবাগত বুর্জোয়া শ্রেণিকে নতুন ক্ষেত্র দান করে। উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ফলে তথায় বহুসংখ্যক ঔপনিবেশিক বাজার গড়ে ওঠে। এখান থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং এ সকল বাজারে উৎপাদিত পণ্যাদি বিক্রির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত অর্থ শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা হয়। ফলে পুঁজিবাদের বিকাশ সহজতর হয়।
৮. বাণিজ্য বিপ্লব (Commercial Revolution) : ভৌগোলিক আবিষ্কারের অব্যবহিত ফল বাণিজ্য বিপ্লব। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ইউরোপের বহির্বাণিজ্য ভূমধ্য সাগরে সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবহন ও অন্যান্য বাধা বিপত্তি ছিল সীমাহীন। কিন্তু ভৌগোলিক আবিষ্কার তাদের বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি করে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরে ছড়িয়ে দেয়। ভৌগোলিক আবিষ্কার বিশেষ করে জনবিরল অথচ উর্বর ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমেরিকার নব আবিষ্কৃত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড অভূতপূর্ব ও অচিন্তনীয় বাণিজ্যের সুযোগ উন্মোচিত করেছিল। বাণিজ্য বিপ্লবের ফলে সমগ্র বিশ্ব বণিকের কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং বণিক শ্রেণি অর্থে, বিত্তে ও সম্পদে স্ফীত হয়ে ওঠে। এ ঘটনাটি পুঁজিবাদ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
৯. মুদ্রা অর্থনীতি (Introduction of money economy) : অতীতে দ্রব্য বিনিময় প্রথা (Barter system) প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে স্বর্ণ, রৌপ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হেতু অর্থ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ব্যবসা বাণিজ্য সহজ করতে মানুষ কাগজের নোট প্রচলন করে। অনেকের মতে মুদ্রা অর্থনীতি প্রবর্তন না হলে পুঁজিবাদের বিকাশ ও প্রসার সম্ভবপর হতো না ।
১০. যাতায়াত ব্যবস্থার অগ্রগতি (Development in transport system) : যাতায়াত ব্যবস্থার অগ্রগতি বা আনুকূল্য পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদ বিকাশে সহায়তা করেছিল। যাতায়াতের ক্ষেত্রে রেলগাড়ির প্রবর্তন এবং স্টীমার আবিষ্কারের ফলে জল ও স্থলে যাতায়াত ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়।
১১. শ্রমিক শোষণ (Labour exploitation) : পুঁজিবাদের বিকাশ ও দ্রুত সম্প্রসারণে শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণের বিষয়টি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক যুগে পুঁজিপতির পুনঃপুন উন্নতি ঘটেছিল। শিল্পপতি ছিল কারখানা যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, উৎপন্ন দ্রব্য তথা উৎপাদনের সকল উপকরণের একচেটিয়া মালিক। উৎপাদনের উপকরণের মালিক (Owner of the means of production) শ্রমিকের শ্রম শক্তিকে চুরি করে বা উদ্বৃত্ত মূল্য (Surplus value) শোষণ করে লাগামহীন মুনাফা অর্জন করে। শ্রম শোষণ ও মুনাফা লুণ্ঠনের সাথে পুঁজিবাদ বিকাশের গভীর যোগসূত্র রয়েছে।
12. ব্যক্তি সম্পত্তির পবিত্রতার ধারণা (Private property is sacred) : ব্যক্তিগত সম্পতি পণি
প্রাকৃতিক এবং আইনগত অধিকার। ইহা স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রতীক, ব্যক্তিগত সম্পত্তি উন্নতি ও আগতির অ যোগায় ইত্যাদি ধারণা এবং দর্শন পাশ্চাত্য পুঁজিবাদ বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছিল বলে অনেক পণ্ডিত। ১৩. শহর ও নগরের পত্তন (Establishment of town and city): পুঁজিপতিরা তাদের ব্যবসা-বাণিজে তাদের মিল কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন নতুন শহর ও নগর পত্তন করতে শুরু করে। কারণ ব্যবসা
বা উন্নতির আবশ্যকীয় সুবিধাদি একমাত্র শহরেই পাওয়া সম্ভব ছিল। অধিকন্তু জনসাধারণের বাণিজ্যিক উৎপাদন
ও ব্যবসায়িক তৎপরতা ছিল শহরকেন্দ্রিক। ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদের বিকাশের ফেলে শহর ও নগরের বিকাশ বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছিল।
১৪. সামন্ততন্ত্রের রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা (Political hindrances of feudalism) : ग প্রধার ইতিহাস কৃষক ও সামন্ত প্রভুদের মধ্যকার তীব্র শ্রেণি দ্বন্দ্বের ইতিহাস। মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে এসে এ শ্রেণি পান তীব্র আকার ধারণ করে। কৃষক বিদ্রোহ সামন্ত প্রথার মৃত্যু ডেকে আনে। তাছাড়া সামন্ততন্ত্র ও ক্যাথলিক চার্চের সাথে রাজতন্ত্রের স্বর সৃষ্টি হয়। সামন্ততন্ত্রের এসব রাজনৈতিক অসুবিধাসমূহ বুর্জোয়া শ্রেণির হাতকে শক্তিশালী করেছিল।
১৫. ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ( Reformation movement) : ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, ক্যাথলিক চাে নানাবিধ সংস্কারের প্রয়োজনেই। সামস্ত যুগে চার্চের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা থাকায় চার্চের পাদ্রীরা জনগণকে শোষণ করতে থাকে। লুথার ও ক্যালবিনও পাদ্রীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁদের আন্দোলনের মূলনীতি ছিল মানুষ পরিশ্রম করবে এবং মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের ভোগকে নিশ্চিত করবে ঈশ্বরকে সই করার জন্য। এ মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং পুঁজি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
১৬. লেইসেজ ফেয়ার নীতি (Laissez. fair policy) : ধনতন্ত্রের উত্থানের জন্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রথা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্ব না থাকলে সম্পদ পুঞ্জিভূত করা সম্ভবপর হতো না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে ফিজিও ত্রুটি দার্শনিকগণ ব্যক্তির আর্থিক উন্নতির পথে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করেন। সমকালীন আরও অনেকে তাদের সাথে একমত হয়ে বলেন যে, রাষ্ট্রের কাজ হলো জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষা করা। অর্থাৎ একটি মুক্তি অবাধ ও প্রগতিশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সেইসেজ ফেয়ার নীতির সূত্রপাত ঘটে। এ নীতি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির বিপুল সম্পদ হস্তগত করার সুযোগ দেয়। বিষয়টি পুঁজিবাদ উদ্ভবের ক্ষেত্রে বিপুলভাবে সহায়তা করেছিল। ১৭. নতুন দেশ আবিষ্কার (Discovery of new land) : চতুর্দশ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে ইউরোপের দুঃসাহসী নাবিকরা জলপথে পারিপার্শ্বিক বিশ্বকে আবিষ্কারের উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে ১৪৯২ সালে আবিষ্কৃত হয় আমেরিকা এবং ১৪৯৮ সালে ভারতে তথা প্রাচ্যে আসার জলপথ আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া ইউরোপের সমুদ্রতরী ১৫১১ খ্রিষ্টাব্দে সিংহলে ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে নিউগিনিতে এবং ১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে আগমন করে। এ সকল নতুন দেশের বিপুল সম্পদরাজি ইউরোপীয়দের হস্তগত হয়। এতে পুঁজিবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়।
১৮. আদর্শগত কারণ (Reasons for Idealism) : ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থায় কতগুলো আদর্শগত কারণ পুঁজিবাদ বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। রেনেসাঁর আন্দোলন ছবির ও নিশ্চল ভাবধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। পুঁজিবাদ অনুসারী ধর্মীয় নেতারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে উৎসাহিত করে। এর ফলে মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চয় হয় এবং পুঁজিবাদ সৃষ্টি হয়।
১৯. অ্যাডাম স্মীথের চিন্তাধারা (Thinking of adam smith) : বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মীথ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ঘোষণা দেয় যে, শিল্প বাণিজ্য এবং অন্যান্য আর্থিক ক্রিয়াকর্মে ব্যক্তি থাকবে স্বাধীন, ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের অবাধ স্বাধীনতা থাকবে এবং এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ অমঙ্গল ডেকে আনবে। তার এরূপ চিন্তাধারা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে তথ্য পুঁজিবাদের বিকাশে যথেষ্ট শক্তি যোগায়। পরিশেষে বলা যায় যে, পাশ্চাত্যে বিভিন্ন শক্তির সমন্বয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]