প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ
Proto-historic Age
পণ্ডিতগণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক এ দু'যুগের মধ্যবর্তী স্থলে স্বল্পকাল স্থায়ী আরও একটি যুগের অবতারণা করেছেন, যাকে প্রায় ঐতিহাসিক (Proto-historic age) যুগ বলা হয়। অর্থাৎ প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ বলতে আমরা এমন একটি যুগকে বা কালকে বুঝে থাকি যে যুগটিকে প্রাগৈতিহাসিক যুগও বলা যায় না আবার ঐতিহাসিক যুগও বলা যায় না।
আদি ঐতিহাসিক যুগকে ঠিক ঐতিহাসিক যুগের পূর্বক্ষণ বলা হয়। ভারত বর্ষের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বৈদিক যুগকে আদি ঐতিহাসিক যুগ বলে পণ্ডিতগণ মনে করেন। অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক যুগটি প্রায়-ঐতিহাসিক যুগের সোপান বয়ে ঐতিহাসিক যুগে পদার্পণ করে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ প্রান্তের যুগকে নবোপলীয় যুগ বলা হয়। এ নতুন পাথরের যুগের পর ক্রমাগত উদ্ভাবন ঘটতে থাকে তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার। এ সকল ধাতুর উদ্ভাবনের ফলে প্রাগৈতিহাসিক যুগ ক্রম পরিবর্তিত হতে থাকে ।
তাই বলা যায় যে, ঐতিহাসিক যুগে পদার্পণের পূর্ববর্তী এ যুগকে প্রায় ঐতিহাসিক যুগ (Proto-historic Age) যুগও বলা
হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগ এবং ঐতিহাসিক যুগের মধ্যবর্তী যুগ প্রটো-ঐতিহাসিক যুগ (Proto-hsitoric Age) নামে পরিচিত।
যাহোক প্রায় ঐতিহাসিক যুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ —
১. ধাতুর ব্যবহার : মানব সমাজ প্রায় ঐতিহাসিক যুগে বেশ অগ্রগামী হয়েছিল মূলত তামা ও ব্রোঞ্জের তৈরি নানা রকম হাতিয়ার বানানোর ফলে। বস্তুত নবোপলীয় যুগের শেষ দিকে মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জ তৈরির ব্যাপক কৌশল আয়ত্ত করেছিল।
২. পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সূচনা : এ যুগে মেয়েরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে মূলত কার্যসম্পাদন ও কর্তৃত্বগত দিক থেকে । এর ফলে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়তে থাকে এবং পুরুষরা পরিবার ও সমাজের মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । কেননা এ যুগে পুরুষরাই খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য উৎপাদন, পাত্র ও গৃহনির্মাণ এবং পশু-পালনসহ প্রভৃতি দিকে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল।
৩. হাট বাজারের সৃষ্টি : প্রায় ঐতিহাসিক যুগের হাট-বাজারগুলোতে বিনিময় ব্যবস্থা চালু থাকায় পরবর্তীকালে ব্যবসা-
বাণিজ্যের সূচনা করে। অর্থাৎ প্রায় ঐতিহাসিক যুগে, ঝিনময়ের নির্দিষ্ট স্থানকে কেন্দ্র করেই ক্রমশ হাট-বাজার গড়ে উঠেছিল।
৪. কৃষি ও পশু পালন : প্রায় ঐতিহাসকি যুগের মানুষেরা কৃষি ও পশু পালনকে কেন্দ্র করেই জীবনের যাবতীয় চাহিদা পূরণ
করতে নিজেরাই সচেষ্ট ও সক্ষম হয়েছিল। এই জন্যই মূলত প্রায় ঐতিহাসিক যুগে মানুষ কৃষিজীবী ও পশু পালক শ্রেণি ৷ নামক দুটি পৃথক পেশায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।
৫. নদীর তীরে বসতি স্থাপন প্রায় ঐতিহাসিক যুগে মানুষ নদীর তীরে বসতি স্থাপন করতে থাকে। এ ছাড়াও পানীয় জল,
সেচ, পশুর খাবার হিসেবে পানির ব্যবহার প্রভৃতির ব্যবস্থা ছিল।
৬. দাস প্রথার সূচনা মানব সমাজ এগিয়ে যাবার পাশাপাশি সমাজে দাস প্রথার অশুভ সূচনা হয়েছিল প্রায় ঐতিহাসিক
(Proto-historic Age) যুগেই ।
৭. রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণি নিজেদের পরিচালনার জন্য প্রয়োজনের তাগিদেই প্রায় ঐতিহাসিক যুগে মানুষ ক্রমশ রাষ্ট্র সদৃশ সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ধীরে ধীরে শাসক শ্রেণিরও আবির্ভাব ঘটে। এভাবেই ঐতিহাসিক যুগে রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণির উন্মেষ ঘটতে থাকে।
৮. পত ব্যবহার। চাষের ক্ষেত্রে পাওলকে মানুষই সর্বপ্রথম টানা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন এবং কৃষি পণ্য পরিবহনে
ভারবাহী জন্তু রূপে মানুষ পশুকে ব্যবহার করতে শুরু করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রোঞ্জ যুগ তথ্য প্রায় ঐতিহাসিক যুগে ধাতুর ব্যবহার, কৃষি ও পশু পালক শ্রেণির উদ্ভব বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশুর ব্যবহার নদীর তীরে আম গড়ে তোলা । পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, হাট-বাজার সৃষ্টি, রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণির সূচনা করা হয়।
ঐতিহাসিক যুগ
Historical Age
মানব ইতিহাসের যে সময়ের ওপর অলিখিত উপাত্তের সাথে সাথে লিখিত বিবরণও পাওয়া যায় তাকে ঐতিহাসিক যুগ বলে। প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক ইবনে খালদুন বন্য দশা ও বর্বরদশা থেকে সভ্য দশায় উত্তরণের সময়কালকে ঐতিহাসিক যুগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এযুগে লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হওয়ায় অলিখিত ও লিখিত তথ্যের সাহায্য ঐতিহাসিক যুগের ইতিহাস সঠিক ও যথাযথভাবে রচনা করা সম্ভব হয়েছে। ঐতিহাসিক যুগকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. প্রাচীন যুগ (Ancient age):
২. মধ্যযুগ ( Medieval age); ৩. আধুনিক যুগ (Modern age) ।
২.১৩.ক প্রাচীন যুগ
Ancient age
প্রায় ঐতিহাসিক (Proto-historic age) যুগের পর পরই যে যুগের সূচনা হয় তাকে প্রাচীন যুগ বলা হয়। আবার অন্যভাবে বলা যায় ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভকাল থেকে যে যুগের শুরু হয় তাকে প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগ নামে অভিহিত করা হয়। এ যুগে মানুষ লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করে, ইতিহাস রচনার জন্য অলিখিত উপাদানের পাশাপাশি লিখিত উপাদান পাওয়া যায় এবং নগর গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুনভাবে জীবনযাত্রা শুরু করে এবং তখন থেকে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন যুগ শুরু হয়। নিয়ে প্রাচীন যুগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. পিতৃতান্ত্রিক ও পেশাভিত্তিক সমাজ : প্রাচীন যুগের যে সকল রাষ্ট্র গঠিত হয় তার সবগুলোতে পুরুষরাই শাসক শ্রেণি হয়। পুরুষদের দিক-নির্দেশনায় সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সবকিছু পরিচালিত হয়। এযুগে কর্মের উপর ভিত্তি করে সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এভাবে ব্যবসায়ী বণিক, কারিগর, কৃষক, শ্রমিক, দাস প্রভৃতি শ্রেণির উদ্ভব হয়।
২. লৌহের ব্যবহার : প্রাচীন যুগের মানুষ লৌহের ব্যবহার আয়ত্ত করার ফলে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয় । ৩. পোশাক পরিচ্ছদ : সুন্দর সভ্যতার অধিকারী প্রাচীন যুগে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা রূচিশীল ও মূল্যবান পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করত। এ যুগের মানুষ বেশ উন্নত এবং বিভিন্ন প্রকার পরিধেয় বস্ত্র ও অলংকার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
৪. কৃষি : প্রাচীন যুগে কৃষি ছিল অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক। এযুগে লাঙলের ফলার আবিষ্কার, ব্যবহারের ফলে
লাঙল টানার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পশুকে ব্যবহার করা হতো। ফলে এ পর্যায়ে জমি চাষের কাজটা অনেক সহজ হয় এবং অধিক ফসল উৎপন্ন হতে থাকে।
৫. শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য : প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহু শিল্প গড়ে উঠেছিল এবং দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক
গড়ে উঠেছিল। ফলে প্রাচীন যুগে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
৬. খাদ্য প্রাচীন যুগে খাদ্যকে মানুষ এ সময় উপাদেয় ও সুস্বাদু দ্রব্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়। ভালো করে রান্না করে খাওয়াতে খাদ্যগুলো প্রায়শই রোগ জীবাণু মুক্ত থাকত। তাই বলা যায়, প্রাচীন যুগের বিশেষ দিক হলো এ সময় তারা উন্নত পাত্রে ভালো প্রক্রিয়ায় খাদ্য রান্না করে খেত।
৭. পশু পালন : এ যুগে পশুকে লাঙল টানা, গাড়ি টানা ও মালপত্র বহনের কাজে লাগানো হয়। পশুর মাংস উপাদেয় খাবার ও চামড়ার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে সভ্যতার উন্নয়ন সাধন করা হয়। সুতরাং পশুকে কাজে লাগাবার সাথে সাথে প্রাচীন যুগে পশু পালনের গুরুত্ব বেড়ে যায় ৷
৮. দাস প্রথা এ যুগে সাধারণত যুদ্ধ বন্দীদেরকে দাসে পরিণত করা হয়েছিল। এছাড়াও সমাজের একেবারে নিম্ন শ্রেণির লোকদের দাস বলে গণ্য করা হতো এবং দাসদের সন্তানগণও দাস হিসেবে জীবন-যাপন করত। আবার অনেক সমাজে ক্রীতদাস প্রথাও প্রচলিত ছিল। সুতরাং প্রাচীন যুগে সুমেরীয়, এ্যাসিরীয়, মিশরীয়, পারস্য চৈনিক, গ্রিসীয়, রোমক প্রভৃতি সমাজে দাস প্রথার প্রচলন হয়েছিল।
৯. মুদ্রা অর্থনীতি : প্রাচীন যুগের সভ্যতার ইতিহাসে এশিয়া মাইনরের লিতিয়গণ সর্বপ্রথম ধাতুর মুদ্রা তৈরি করে। ইলেকট্রাম বা শ্বেতস্বর্ণ নামে পরিচিত ধাতু দিয়ে তারা মুদ্রা তৈরি করত। প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সম্রাটগণ স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্রমুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। সুতরাং মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতি ছিল প্রাচীন যুগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
১০. ভাষা ও জ্ঞান বিজ্ঞান : প্রাচীন যুগে ৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেই সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম (চিত্রলিপি) নামক লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন
করে। এ যুগে মানুষ ভাষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছিল।
১১. আইন ও বিচার : প্রাচীন যুগে খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বে সুমেরীয় সম্রাট ডুঙ্গী বাণিজ্য, ঋণ, চুক্তি, ফৌজদারি অপরাধ ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেন। তাই বলা যায়, প্রাচীন যুগেই রাষ্ট্র, নগর ও শাসক শ্রেণির গড়ে ওঠার পাশাপাশি আইন ও বিচার ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটতে থাকে। প্রাচীনকালে হিব্রু জাতিরাও আইনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
১২. নগর সভ্যতার সূচনা : প্রাচীন যুগে মানুষ নগর গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এথেন্স, স্পার্টা, রোম প্রভৃতি নগর গড়ে তুলে
মানুষ প্রাচীন যুগে সভ্যতাকে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী করতে সক্ষম হয় ।
১৩. চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি : প্রাচীন যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানী গ্যালেন ধমনীতে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ভাবন করেন। রুফাস নামক একজন চিকিৎসক সর্বপ্রথম যকৃত ও নাড়ির সঠিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। সুতরাং এ যুগের শুরুতে মানুষ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্রমশ সাফল্য অর্জন করতে থাকে।
১৪. আবাসন ও স্থাপত্যের অগ্রগতি : খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বেই সুমেরীয়রা জিগুরাত নামক ধর্ম মন্দির নির্মাণ করে স্থাপত্যিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ যুগে মিশরীয়রা পিরামিড, সুবিশাল মন্দির এবং ব্যবিলনীয়রা সৌধ ও রাজ প্রাসাদ নির্মাণ করে খ্যাতিমান হয়েছে। এছাড়াও প্রাচীন যুগে রোমান, গ্রিক, চীনারাসহ বহুজাতিক স্থাপত্যের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়।
১৫. রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা : প্রাচীনকাল মিশরের রাজাদের ফারাও বলা হতো। রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, এক নায়ক তান্ত্রিক, অভিজাত তান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই ছিল মূলত প্রাচীন যুগের রাষ্ট্র শাসনের ধরন বা বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বহুস্থানে বহু সংখ্যক পরিপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে উঠে ও রাষ্ট্রগুলির সুনির্দিষ্ট অবস্থান, নাম ও শাসক শ্রেণি বা শাসন কর্তা ছিল ।
পরিশেষে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভকাল থেকে যে যুগের শুরু হয় তাকে প্রাচীন ঐতিহাসিকগণ প্রাচীন যুগ (ancient age) নামে অভিহিত করেছেন।
. মধ্যযুগ
Medieval age
প্রাচীন যুগের পরবর্তী যুগ এবং ঐতিহাসিক যুগের দ্বিতীয় পর্ব হচ্ছে মধ্যযুগ ( Medieval age)। সাধারণভাবে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালকেই মধ্যযুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে মধ্যযুগের শুরু বলে অভিহিত করা হয়। কারণ ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দেই জার্মান বর্বরদের আক্রমণে রোমের পতন ঘটে। কেননা এ রোমের পতনের সাথে সাথেই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা হয়। কালের পরিক্রমায় প্রাচীন যুগের পর থেকে শুরু হয়ে আধুনিক যুগের সূচনায় মধ্যবর্তী পর্যায় যে ধ্রুপদী সংস্কৃতির অবসান হয়ে চার্চ, মঠতন্ত্র, পোপতন্ত্র, সাম্যবাদতন্ত্র, ক্রুসেড প্রভৃতি রাষ্ট্র, সমাজ অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানবিক গুণাবলী বিকশিত হবার পথে অক্টোপাসের মতো আকড়ে ধরে ও অন্তরায় হয় এবং সে সময়ে ইসলাম ধর্মে পুনঃআবির্ভাব হয় সে যুগকেই আমরা মধ্যযুগ বলে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। মধ্যযুগের অন্যতম বিষয় হিসেবে নতুন নতুন শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন আঙ্গিকে বিকাশ লাভ করে।
NSP- সামাজিক ইতি, ও বিশ্ব সভ্যতা- ৭
ভৌগোলিক আবিষ্কার ও ধর্ম সংস্কার আন্দোলন তথা মার্টিন লুথার কর্তৃক প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমত প্রতিষ্ঠার ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দকেই মধ্যযুগের অবসান বলে অভিহিত করা যায়। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে কলম্বাস কর্তৃক আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কারের সময়কে মধ্যযুগের অবসান বলে অভিহিত করেছেন। আবার অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তুরুস্কের সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ পূর্বরোমান তথা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপল দখল করে নিলে মধ্যযুগের অবসান হয়। যাহোক নিম্নের আলোচনায় মধ্যযুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. অন্ধকার যুগ : মধ্যযুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় স্থবিরতা নেমে আসে আর অন্যদিকে এ সময়ের ইতিহাস জানার পর্যাপ্ত উৎসও ছিল না। একারণে মধ্যযুগে জ্ঞান চর্চায় ভাঁটা পড়ে যায় বলেই তাকে অন্ধকার যুগ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সুতরাং এ যুগে ইসলামি সভ্যতার সূচনা হওয়াতে এখানে এ সভ্যতার বিকাশে ভিন্ন ধারার সূচনা হয়েছিল।
২. ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও অন্ধ বিশ্বাস : মধ্যযুগে মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালিত হতো খ্রিষ্ট ধর্মের, বিধিবিধান অনুসারে। এ যুগে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামী কুসংস্কার, ধর্মের নামে ইন্দ্রিয়পরায়ণতা, নানা প্রকার পাপাচার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে মারাত্মকভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখে।
৩. পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের উদ্ভব : ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর প্রায় তিনশত বছর ধরে রোম ও এর পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহ গথ, ভ্যানডাল, লোম্বার্ড প্রভৃতি জাতির বিভিন্ন শাখার অধীনে ছোটছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় হতে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো পুনরায় একত্রিত হতে থাকে। এভাবে খ্রিষ্টধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র গড়ে ওঠে বিধায় এ সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয়— The Holy Roman Empire".
৪; - সামন্ততন্ত্র : ইউরোপের ভূমি ব্যবস্থার সাথে মধ্যযুগে সংশ্লিষ্ট সামরিক সাহায্য দানে সচেষ্ট, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
দিকের সাথে বিজড়িত যে বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তা সামন্ততন্ত্র (Feudalism) নামে পরিচিত।
৫. পোপতন্ত্র : মধ্যযুগে খ্রিষ্টধর্মে রাজ্যের প্রধানকে বলা হতো পোপ এবং পোপের ধর্মীয় প্রশাসন পোপতন্ত্র নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগে খ্রিষ্টধর্মকে কেন্দ্র করে সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যে একটি ধর্মরাজ্য গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, রোমান সম্রাট কন্সট্যান্টাইন ৩১৩ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্মকে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
৬. মঠতন্ত্র : এ যুগে মঠবাসী সন্ন্যাসীরা মঠের পাশে বিদ্যালয় স্থাপন করে বিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা, আর্তের সেবা, দীন দুঃখীদের দান করে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায় মধ্য যুগের ইউরোপে খ্রিষ্ট্রীয় তৃতীয় শতকে সন্ন্যাসবাদের বা মঠতন্ত্রের উন্মেষ ঘটতে থাকে।
৭. ক্রুসেড : মধ্যযুগে জেরুজালেম তীর্থযাত্রায় খ্রিষ্টানদেরকে সেলজুকগণ কর্তৃক বাধাদান, মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রসারে খ্রিষ্টানদের ঈর্ষা, মুসলমানদের নিকট ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য খ্রিষ্টানদের পিছিয়ে পড়ে, পোপের অনুপ্রেরণা, ধর্মীয় উন্মত্ততা প্রভৃতি বিষয় ক্রুসেডের পশ্চাদভূমি রূপে কাজ করে। সুতরাং খ্রিষ্টানগণ মুসলমানদের অধীন জেরুজালেম নগরী উদ্ধারের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দী ব্যাপী ছোট বড় আটটি ক্রুসেড পরিচালনা করেছিল।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব : বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়, স্কলাস্টিসিজম এর উদ্ভব ঘটায় এবং
সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে মধ্যযুগের সমাজে আধুনিক বৈশিষ্ট্য অনুপ্রবেশ করাতে সচেষ্ট হয়। এ যুগের সমকালীন কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যেমন- শিক্ষার জন্য স্যালারনো বিশ্ববিদ্যালয়, আইন বিদ্যা শেখার জন্য বলোনা বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, এছাড়াও ইংল্যাণ্ডের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির মন্টোপলিয়, রোম, ন্যাপলস প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় এ সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৯. ইসলামের পুনঃঅভ্যুদয় : সপ্তম শতক হতে অতি অল্প সময়ের মধ্য হতে ইসলাম এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় ও জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভাবনীয় আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সুতরাং এ সময়ের মধ্যে প্রাচ্যে ইসলাম ধর্মের পুনরুভ্যুদয় ঘটে।
১০. দ্বাদশ শতকের রেনেসাঁ : এ সময় যুক্তি নির্ভর চিন্তার প্রসার ঘটে। দ্বাদশ শতকে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে নতুন
চেতনা ও অনুসন্ধিৎসু মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয় তা রেনেসাঁ নামে পরিচিত ।
১১. শহরের উদ্ভব ও বিকাশ : সামন্ততন্ত্রসহ নানাবিধ কারণে শহরের উদ্ভব হয়। এ শহরগুলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা- বাণিজ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার মুক্ত নাগরিক গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধ্যযুগে কারিগর ও বণিকদের বসতিগুলোতে ঘর-বাড়ির প্রসার লাভ করতে থাকে এবং ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে এ বসতিগুলো শহরে পরিণত হয়।
১২. মধ্যযুগে বাংলা ও ভারত : কুতুব উদ্দিন আইবেক ও বখতিয়ার খলজী একই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করতে থাকেন, ফলে ভারতের রাজনীতি, সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে ইসলামীকরণ ঘটে। বখতিয়ার খলজীর সময় হতে (১২০৪ খ্রিঃ) বাংলায় এবং কুতুবউদ্দিন আইবেকের সুলতান হওয়ার সময় থেকে (১২০৬ খ্রিঃ) ভারতের মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
তাই বলা যায় যে, শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব প্রভৃতির ইতিবাচক ও প্রগতির সহায়ক বিষয়গুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার
ঘটিয়ে মধ্যযুগকে আধুনিক যুগে উত্তরণের ক্ষেত্রে তাৎপর
উত্তরণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে
২.১৩.গ আধুনিক যুগ চল
Modern age
চাকার Das Belt FIPES TROOPS EQUIs Medig HKT KEIN US WER
"nigra: anmol yloff sd-18 THE PROZIT BATOK & KEN ইউরোপের ইতিহাস আধুনিক যুগের সূচনাকারী হিসেবে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দকে অধিকাংশ পণ্ডিতগণ সমর্থন করেন। আবার কতিপয় পণ্ডিত ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে কলম্বাস কর্তৃক আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করাকে আধুনিক যুগের শুভ সকাল হিসেবে ধরে নিতে আগ্রহী। এছাড়াও ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মার্টিন লুথার কর্তৃক প্রতিবাদী খ্রিষ্টধর্ম প্রতিষ্ঠা করাকেও অনেকে আধুনিক যুগের সূচনাকাল হিসেবে চিত্রায়ণ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। এজন্যই ঐতিহাসিক যুগের তৃতীয় পর্যায়কে আধুনিক যুগ বলা হয়ে থাকে ।
ইতালিতে নব চেতনার জ্ঞান চর্চা শুরু হয়, যাকে রেনেসাঁ বলা হয়। কারণ ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব রোমান তথা বারজানটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিনোপলের পতনের ফলে সেখানে তার পণ্ডিতগণ তাদের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ইতালিতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। মূলত ইতালিতেই ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সুতরাং এজন্য ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক যুগের সূচনাকারী উল্লেখযোগ্য সময় বলে অভিহিত করা যায়।
যদুনাথ সরকার ১৭৫৭ সালকে আধুনিক যুগের সূচনাকাল বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক ১৭৬৫ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করাকে আধুনিক যুগের সূচনাকাল হিসেবে উল্লেখ করেন। সুতরাং এ জন্যই বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের সূচনাকাল নিয়ে কিছুটা মতভেদ লক্ষ করা গেছে। অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন, আধুনিক যুগ যথারীতি চালু আছে। ইউরোপে ১৪৫৩ সাল থেকে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের ১৭৬৫ সাল থেকে অদ্যবধি আধুনিক যুগের নিয়ামকগুলো রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান আছে ।
আবার কতিপয় পণ্ডিতদের মতে, আধুনিক যুগ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে । তাঁদের মতে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে যুগের শুরু হয়েছে তার রয়েছে বেশ কিছু ভিন্নতর নিয়ামক। যার কারণে এ যুগের নামকরণ করা হয়েছে উত্তর আধুনিক যুগ (Post modern age) ।
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক যুগের নিয়ামকগুলোর বিশেষ কয়েকটি হলো- ব্যক্তির মুক্তি ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ, জাতীয়ঃ রাষ্ট্র গঠন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ। ভৌগোলিক আবিষ্কার, রেনেসাঁ, ধর্ম সংস্কার আন্দোলন, জ্ঞানদীপ্ত স্বৈরাচারী শাসন, গণতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, মৈত্রী জোট গঠন, আন্তর্জাতিকতাবাদ, শিল্পবিপ্লব, বাণিজ্যবিপ্লব, শিল্প অর্থনীতি, ব্যাংক, যৌথ কারবার, আধুনিক সমরতন্ত্র, কাগজের টাকার প্রচলন ইত্যাদি। উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম যথা— স্টিমার, ট্রেন, বাস, উড়োজাহাজ, রেডিও টেলিভিশন, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, সংবাদপত্র ইত্যাদি রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থা প্রভৃতি। চ
২.১৪ উত্তর আধুনিক যুগ
Post Modern Agersity
RIFF (disgoM) 'MO' Teris irony
উত্তর আধুনিক যুগকে অত্যাধুনিক যুগ বলা হয়ে থাকে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর বিশ্ব ব্যবস্থায় নানাক্ষেত্রে পরিবর্তন ও নব বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়। আবার আধুনিক যুগের পরবর্তী যুগকেই উত্তর
পরবর্তী যুগকেই উত্তর আধুনিক যুগ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে বিষয়টি বিশ্ব জনসমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত, চিহ্নিত ও শংকিত করে তোলে তাহলো স্নায়ুযুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। বিংশ শতাব্দীর নব্বই এর দশকের শেষ দিকে স্নায়ু যুদ্ধের অবসান হয়। এ সময় পৃথিবী নামক গ্রহটির উপর গবেষণার পাশাপাশি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করে । পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো ! মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের
দু'টি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আবার দেখা যায়, মহাকাশ ভ্রমণের একান্ত বাসনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন বিংশ শতাব্দীর ষাটের
ষাটের দশকের প্রথম দিকে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। এরপর কয়েক বছর পর মার্কিন নভোচারী বী নীল আ
আর্মস্ট্রং। বিংশ
তাঁর দু'সহচরকে নিয়ে পৃথিবীর উপগ্রহ চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করেন। এভাবে অত্যাধুনিক তথ্য উত্তর আধুনিক যুগে মহাকাশে মহাশূন্য স্টেশন স্থাপন, কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ প্রভৃতি বিষয় আধুনিক যুগ ও উত্তর আধুনিক যুগের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে ।
•
সাহায্যের নামে এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও
অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ উত্তর আধুনিক যুগের একটি বড় নিয়ামক। অথ এভাবেই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ উত্তর আধুনিক
সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক দেশে পরোক্ষভাবে নিজের
যুগে বহুদেশের স্বাধীনতা কার্যত অকার্যকর করে ফেলে।
প্রতিষ্ঠা করে।
সামরিক অস্ত্র পৃথিবীর উত্তর আধুনিক যুগে মহাবিপদ গ্রস্থ করে ফেলে। সামরিক সহযোগিতার ন্যয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা উত্তর আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতিকে সামনে রেখে বিশ্বে শান্তি রক্ষার জন্য গড়ে ওঠে জাতিসংঘ (UNO) ।
উত্তর আধুনিক যুগে শান্তি প্রচেষ্টার সমান্তরাল গতিতে অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম চলতে থাকে। একদিকে পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৬৩)। অন্যদিকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন প্রভৃতি দেশ পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়। তাছাড়াও উত্তর আধুনিক যুগের সমরসজ্জার বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায় আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র, হাইড্রোজেন বোমা, মহাকাশ যুদ্ধ বা তারকা যুদ্ধ। সুপারসনিক বিমান, ইলেক্ট্রনিক ট্রেন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন প্রভৃতি বিষয়, উত্তর আধুনিক (Post modern age)কে গৌরবান্বিত করেছে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবী যেন একটি জনপদ সদৃশ বিশ্ব গ্রাম (Global village) এ পরিণত হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর গোটা বিশ্বব্যবস্থায় নানাক্ষেত্রে পরিবর্তন ও নব নব বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক উদ্ভব হয়েছিল, যা আধুনিক যুগ বিনির্মাণে অনেক ভূমিকা ঘটেছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত