কালভিন মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জোন ক্যালভিন (John Kalvin)। তিনি সুইজারল্যান্ডের ইতিহাসে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন ফ্রান্সের অধিবাসী। তিনি ১৫০৯ খ্রিষ্টাব্দে পিকাভির নয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার মা মারা যান, তাঁর পিতা ছোট ছেলে মেয়েদেরকে পছন্দ করতেন না। কাজেই ক্যালভিনের লালন পালনের ভার অর্পিত হয়েছিল তার পিতার এক অভিজাত বন্ধুর উপর। উচ্চ শিক্ষার জন্য ক্যালভিনকে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার রুক্ষ মেজাজ ও অস্বাভাবিক আচরণের ফলে তিনি সেখান থেকে বহিষ্কার হন। পরে তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছায় অর্লিনে গেলেন আইন বিদ্যা শিক্ষার জন্য। এখানে তিনি লুথারের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন এবং প্রচলিত ধর্মের প্রতি বিরাগ ভাজন হলেন। ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের জন্য তিনি সরকার কর্তৃক আক্রমণের সম্মুখীন হন এবং পরিশেষে তিনি সুইজারল্যাণ্ডে চলে যান। কিন্তু তিনি কিছু কালের জন্য বেসেলস এ অবস্থান করেন এবং পরে জেনেভায় ফিরে আসেন। তথায় ঐ মুহূর্তে চলছিল বেদনাদায়ক রাজনৈতিক বিপ্লব। তিনি ১৫৪১ খ্রিঃ সরকার ও ধর্মের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য প্রচার শুরু করেন এবং প্রভাব বিস্তার করে ফেলেন। ক্যালভিনের মতাদর্শ প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর রচিত 'Institutes of the christian religion' গ্রন্থে যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দে। এই গ্রন্থটি বহুবার পরিশোধিত এবং পরিবর্ধন হয়েছিল। সেন্ট অগাস্টিনের অনুরূপ ছিল তার ধারণা। তিনি চিন্তা করতেন সমগ্র বিশ্ব পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করে এক সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর, তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রশংসার জন্য। কারণ আদমের পদস্খলনে সকল মানুষই প্রকৃতিগতভাবে পাপী। অসৎ প্ররোচনার দ্বারা মানুষের হাত পা বাঁধা কাজেই তার উদ্ধারের কোনো উপায় নেই। ক্যালভিনের মতে এসব স্বত্ত্বেও ঈশ্বর তাঁর নিজের ইচ্ছায় পূর্ব থেকেই কিছু মানুষের জন্য শাশ্বত মুক্তির ব্যবস্থা এবং অবশিষ্ট্যের জন্য দোযখের নির্মম শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। মানব জাতি কোনোভাবেই তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে না, জন্মের পূর্ব থেকেই মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে। কেউবা ঈশ্বরের আর্শিবাদ পুষ্ট আবার কেউবা অভিশপ্ত। ক্যালভিনের মতাদর্শ এক বিশেষ ধরনের ব্যক্তিত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাদের Worldly asceticism বা পার্থিব ও পশ্চাত্য এক এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্যালভিন তার অনুগামীদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, পার্থিব জীবনে ভালো কাজ করলেই যে মুক্তি লাভ করবে এমন নয় কারণ তা পূর্ব নির্ধারিত। সুতরাং মানুষকে কঠোর পরিশ্রম নীতিকেই ধর্মীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুক্তি পাওয়ার আশায় নয়। এ ধরনের মতবাদ ক্যালভিনের অনুগামীদের মধ্যে অধিক পরিশ্রম করে অধিক আয় করার নীতিকে গ্রহণ করে। বস্তুত যেহেতু যে নীতিমালা জাগতিক কাজকেই যথেষ্ট মূল্যবান মনে করে এবং দৈনন্দিন কাজকে পবিত্র কাজ মনে করে। সেজন্য পার্থিব কাজেই তাদের মঙ্গল নিহিত। এ মূল্যবোধের গ্রহণকারী হয়ে তারা অর্থ উপার্জনে অধিক আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের ক্যালভিনমতবাদ বিভাগ হতে ক্যাথলিক ধর্মের চরম আধ্যাত্মিক জীবনের পরিবর্তে ইহজাগতিক জীবনের স্পর্শ দেয়। ক্যালভিনবাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো এর Doctrine of Predestination এবং asceticism। প্রথমটির বিষয়বস্তু হলো ক. মানুষ ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্টি, খ. কতটুকু তিনি ব্যক্ত করেন ততটুকু ছাড়া ঈশ্বরের মনোভঙ্গি জানা দুস্কর, গ. ভাগ্য পূর্ব নির্ধারিত বিধায় সামান্য সংখ্যক মানুষই পরিত্রাণ পেতে পারে। এসব ধারণা মানুষের অন্তরে গভীর এক শূন্যতার সৃষ্টি করে এবং এই বোধ থেকেই তার মনে পুঁজিবাদী স্পিরিট বা উদ্দীপনার জন্ম দেয়। মানুষের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক হয়ে পরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। চার্চের মাধ্যমে ঈশ্বর প্রাপ্তির ইচ্ছা বিদূরীত হয় যা কিনা ক্যালভিনবাদের একটি মৌলিক বিষয় । মানুষ ভাবতে শেখে যে, অতিরিক্ত পার্থিব কর্মকাণ্ড পরিত্রাণ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত হবার লক্ষণ। তবে এটি পরিত্রাণের উপায় নয় বরং পরিত্রাণ সংক্রান্ত সন্দেহকে বিদূরীত করে। মধ্যযুগে ইউরোপে খ্রিষ্ট জগতের দ্বিধাবিভক্তির মূলে ছিল ক্যাথলিক চার্চের অত্যাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে লর্ড ক্যালভিন ( Lord Calvin) এবং মার্টিন লুথারের (Martin Luther) নেতৃত্বে সংঘটিত অগণিত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষের বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহীরাই ইতিহাসে প্রটেস্ট্যান্ট নামে পরিচিত। প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্ট ধর্মের এতদিনকার পুরানো ধর্মীয় মূল্যবোধকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রামে লিপ্ত হয়। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা অনেক নতুন জীবন ধারণা ও মূল্যবোধ প্রচার করে যা চিরাচরিত ক্যাথলিক ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে পৃথক। এই নতুন মূল্যবোধ এবং জীবন ধারণা প্রটেস্ট্যান্ট নীতিবোধ বা নীতিমালা নামে পরিচিত। এই নীতিমালা ধর্মকেন্দ্রীক এবং জীবন বিমুখ নয়, বরঞ্চ সেগুলো মানব কল্যাণমুখী। প্রটেস্ট্যান্ট নীতিমালার একটি বিশেষ দিক হচ্ছে পার্থিব কৃচ্ছতা সাধন (Worldly asceticism ) । পার্থিব সম্পদ এবং ভোগের ব্যাপারে সংযমী হওয়া পার্থিব কৃচ্ছতা সাধন নীতির মূল কথা ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত