খাদ্য আহরণ কৌশল খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য Characteristic of Food Gathering

খাদ্য সংগ্রহ পর্যায়ে মানুষের খাদ্যের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মানব ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এ পর্যায়ে মানুষ শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহের জন্যই ব্যস্ত ছিল।
সমাজবিজ্ঞানী মিনুমাসানী আদিম অবস্থার এ পর্যায়কে বুঝাতে গিয়ে বলেন, “Life was either a feast or a fast.” অর্থাৎ “আদিম সমাজে জীবন ছিল ভুরিভোজ না হয় উপবাস।" এ সময়ে খাদ্য সংগ্রহ করা ছিল বড়ই কঠিন কাজ। অর্থাৎ যখন তাদের খাবার মিলত তখন তারা পেটপুরে খেত আবার যখন কোনো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারত না তখন অনাহারে কাটাত। তাই বিভিন্ন কৌশলের সাহায্যে খাদ্য যোগাড় করতে হয়েছিল। তাদের খাদ্য আহরণ কৌশলকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. খাদ্য সংগ্রহ (Food gathering) এবং
২. খাদ্য উৎপাদন (Food producing)।
মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক হিসেবে কাটালেও খাদ্য উৎপাদন কৌশল মানুষ আয়ত্ত করেছে প্রায় দশ হাজার বছর পূর্বে। মানুষের খাদ্য সংগ্রহের কৌশলকে নিম্নের ছকে ভাগ করা হয়েছে—
খাদ্য আহরণ কৌশল Techniques for getting food
খাদ্য সংগ্রহ কৌশল
Food gathering techniques ·
খাদ্য উৎপাদন কৌশল Food producing techniques
ফলমূল সংগ্ৰহ Fruits Collecting
পশুপাখি শিকার Animal hunting
মৎস্য শিকার Fishing
উদ্যান কৃষি
Horticulture
পশু পালন
Pastoratism
কৃষি ব্যবস্থা Agricultural system
খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য Characteristic of Food Gathering
খাদ্য উৎপাদনের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। প্যালিওলিথিক যুগে শত সহস্র বছর ধরে মানব সমাজ গড়ে উঠেছিল মূলত সংগ্রহ অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। আট থেকে দশ হাজার বছর পূর্বে খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতি শুরু হয়েছে বলা যায়। কৃষি অর্থনীতির পূর্বে আদিম মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী হাতিয়ার তৈরি করত যার সাহায্যে তারা শিকার করত, মাছ ধরত এবং ফলমূল সংগ্রহ করত। খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-
১. যাযাবর জীবন : সংগ্রহ অর্থনীতিতে লোকেরা যাযাবর জীবন-যাপন করত এবং খাদ্য সংগ্রহ ও শিকারের জন্য তারা যত্রতত্র
হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াত । অর্থাৎ সংগ্রহ অর্থনীতিতে সমাজ ছিল আকারে ছোট এবং চারদিক থেকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকত ।
২. সম্পত্তি ও মালিকানা : এ পর্যায়ে কিছু কিছু সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে ব্যক্তিগত মালিকানায় চলে যায়। এ সমাজে মূলত
প্রথম পর্যায়ে সম্পত্তিতে গোষ্ঠীগত মালিকানা ছিল ।
৩. শ্রম বিভাগ : এ পর্যায়ে লিঙ্গ ও বংশভেদে শ্রম বিভাগ করা হতো। সমাজে যারা বয়স্ক ও অভিজ্ঞ তাদেরকে সম্মান করা হতো। কিশোর ছেলে-মেয়েরা বাড়ির কাজ করত। পুরুষেরা পশু পালন ও মৎস্য শিকার করত এবং মেয়েরা ফলমূল ও বীজ আহরণ করত ।
৪. হালকা জনবসতি : উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ও আমেরিকা সমতল ভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব বেশি ছিল বলে জানা যায়,
অর্থাৎ খাদ্য সংগ্রহ পর্যায়ে জনবসতি খুব হালকাই ছিল।
৫. পরিবর্তনের অভাব : এ পর্যায়ের মানুষেরা মাঝে মধ্যে খাদ্য উৎপাদকের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করত। কিছুদিন বসবাস করারপর ঐ স্থান থেকে আবার খাদ্য উৎপাদকরা তাদের বিতাড়িত করত। বার বার বিতাড়িত হওয়ার ফলে তারা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলতে পারত না। ফলে তাদের সামাজিক অবস্থা ও প্রযুক্তির তেমন পরিবর্তন হতো না। এভাবেই তারা প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারত ।
৬. শিকারি দল : এ পর্যায়ে ছোট পশু শিকারে ব্যক্তিগত পারদর্শিতা দেখানো হতো এবং যখন তারা বড় কোনো পশু শিকারে যেত তখন তারা শিকারি দল গঠন করত অভিজ্ঞ লোকদেরকে নিয়ে।
৭. স্বনির্ভরতা : এ পর্যায়ের মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করত। অনেক পরিবার একত্রে মিলেও বাস করত। তারা মাঝে মাঝে সংঘ গড়ে তুলত, ফলে সামাজিক পরিমণ্ডলের ভিতরেই তাদের কাজ-কর্ম চলত। সুতরাং তৎকালীন সময় লোকজন বা পরিবারগুলো ছিল স্বনির্ভর প্রকৃতির ।
৮. উৎপাদন কৌশল : এ পর্যায়ে উৎপাদন হাতিয়ারের দ্রুত পরিবর্তন না হওয়ায় সমাজ তখন অনেকটা পিছিয়ে ছিল। মূলত খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতিতে উৎপাদন কৌশল শুধু বেঁচে থাকার জন্যই গৃহীত হতো।
৯. রাজনৈতিক সংগঠনের অনুপস্থিতি : খাদ্য সংগ্রহ পর্যায়ে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না থাকলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ এ
সমাজগুলো রক্ত সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখত ।
পরিশেষে বলা যায়, এভাবেই তারা তাদের জীবনের চাহিদা মেটাত। অদ্যাবধি এ সমাজ ব্যবস্থায় বিশেষ করে আদিবাসীদের মাঝে উল্লেখিত খাদ্য সংগ্রহের প্রবণতা ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়।
খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির কৌশল The strategy of Economics of Food Gathering
আদিম সমাজে মানুষ ফলমূল সংগ্রহ এবং পশু-পাখি শিকার ও মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। Surplus (উদ্বৃত্ত) খাদ্য না থাকায় সংগৃহীত খাদ্য সকলে ভাগ করে খেত। খাদ্য না পেলে সকলে উপবাসী থাকত। খাদ্য সংগ্রহ কৌশলকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. ফলমূল সংগ্রহ;
২. পশুপাখি শিকার; এবং
৩. মৎস্য শিকার।
নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো-
১. ফলমূল সংগ্রহ : এ পর্যায়ে মানুষ তাদের খাদ্যের জন্য সর্বদাই ফলমূল সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত থাকত। যাযাবর আদিম পর্যায়ের মানুষেরা বনে জঙ্গলে ফলমূল, শস্যদানা সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করত। এ ক্ষেত্রে তারা হাতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। প্রকৃতির সাথে তাদের সখ্যতা থাকায় প্রকৃতির দান থেকে তারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হতো। বন জঙ্গল এবং তাদের আশপাশেই তারা তাদের বসতবাড়ি তৈরি করে। এ সকল সমাজে তুলনামূলকভাবে মানুষ ছিল খুবই কম। সে তুলনায় বন জঙ্গলেরও অভাব ছিল না। এ পর্যায়ের মানুষেরা মূলত জীবিকা নির্বাহের জন্য শাক-সবজি, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, জাম, মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদি সংগ্রহ করত।
পশুপাখি শিকার : এ পর্যায়ের মানুষেরা পশু পাখি শিকার করে এদের মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করত। তারা দল-বদ্ধভাবে শিকারে যেত এবং সংগৃহীত খাদ্য সকলে সমানভাবে ভাগ করে খেত। তারা বছরের বিশেষ কোনো ঋতুতে সারা বছরের খাদ্য সংগ্রহ করে রাখত, শিকারের জন্য তারা পাথরের হাতিয়ার ছাড়াও জাল, ফাঁদ ইত্যাদি ব্যবহার করত। তাদের শিকারের পদ্ধতি বুদ্ধিদিপ্ত ছিল। সুতরাং এ স্তরে মানুষ তীর-ধনুক ও পাথরের তৈরি হাতিয়ার দিয়ে পশুপাখি, জীবজন্তু শিকারের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করত।
৩. মৎস্য শিকার : এ স্তরে মানুষেরা বাঁশ, বেত, কাঠের যন্ত্র, জাল ও বড়শি দ্বারা মাছ শিকার করত। যারা মাছকে টোটেম মনে করত তারা মাছ ছাড়াও অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকার করত। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী এলাকায় মাছের ব্যাপক চাহিদা ছিল। সুতরাং আদিম সমাজের মৎস্য শিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, আদিম সমাজে মানুষেরা জীবিকা নির্বাহের জন্য ফলমূল সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার ও মৎস্য শিকারের ওপর ব্যাপক নির্ভরশীল ছিলেন। যাযাবর আদিম পর্যায়ের মানুষেরা জীবন ধারণের জন্য তারা সংগ্রহভিত্তিক অর্থনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিতেন বলে খুব সহজেই তা অনুমেয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]