লিঙ্গভিত্তিক শ্রমবিভাজন, ক্ষুদ্র পরিসরে যূথবদ্ধ সমাজ, প্রকৃতির উপর নির্ভরতা, স্বল্প যাত্রায় প্রযুক্তি, ব্যক্তিমালিকানা ও সামাজিক স্তর বিন্যাসের অনুপস্থিতি ইত্যাদি পশু পালন আর্থ-সামাজিক অবস্থার বৈশিষ্ট্য ছিল বলে মনে করা হয়।
নিম্নে পশু পালন সমাজের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. পশু পালন সমাজব্যবস্থায় পশুর খাদ্য যোগানের জন্য পশু পালনরত ভ্রাম্যমাণ আদিম মানব গোষ্ঠীই পরবর্তীতে যাযাবর জাতি হিসেবে পচারণ সমাজের ভিত গঠন করে। পশু পালনের প্রয়োজনেই মানুষকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতো। একটি নির্দিষ্ট স্থানের ঘাস, পানি প্রভৃতি ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন কোথাও চলে যেতে হতো।
A = ১ম অঞ্চল
B = ২য় অঞ্চল
C
C = ৩য় অঞ্চল
B
চিত্র: যাযাবর সমাজের অবস্থান চক্র।
পশু পালন পর্যায়ে মানুষ মাংস, দুধ, মদ ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে পারত। এছাড়া যেকোনো সময় প্রয়োজন হলে গৃহপালিত পশু থেকেও খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারত ।
৩. এ পর্যায়ের একটি নির্দিষ্ট স্থানের ঘাস, পানি প্রভৃতি ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন কোথাও চলে যেতে হতো। অর্থাৎ পশু
পালনের প্রয়োজনেই মানুষকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হতো।
৪. সাধারণত পশু পালন সমাজ গড়ে উঠে সেসব এলাকায় যেখানে পশুকে খাওয়ানোর জন্য প্রচুর ঘাস পাওয়া যেত, মরুভূমি
অথবা পাহাড়ের পাদদেশে।
৫. এ যুগে পশুর খাদ্য যোগানের জন্য পশু পালনরত ভ্ৰাম্যমাণ আদিম মানব গোষ্ঠীই পরবর্তীতে যাযাবর জাতি হিসেবে
পশুচারণ সমাজের ভিত গঠন করে।
৬. এ পর্যায়ে মানুষ দেখল যে, পশু মজুত রাখতে পারলে খাদ্যের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
৭. এ পর্যায়ের সমাজ ব্যবস্থাতে বিনিময় ব্যবস্থার মাধ্যমেও ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রচলন ঘটে। পশুকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করে
পশুচারণ সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব ঘটে।
৮. পশু পালন সমাজ ছিল সবসময়ই শান্তি প্রিয়, তারা শুধু চিন্তা করত তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা কীভাবে সম্ভবপর হবে। তাছাড়া তাদের সাম্প্রদায়িক রীতিনীতি এবং অনুষ্ঠানাদি যথাযথ মেনে চলত। এদের মধ্যে আবার অনেকেই ছিল যুদ্ধপ্রিয় তারা পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করে তৃণভূমি দখল করে নিত।
৯. সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা পশুপালন এই যাযাবরদের জীবনেই সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা জন্মায়
এবং এ অবস্থা থেকেই তা স্বীকৃত হতে থাকে ।
১০.. পশু পালন সমাজে শিকার ও সংগ্রহ সমাজের মানুষের চেয়ে পশুচারণ সমাজের মানুষের মধ্যে সম্পদ ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে
বেশ পার্থক্য ছিল। দলনেতা এবং যুদ্ধনেতার হাতে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত ক্ষমতা থাকত ।
সুতরাং বলা যায় যে, পশু ছিল মানুষের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন। পশু পালন সমাজ ছিল পশু লালন-পালন এবং তাদেরকে ঘিরেই গড়ে ওঠা। পশু পালন থেকেই বিভিন্ন রকম কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধে হয়। সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্যে প্রয়োজন হয় নতুন রকম জিনিসের। এ সময়েই তৈরি হয় মাটির বাসন। ভেড়া ও ছাগলের গোশত যে শুধু খেতেই ভালো তা নয়, এগুলোর লোমে ভালো আচ্ছাদনও তৈরি হয়।
৪. কৃষিভিত্তিক সমাজ (Agrarian societies) : যেদিন থেকে মানুষ পশুকে বশে আনতে শিখল সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল কৃষি সমাজের। সমাজ সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের ধারায় উদ্যান কৃষি নির্ভর সমাজের পরবর্তী ধাপ বা পর্যায় হলো কৃষি সমাজ। কৃষি পর্বে এসে মানুষ জীবন-জীবিকার প্রধান উপায় হিসেবে কৃষি তথা ভূমি কর্ষণ ও শস্য উৎপাদনকে বেছে নেয়। এল.এইচ. মর্গানের মতে, মানব সমাজ বিকাশের বর্বর দশায় মধ্যবর্তী স্তরে পশ্চিম গোলার্ধে সেচের সাহায্যে কৃষি কাজ শুরু করে এবং এ সময়ই পূর্ব গোলার্ধে জীবজন্তু পোষ মানানো পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ শস্য উৎপাদন ও জীবজন্তু পালনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কর্মকাণ্ডই হচ্ছে কৃষি ।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিত্তিতে জানা যায়, মেয়েরা যখন কৃষি কাজের সূচনা করে তখন প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী স্তর বিদ্যমান ছিল। পণ্ডিতদের মতে উদ্যানকৃষির পরিপূর্ণতাই যেহেতু কৃষি সেহেতু মহিলারাই কৃষি পদ্ধতির উন্মেষ ঘটায় বা কৃষি সভ্যতার বীজ বপন করে। এ প্রসঙ্গে Robert Briff ault বলেন, “The art of cultivation has developed excessively in the hands
of women."
কৃষি ব্যবস্থার সার্বিক অবস্থাকে দুটি স্তরে বিভক্ত করা যায়। যথা—
১. প্রারম্ভিক কৃষি ব্যবস্থা : এটি মূলত উদ্যান চাষ
২. নিবিড় বা পূর্ণাঙ্গ কৃষি ব্যবস্থা : এখানে কৃষি ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছে এবং সম্ভাব্য সব পদ্ধতি ও প্রযুক্তি কৃষিতে ব্যবহৃত হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে Theory of vertical economy নামে একটি তত্ত্ব রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পৃথিবী যখন তুষারাচ্ছাদিত ছিল তখন মানুষ বিভিন্ন পর্বতের গুহায়, গাছের কোটরে, বন জঙ্গলে বসবাস করত এবং পশুপাখি শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
বরফ যুগ শেষ হলে মানুষ খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে এবং পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে প্রচুর ফল-ফসলের সন্ধান পায়।
Beall and Hoijer (ibd) কৃষি ব্যবস্থার দুটি বিশেষ ক্ষেত্রের উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, কৃষি ক্ষেত্রকে দুটি বৃহৎ এলাকায় পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। প্রথমত, গম প্রধান অঞ্চল দ্বারা বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত এবং এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং নিকট প্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া থেকে উত্তর চীন পর্যন্ত।
গম দ্বারা সংগঠিত হলেও অন্যান্য ফসল যেমন- বার্লি, রাই, বিশেষ করে গবাদি পশু, যেমন- ভেড়া, ঘোড়া, ছাগল ও শুকর এবং চীনের গবাদি পশুগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় অঞ্চল হচ্ছে ধান অঞ্চল। ধান উৎপাদনের এ অঞ্চল হচ্ছে জাপান, দক্ষিণ চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত।
তবে অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার যেকোনো স্থানে সর্বপ্রথম কৃষির উদ্ভব হয়েছিল। এখানকার আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূমিবিন্যাস, নদনদী ও জোয়ার ভাটা প্রভৃতি কৃষির অনুকূলে ছিল। এ ক্ষেত্রে নীল নদের অববাহিকা বা লিডেন্ট কিংবা ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিসের অববাহিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধারণা করা হয় যে, এখানে মানুষ প্রথম খেজুর, জলপাই, ডুমুর ও আঙ্গুরের চাষ শুরু করেছিল। কৃষি যুগে পৃথিবীতে কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। এগুলোর মধ্যে পারিবারিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক কাঠামো, সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার ধারণা, স্থাপত্য ও অবকাঠামো নির্মাণ, হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি। নানা পেশা ও স্তরভেদ, মুদ্রা অর্থনীতি এবং বিভিন্ন দিকে সৃষ্টিশীল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় ।
কৃষি সমাজের বৈশিষ্ট্য (Cheracteristics of Agrarian Society) : মানব জাতি যেসব চমকপ্রদ এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রগতি লাভ করেছে, কৃষি সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধু আদিম আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নয় বর্তমান কালে আমাদের সামগ্রিক জীবন যাত্রা ও সমাজ ব্যবস্থায় কৃষি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. খাদ্যের নিশ্চয়তা : কৃষিভিত্তিক সমাজেই মানুষ সর্ব প্রথম খাদ্যের নিশ্চয়তা লাভ করে। কৃষির পূর্বে শিকার ও খাদ্য সংগ্রহ আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় খাদ্যের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। জীবন ছিল হয় ভুরিভোজ নয়তো উপবাস (Life was iether a feast or fast)। কিন্তু কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করে তা মজুদ করে রাখার কৌশল আয়ত্ত করে। বছরের নির্দিষ্ট সময় ফসল উৎপাদন করলেও আপদকালীন বা সারা বছরের জন্য মানুষ তা সংরক্ষণ করত। কৃষিভিত্তিক সমাজের এ বৈশিষ্ট্য মানব সমাজ ও সভ্যতার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে ।
২. কৃষি সভ্যতার বিকাশ : কৃষি সমাজের আগে নদীর অববাহিকায় জলসেচভিত্তিক কৃষি সভ্যতার বিকাশ লাভ ঘটে। সিন্ধু ও চৈনিক সভ্যতা, মেসোপটেমীয়, মিশরীয়, ব্যবিলনীয় সভ্যতাসমূহ এর সাক্ষ্য বহন করে। এসব নদী মাতৃক সভ্যতাকে পুষ্টকরণে কৃষির অবদান অতুলনীয়। উদ্বৃত্ত উৎপাদন একটি অবকাশ ভোগী শ্রেণির জন্ম দেয় যাদের হাতেই মূলত কৃষি সভ্যতা বিনির্মিত হয় ।
৩. কৃষি প্রযুক্তি : শস্য উৎপাদনে সার ও সেচের ব্যবহার এবং মানুষের দেহ শক্তির স্থলে কৃষিতে পশু শক্তির ব্যবহার কৃষি কাজকে একটা স্থায়ী ও পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিণত করে। সুতরাং কৃষি সমাজে লাঙলের আবিষ্কার এবং লাঙলের মাথায় ধাতুর বা পাথরের সংযুক্তি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
৪. শহর সৃষ্টি : কৃষি অর্থনীতিতে অনেক দ্রব্য সামগ্রী পণ্যে পরিণত হয়। প্রশাসনিক, সামরিক, বাণিজ্যিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়কে কেন্দ্র করে কৃষি যুগে শহর বা নগরের উদ্ভব ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সুবিধাজনক স্থানে স্থায়ী বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলে।
৫. পেশাজীবী : কৃষি যুগে কৃষি বহির্ভূত অনেক পেশাজীবী শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী,
কারিগর, সৈনিক, করণিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক, সেবাদানকারী, বিচারক প্রভৃতি শ্রেণি ও পেশার মানুষ
৬. সভ্যতার উৎপত্তি : প্রকৃত প্রস্তাবে কৃষি ও সভ্যতা হচ্ছে মূলত একই সূত্রে গাথা। কৃষি সমাজই সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। এ
যুগে বস্তুগত ও অবস্তুগত অগ্রগতি সভ্যতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
৭. শ্রেণি শোষণ : অর্থ সম্পদ ও ক্ষমতার তারতম্য একদিকে যেমন শ্রেণির জন্ম দেয়, অন্যদিকে সম্পদ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে শক্তিশালী জনগোষ্ঠী পরিকল্পিত, সুসংগঠিত ও নিয়মিতভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে শোষণ করার সুযোগ পায়। তাই বলা যায়, প্রাক-কৃষি পর্যায়ে শ্রেণি এবং শ্রেণি শোষণ ছিল সম্পূর্ণই অনুপস্থিত ।
0:00
৮. জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা : কৃষি সমাজে গোলা বারুদ, ঘড়ি, মুদ্রণ যন্ত্র, চরকা, চাকা, বায়ু ও পানি শক্তিচালিত কল, হিসাব
সংরক্ষণ পদ্ধতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পরিচায়ক ।
৯. সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি : পরিবার গঠন, মানুষের মধ্যকার সুদৃঢ় ও সংঘবদ্ধ সামাজিক সম্পর্ক ইত্যাদি সামাজিক সংহতি
বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করেছিল। অর্থাৎ কৃষি সমাজের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— সামাজিক সংহতি ।
১০. বর্ণমালার উদ্ভব : কৃষি সমাজেই সর্বপ্রথম বর্ণমালায় উদ্ভব ঘটে। মানুষ কিছু চিহ্ন বা প্রতীকের সাহায্যে তাদের মনের ভাব প্রকাশ ক্রতে শেখে আদিম কৃষি যুগে। প্রাথমিক পর্যায়ে বর্ণমালার খুব বেশি প্রচলন ও প্রভাব ঘটাতে পারেনি। কিন্তু চর্চার মধ্য দিয়ে কালক্রমে এটি মানুষের ভাষার অনিবার্য দিক হিসেবে পরিগণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
১১. প্রশাসনিক ব্যবস্থা : প্রাচীন কৃষি সমাজের মধ্য দিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। কৃষি সমাজ যাযাবরদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে কৃষি যুগেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গোড়াপত্তন হয়।
১২. সামাজিক অসমতা : কৃষি সমাজের আগে সমাজে সামাজিক অসমতা ছিল মূলত বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক। কিন্তু কৃষি পর্যায়ে
সম্পদ, ক্ষমতা ও মর্যাদার ভারসাম্যের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা অধিকতর জটিল রূপ ধারণ করে।
১৩. পরিবার গঠন : কৃষি সমাজের পূর্বে পারিবারিক কাঠামো সুনির্দিষ্ট রূপ লাভ করেনি। কৃষি কাজ মূলত একটি গৃহস্থালিভিত্তিক কাজ এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় তা সুচারুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এ কারণে প্রকৃত পারিবারিক কাঠামো বা পরিবার গঠন কৃষি সমাজের পূর্বে সম্ভব হয়নি ।
১৪. জনসংখ্যার আকৃতি : ঘন ঘন এলাকা পরিবর্তন, খাদ্যে অনিশ্চয়তা, পারিবারিক জীবনের অনুপস্থিতি, বিপদ সংকুল পরিবেশে বসবাস, যৌন জীবনে শৃঙ্খলার অভাব ইত্যাদি কারণে প্রাক-কৃষি পর্বে জনসংখ্যা ছিল কম এবং জন্মহার ছিল নিম্ন। ১৫. মুদ্রণ অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার : কৃষিভিত্তিক সমাজে ব্যবসায়ীরা কৃষি বহির্ভূত পেশায় নিয়োজিত থেকেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। তাদের সুবিধার্থে এবং বাস্তবতার কারণে দ্রব্য বিনিময় প্রথার পরিবর্তে মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন হয়। উন্নত কৃষি ভিত্তিক সমাজে শিল্প বিকাশের ফলে এক ধরনের বাণিজ্য পুঁজির প্রসার ঘটে।
১৬. কৃষি সমাজে কৃষকের অবস্থা : কৃষি সমাজের প্রথম দিকে প্রাপ্ত সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য কৃষক দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেনি। তাই কৃষি সমাজে কৃষকের অবস্থা আদৌ ভালো ছিল না। পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, প্রশাসক ও যাজকেরা সম্মিলিতভাবে কৃষক শোষণে লিপ্ত হয় এবং এদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন বিদ্রোহ করলেও কৃষক জরাজীর্ণ ও নিরানন্দময় জীবনযাপনে বাধ্য হয়। সুতরাং বলা যায় যে, লাঙল আবিষ্কারের সাথে সাথে কৃষিভিত্তিক সমাজ ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুকূল জলবায়ু ও বশীভূত পশু শক্তি কৃষিকে অধিক তাৎপর্যমণ্ডিত করে তোলে। বস্তুত কৃষিকে অবলম্বন করেই মানব সভ্যতার যাত্রা শুরু এবং আজকের সভ্যতা বিনির্মাণেও কৃষির অবদান অসামান্য ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত