দাস প্রথার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Slavery )

দাস ব্যবস্থায়, কৃষি ব্যবস্থার গোড়ার দিকে যখন ব্যক্তি মালিকানার উদ্ভব হয় তখন থেকেই শ্রেণিভিত্তিক দাস ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ দাস প্রথা বলতে এমন একটি আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে সেখানে মানুষ মানুষের সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।
দাস সমাজে দাসদের দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। একটি দাস মালিক এবং অন্যটি দাস।
দাসরা মর্যাদার দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। প্রাচীনকালে দাসদের গৃহপালিত পশুর সাথে তুলনা করা হতো। প্রকৃত পক্ষে দাসরা ছিল জীবন্ত হাতিয়ার। অপরদিকে রোমান আইনে দাসকে 'বস্তু' হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নিয়ে দাস সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. দাস সমাজে দাস মালিকরা ছিল অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তারা ইচ্ছা করলে দাসদের ক্রয়-বিক্রয় এমনকি বাঁচিয়ে রাখা
এবং মেরে ফেলার সম্পূর্ণ ক্ষমতা রাখতে পারত।
২. অর্থনীতিই ছিল দাস সমাজের প্রধান ভিত্তি। কৃষি ভিত্তিক সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনার লক্ষ্যেই দাস
ব্যবস্থায় পরিবর্তন করা হয়। তাই বলা হয়ে থাকে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা ছিল দাস সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩. দাস সমাজে দাসদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, একটি হচ্ছে দাস মালিক এবং অপরটি হচ্ছে দাস।
৪. মর্যাদার দিক থেকে দাসরা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। প্রকৃতপক্ষে দাসরা ছিল জীবন্ত হাতিয়ার। রোমান আইনে দাসকে বস্তু
হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
৫. দাস প্রথা বলতে এমন একটি আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যেখানে মানুষ মানুষের সম্পত্তি হিসেবে
পরিগণিত হয়।
সমাজে যারা স্বাধীন, সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী বলে বিবেচিত হতেন তারাই দাস-দাসী রাখার অধিকার পেতেন। তাই দেখা যায় প্রভুর অধীনতা ব্যতীত কোনো দাস ছিল না ।
৭. দাসরা অতি মানবেতর জীবন-যাপন করত। তারা কঠোর নিয়ম-কানুন এর বেড়াজালে জীবন-যাপন করত।
৮. দাসের একমাত্র পরিচয় দাস, সে তার মালিকের সম্পত্তি। মালিক তার ইচ্ছামতো তাকে দিয়ে যেকোনো কাজ করাতে
পারত। সামান্য ভুলের জন্য মালিক তাকে কঠোর শাস্তি দিতে পারত ।
পরিশেষে বলা যায় যে, দাস প্রথা ছিল মূলত একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল রাখার কৌশল। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল এজন্যই দাসদেরকে জীবন্ত সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমান সমাজে দাস ব্যবস্থাকে ঘৃণিত ও অমানবিক মনে হলেও সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে উত্তম ব্যবস্থা বলে গণ্য হতো ।
১৩. সামন্তবাদী সমাজ (Feudalism) : Karl Marx মনে করেন, ভূ-স্বামীরা ভূমিদাসদের বেগার খাটিয়ে ও খাজনা আদায় করে সামন্তবাদী সমাজের শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছিল। সামন্তবাদী সমাজে ভূ-স্বামীরা অন্তঃশোষণের আশ্রয় নিয়ে উৎপাদন পদ্ধতির উন্নতিতে তৎপর হয় ।
দাস সমাজের শ্রেণি দ্বন্দ্বের ফসল হিসেবেই সামন্তবাদী সমাজের সৃষ্টি হয়। দাস সমাজে যারা ছিল দাস তারা পরিণত হলো Sérf বা ভূমিদাস হিসেবে আর যারা ছিল দাস মনিব তারাই Land lord বা সামন্ত প্রভু হিসেবে আবির্ভূত হয়। ‘সেবা ও রক্ষার চুক্তির মাধ্যমে এ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় ।
লৌহ যন্ত্রপাতির প্রসার, তাঁত শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে ফসল ফলানো, সবজি চাষ, মদ ও মাখন তৈরির কৌশলসহ নানা কুটির শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়। সামন্তবাদী সমাজে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বাজার পণ্যে পরিণত হওয়ায় একদিকে পুঁজির সঞ্চয় হয় এবং পণ্য বিনিময় বাজারে ফড়িয়া শ্রেণির বিকাশ ঘটে ।
Karl Marx-এর মতে, এতে সমাজের মধ্যে শোষণের মাত্রাবৃদ্ধি পায় এবং সমাজ স্তরায়িত হয়ে যায়। ফলে সামন্তবাদী সমাজে শ্রেণিদ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং সামন্তবাদী সমাজ ভেঙে পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশ সাধিত হয় ।
সামন্তবাদের বৈশিষ্ট্য (Features of Feudalism) : সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থা এমন একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে ভূমি কেন্দ্রিক সেবা ও রক্ষার চুক্তিতে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বস্তুত সামন্তবাদের মূল বৈশিষ্ট্যের ভিত্তি হলো সেবা ও রক্ষার চুক্তি। নিম্নে সামন্তবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১. সামন্ত সমাজে কৃষকদের থেকে বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করা হতো।
২. সামন্ত সমাজের মূল চালিকা শক্তি বলতে গেলে কৃষিকেই বলা যায়। কৃষির উপকরণ জমি এবং উৎপাদনের অন্যান্য সকল
উপাদানই ছিল জমির মালিকদের হাতে।
গামস্তবাদের ভূমির মূল মালিক ছিল রাষ্ট্র বা রাজা। সামন্তচুক্তি অনুসারে সামন্ত প্রভু বা ভোলায়া রাজার নিকট থেকে বশ্যতা ও আনুগত্যের ভিত্তিতে জমি ভোগ দখলের অধিকার লাভ করত। সামন্ত প্রভুদের নিকট থেকে কৃষকরা জমি ইজারা নিত ।
৪. সামন্তবাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শ্রেণি বিভক্ত সমাজ। সমাজ সাধারণত নিম্নোক্ত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল।
যথা- যাজক শ্রেণি, অভিজাত শ্রেণি ও কৃষক, শ্রমিক, বণিক এবং দাসগণই সমাজের তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
৫. সামন্ত সমাজের কৃষকরা সর্বদাই সামন্ত প্রভুর জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ঘাটত। ফসল উৎপাদনের জন্য যেমন- কৃষকদের
খাটতে হতো তেমনি সামস্ত প্রভুর জন্য বাড়তি জোর শ্রমও দিতে হতো।
৬. সামন্ত সমাজেই প্রথম একটা চুক্তি হয় দাস ও সাধারণ গরিব কৃষকদের সাথে। চুক্তির নাম হলো সেবা ও রক্ষা চুক্তি।
সম্ভবত এটিই সামাজিক ইতিহাসের প্রথম চুক্তি।
৭. এ চুক্তির নীতি অনুযায়ী সামস্তপতিরা কৃষকদের এবং দাসদের নানা দিক থেকে রক্ষা করার ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করবে।
এর বিনিময়ে কৃষকরা সামস্তপতিদের নানাভাবে কাজ-কর্ম করে দিয়েও যুদ্ধে সাহায্য করবে।
৮. ভেসাল বা সামন্ত প্রভুরা লর্ড-এর বশ্যতা স্বীকার করত। তারা লর্ডকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
ছিল এবং এর বিনিময়ে বংশ পরম্পরায় জমিদারি স্বত্ব ভোগের অধিকার লাভ করত ।
পরিশেষে বলা যায় যে, সামন্ত সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভূ-মালিক দ্বারা শাসিত সমাজ। তখন সমাজ বিভক্ত ছিল ভূমিদাস ও ভূ-স্বামী এ দুভাগে। ভূমিদাস বলতে কৃষক শ্রেণি আর ভূ-স্বামী বলতে জমিদার শ্রেণিকে বুঝানো হতো। সামন্ত সমাজে শ্রেণি শোষণের মাত্রা ছিল খুব বেশি।
৪, পুঁজিবাদী সমাজ (Capitalism) : সামন্তবাদী শোষণের চরম পর্যায়ে সামন্তবাদী সমাজ ভেঙে পুঁজিবাদী সমাজের উত্তরণ ঘটে। পণ্য বিনিময় প্রথার মুদ্রা অর্থনীতির প্রকাশ শোষণ মাত্রাকে যেমন বৃদ্ধি করেছে তেমনি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। ফলে সমাজে শ্রমের অতিমাত্রায় বিভাজন ও বিশেষীকরণ হচ্ছে।
Karl Marx-এর মতে, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের চরম ফলশ্রুতিতেই সমাজ ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী সমাজের উত্তরণ ঘটেছে একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হিসেবে। Karl Marx পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন-
১. বাণিজ্যিক ধনতন্ত্র;
২. শিল্প নির্ভর ধনতন্ত্র; ও
৩. পুঁজিতন্ত্র।
Karl Marx দুটি শ্রেণির অস্তিত্ব দৃঢ় হয় বলে উল্লেখ করেছেন। যথা— সর্বহারা বা প্রলেতারিয়েত ও পুঁজিপতি বা শিল্পপতি বা বুর্জোয়া শ্রেণি— এই দুই শ্রেণির শ্রেণিদ্বন্দ্বের ফলশ্রুতি হিসেবে পুঁজিবাদী সমাজে যখন প্রলেতারিয়েত বা সর্বহারা শ্রেণির একনায়কতন্ত্র কায়েম হবে তখনই পুঁজিবাদী সমাজ' ভেঙে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হবে বলে মার্কস দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন। তাই বলা যায়, Karl Marx পুঁজিবাদের উন্মেষের জন্য দুটি প্রধান শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- কতিপয় ব্যক্তির হাতে পুঁজির সঞ্চয় এবং সর্বহারা শ্রেণির উদ্ভব।
পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Capitalism) : পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা হলো পণ্য উৎপাদন ও বিনিময়ের এমন এক মাধ্যম যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহের মালিকানা পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে ন্যাস্ত থাকে এবং সমাজের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অর্থাৎ সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণি তাদের শ্রম বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হয়।
Karl Marx পুঁজিবাদ বলতে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে উৎপাদনের উপকরণ ও উৎপাদনসমূহ ব্যক্তিগত মালিকানায় নিয়ন্ত্রিত মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে থাকে।
পুঁজিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. পুঁজিবাদী সমাজগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিক্রির জন্য অশিল্পায়িত সমাজে কিংবা যেসব দেশে
পুঁজিবাদের হাওয়া লাগেনি, সেসব দেশে বাজার খোঁজে।
২. পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত উৎপাদন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার
ফলেই দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।
৩. পুঁজিবাদে মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হয় এবং শ্রমিক শ্রেণি নির্দিষ্ট মজুরি
অর্জন করে। এর ফলে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ের অসমতা বৃদ্ধি পায়।
৪. পুঁজিবাদী সমাজের যাবতীয় সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। প্রত্যেকে ব্যক্তিগত সম্পদের অবাধ ভোগ
দখল ও তা ক্রয় বিক্রয়ের স্বাধীনতা ভোগ করে ।
৫. পুঁজিবাদে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চালিত হয়। এ সমাজে সকল ব্যক্তি তাদের ইচ্ছা ও সুবিধা
অনুযায়ী সম্পদ আয় করে এবং ভোগ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করে।
৬. পুঁজিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। বেশি মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা থাকলে সেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় । ৭. পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মালিক শ্রেণি সর্বদা স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকে। অপরদিকে শ্রমিক যাদের দ্বারা উৎপাদন ব্যবস্থা
* অক্ষুণ্ণ থাকে তারা হয় বঞ্চিত।
৮. আয়ের অসমবণ্টনের জন্য পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণি বিভক্তি ঘটে। বেশি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পুঁজিপতিরা শ্রমিকের
নিকট হতে উদ্বৃত্ত মূল্য আদায় করে। ফলে শ্রমিক শ্রেণি শোষিত হয়।
৯. পুঁজিবাদে পুঁজিপতিরা উৎপাদনের উদ্বৃত্তের মালিক। শ্রমিকদের শোষণ করে দিন দিন তাদের পুঁজির কেন্দ্রীভূতকরণ করে ।
পরিশেষে বলা যায় যে, পুঁজিবাদ হচ্ছে মানব ইতিহাসের সেই সমাজব্যবস্থা যাতে উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিকানা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে এবং স্বাধীন মুক্ত শ্রমের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত শোষণ দ্বারা সমাজে শোষক ও শোষিত উৎপাদনের মালিক ও শ্রমিক, বুর্জোয়া ও সর্বহারা এ দুটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
৫. সমাজতান্ত্রিক সমাজ (Socialism) : পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় যখন সম্পত্তিতে একচেটিয়া ভোগ দখলের মাত্রা তীব্রতর হয়ে শ্রমিক শ্রেণি শোষিত হতে থাকে তখন সম্পদের সুষম বণ্টনের দাবিতে সমাজতন্ত্রের প্রবর্তন হয়। শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সূচনা হয়। অর্থাৎ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা হলো শ্রেণি শোষণ সমাজব্যবস্থা ।
গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর "The Republic' গ্রন্থের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম সমাজতন্ত্রের ধারণা প্রদান করেন। আবার অনেক সমাজবিজ্ঞানীই একে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।
সমাজতন্ত্র হলো এমন এক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি উৎপাদনের উপায়ের সামাজিক মালিকানা এবং যার বিশেষত্ব নির্ভর করছে শোষণ মুক্ত মানুষের সহযোগিতা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ওপর। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস হচ্ছেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূল প্রবক্তা। তাই বলা যায়, সমাজতান্ত্রিক বণ্টন ব্যবস্থায় সমগ্র সমাজের স্বার্থে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের সুষম পরিকল্পনা গ্রহণ শ্রম অনুযায়ী সামাজিক উৎপন্ন দ্রব্যের বণ্টন, শ্রমিক শ্রেণি পরিচালিত সমাজে ক্রমবর্ধমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য, সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের বিকাশ এবং ব্যক্তিসত্তার সার্বিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গঠন।
সমাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Socialism) : সমাজতন্ত্রবাদের বিভিন্ন দিকের উপর গুরুত্বারোপ করে সমাজতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো। যথা-
১. সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি অপেক্ষা সমাজকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জনকল্যাণমুখিতার কারণে সমাজতন্ত্র, এমন এক
সমাজব্যবস্থার দাবি করে, যেখানে শিল্প ব্যবস্থা পরিচালনা জনস্বার্থমুখী, জনকল্যাণমুখী হবে ।
2. স্বাধীনতা ব্যক্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই সমাজতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা
করতে চায়।
৩. সমাজতন্ত্র শুধুমাত্র পুঁজিবাদেরই অবসান বা বিলুপ্তিই চায় না, ধনসম্পদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভূ-সম্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তি
মালিকানার অবসান বা বিলুপ্তি করতে চায় ।
৪. সমাজতন্ত্রের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নীতি হলো- এটি পুঁজিবাদের বিলোপ সাধন চায়, পুঁজিবাদের সমাপ্তি কামনা করে। এই অবস্থাতে পুঁজিবাদী ও ব্যবসায়ীদের মূলত শ্রমিক শ্রেণির শত্রু হিসেবেই গণ্য করা হয়। আর সে জন্যই সমাজতন্ত্র
পুঁজিবাদের ধ্বংস কামনা করে।
সমাজতন্ত্রের একটি বিশেষ নীতি হলো, এটি পারস্পরিক প্রতিযোগিতার পরিবর্তে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সমাজতন্ত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমনকি স্থানীয় পর্যায়েও পারস্পরিক সহযোগিতাকে প্রত্যাশা করে। সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। এরূপ অবস্থায় সমাজতন্ত্র বিশারদগণ রাষ্ট্রের শোষণ হতে মুক্তি লাভের আশায় রাষ্ট্রের অবসান বা বিলোপ চান।
৭. সমাজতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো- সমাজতন্ত্র সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সমাজতন্ত্রের একটি মূল বাণী হলো সমাজ হতে সকল অনৈক্য, অসাম্য ও ভেদাভেদ উপড়ে ফেলে সমাজের মধ্যে একটি ঐক্যভিত্তিক সাম্যের বন্ধন ও পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা।
৮. সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সকল অসাম্য ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়
মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, জনগণের কল্যাণার্থে উৎপাদনের উপকরণগুলোর জাতীয়করণ বা সামজিকীকরণের ওপর সমাজতন্ত্র সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সম্পদের সুযমবণ্টন নিশ্চিত করা হয় এবং উৎপাদনের উপকরণগুলোর উপর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলশ্রুতিতে মানুষে মানুষে শোষণের ও অর্থনৈতিক সংকটের বিলোপ ঘটে, উৎপাদন শক্তির বিকাশ ঘটে ও উৎপাদন সম্পর্কে পূর্ণরূপ পায় এবং প্রত্যেক মানুষই সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ পায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]