ইতিহাস ও কাল বিভাজন Periodisation of History

মানব ইতিহাসের গতি স্থির নয়। মানব ইতিহাস শুরু থেকে আজ অবধি চলমান। মানব ইতিহাস অর্থ শুধুমাত্র অতীত জীবন দশা নয়। এর অর্থ পরিবর্তন ও রূপান্তর ।
সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষ বন্য দশা ও বর্বর দশা অতিক্রম করে সভ্যযুগে পদার্পণ করে। তাই বলা যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনচারণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ বন্য পশুর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে হাতিয়ার উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিকারি জীবন গড়ে তোলে। সে যুগে পাথর ছিল মানুষের একমাত্র হাতিয়ার। সুতরাং বলা যায়, প্রস্তর যুগ হচ্ছে— প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরের অস্ত্রশস্ত্র, তার ব্যবহার ও কলাকৌশলকে বুঝায়। এসব হাতিয়ারের ব্যবহারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে, তৎকালীন মানুষের কর্মকুশলতা ও সাংস্কৃতিক জীবনের অভিব্যক্তি ।
সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ১৯ লক্ষ বছর আগে হোমো হেবিলিস মানব প্রজাতিরা আফ্রিকায় বসবাস করত। তারা পাথরের ব্যবহার জানত। আনুমানিক ৩০০০ খ্রিঃপূর্ব অব্দ থেকে তৎকালীন মানুষের কাছে পাথরের ব্যবহার মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। আনুমানিক প্রায় পঁচিশ লক্ষ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণকারী মানুষরা যূথবদ্ধভাবে জীবন যাপনের মধ্যদিয়ে সামনের দিকে পথ চলা শুরু করে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের এই সমাজবদ্ধ রূপ বিবর্তনের অনেকগুলো ধাপ বা পর্যায় অতিক্রম করেছে।
ইতিহাস ও কাল বিভাজন
Periodisation of History
বিবর্তনের ধারায় প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর পূর্বে হাতিয়ার ব্যবহারকারী মানুষের আবির্ভাব হয় বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা পোষণ করেছেন। তারা আরও ধারণা করেছিলেন যে, প্রায় ৫০০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল এবং ৩০০ কোটি বছর পূর্বে এ পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল। যা থেকে বিবর্তনের ধারায় সংস্কৃতি সৃষ্টিকারী মানুষ কতদিন পূর্বে এ পৃথিবীতে আগমন করেছিল, তা বলা দুস্কর ।
ঐতিহাসিকগণ মানব সমাজকে জানতে তাই ইতিহাসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ (Pre-historic Age );
২. প্রায় ঐতিহাসিক যুগ (Proto-historical Age);
৩. ঐতিহাসিক যুগ (Historic Age)।
নিম্নের ছকের মাধ্যমে পৃথিবীর বিবর্তন ধারা সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের কাঠামো উপস্থাপন করা হলো-
ইতিহাসের সময়
প্রাগৈতিহাসিক যুগ (Pre-historic Age)
প্রায় ঐতিহাসিক যুগ
ঐতিহাসিক যুগ ( Historic Age)।
(Proto-historical Age )
প্রাচীন যুগ Ancient Age
মধ্য যুগ Medieval Age
আধুনিক যুগ Modern Age
বর্ণিত ছকের বিভিন্ন যুগের কাঠামোর বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ (Pre-historic Age) : পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল অতি নগণ্য অবস্থা থেকে। তখন মানুষ সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি-নির্ভর ছিল। মানুষকে সভ্য জগতে পদার্পণ করতে প্রথমে বন্যদশা ও পরে বর্বরদশা অতিক্রম করতে হয়েছে। সাধারণত লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালই ছিল পূর্বযুগ। তাই এ লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্বকালের সময় ‘প্রাগৈতিহাসিক যুগ' নামে পরিচিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন দেখে তখনকার সমাজের জীবন চারণ সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা লাভ করা যায়। সুতরাং মানব সমাজের বা মানব ইতিহাসের যে অংশের কোনো লিখিত বিবরণ নেই, সে সময়কালকেই মূলত প্রাগৈতিহাসিক যুগ নামে অভিহিত করা হয়। ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দ হতে প্রাগৈতিহাসিক যুগ শুরু হয়ে বর্ণমালা ও লিখিত ভাষা আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সমাপ্তি হয়। ২. প্রায় ঐতিহাসিক যুগ (Proto-historical Age) : আদি ঐতিহাসিক যুগকে ঠিক ঐতিহাসিক যুগের পূর্বক্ষণ বলা হয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বৈদিক যুগকে আদি ঐতিহাসিক যুগ বলে পণ্ডিতগণ মনে করেন। এ যুগে বেদ উপনিষদ মুখে মুখে এক হতে অপরের কাছে বিতরণ করা হতো। সে যুগে লেখা জানা থাকলেও বেদ উপনিষদ কেউ তখন লিখে রাখেননি। এ-যুগ হচ্ছে মানব সভ্যতার প্রারম্ভিক স্তর। কৃষি কাজের সূচনা, মৃৎপাত্র তৈরি, স্থাপত্য শিল্পের উন্নতি প্রভৃতি এ সময়ে বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। অনেক ঐতিহাসিক এই দুই যুগের মাঝখানে স্বল্পকাল স্থায়ী ঐতিহাসিক যুগের অস্তিত্বের কথাও স্বীকার করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতা ও সুপ্ত ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারণ এ সভ্যতার প্রাপ্ত নিদর্শন ও সিলমোহরে বর্ণমালা খচিত থাকলেও সেগুলো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। "Proto Historic Age'-এর আলোচনার সাথে বৈদিক যুগের আলোচনা জড়িত।
৩. ঐতিহাসিক যুগ (Historic Age) : সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মানুষ বর্ণমালা ও লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে এবং তখন থেকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং ঐতিহাসিক যুগের যাত্রা শুরু হয়। মূলত বর্ণমালা ও লিখিত ভাষা আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই এ ঐতিহাসকি যুগের শুরু হয়েছিল। সুতরাং মানব সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিবর্তনের ধারায় ঐতিহাসিক যুগ অব্যাহত আছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ ঐতিহাসিক যুগকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ক. প্রাচীন যুগ (Ancient age) : প্রাচীন যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কৃষি কাজের সূচনা এবং স্থায়ী বসতির উদ্ভব ঘটানো। প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় প্রাচীন সভ্যতাসমূহ গড়ে উঠে এবং বিকাশ লাভ করে। যেমন- মেসোপটেমীয়, মিশরীয়, চৈনিক, সিন্ধু, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা ইত্যাদি। এ যুগের সময়কাল, ঐতিহাসিককালের শুরু থেকে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টীয় ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে প্রাচীন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খ. মধ্যযুগ (Medieval age) : মধ্যযুগ পৃথিবীর ইতিহাসে 'অন্ধকার যুগ' হিসেবে খ্যাত। এ যুগে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে এবং সামাজিক স্তরবিন্যাস ও অসমতা প্রকট আকার ধারণ করে। ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রোম সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত সময়কে পৃথিবীর ইতিহাসে 'মধ্যযুগ' বলা হয়। সুতরাং এ যুগে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক এক কথায় সকল কর্মকাণ্ডে ধর্মের প্রভাব ছিল অপরিসীম।
গ. আধুনিক যুগ (Modern age) : ১৪৫৩ সাল থেকে আধুনিক যুগের যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত এ যুগটি বিদ্যমান ছিল। আধুনিক যুগকে আবার উত্তর-আধুনিক যুগে (Post Modern age) ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৪৫ সালের) পর থেকে যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন ঘটতে থাকে, তখন থেকেই উত্তর-আধুনিক যুগ শুরু হয়। সুতরাং আধুনিক যুগে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
২. প্রাক-পাথরের যুগ বা ঊষা যুগ
Eolithic Age
সমাজ ও নৃবিজ্ঞানীদের মতে প্রস্তর-পূর্ব যুগ থেকে আদিম মানুষ প্রস্তর যুগে উত্তরণের প্রেরণা পেয়েছিল। সে সময় হতেই যেখানে যে অবস্থায় পাথর পাওয়া গেছে সেটাকে সেভাবেই কাজে লাগানো হয়েছিল। অনেক ভূ-বিজ্ঞানী প্রাক পাথরের যুগের অস্তিত্ব বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে Harry Elmer Burns বলেছেন যে, সত্যিকার অর্থে যদি প্রাক পাথরের যুগ থেকেই থাকে তাহলে তা শুরু হয় কোনো এক সুদূর অতীতে এবং শেষ হয় প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে। লিখিত তথ্য উপাত্ত না থাকার কারণে প্রাচীন মানুষের জীবন গঠন, প্রকৃতি, ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী, অলংকার, স্থাপত্য, হাতিয়ার, গুহাচিত্র কিংবদন্তি, ধর্মগ্রন্থ, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান এবং মানুষের সংঘবদ্ধভাবে বসবাসের জীবন প্রণালি থেকে তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এযুগের হাতিয়ারের নিদর্শন হচ্ছে নুড়ি পাথর। বড়জোর একটু আধটু ঠুকে মানুষ অস্ত্র হিসেবে এসব পাথর ব্যবহার করত। প্রাক-পাথরের যুগে মানুষের তৈরি হস্তশিল্প বা কোনো প্রকার শিল্প কর্মের নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
ইতিহাসবিদরা প্রাচীনকালকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. প্রাক-পাথরের যুগ;
২. প্রস্তর যুগ ও
৩. ধাতুর যুগ ।
প্রাক পাথরের যুগকেই ঊষা যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক বার্নস বলেছেন- যদি সত্যিকার অর্থে প্রাক-পাথরের যুগ বলে কোনো যুগ থেকে থাকত তা আনুমানিক দশ লক্ষ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে শুরু হয়ে প্রায় তিন লক্ষ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে সমাপ্তি ঘটে। সুতরাং এ যুগকে মানব জাতির উৎকর্ষের প্রাথমিক স্তর বলে অভিহিত করা হয়।
প্রাক-পাথরের যুগের বৈশিষ্ট্য
Characteristics of Eolithic Age
প্রাক-পাথরের যুগের মানুষের ব্যবহার্য প্রধান জিনিসপত্রের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. খাদ্য (Food) : খাদ্যের জন্য মানুষ পুরোপুরিভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। আহরণ, জোগাড়, শিকার ও সংগ্রহ ছিল খাদ্য নিশ্চয়তার মাধ্যম। মানুষের খাদ্যের অনিশ্চয়তা বলতে কিছুই ছিল না। সুতরাং ফলমূল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ, লতা গুল্ম, শামুক-ঝিনুক এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীই ছিল এ সময়ের মানুষের প্রধান খাদ্য।
২. বাসস্থান (Dwelling house) : অধিকাংশ সময়েই মানুষ বনে-জঙ্গলে বসবাস করেছে। খাদ্যের প্রাপ্তির সাথে মানুষের
বসবাস নির্ভরশীল থাকতো। খাদ্যের প্রাপ্তি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই বাসস্থানের পরিবর্তন হতো।
হাতিয়ার (Tools) : প্রকৃতিগতভাবে পাথর যে অবস্থায় পাওয়া যেত সেটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় বা অমার্জিতভাবে ভাঙা পাথর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সুতরাং এ যুগকে পাথরের ব্যবহারের সূচনা যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ৪. ধর্মীয় অনুভূতি (Religious beliefs) : প্রকৃতির বৈরী আচরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রকেই শক্তির আধার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বৈরী আচরণের কারণেই খুব সীমিত পরিসরে ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ছিল। অতএব এ যুগের মানুষ বৈরী আচরণ থেকে মুক্তি লাভের জন্য অদৃশ্য শক্তির সাহায্য প্রার্থনা করত।
৫. জীবন প্রণালি (Life style) : প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ আত্মরক্ষার জন্য সংঘবদ্ধভাবে বা দলবদ্ধভাবে চলাফেরা ও বসবাস করত। অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ ঘুমাত আর অর্ধেক মানুষ জেগে থাকত ৷
প্রাগৈতিহাসিক/ প্রস্তর যুগ
Pre-historic / Lithic Age
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের জীবনাচরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সমাজ ও সভ্যতায় ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষ বন্য দশা ও বর্বর দশা অতিক্রম করে সভ্যযুগে পদার্পণ করে। প্রস্তর যুগ নামকরণের কারণ হলো মানুষের শ্রম ও জীবন ধারণের মুখ্য উপকরণ ছিল অমসৃণ, মসৃণ, ভোঁতা বা তীক্ষ্ণধার পাথর বা পাষাণ খণ্ড। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ বন্য পশুর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে হাতিয়ার উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিকারি জীবন গড়ে তোলে।
হাতিয়ার তৈরির একমাত্র উপাদান ছিল পাথর। এসব পাথর বা শিলাখণ্ডের মাধ্যমে মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করে। এ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সময়কে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ প্রস্তর যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রায় ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে পাথর বা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। সমাজ ও নৃবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ২১ থেকে ১৫ লক্ষ বছর আগে অনেকটা বন মানুষের আকৃতির মানব প্রজাতি আফ্রিকায় বসবাস করত। প্রস্তর পূর্ব যুগের শেষ দিকে এসব মানুষ পাথরের ব্যবহার জানত। প্রস্তর যুগে মানুষ পাথর দিয়েই নিত্য ব্যবহার্য হাতিয়ার বানিয়ে কাজে লাগিয়েছিল। বিরূপ প্রকৃতির হিংস্র বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে গুহার কোল বা গাছের শাখায় বাসা বাঁধতে হয়েছিল এ যুগের মানুষকে। সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং সমাজ ঐতিহাসিকগণ আদিম স্তরের মানুষ ও তাদের সমাজের নানা অজানা তথ্য উদ্ঘাটনে ও প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেসব মত দিয়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করে আদিম সমাজ তথা প্রস্তর যুগকে প্রধানত তিনটি স্তরে বিশ্লেষণ করেছেন। যেমন-
১. পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Palaeolithic age);
২. মধ্য পলীয় বা মধ্য প্রস্তর যুগ (Mesolithic age) এবং
৩. নবোপলীয় বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic age) ।
নিচের ছকের মাধ্যমে প্রস্তর যুগের বিভিন্ন স্তর উল্লেখ করা হলো-
প্রাচীন প্রস্তর যুগ
প্রস্তর পূর্ব যুগ
প্রস্তর যুগ
মধ্য প্রস্তর যুগ
প্রাথমিক প্রাচীন
প্রস্তর যুগ
মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগ
শেষ প্রাচীন দেব যুগ
১. পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Palaeolithic age) : প্রাচীন প্রস্তর যুগের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Palaeolithic age. গ্রিক শব্দ Palaeo (পুরো)-পুরাতন এবং Lithos (পাথর) শব্দদ্বয়ের সম্বন্বয়ে Palaeolithic শব্দটি গঠিত। এ যুগটি ছিল বেরে যুগের প্রথম পর্যায়। প্রাগৈতিহাসিকগণ এ যুগটাকে সবচেয়ে দীর্ঘতম বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ যুগে আবিষ্কৃত, অমসৃ স্থুল পাথরের অস্ত্র ব্যবহৃত হতো। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মানব সভ্যতা বিকাশের প্রথম ভিত্তি প্রাচীন পাথরের বা পুরোপলীয় যুগেই স্থাপিত হয়েছিল। পণ্ডিতেরা প্রাচীন প্রস্তর যুগের সমাজ ও সংস্কৃতির সঠিক ধারণা লাভের জন্য এ যুগকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
ক. নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Lower palaeolithic age) : প্রায় ১ লক্ষ বছর থেকে ৭০ হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত এ যুগের সময়কাল ধরা হয়। এ যুগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। এ যুগের প্রধান অধিবাসী হলো- নেয়ানডারবাল, হেইডেলবার্গ মানব, জাভা ও পিকিং মানব। কুড়িয়ে পাওয়া নুড়ি পাথরই এ যুগের প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার। এ নুড়ি পাথর যেভাবে পাওয়া যেত ঠিক সেভাবেই ব্যবহার করা হতো। এ যুগের মানুষ তার মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কিছুটা মসৃণ পাথুরে অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়। এ যুগে মানুষ ছিল শিকারি ও খাদ্য সংগ্রহকারী। সম্ভবত এদের কেউ কেউ আগুনের ব্যবহারও জানত। মোটা ও ভোতা পাথরের হস্ত-কুড়ালও এযুগের মানুষরা শিকার ও সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করত। এ যুগের মানুষরা গুহায় আর অরণ্যে বসবাস করত। সুতরাং এ যুগকে মানব সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ও বলা হয়ে থাকে ।
খ. মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Middle palaeolithic age) : এ যুগের আদি বাসিন্দা হলো- জার্মানে প্রাপ্ত নিয়ানডারথাল মানব। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০০ থেকে ৩০০০০ বছর পর্যন্ত এ যুগ স্থায়ী ছিল বলে ধারণা করা হয়। এ যুগকে মানব সংস্কৃতি ও সভ্যতার মাধ্যমিক পর্যায়ও বলা হয়। এ যুগে ব্যবহৃত পাথুরে অস্ত্র ছিল ধারালো, সূক্ষ্ম ও মসৃণ। চকমকি পাথর ব্যবহার করে এরা ছুরি, চাখার, বর্শা ইত্যাদি বানাতে শিখেছিল। এ স্তরের সংস্কৃতি হচ্ছে মুস্তেরীয় সংস্কৃতি। এরা আগুনের ব্যবহার জানত । গুহাচিত্র তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও শিল্পবোধের পরিচয় তুলে ধরে। এ যুগের মানুষ লজ্জা নিবারণের জন্য মৃগ চামড়া ও গাছের ছাল পরিধান করত। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পশুর চামড়া পরিধান করত এবং গাছের ও মাটির গুহায় বসবাস করত। তাই বলা যেতে পারে যে, এ যুগের অধিকাংশ মানুষই শিকার নির্ভর ছিল।
গ. উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ (Upper palaeolithic age) : এ যুগ মোটামুটিভাবে ৩৫০০০ থেকে ১০০০০ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এ যুগকে উন্নত সংস্কৃতির ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ যুগের আদি বাসিন্দা হচ্ছে ক্রোম্যাগনন মানব । এরাই প্রথম সংগঠিতভাবে শিকার শুরু করেছিল। এরা পাথরের ও হাড়ের উন্নত অস্ত্র বানাতে শিখেছিল। এ যুগের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো ছিল বর্শা নিক্ষেপযন্ত্র, হারপুন, তীর ধনুক, বড়শি, হাড়ের তৈরি সূঁচ, বাটালি, করাত, চাকু ছাড়াও কাঠের খোদাই ও অন্যান্য হস্তশিল্পে এরা পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। এরা গুহাচিত্রে রঙের ব্যবহার করত বলে প্রমাণ মিলেছে। এখানেই প্রথম বয়স ও লিঙ্গভেদে শ্রম বিভাজন শুরু হয়।
২. মধ্য পলীয় বা মধ্য প্রস্তর যুগ (Mesolithic age) : মধ্যপলীয় বা মধ্য প্রস্তর যুগ হচ্ছে প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রান্তিক পর্যায় এবং নব্য গ্রপ্তযুগের প্রারম্ভিক পর্যায়। ইউরোপে এ যুগ প্রায় ১১০০০-৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এ যুগের অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
মধ্য প্রস্তর যুগে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। বরফ যুগের অবসানের পর এবং নব পলীয় যুগের পূর্বেকার যুগকে মধ্য পলীয় যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপের তৃণভূমি বা তুন্দ্রা অঞ্চলে গভীর বন-বনানির সৃষ্টি হয়। চতুর্থ বরফ যুগের পরবর্তী সময়ে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা নতুনভাবে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয় এবং এরা মধ্য পলীয় সংস্কৃতির জন্ম দেয় ।
৩. নবোপলীয় বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic age) : বিখ্যাত ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ Sir John Lubbock ১৮৬৫ সালে প্রথম Neolithic শব্দটি ব্যবহার করেন। আনুমানিক ৮০০০-৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দের মধ্যে নিকট প্রাচ্যে নব্য প্রস্তর যুগের প্রথম বিকাশ ঘটে। এ যুগেই কৃষির বিকাশ লাভ হয়েছে। এ যুগকে গর্ডন চাইল্ড (Gordon child) নব পলীয় বিপ্লব নামে চিহ্নিত করেছেন। বস্তুত প্রাগৈতিহাসিক যুগে কৃষি আবিষ্কারই ছিল মানব জাতির সর্বাপেক্ষা বড় সাফল্য ।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নব্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। তন্মধ্যে মেসোপটেমিয়ার টেল হাসুথা, প্যালেস্টাইনের জেরিকো, উত্তর ইরান, পাকিস্তানের বেলুচিস্থান, তুরস্কের কাতাল বইবৃত্তক, ককেশাস অঞ্চল, মিশর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে নব্য প্রস্তর যুগের একখানি পাথর আবিষ্কৃত হয়েছে।
প্রস্তর যুগের সমাজ ও সংস্কৃতির প্রধান দিকসমূহ
Main Aspects of Society and Lithic Culture
পশু শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের পর্যায়কে প্রস্তর যুগ নামে অভিহিত করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদগণের প্রাপ্ত তথ্য ও বিবরণের ওপর নির্ভর করে প্রস্তর সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে জানা যায়। নিচে প্রস্তর সংস্কৃতির প্রধান প্রধান দিকসমূহ উল্লেখ করা হলো-
১. খাদ্য সংগ্রহকারী : প্রকৃতি থেকে এ যুগের মানুষ খাদ্য সংগ্রহ করত। খাদ্য সংগ্রহের প্রধান ৩টি উপায় ছিল। যথা-
ক. বন্য গাছ-পালা থেকে ফলমূল আহরণ;
খ. নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর থেকে মাছ ধরা এবং
গ. বন্য পশুপাখি শিকার। তাই স্বভাবতই এ যুগের মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী ।
২. যাযাবর জীবন : এদের কোনো স্থায়ী বাসস্থান ছিল না। তারা সব সময় সাধারণত গুহায় বসবাস করত। সুতরাং প্রস্তর যুগে মানুষ ছিল প্রধানত যাযাবর।
৩. শ্রমবিভাগের অভাব : নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু শ্রম বিভাজন (Division of labour) থাকলেও অর্থনৈতিক শ্রমবিভাজন, বিশেষায়ন এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। অর্থাৎ শ্রমবিভাগ তেমন সৃষ্টি না হলেও প্রস্তর যুগে প্রত্যেক ব্যক্তিই ছিল একাধারে খাদ্য আহরণকারী পরিধেয় সংগ্রহকারী ও হাতিয়ার তৈরির কারিগর।
৪. সামাজিক সংগঠন : প্রস্তর যুগের মানুষের সামাজিক বন্ধন তত দৃঢ় না হলেও, খাদ্য সংগ্রহের জন্য তারা জোটবদ্ধ হতো। তাই বলা যায়, বর্তমান জগতে সামাজিক সংগঠন বলতে যা বুঝায় প্রস্তর যুগের মানুষের সেরূপ সামাজিক সংগঠন ছিল না । ৫. আগুনের ব্যবহার : প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের বড় আবিষ্কার হলো আগুনের ব্যবহার। বজ্রপাত, দাবাগ্নি বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট আগুন এবং এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করে তৎকালীন মানুষ বংশ পরম্পরায় আগুন সংরক্ষণ করত । পণ্ডিতদের মতে, এ যুগে মানুষ কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করতে পারেনি।
পরিশেষে বলা যায়, এ যুগেই মানুষের মনে ধর্মবোধ অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস এবং ধর্মচর্চা শুরু করেছিল। এ যুগেই পশুপালন, কৃষিকাজ প্রথা শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি বিভিন্ন পর্যায়েই বিভক্ত ছিল। পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ
প্রাগৈতিহাসিক যুগের সংস্কৃতি (প্রস্তর যুগ)
Palacolithic/Old Stone Age
সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তথ্যসূত্র মতে অনুমান করা যায় যে, খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৪০ বা ৫০ হাজার বছর আগে যেসব মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন গ্রাড়ে বসবাস করত, তারা তাদের প্রয়োজনেই পাথরের ব্যবহার করত। বিশেষ করে বন্য জন্তু তাড়াতে, মাটি খুঁড়তে তথা নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে পাথরকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিত।
পুরোপলীয় যুগেই মানুষ প্রথম বসতি স্থাপন শুরু করেছে এবং এ যুগই দীর্ঘসময় ব্যাপী মানব সভ্যতায় স্থায়ী ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীন পাথর নির্ভর সমাজকেই প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরোপনীয় যুগ বলা হয়। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক জন জিউস বলেন, "The first and oldest of the primitive cultures which devised and used stone implements is called the old stone age." অর্থাৎ প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরোপলীয় যুগ বলতে, ইতিহাসের সেই সময় কালকেই বুঝায় যেখানে সমাজ ও সংস্কৃতি পাঘর নির্মিত হাতিয়ারের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। পুরোপলীয় যুগে মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, জীবাশ্ম প্রভৃতির ব্যাপক প্রচলন ছিল। ঐতিহাসিকগণ পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগকে তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- ক. প্রাথমিক প্রাচীন প্রস্তর যুগ : প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষেরা "প্রায় মানুষ" হিসেবে অভিহিত হয়েছে। তবুও বুদ্ধিবৃত্তি আর বাঁচার জন্য সংগ্রাম করার প্রবণতা থেকে তারা এ ধাপে এসে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল। এ যুগের মানুষেরা ছিল অরণ্যচারী আর তহাবাসী। এরা বন থেকে বনান্তরে ঘুরে খাদ্য অন্বেষণ করত। কালক্রমে এরা পাথর ঘষে সূঁচালো আর তীক্ষ্ণ করে পশু শিকার করার কৌশল আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। পৃথিবীর ২য় ও ৩য় শীতল যুগে এদের অস্তিত্ব ছিল। এ জাতীয় মানুষের উদাহরণে বলা যায় আনুমানিক ১৫ লক্ষ বছর পূর্বেকার থোমোইরেস্টাস জাতের পিকিং মানুষ, জাভা মানুষ, আটলানথ্রোপাস মানুষ, ওলডুভাই অঞ্চলের মানুষ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
খ. মাধ্যমিক প্রচীন প্রস্তর যুগ : ঐতিহাসিকদের মতে, ৭৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ পর্যন্ত এ যুগের অস্তিত্ব ছিল বলে অনুমান করা হয়। এ যুগের মানুষ আবরণ হিসেবে পশুর চামড়া ব্যবহার করত এবং আগুনের ব্যবহার জানত। এ যুগের মানুষ শিকারের জন্য পাথরের তৈরি অস্ত্র ও পশুর হাড় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করত এবং পাথরের তৈরি ঘড়-বাড়িও নির্মাণ করত। এ যুগের মানুষরা শিকারের উপযোগী পাথুরে অস্ত্র-শস্ত্র যেমন— দু'প্রান্ত তীক্ষ্ণ বর্ণা, তিনকোনা, চারকোনা আকৃতির অস্ত্র তৈরি করত। সুতরাং বলা যায়, মাধ্যমিক প্রাচীন প্রস্তর যুগে নিয়ানডারথাল মানুষেরা বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে বসবাস করত ।
গ. শেষ প্রাচীন প্রস্তর যুগ : এ পর্যায়ে এসে মানুষেরা পৃথিবীর শেষ হিমশীতল যুগের কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে শেখে। ঐতিহাসিকগণের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০০ অব্দ থেকে ১০০০০ অব্দ পর্যন্ত এ যুগের স্থায়িত্বকাল ছিল। এ যুগে মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও সমাজবদ্ধ হয়ে মানব সভ্যতাকে গতিশীল করে তুলেছিল। হাঁড় নির্মিত হারপুন ও সুঁচ আবিষ্কারের ফলে পশু শিকার করা অনেকটাই সহজ হয়ে পড়েছিল। সুতরাং এ যুগে ঐতিহাসিকদের অভিমত এই যে, হোমো স্যাপিয়েন্স গোত্রের মানুষেরা হচ্ছে এ পর্যায়ের মানুষদেরই বংশধর ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]