-মাজিক স্তর হলো শিল্প স আধুনিক সমাজও বলে থাকি। শিল্প সমাজ মানব জীবনে এক নতুন পি এচনা করেছে। ১৮ শতাব্দী সমাজের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে তা ছড়িয়ে পড়ে। শিল্প বিপ্লবের সময়কাল ১৭ ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ধরা হয়। ইংল্যান্ডের অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক বিকাশকে বোঝাতে 'Arnold Toynb 'Industrial Revolution' প্ৰভাঘটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায়।
শিল্প বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে প্রথমে ইংল্যান্ড, পরে পশ্চিম ইউরোপ, সোভিয়েত ইউনিয়ন আপানে শিল্পের ব্যাপক প্রসার
শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সমাজকে শিল্প সমাজ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ইংল্যান্ড পৃথিবীর সর্ব প্রথম শিল্প সমাজ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। সমাজ বিবর্তনের সর্বশেষ স্বীকৃ সমাজের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন। বিশেষ করে শান্ত্রিক ও
চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ব্যাপক উৎপাদন করে। যেমন- কৃষি সমাজে হাতে বোনা কাপড় ছিল মানুষের মূল পরি
(dlying
শিল্প সমাজের প্রধান প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো হলো- বাষ্পচালিত যন্ত্র (Steam engine), সুতা কাটা shuttle & spining machines), ট্রেন (Rail), রাবারে তাপপ্রয়োগ (Vulcanization of rubber), অটোমোবাইলস, লিনাক টেলিফোন, উড়োজাহাজ ইত্যাদি।
এ সময়ে শক্তির নতুন উৎসগুলো হলো- কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ ।
শিল্প অর্থনীতির মূলকথা হলো শহরে প্রচুর শিল্প শ্রমিকের আগমন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্প্রসারণ, পেশার বিশেষীকরণ, জমির পরিবর্তে শিল্পকারখানায় উৎপাদন, ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং পাশাপাশি বেকারত্ব সৃষ্টি অর্থনৈতিক অসমতা সামান্য ान এবং পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের আগমন ।
মার্কসীয় এবং অমার্কসীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই শিল্প সমাজে মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্ত্র উৎপাদন, বিতরণ ও ভোগের বিষয়টি প্রায় সম্পূর্ণ ও প্রত্যক্ষভাবে শিল্প উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।
পরিশেষে বলা যায়, শিল্প সমাজে এসে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তিকে ব্যাপকভাবে কর্তৃত্বাধীনে আনে এবং কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে সুপ্ত উৎপাদিকা শক্তিকে প্রযুক্তির জীয়নকাঠি জাগ্রত করে তোলে।
বস্তুত শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়েই ইংল্যান্ড, ইউরোপ উন্নত বিশ্বে শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আর শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই মূলত যে সমাজ গড়ে উঠেছে, তাই হচ্ছে শিল্প সমাজ ।
শিল্প সমাজের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Industrial Society) : কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য শিল্প সমাজকে অন্যান সমাজ থেকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। নিয়ে শিল্প সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার : শিল্প সমাজের যেহেতু উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে। উৎপাদন, যোগাযোগ, শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, দৈনন্দিন জীবন-যাপন প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের অনিবার্য ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এ জন্যই শিল্প সমাজকে প্রযুক্তি বা যান্ত্রিক সমাজ বলে অভিহিত করা হয়। তাই বলা হয় শিল্প সমাজের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্র নির্ভর।
২. শক্তি সম্পদের ব্যবহার : শিল্প সমাজে বিভিন্ন ধরনের শক্তি সম্পদের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। এ সময়ে ব্যবহৃত শক্তি
সম্পদগুলো হলো কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ।
৩. অর্থনৈতিক মতাদর্শ : শিল্প সমাজে নতুন নতুন বিশ্বাসী, ধ্যান ধারণা ও অর্থনৈতিক মতাদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র হচ্ছে শিল্পায়িত সমাজের দুটি প্রধান অর্থনৈতিক মতাদর্শ। বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রকে মতাদর্শগত দুটি ভিন্নধর্মী আদর্শ নমুনা (Ideal type) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৪. আয় এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি : কৃষি যুগে আয় এবং জয় ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু শিল্প যুগে এর ব্যাপক ক্রমবৃদ্ধি ঘটেছে। মানুষের শিল্প-পূর্ব সমাজে এমনকি বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রচলিত ধারণা ছিল 'আয় বুঝে ব্যয় করা'। তাই শিল্প সমাজের আওতায় যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ততই উৎপাদন এবং উপার্জনমুখী হচ্ছে।
৫. পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন : আর্থ-সামাজিক কারণেই মূলত কৃষি সমাজে যৌথ পরিবার এবং শিল্প সমাজে একক পরিবার পরিলক্ষিত হয়। শিল্প সমাজ হলো নগর কেন্দ্রিক। এখানে পেশা, উপার্জন ব্যয় নির্বাহ, আবাসিক ইস্যু, মানসিকতা ইত্যাদি একক পরিবারকে উৎসাহিত করে। এজন্যই শিল্প সমাজে একক পরিবারের আধিপত্য দেখা যায়।
৬. মুদ্রা, অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ শিল্প সমাজে বেতন বা মজুরি, কর খাজনা আদায়, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিয়োগ,
উৎপাদন তথা যাবতীয় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মুদ্রা, অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটে।
৭. বুর্জোয়া শ্রেণির বিকাশ : শিল্প সমাজে সামস্ত প্রভুদের ক্ষমতা অবসানের পর শিল্প-বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বুর্জোয়া শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। এ শ্রেণিটির হাতে উৎপাদন ব্যবস্থা কুক্ষিগত হয়ে পড়ে এবং অল্প কিছু লোক বিরাট সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে ওঠে। বুর্জোয়া শ্রেণির মারাত্মক শোষণে শ্রম সংগঠন ও শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে।
৮. বাণিজ্যিক নগরীর বিকাশ : প্রাক-শিল্প সমাজে নগর গড়ে উঠলেও শিল্প সমাজের গড়ে ওঠা নগরগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্নতর। শিল্প যুগে শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী গড়ে উঠলেও প্রাক-শিল্প যুগের নগরগুলো ছিল প্রশাসনিক, সামরিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র স্বরূপ। ৯. জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার : শিল্প যুগে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। এ যুগে প্রতিটি বিষয়ে সুবিন্যস্ত জ্ঞান চর্চার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র, সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মূলত জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা বা গবেষণারই ফলশ্রুতি। অর্থাৎ শিল্প সমাজে জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে জ্ঞানের অধিকতর চর্চার জন্য।
১০. পেশাজীবী শ্রেণির বিকাশ : শিল্প সমাজে পেশাজীবী শ্রেণির ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। উৎপাদনে নিয়োজিত কৃষক ও শ্রমিক
শ্রেণি ছাড়াও মানসিক শ্রম বিনিয়োগকারী সাদা পেশায় (White color job) মানুষের সমন্বয়ে পেশাজীবী শ্রেণি গঠিত হয়। ১১. কর্ম সংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : শিল্প সমাজে কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, শক্তিখাত, সেবাখাত, শিক্ষা ও গবেষণা, সরকারি প্রশাসন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রসমূহ, যাতায়াত ও যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা, রাজস্ব ও নিরীক্ষা, গণপূর্ত প্রভৃতি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়।
১২. শ্রমজীবী শ্রেণি: মার্কসবাদীরা শিল্প সমাজের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে 'Class for itself বৈশিষ্ট্যটি থাকার জন্য স্বতন্ত্র্য শ্রেণি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শিল্প সমাজের শ্রমজীবী মানুষেরা ব্যাপক শোষণের সম্মুখীন হলেও তাদের জীবনযাত্রার মান ও ক্রয়ক্ষমতা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং শিল্প সমাজে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের সৃষ্টি হয় এবং তারা একটা শ্রেণিতে পরিণত হয় ।
১৩. প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি : শিল্প সমাজে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, পেশা, উৎপাদন, বিপণন, বাজার প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক
প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। এরূপ প্রতিযোগিতা শিল্প সমাজ কাঠামোয় ইতিবাচক ও সুদূর প্রসারী ফল বয়ে আনে ৷
১৪. জীবন মানের পরিবর্তন : জীবন সাজাতে এবং জীবন বাঁচাতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিল্প সমাজ পরিবর্তন সাধন করেছে। পোশাক পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, প্রসাধনী সামগ্রী, শিক্ষা, বিনোদন, রুচি, অভ্যাস, গতিশীলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিল্প সমাজ স্বাতন্ত্র্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং শিল্প সমাজে মানুষের জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় ।
১৫. ভৌগোলিক আবিষ্কার ও উপনিবেশ স্থাপন : শিল্প সমাজের পূর্বে দুঃসাহসী নাবিকেরা নতুন নতুন দেশ ও নৌ-চলাচলের রুট আবিষ্কার করে ফেলে। এ সমাজে যান্ত্রিক জলযানের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ বিশ্বব্যাপী উপনিবেশ স্থাপন করে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং পুঁজিবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়। ১৬. সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি : চাকরি, আত্মকর্মসংস্থান, শিক্ষা, বিনিয়োগ, ব্যবসা, স্বাধীন পেশা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র
করে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
আরও বলা যায় যে, কৌলিন্য, বংশ মর্যাদা এবং বিভিন্ন সামন্তবাদী ধ্যান-ধারণার স্থলে শিক্ষা, অর্থ, পদমর্যাদা, শ্রম বিনিয়োগের স্বাধীনতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সামাজিক গতিশীলতার পথ সুগম হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক জন জীবনকে গতিশীল করেছে শিল্প। যান্ত্রিক ও প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার চরম উৎকর্ষতার মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকে বিশ্বে সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য শক্তির কর্ণধার ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পর তা আজ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে শিল্পায়িত আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত